Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

কাউকে কোনো বেআইনি সুযোগ দেওয়া হবে না: গণপূর্তমন্ত্রী

কাউকে কোনো বেআইনি সুযোগ দেওয়া হবে না: গণপূর্তমন্ত্রী
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩: ০১

গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী এবং যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক ছাত্র নেতা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক বিভুরঞ্জন সরকার। 

আজকের পত্রিকা: নতুন দায়িত্ব পাওয়ায় আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে আপনাকে অভিনন্দন। আপনি একজন রাজনীতির মানুষ। ইদানীং বলা হয়, রাজনীতি আর রাজনীতিবিদের হাতে নেই। অথচ রাজনীতিবিদ হিসেবেই আপনি একটা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। এটাতে কি আপনি নতুন চ্যালেঞ্জ অনুভব করছেন?
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী:
রাজনীতি তো রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা উচিত বলে আমি মনে করি। আমার মনে হয়, আমাদের বর্তমান যে কেবিনেট, এখানে রাজনীতিবিদদের প্রাধান্যই আছে। আর যেকোনো দায়িত্বই চ্যালেঞ্জিং। শুধু রাজনীতিবিদদের জন্য নয়, যেকোনো লোকই মন্ত্রিসভায় আসুক না কেন তার জন্য একটা মন্ত্রিসভার কাজ সব সময় চ্যালেঞ্জিং। মন্ত্রিসভার কাজ তো কোনো একমুখী কাজ না, বহুমুখী। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি মন্ত্রীদের সঙ্গে জড়িত, সম্পর্কযুক্ত। মানুষের ভালো-মন্দ মন্ত্রীদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে।

যেখানে মানুষের কাজ আছে, সেখানে সবকিছুতেই চ্যালেঞ্জ থাকে। মানুষের কাজ চ্যালেঞ্জ ছাড়া হয় না। যেমন দ্রব্যমূল্য বেশি থাকলে এর চাপে মানুষের ওপর অনেক সময় অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দ্রব্যমূল্য সহনশীল বা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সুতরাং, আমি মনে করি সরকারের সব কাজই চ্যালেঞ্জিং। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি।

আজকের পত্রিকা: গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা ধরনের সমালোচনা আছে। মন্ত্রণালয়ের কাজ নিয়ে কোনো অভিযোগ পেলে তার তদন্ত এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে আমরা আপনার থেকে কতটুকু নিশ্চিত থাকতে পারি? 
মোকতাদির চৌধুরী: আপনি শতভাগ নিশ্চিত থাকতে পারেন। কোনো গুরুতর অভিযোগ আমার সামনে দিয়ে বিনা তদন্তে বা বিনা অ্যাটেনশনে যাবে না। অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অভিযোগ সব সময় যে সঠিকভাবে উত্থাপিত হয়, তা-ও কিন্তু নয়। অভিযোগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থেরও ব্যাপার থাকে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, অনেক সময় ব্যক্তিস্বার্থ ক্ষুণ্ন হলেও আমরা অভিযোগ করে থাকি। তবে এটা ঠিক যে আমার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থা আছে, যেগুলোর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে।

এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। চেষ্টা থাকবে, অভিযোগের মাত্রা যাতে শূন্যের দিকে নিয়ে আসতে পারি। নতুন অভিযোগ যাতে আর উত্থাপিত না হয়। এ জন্য আমি একটা বিষয়ের ওপর জোর দিচ্ছি সেটা হলো, একজন অফিসার যে কাজই করুক, তা আইনানুগভাবে করতে হবে। প্রচলিত আইন মেনে কাজ করতে হবে।

আজকের পত্রিকা: ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়ে আপনি কতটুকু মনোযোগ দেবেন?
মোকতাদির চৌধুরী: আমি মনে করি, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ ও নগরায়ণ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। সমস্যা অন্য জায়গায়। আমরা যখন নিজেদের কাজগুলো করি, তখন প্রায়ই অন্যের সমস্যার কথা, দেশের কথা ভাবি না। অনেক সময় পড়শির কথাও ভাবা হয় না। পড়শি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না, এটা দেখার সময় আমাদের নেই।  

একজন বড় সেনাকর্মকর্তা একসময় বিশাল বড় দায়িত্বে ছিলেন। দেশের নীতি-দুর্নীতি নিয়ে কাজ করতেন। শোনা যায়, তিনি যখন তাঁর ভবন তৈরি করেন, তখন ভবন নির্মাণের যে সাধারণ নির্মাণকৌশল আছে, সেটাও তিনি ভঙ্গ করেছেন। আমার হয়তো যে পরিমাণ জায়গা ছেড়ে দেওয়ার কথা, আমি তা ছাড়ছি না। অন্যের অসুবিধা করেও আমি আমার নিজের সুবিধার পক্ষে দাঁড়াই। 

এসব বিষয়ে জনগণের ভেতরেও সচেতনতা বাড়াতে হবে। তা ছাড়া রাজউক বা অন্যান্য সিটি করপোরেশনের পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে তারা সঠিক কাজটা করতে পারে না। আমরা আশা করব, ভবিষ্যতে এর উন্নতি হবে। তবে রাতারাতি কোনো অবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। একটু অপেক্ষা করতে হবে।

আজকের পত্রিকা: এই সচেতনতা বাড়ানোর ব্যাপারে আপনার কোনো পরিকল্পনা আছে?
মোকতাদির চৌধুরী: এ জন্য আমরা ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাব এবং কর্মকর্তাদের বলব যে আপনি যদি আইনের ব্যত্যয় ঘটান, তাহলে আপনি যে-ই হোন না কেন আপনাকে আমরা ধরব। আপনাকে ছাড় দেওয়া হবে না। আগে একটা সময় ছিল যখন তথাকথিত প্রভাবশালীরা বিভিন্ন রকমের বেআইনি সুযোগ নিত বা পেত। কিন্তু এখন সেটা হবে না। আমি মনে করি, সরকারই সবচেয়ে বড় প্রভাবশালী। কাউকে কোনো বেআইনি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে না।

আজকের পত্রিকা: অনেক দেশেই দেখা যায়, নতুন মন্ত্রীরা অগ্রাধিকার পরিকল্পনা করেন, আপনি কি এ রকম কিছু করেছেন?
মোকতাদির চৌধুরী: আমার অগ্রাধিকার পরিকল্পনায় অনেক বিষয় আছে। এক নম্বর বিষয় হচ্ছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইন মেনে চলতে হবে। ৯টায় অফিস হলে ৮টা ৫৯ মিনিটে ঢুকতে হবে। ৯টার অফিস মানে ৯টা ১৫ বা ৯টা ৫ মিনিট নয়। এই দায়িত্ববোধটা থাকতে হবে। দুই নম্বর যেটা আমি বলেছি, আমাদের পুরো দেশই অপরিকল্পনার ভেতর দিয়ে চলছে। এটাকে পরিকল্পার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।

আমি বলেছি, শুধু ঢাকা শহর ঘিরে আমাদের যে চেষ্টা বা ফোকাস, এটা না করে আমরা উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত যাব। সেখানে আমরা দেখব যাতে কৃষিজমির অপব্যবহার না হয় বা কমে না যায়। গ্রামের অবকাঠামো যাতে পরিকল্পনায় আনা যায়, সেই লক্ষ্যে আমি ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভার একজন সিনিয়র সহকর্মীকে অনুরোধ করেছি একটা মিটিং করার জন্য, যেখানে কৃষি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং অন্য যারা গ্রাম্য উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে, সবাই মিলে একটি পরিকল্পনা তৈরি করে সবক্ষেত্রেই যাতে তা মানা হয়, সেটির ওপর নজরদারি করতে হবে।

তৃতীয়ত, চেষ্টা করব প্রভাবশালীদের প্রভাব উপেক্ষা করার। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, কিছুদিন আগে জানতে পারি, কোনো একটি বড় জনকল্যাণমূলক সংস্থার জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সেই জমি হঠাৎ করে আরেকজন ব্যক্তিকে দিয়ে ওই সংস্থাকে ছোট জমি দেওয়া হয়েছে। আমি বলেছি, না, সেটা হবে না। প্রভাবশালী সেই ব্যক্তিও হয়তো ভালো কাজ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু একজন ব্যক্তি ও একটি সংস্থা যে কাজ করবে তার মধ্যে পার্থক্য আছে। ব্যক্তি নিজের আর সংস্থা সমাজের কল্যাণে কাজ করবে, তাই সংস্থাকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে।

আজকের পত্রিকা: এবারের সংসদে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন মতের বা ভিন্ন চিন্তার উপস্থিতি একেবারেই নেই। এটাকে কি আপনি গণতন্ত্রের জন্য খুব ভালো মনে করেন?
মোকতাদির চৌধুরী: এটাকে তো কখনোই গণতন্ত্রের জন্য ভালো মনে করি না; তবে বর্তমান সরকার স্বতন্ত্রদের একটা সেপারেট এনটিটি বজায় রেখে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে। তাঁদের কোনো দলে যুক্ত হওয়ার কথা বলা হচ্ছে না। আমাদের দল থেকেও অনেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেছেন, তাঁদেরও স্বতন্ত্র ভূমিকা পালন করতেই বলা হচ্ছে। ৬২ জন সদস্য স্বতন্ত্র ভূমিকা পালন করলে কিছু কিছু ভিন্ন কথা তো আসবেই। আর জাতীয় পার্টি যেটা আছে, যদিও তারা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গেই থাকে। এটা তাদের একটা চরিত্র। তারপরও তারা বলেছে যে এবার তারা সত্যিকার বিরোধী ভূমিকা পালন করবে।

গত সংসদে যাঁরা জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি করেছেন, তাঁরা কিন্তু সংসদে কথা বলতে পারতেন অথচ তাঁরা বলেননি। আমার মনে হয়, তাঁরা যদি তাঁদের ভূমিকা সঠিকভাবে পালন করেন, তাহলে কাজ হবে। এটা তো ঠিক, সার্বিকভাবে বিরোধী উচ্চারণ যত কম হবে, গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে আমরা তত অসুবিধায় পড়ব। আমার আস্থা আছে জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর। তিনি শুধু যে পার্লামেন্টের ভয়েসই শুনবেন তা নয়, রাস্তাতেও যদি সঠিক ভয়েস উঠে আসে, গণতন্ত্রের পক্ষে ভয়েস উঠে আসে, তাহলেও তিনি তা শুনবেন।

বিএনপি যদি নির্বাচনে আসত, আমি মনে করি সেটা বেশি ভালো হতো। কিন্তু বিএনপিকে ক্ষমতার নিশ্চয়তা দিয়ে নির্বাচনে আনা তো সম্ভব নয়। এই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। এমনও তো হতে পারত তারা যদি নির্বাচনে অংশ নিত, মেজরিটি পেয়েও যেতে পারত। কিন্তু তারা সেই পথে এগোতে চায়নি। তা ছাড়া বিএনপি তাদের সময়ে কখনোই গণতন্ত্রের চর্চাকে সমর্থন করেনি। 

সবচেয়ে ন্যক্কারজনক হলো বিএনপির আমলে রাষ্ট্রীয়ভাবে সাম্প্রদায়িকতাকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়েছে। ২০০১ সাল থেকে বিএনপি সরকার সাম্প্রদায়িকতাকে প্রাতিষ্ঠানিক করে ফেলেছিল। সাম্প্রদায়িকতা এখনো আছে। আমাদের সময়েও সাম্প্রদায়িক শক্তি নিশ্চুপ বা নিষ্ক্রিয় ছিল বা আছে তা নয়। তারা অনেক সময়, অনেকভাবে সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দিতে চেয়েছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা সাম্প্রদায়িকতাকে পৃষ্ঠপোষকতা করি।  

আজকের পত্রিকা: অনেকেই মনে করেন, আওয়ামী লীগের মধ্যেও এখন সাম্প্রদায়িকতার প্রভাব লক্ষ করা যায়। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন? 
মোকতাদির চৌধুরী: আমি বলব, কথাটা সঠিক নয়। আমাদের দলীয় নীতির দিক থেকে যদি বলেন সাম্প্রদায়িকতার স্থান এখানে কখনোই ছিল না, এখনো নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। কিন্তু ব্যক্তিমানুষ হিসেবে অনেকের ভেতরে সাম্প্রদায়িকতা আছে। নেই এ কথা বলব না। কারও কারও মন ও মস্তিষ্কে সাম্প্রদায়িকতা থাকার কারণে আমরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হই, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে দলগতভাবে আওয়ামী লীগ কখনোই সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেয়নি। ভবিষ্যতেও দেবে না। শুধু তা-ই নয়, নীতিগতভাবে আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িকতাকে লালন করে এবং এটা তার সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার হিসেবে নিয়েছে।

তবে এটাও ঠিক যে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী একেবারে মরে যায়নি, তারা আছে। যেমন ধরেন বাংলাদেশে আমার খুবই কষ্ট লাগে যখন দেখি যে আমরা অনেক চেষ্টা করেও যারা জাতীয় সংগীত গায় না, তাদের বিরুদ্ধে আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারি না। এটা নেওয়া উচিত অথবা যারা জাতীয় সংগীত গায় না, তারা যাতে জাতীয় সংগীত গায়, সে ব্যাপারে তাদের অনুপ্রাণিত করা উচিত। যদি অনুপ্রাণিত বিষয়টা থাকে তাহলেও আমরা অনেক দিক দিয়ে এগোতে পারব। আমি মাদ্রাসাছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি যারা গায় না আরকি, তাদের যদি আমরা ঠিকমতো মোটিভেট করতে পারি, তাহলে গাইবে। আমি অনেক মাদ্রাসাছাত্রদের দেখছি তারা ব্যান্ড করে, মিউজিক করে। তারা আগে করত না কিন্তু এখন তারা করে।

সুতরাং পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের সাধারণ মানুষদেরও এগিয়ে যেতে হবে। যেমন ধরেন মঙ্গল শোভাযাত্রা এটা এখন কিন্তু একটা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে যত বেশি উজ্জীবিত করতে পারব, তত বেশি সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মোকাবিলা করতে পারব। আমরা একটা মাল্টি ক্লাস অর্গানাইজেশন, আমরা কখনোই ক্লাসভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ছিলাম না। আমাদের এখানে সব ধরনের লোকই আসে। এখন তো আমরা মুক্তবাজার অর্থনীতির ভেতরে আছি, এখান থেকে আপনাকে একেবারে কট্টরপন্থী বা ক্যাডারবেসড অর্গানাইজেশন গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আমরা ছিলামও না, সম্ভবও না। সুতরাং আমাকে এখানে যা করতে হবে সেটা হলো, অসাম্প্রদায়িক যে কালচারাল হেরিটেজ আছে, এটাকে শক্তিশালী করার ব্যবস্থা করতে হবে।

আজকের পত্রিকা: আমরা শেষ করছি। জননেত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকারপ্রধান হয়েছেন। তাঁর সময়ে দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। আবার এটাও দেখা যাচ্ছে, এই সময়ে প্রতিবছর কোটিপতির সংখ্যা যেমন বাড়ছে, আবার নিঃস্ব মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। আওয়ামী লীগ দলগতভাবে এই বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কতটুকু ভূমিকা পালন করবে বলে আপনি মনে করেন?
মোকতাদির চৌধুরী: বৈষম্য একেবারে দূর করা যাবে কি না, আমি জানি না। তা ছাড়া বাজারব্যবস্থায়, বাজারভিত্তিক অর্থনীতিতে স্লোগান দিয়ে বৈষম্য দূর করা যাবে না। বৈষম্য বন্ধ করার শর্টকাট পথও নেই। কিন্তু যারা নিম্নপর্যায়ে আছে, তাদের উঠিয়ে আনার কিছু সুযোগ আছে। সেটা যদি আমরা করতে পারি এবং তাদের যদি সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে পারি, তাহলে তারা নিজেরাই এই বাজার অর্থনীতির ভেতরে ঢুকে ওপরে আসতে পারবে।  যেমন আমরা গৃহহীনদের ঘর দিয়ে দিচ্ছি, আশ্রয়হীনদের আশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা করছি।

ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বিতরণ করছি। এভাবে আমরা ভিত্তিটাকে তৈরি করে দিচ্ছি। আর একেবারেই যারা চলতে-ফিরতে পারে না, তাদের নানান ধরনের সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ে আনার চেষ্টা করছি। আমরা শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছি। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন আমরা প্রচুর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। শিক্ষাকে সহজলভ্য করে দিয়েছি। একেবারে প্রান্তিক পর্যায়েও শিক্ষা সহজলভ্য। হাওর এলাকায়ও এখন শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে উঠছে।

হাওর এলাকার জন্য আলাদাভাবে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যেসব এলাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেশি, তাদের উন্নতির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হয়তো বিশাল আকারে বৈষম্য নিরসন করতে পারব না, তবে নিচের দিকের যে মানুষগুলো তাদের স্বাবলম্বী করে তুলতে পারব। এটাও একটা বিরাট ব্যাপার।

আমি মনে করি, বৈষম্য কখনো পুরোপুরি দূর করা যাবে না। তবে এর মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব। এখন সব জায়গায় ইন্টারনেট চলে গেছে। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে ইন্টারনেট নেই। আপনি বোধ হয় কিছুদিন আগে দেখেছেন প্রথম আলোয় একটা রিপোর্ট ছিল যে গারো পাহাড়ের এদিকে, ওই পুরো একটা গ্রামে স্বাচ্ছন্দ্য চলে আসছে। পুরো গ্রামের অধিবাসী ফ্রিল্যান্সিং করে তারা ভালো আছে। ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিংয়ের জন্য গত একনেক বৈঠকে আমরা টাকা বরাদ্দ দিয়েছি।

আপনারা দেখতে পাবেন মানুষের জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনটাকে কাজে লাগালে বৈষম্য কমে আসবে। এখন অলস লোকের তো পৃথিবীতে কোনো স্থান নেই। সুতরাং সব সময় কর্মে নিয়োজিত থাকতে হবে এবং সক্রিয় থাকতে হবে। তাহলেই হবে ইনশা আল্লাহ।

আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। 
মোকতাদির চৌধুরী: আপনাদেরও ধন্যবাদ!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত