জাহীদ রেজা নূর

আমাদের মুক্তিযুদ্ধটা কোনো মুখস্থবিদ্যানির্ভর ছিল না। একটি ধারাবাহিক আন্দোলনের মাধ্যমেই মানুষ পৌঁছেছিল স্বাধিকারের দাবিতে। বাংলার মানুষ কিন্তু পাকিস্তান কায়েমের জন্য জীবন উজাড় করে দিয়েছিল। সেই বাংলার মানুষই পাকিস্তান কায়েমের কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পেরেছিল, যে পথে চলেছে দেশ, তা ঔপনিবেশিক শাসনেরই পথ। শুধু শাসক বদল হয়েছে। ব্রিটিশদের জায়গায়, শোষকের জায়গায় এসেছে পশ্চিম পাকিস্তানি মুসলমানরা।
ইতিহাস এগিয়েছে এই দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্য দিয়ে। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিকে কঠোর হাতে দমন করা শুরু করেছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এবং জন্মের এক দশকের মধ্যেই দেশে নিয়ে এসেছিল সামরিক শাসন। আইয়ুব খান হয়ে উঠেছিলেন সর্বেসর্বা। প্রবীণ রাজনীতিবিদদের রাজনীতির পথ সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছিলেন মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে। কীভাবে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন হলো, কীভাবে ছাত্র-জনতা জীবনকে বাজি রেখে আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে গেল, সে ইতিহাস বারবার বর্ণিত হয়েছে। ইতিহাস-সচেতন মানুষ সে কথা জানে।
এই ‘জানে’ শব্দটির সঙ্গেই আজ বোঝাপড়া হবে। কয়েকটি সাল এবং কয়েকটি নাম মুখস্থ করে রাখলেই কি মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করা যায়? তারই ভিত্তিতে কি নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে প্রমাণ করা যায়? স্বাধীনতার অর্ধযুগ পার হয়ে যাওয়ার পরও ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি’ এবং ‘মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি’ কেন থাকবে একটা দেশে? এ রকম আর কোনো দেশের নাম কি মনে পড়বে, যে দেশে ‘মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি’ অর্থাৎ দেশবিরোধী কোনো শক্তি আছে? এ প্রশ্নটি খুব জরুরি আজকের পরিপ্রেক্ষিতে।
দুই.‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের’ রাজনীতিবিদেরা মুখস্থ কয়েকটি সাল ও কয়েকটি নাম বা ঘটনার উল্লেখ করে বোঝাতে চান, এ দেশের ইতিহাস তিনি জানেন এবং জানেন বলেই এই ইতিহাসকে সঙ্গী করে রাজনীতি করার সব অধিকার তাঁর আছে। কিন্তু তিনি ভুলে যান, এই ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিল একটি স্বপ্নের দেশ গড়ে তোলার জন্য। দেশের এই সংগ্রামী ইতিহাস জানা প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য বটে, কিন্তু শুধু ইতিহাস রোমন্থনে দেশ এগিয়ে যায় না। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সময়োপযোগী পরিকল্পনা লাগে। যে যে সংকটের বিরুদ্ধে ছিল সংগ্রাম, সেই সংকটগুলো উপড়ে ফেলতে হয় রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে। দেশপ্রেম বক্তৃতায় বা ইতিহাস-অধ্যয়নে সীমাবদ্ধ থাকে না, ব্যক্তিজীবনে, সমাজজীবনে, রাষ্ট্রীয় জীবনে তার প্রয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ কথাটি বোঝার চেষ্টা করব আমরা ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কিছু ভাষণ থেকে এবং এখনই মনে করিয়ে দেব, ১৯৬৬ সালের মে মাসে গ্রেপ্তার হয়ে যাওয়ার পর একনাগাড়ে দীর্ঘ সময় যখন কারাগারে অবরুদ্ধ ছিলেন, তখনো ছয় দফার পক্ষে কতটা আন্তরিক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ‘কারাগারের রোজনামচা’য় তার প্রমাণ আমরা বারবার পাই।
কথাগুলো বলার সময় মনে রাখব, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এবং তাদের খবর প্রচারে দৈনিক ইত্তেফাকের যে ভূমিকা, সে কথাগুলো স্মরণ না করলে ইতিহাস ঠিকভাবে উঠে আসে না। অনেকেই ইতিহাসচর্চা করার সময় ছয় দফা আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কালে ছাত্রলীগ ও ইত্তেফাকের ভূমিকাকে গৌণ করে তোলেন। মনে রাখা দরকার, সেই কঠিন সময়ে আওয়ামী নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সবাইকে কারাগারে পুরে ফেলেছিল সরকার। ছাত্রলীগই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সেই আন্দোলন। নিষেধাজ্ঞা আসার আগপর্যন্ত ইত্তেফাকই দিয়েছিল তার ইতিবাচক প্রচার। সেই সময়ের অন্যান্য পত্র-পত্রিকার দিকে চোখ রাখলেও ইত্তেফাকের এই ভূমিকা প্রমাণিত হবে। প্রয়োজন ঠিকভাবে গবেষণা করা।
তিন. আমরা ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ভাষণগুলোর আলোকেই আলোচনা করব। এর আগে বলে রাখা দরকার, পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৬৬ সালের ২০ মার্চ পাকিস্তান মুসলিম লীগের কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা দাবির তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি ছয় দফা নিয়ে বিতর্ক করতে উৎসুক।
আওয়ামী লীগ এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে। ২১ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ ভুট্টোকে নিজ পছন্দ অনুযায়ী প্রদেশের যেকোনো স্থানে ২৭ মার্চ জনসভার আয়োজন করার আহ্বান জানান। ভুট্টো তাতে সাড়া দেননি। ১২ এপ্রিল ঢাকায় এসে ভুট্টো আবার চ্যালেঞ্জ ছোড়েন। বঙ্গবন্ধু এবারও সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন এবং ২৪ এপ্রিল পল্টন ময়দানে জনসমাবেশে সামনাসামনি আলোচনা করার জন্য ভুট্টোকে আহ্বান জানান। ভুট্টো জানান, ২৪ এপ্রিল নয়, ১৭ এপ্রিল তিনি বিতর্ক করতে প্রস্তুত আছেন।
রাজনৈতিক মহলেই শুধু নয়, সাধারণ জনগণের মধ্যেও এতে সাড়া পড়ে যায়। কিন্তু আগেরবারের মতোই এবারও ভুট্টো পিছু হটেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে যশোরে বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দেন, তা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছিলেন, ভুট্টোর এই পশ্চাদপসরণ শুধু তাঁর একারই পরাজয় নয়, তা সামগ্রিকভাবে বর্তমান সরকারেরই পরাজয়। কেন্দ্রীয় সরকারের কেউই ছয় দফা প্রশ্নে সামনাসামনি দাঁড়াতে সক্ষম নন। আসলে ছয় দফার কাছে পাকিস্তানি সরকারের নৈতিক পরাজয় শুরু হয়ে গিয়েছিল এখান থেকেই। এর আগে মুসলিম লীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন নেতা ছয় দফার সমালোচনা করেছিলেন বটে, কিন্তু ভুট্টোর এই পশ্চাদপসরণ মূলত ছয় দফার গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়।
চার. কেন ছয় দফা দেওয়া হলো—দেশের বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতাকালে বঙ্গবন্ধু তার ব্যাখ্যা করেন। ছয় দফার ব্যাপারে তিনি কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন, তার প্রমাণ রয়েছে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের দীঘিরপাড়ে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতায়। তিনি বলেছিলেন, ‘ছয় দফা দাবি উত্থাপনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের কেউ ব্যক্তিগত কোনো আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করতে চায় না। সরকার যদি ছয় দফা মেনে নেয়, তবে আমি আদালতে হলফ করে লিখিত চুক্তি সম্পাদন করে আজীবন রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণে প্রস্তুত আছি।’ বঙ্গবন্ধু এই ভাষণ দিয়েছিলেন ১৯৬৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি।
এই প্রতিজ্ঞার একটি ইঙ্গিত আগেই পাওয়া যায় ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে দেওয়া এক ভাষণে। পাঠকদের মনে করিয়ে দেব, বঙ্গবন্ধুর বয়স তখন মাত্র ৪৬ বছর। সেই বয়সে ছয় দফার প্রবক্তা বলছেন, ‘আমরাও আজ বার্ধক্যের কোঠায় এসে পৌঁছতে চলেছি।নতুন দিগন্তে আজ আমরা নতুন মুখের দেখা পাচ্ছি। অন্তত এই নতুনদের জীবনকে যাতে আমরা বঞ্চনা ও নির্যাতনমুক্ত করে তাদের 
সুখ ও সমৃদ্ধির নিশ্চয়তার সন্ধান দিয়ে যেতে পারি, সে জন্যই আসুন, আমরা কোরবানির জন্য প্রস্তুত হই।’
এ তাহলে কিসের ইঙ্গিত? প্রস্তাবিত ছয় দফায়ই রয়েছে নতুন প্রজন্মের মুক্তির ইঙ্গিত। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় পুরো পূর্ব পাকিস্তান ছিল অরক্ষিত। সে কথা স্মরণ করে ২৬ মার্চ সন্দ্বীপে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বিগত যুদ্ধের সময় দেখা গেছে, গোটা পূর্ব পাকিস্তানই সন্দ্বীপের মতো একটি দ্বীপ। সারা বিশ্বের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের কোনো সম্পর্ক ছিল না। বিগত ১৮ বছর প্রদেশের ওপর দিয়ে অত্যাচার ও শোষণের ঝঞ্ঝা বয়ে গেছে। শোষণ-জর্জরিত পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ আজ হৃতসর্বস্ব। দেশের রাজধানীর ওপর পূর্ব পাকিস্তানের কোনো কর্তৃত্ব নেই, মূলধনের ওপর কোনো এখতিয়ার নেই। তার ওপর সামরিক বাহিনীর তিনটি সদর দপ্তরই পশ্চিম পাকিস্তানে। পূর্ব পাকিস্তানের যথাযোগ্য প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও নেই। তাই পূর্ব পাকিস্তানকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সর্বনাশের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য একটি নিরাপত্তা বাঁধের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।’
এই নিরাপত্তা বাঁধটি হলো ছয় দফা। ইঙ্গিতগুলো যে কেউ বুঝতে পারবে। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামটি ছিল নিয়মতান্ত্রিক। সে কথা তিনি বারবার উল্লেখ করেছেন। গৃহযুদ্ধ বাধানোর কোনো মতলবি ধারণার বশবর্তী তিনি হননি। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ২৭ মার্চ তিনি বলেছিলেন, ‘যদিও দেশের দায়িত্বশীল মহল থেকে (অর্থাৎ সরকারি মহল) গৃহযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার ডাক পাওয়া গেছে, তবুও আমরা গৃহযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে রাজি নই। আমাদের সংগ্রাম শান্তিপূর্ণ। আমাদের ওপর আঘাত হানা হলে আমরা প্রত্যাঘাত করব না, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আঘাত সহ্য করব।’
খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ কথা। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানের অবস্থানের কথাই তা প্রমাণ করে। কেন ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা করেননি, কেন ২৫ মার্চ ক্র্যাকডাউনের আগপর্যন্ত তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, তার কারণও এ থেকে প্রস্ফুটিত হয়।
আরেকটি বক্তৃতার উদাহরণ দিচ্ছি। খুলনায় এই বক্তৃতা দিয়েছিলেন তিনি ১৭ এপ্রিল। বলেছিলেন, ‘হিন্দু ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের জাঁতাকলে উপমহাদেশের দশ কোটি মুসলমান বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম হলেই পাকিস্তান দাবি উত্থাপিত হয় এবং মুসলমানরা পাকিস্তান কায়েম করে। আজ সাড়ে পাঁচ কোটি পূর্ব পাকিস্তানিকেও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ছয় দফা আদায় করতে হবে।’
অর্থাৎ হিন্দু, খ্রিষ্টান, মুসলমান, যখন যে সুযোগ পেয়েছে, তখনই সে শোষণ করেছে এই অঞ্চলের মানুষদের। সেই শোষণ থেকেই মুক্তি চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
পাঁচ. তাহলে পরিষ্কারভাবে বলা দরকার, ছয় দফার মাধ্যমে এই অঞ্চলের মানুষের মুক্তির স্বপ্নই দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং নিয়মতান্ত্রিক পথেই আসবে সে মুক্তি, সেটাই ছিল তাঁর স্বপ্ন।দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিদেশি শোষণের অবসান হলো ঠিকই, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে কি পৌঁছাতে পারল দেশ? ঘুষ-দুর্নীতি, পেশিশক্তির ব্যবহার, ধর্মব্যবসা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে কি মুক্তি মিলেছে আমাদের? অসাম্প্রদায়িকতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র কি চলার পথের সঙ্গী হলো?
কেন মিলল না মুক্তি, তা নিয়েই তো ভাবতে হবে আমাদের এবং সেই ভাবনাকে সংহত করার জন্য বলি, এই যে ব্যাংকের পর ব্যাংক থেকে লোপাট হচ্ছে জনগণের টাকা এবং লুণ্ঠনকারীদের কেশাগ্র স্পর্শ করা যাচ্ছে না, তার ভেতরেও কি স্বাধীন রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটা চোখে পড়ছে না?
এই লুণ্ঠনকারীদের বিচারের মুখোমুখি করা না গেলে শোষণ-মুক্তির পথ বহুদূরেই থেকে যাবে। তাতে মুখস্থবিদ্যারই জয় হবে, বাস্তব কোনো সদিচ্ছা না থাকায় জীবনে সমতা আনার পথ হবে ব্যাহত। শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাবে না আপামর সাধারণ মানুষ।
বঙ্গবন্ধু যে ‘নিরাপত্তা বাঁধ’-এর কথা বলেছিলেন, সেই বাঁধটির খুব দরকার এখন।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

আমাদের মুক্তিযুদ্ধটা কোনো মুখস্থবিদ্যানির্ভর ছিল না। একটি ধারাবাহিক আন্দোলনের মাধ্যমেই মানুষ পৌঁছেছিল স্বাধিকারের দাবিতে। বাংলার মানুষ কিন্তু পাকিস্তান কায়েমের জন্য জীবন উজাড় করে দিয়েছিল। সেই বাংলার মানুষই পাকিস্তান কায়েমের কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পেরেছিল, যে পথে চলেছে দেশ, তা ঔপনিবেশিক শাসনেরই পথ। শুধু শাসক বদল হয়েছে। ব্রিটিশদের জায়গায়, শোষকের জায়গায় এসেছে পশ্চিম পাকিস্তানি মুসলমানরা।
ইতিহাস এগিয়েছে এই দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্য দিয়ে। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিকে কঠোর হাতে দমন করা শুরু করেছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এবং জন্মের এক দশকের মধ্যেই দেশে নিয়ে এসেছিল সামরিক শাসন। আইয়ুব খান হয়ে উঠেছিলেন সর্বেসর্বা। প্রবীণ রাজনীতিবিদদের রাজনীতির পথ সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছিলেন মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে। কীভাবে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন হলো, কীভাবে ছাত্র-জনতা জীবনকে বাজি রেখে আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে গেল, সে ইতিহাস বারবার বর্ণিত হয়েছে। ইতিহাস-সচেতন মানুষ সে কথা জানে।
এই ‘জানে’ শব্দটির সঙ্গেই আজ বোঝাপড়া হবে। কয়েকটি সাল এবং কয়েকটি নাম মুখস্থ করে রাখলেই কি মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করা যায়? তারই ভিত্তিতে কি নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে প্রমাণ করা যায়? স্বাধীনতার অর্ধযুগ পার হয়ে যাওয়ার পরও ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি’ এবং ‘মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি’ কেন থাকবে একটা দেশে? এ রকম আর কোনো দেশের নাম কি মনে পড়বে, যে দেশে ‘মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি’ অর্থাৎ দেশবিরোধী কোনো শক্তি আছে? এ প্রশ্নটি খুব জরুরি আজকের পরিপ্রেক্ষিতে।
দুই.‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের’ রাজনীতিবিদেরা মুখস্থ কয়েকটি সাল ও কয়েকটি নাম বা ঘটনার উল্লেখ করে বোঝাতে চান, এ দেশের ইতিহাস তিনি জানেন এবং জানেন বলেই এই ইতিহাসকে সঙ্গী করে রাজনীতি করার সব অধিকার তাঁর আছে। কিন্তু তিনি ভুলে যান, এই ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিল একটি স্বপ্নের দেশ গড়ে তোলার জন্য। দেশের এই সংগ্রামী ইতিহাস জানা প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য বটে, কিন্তু শুধু ইতিহাস রোমন্থনে দেশ এগিয়ে যায় না। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সময়োপযোগী পরিকল্পনা লাগে। যে যে সংকটের বিরুদ্ধে ছিল সংগ্রাম, সেই সংকটগুলো উপড়ে ফেলতে হয় রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে। দেশপ্রেম বক্তৃতায় বা ইতিহাস-অধ্যয়নে সীমাবদ্ধ থাকে না, ব্যক্তিজীবনে, সমাজজীবনে, রাষ্ট্রীয় জীবনে তার প্রয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ কথাটি বোঝার চেষ্টা করব আমরা ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কিছু ভাষণ থেকে এবং এখনই মনে করিয়ে দেব, ১৯৬৬ সালের মে মাসে গ্রেপ্তার হয়ে যাওয়ার পর একনাগাড়ে দীর্ঘ সময় যখন কারাগারে অবরুদ্ধ ছিলেন, তখনো ছয় দফার পক্ষে কতটা আন্তরিক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ‘কারাগারের রোজনামচা’য় তার প্রমাণ আমরা বারবার পাই।
কথাগুলো বলার সময় মনে রাখব, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এবং তাদের খবর প্রচারে দৈনিক ইত্তেফাকের যে ভূমিকা, সে কথাগুলো স্মরণ না করলে ইতিহাস ঠিকভাবে উঠে আসে না। অনেকেই ইতিহাসচর্চা করার সময় ছয় দফা আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কালে ছাত্রলীগ ও ইত্তেফাকের ভূমিকাকে গৌণ করে তোলেন। মনে রাখা দরকার, সেই কঠিন সময়ে আওয়ামী নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সবাইকে কারাগারে পুরে ফেলেছিল সরকার। ছাত্রলীগই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সেই আন্দোলন। নিষেধাজ্ঞা আসার আগপর্যন্ত ইত্তেফাকই দিয়েছিল তার ইতিবাচক প্রচার। সেই সময়ের অন্যান্য পত্র-পত্রিকার দিকে চোখ রাখলেও ইত্তেফাকের এই ভূমিকা প্রমাণিত হবে। প্রয়োজন ঠিকভাবে গবেষণা করা।
তিন. আমরা ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ভাষণগুলোর আলোকেই আলোচনা করব। এর আগে বলে রাখা দরকার, পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৬৬ সালের ২০ মার্চ পাকিস্তান মুসলিম লীগের কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা দাবির তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি ছয় দফা নিয়ে বিতর্ক করতে উৎসুক।
আওয়ামী লীগ এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে। ২১ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ ভুট্টোকে নিজ পছন্দ অনুযায়ী প্রদেশের যেকোনো স্থানে ২৭ মার্চ জনসভার আয়োজন করার আহ্বান জানান। ভুট্টো তাতে সাড়া দেননি। ১২ এপ্রিল ঢাকায় এসে ভুট্টো আবার চ্যালেঞ্জ ছোড়েন। বঙ্গবন্ধু এবারও সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন এবং ২৪ এপ্রিল পল্টন ময়দানে জনসমাবেশে সামনাসামনি আলোচনা করার জন্য ভুট্টোকে আহ্বান জানান। ভুট্টো জানান, ২৪ এপ্রিল নয়, ১৭ এপ্রিল তিনি বিতর্ক করতে প্রস্তুত আছেন।
রাজনৈতিক মহলেই শুধু নয়, সাধারণ জনগণের মধ্যেও এতে সাড়া পড়ে যায়। কিন্তু আগেরবারের মতোই এবারও ভুট্টো পিছু হটেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে যশোরে বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দেন, তা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছিলেন, ভুট্টোর এই পশ্চাদপসরণ শুধু তাঁর একারই পরাজয় নয়, তা সামগ্রিকভাবে বর্তমান সরকারেরই পরাজয়। কেন্দ্রীয় সরকারের কেউই ছয় দফা প্রশ্নে সামনাসামনি দাঁড়াতে সক্ষম নন। আসলে ছয় দফার কাছে পাকিস্তানি সরকারের নৈতিক পরাজয় শুরু হয়ে গিয়েছিল এখান থেকেই। এর আগে মুসলিম লীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন নেতা ছয় দফার সমালোচনা করেছিলেন বটে, কিন্তু ভুট্টোর এই পশ্চাদপসরণ মূলত ছয় দফার গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়।
চার. কেন ছয় দফা দেওয়া হলো—দেশের বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতাকালে বঙ্গবন্ধু তার ব্যাখ্যা করেন। ছয় দফার ব্যাপারে তিনি কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন, তার প্রমাণ রয়েছে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের দীঘিরপাড়ে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতায়। তিনি বলেছিলেন, ‘ছয় দফা দাবি উত্থাপনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের কেউ ব্যক্তিগত কোনো আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করতে চায় না। সরকার যদি ছয় দফা মেনে নেয়, তবে আমি আদালতে হলফ করে লিখিত চুক্তি সম্পাদন করে আজীবন রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণে প্রস্তুত আছি।’ বঙ্গবন্ধু এই ভাষণ দিয়েছিলেন ১৯৬৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি।
এই প্রতিজ্ঞার একটি ইঙ্গিত আগেই পাওয়া যায় ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে দেওয়া এক ভাষণে। পাঠকদের মনে করিয়ে দেব, বঙ্গবন্ধুর বয়স তখন মাত্র ৪৬ বছর। সেই বয়সে ছয় দফার প্রবক্তা বলছেন, ‘আমরাও আজ বার্ধক্যের কোঠায় এসে পৌঁছতে চলেছি।নতুন দিগন্তে আজ আমরা নতুন মুখের দেখা পাচ্ছি। অন্তত এই নতুনদের জীবনকে যাতে আমরা বঞ্চনা ও নির্যাতনমুক্ত করে তাদের 
সুখ ও সমৃদ্ধির নিশ্চয়তার সন্ধান দিয়ে যেতে পারি, সে জন্যই আসুন, আমরা কোরবানির জন্য প্রস্তুত হই।’
এ তাহলে কিসের ইঙ্গিত? প্রস্তাবিত ছয় দফায়ই রয়েছে নতুন প্রজন্মের মুক্তির ইঙ্গিত। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় পুরো পূর্ব পাকিস্তান ছিল অরক্ষিত। সে কথা স্মরণ করে ২৬ মার্চ সন্দ্বীপে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বিগত যুদ্ধের সময় দেখা গেছে, গোটা পূর্ব পাকিস্তানই সন্দ্বীপের মতো একটি দ্বীপ। সারা বিশ্বের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের কোনো সম্পর্ক ছিল না। বিগত ১৮ বছর প্রদেশের ওপর দিয়ে অত্যাচার ও শোষণের ঝঞ্ঝা বয়ে গেছে। শোষণ-জর্জরিত পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ আজ হৃতসর্বস্ব। দেশের রাজধানীর ওপর পূর্ব পাকিস্তানের কোনো কর্তৃত্ব নেই, মূলধনের ওপর কোনো এখতিয়ার নেই। তার ওপর সামরিক বাহিনীর তিনটি সদর দপ্তরই পশ্চিম পাকিস্তানে। পূর্ব পাকিস্তানের যথাযোগ্য প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও নেই। তাই পূর্ব পাকিস্তানকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সর্বনাশের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য একটি নিরাপত্তা বাঁধের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।’
এই নিরাপত্তা বাঁধটি হলো ছয় দফা। ইঙ্গিতগুলো যে কেউ বুঝতে পারবে। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামটি ছিল নিয়মতান্ত্রিক। সে কথা তিনি বারবার উল্লেখ করেছেন। গৃহযুদ্ধ বাধানোর কোনো মতলবি ধারণার বশবর্তী তিনি হননি। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ২৭ মার্চ তিনি বলেছিলেন, ‘যদিও দেশের দায়িত্বশীল মহল থেকে (অর্থাৎ সরকারি মহল) গৃহযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার ডাক পাওয়া গেছে, তবুও আমরা গৃহযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে রাজি নই। আমাদের সংগ্রাম শান্তিপূর্ণ। আমাদের ওপর আঘাত হানা হলে আমরা প্রত্যাঘাত করব না, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আঘাত সহ্য করব।’
খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ কথা। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানের অবস্থানের কথাই তা প্রমাণ করে। কেন ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা করেননি, কেন ২৫ মার্চ ক্র্যাকডাউনের আগপর্যন্ত তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, তার কারণও এ থেকে প্রস্ফুটিত হয়।
আরেকটি বক্তৃতার উদাহরণ দিচ্ছি। খুলনায় এই বক্তৃতা দিয়েছিলেন তিনি ১৭ এপ্রিল। বলেছিলেন, ‘হিন্দু ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের জাঁতাকলে উপমহাদেশের দশ কোটি মুসলমান বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম হলেই পাকিস্তান দাবি উত্থাপিত হয় এবং মুসলমানরা পাকিস্তান কায়েম করে। আজ সাড়ে পাঁচ কোটি পূর্ব পাকিস্তানিকেও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ছয় দফা আদায় করতে হবে।’
অর্থাৎ হিন্দু, খ্রিষ্টান, মুসলমান, যখন যে সুযোগ পেয়েছে, তখনই সে শোষণ করেছে এই অঞ্চলের মানুষদের। সেই শোষণ থেকেই মুক্তি চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
পাঁচ. তাহলে পরিষ্কারভাবে বলা দরকার, ছয় দফার মাধ্যমে এই অঞ্চলের মানুষের মুক্তির স্বপ্নই দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং নিয়মতান্ত্রিক পথেই আসবে সে মুক্তি, সেটাই ছিল তাঁর স্বপ্ন।দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিদেশি শোষণের অবসান হলো ঠিকই, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে কি পৌঁছাতে পারল দেশ? ঘুষ-দুর্নীতি, পেশিশক্তির ব্যবহার, ধর্মব্যবসা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে কি মুক্তি মিলেছে আমাদের? অসাম্প্রদায়িকতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র কি চলার পথের সঙ্গী হলো?
কেন মিলল না মুক্তি, তা নিয়েই তো ভাবতে হবে আমাদের এবং সেই ভাবনাকে সংহত করার জন্য বলি, এই যে ব্যাংকের পর ব্যাংক থেকে লোপাট হচ্ছে জনগণের টাকা এবং লুণ্ঠনকারীদের কেশাগ্র স্পর্শ করা যাচ্ছে না, তার ভেতরেও কি স্বাধীন রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটা চোখে পড়ছে না?
এই লুণ্ঠনকারীদের বিচারের মুখোমুখি করা না গেলে শোষণ-মুক্তির পথ বহুদূরেই থেকে যাবে। তাতে মুখস্থবিদ্যারই জয় হবে, বাস্তব কোনো সদিচ্ছা না থাকায় জীবনে সমতা আনার পথ হবে ব্যাহত। শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাবে না আপামর সাধারণ মানুষ।
বঙ্গবন্ধু যে ‘নিরাপত্তা বাঁধ’-এর কথা বলেছিলেন, সেই বাঁধটির খুব দরকার এখন।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

জাহীদ রেজা নূর

আমাদের মুক্তিযুদ্ধটা কোনো মুখস্থবিদ্যানির্ভর ছিল না। একটি ধারাবাহিক আন্দোলনের মাধ্যমেই মানুষ পৌঁছেছিল স্বাধিকারের দাবিতে। বাংলার মানুষ কিন্তু পাকিস্তান কায়েমের জন্য জীবন উজাড় করে দিয়েছিল। সেই বাংলার মানুষই পাকিস্তান কায়েমের কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পেরেছিল, যে পথে চলেছে দেশ, তা ঔপনিবেশিক শাসনেরই পথ। শুধু শাসক বদল হয়েছে। ব্রিটিশদের জায়গায়, শোষকের জায়গায় এসেছে পশ্চিম পাকিস্তানি মুসলমানরা।
ইতিহাস এগিয়েছে এই দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্য দিয়ে। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিকে কঠোর হাতে দমন করা শুরু করেছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এবং জন্মের এক দশকের মধ্যেই দেশে নিয়ে এসেছিল সামরিক শাসন। আইয়ুব খান হয়ে উঠেছিলেন সর্বেসর্বা। প্রবীণ রাজনীতিবিদদের রাজনীতির পথ সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছিলেন মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে। কীভাবে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন হলো, কীভাবে ছাত্র-জনতা জীবনকে বাজি রেখে আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে গেল, সে ইতিহাস বারবার বর্ণিত হয়েছে। ইতিহাস-সচেতন মানুষ সে কথা জানে।
এই ‘জানে’ শব্দটির সঙ্গেই আজ বোঝাপড়া হবে। কয়েকটি সাল এবং কয়েকটি নাম মুখস্থ করে রাখলেই কি মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করা যায়? তারই ভিত্তিতে কি নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে প্রমাণ করা যায়? স্বাধীনতার অর্ধযুগ পার হয়ে যাওয়ার পরও ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি’ এবং ‘মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি’ কেন থাকবে একটা দেশে? এ রকম আর কোনো দেশের নাম কি মনে পড়বে, যে দেশে ‘মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি’ অর্থাৎ দেশবিরোধী কোনো শক্তি আছে? এ প্রশ্নটি খুব জরুরি আজকের পরিপ্রেক্ষিতে।
দুই.‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের’ রাজনীতিবিদেরা মুখস্থ কয়েকটি সাল ও কয়েকটি নাম বা ঘটনার উল্লেখ করে বোঝাতে চান, এ দেশের ইতিহাস তিনি জানেন এবং জানেন বলেই এই ইতিহাসকে সঙ্গী করে রাজনীতি করার সব অধিকার তাঁর আছে। কিন্তু তিনি ভুলে যান, এই ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিল একটি স্বপ্নের দেশ গড়ে তোলার জন্য। দেশের এই সংগ্রামী ইতিহাস জানা প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য বটে, কিন্তু শুধু ইতিহাস রোমন্থনে দেশ এগিয়ে যায় না। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সময়োপযোগী পরিকল্পনা লাগে। যে যে সংকটের বিরুদ্ধে ছিল সংগ্রাম, সেই সংকটগুলো উপড়ে ফেলতে হয় রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে। দেশপ্রেম বক্তৃতায় বা ইতিহাস-অধ্যয়নে সীমাবদ্ধ থাকে না, ব্যক্তিজীবনে, সমাজজীবনে, রাষ্ট্রীয় জীবনে তার প্রয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ কথাটি বোঝার চেষ্টা করব আমরা ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কিছু ভাষণ থেকে এবং এখনই মনে করিয়ে দেব, ১৯৬৬ সালের মে মাসে গ্রেপ্তার হয়ে যাওয়ার পর একনাগাড়ে দীর্ঘ সময় যখন কারাগারে অবরুদ্ধ ছিলেন, তখনো ছয় দফার পক্ষে কতটা আন্তরিক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ‘কারাগারের রোজনামচা’য় তার প্রমাণ আমরা বারবার পাই।
কথাগুলো বলার সময় মনে রাখব, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এবং তাদের খবর প্রচারে দৈনিক ইত্তেফাকের যে ভূমিকা, সে কথাগুলো স্মরণ না করলে ইতিহাস ঠিকভাবে উঠে আসে না। অনেকেই ইতিহাসচর্চা করার সময় ছয় দফা আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কালে ছাত্রলীগ ও ইত্তেফাকের ভূমিকাকে গৌণ করে তোলেন। মনে রাখা দরকার, সেই কঠিন সময়ে আওয়ামী নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সবাইকে কারাগারে পুরে ফেলেছিল সরকার। ছাত্রলীগই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সেই আন্দোলন। নিষেধাজ্ঞা আসার আগপর্যন্ত ইত্তেফাকই দিয়েছিল তার ইতিবাচক প্রচার। সেই সময়ের অন্যান্য পত্র-পত্রিকার দিকে চোখ রাখলেও ইত্তেফাকের এই ভূমিকা প্রমাণিত হবে। প্রয়োজন ঠিকভাবে গবেষণা করা।
তিন. আমরা ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ভাষণগুলোর আলোকেই আলোচনা করব। এর আগে বলে রাখা দরকার, পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৬৬ সালের ২০ মার্চ পাকিস্তান মুসলিম লীগের কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা দাবির তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি ছয় দফা নিয়ে বিতর্ক করতে উৎসুক।
আওয়ামী লীগ এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে। ২১ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ ভুট্টোকে নিজ পছন্দ অনুযায়ী প্রদেশের যেকোনো স্থানে ২৭ মার্চ জনসভার আয়োজন করার আহ্বান জানান। ভুট্টো তাতে সাড়া দেননি। ১২ এপ্রিল ঢাকায় এসে ভুট্টো আবার চ্যালেঞ্জ ছোড়েন। বঙ্গবন্ধু এবারও সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন এবং ২৪ এপ্রিল পল্টন ময়দানে জনসমাবেশে সামনাসামনি আলোচনা করার জন্য ভুট্টোকে আহ্বান জানান। ভুট্টো জানান, ২৪ এপ্রিল নয়, ১৭ এপ্রিল তিনি বিতর্ক করতে প্রস্তুত আছেন।
রাজনৈতিক মহলেই শুধু নয়, সাধারণ জনগণের মধ্যেও এতে সাড়া পড়ে যায়। কিন্তু আগেরবারের মতোই এবারও ভুট্টো পিছু হটেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে যশোরে বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দেন, তা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছিলেন, ভুট্টোর এই পশ্চাদপসরণ শুধু তাঁর একারই পরাজয় নয়, তা সামগ্রিকভাবে বর্তমান সরকারেরই পরাজয়। কেন্দ্রীয় সরকারের কেউই ছয় দফা প্রশ্নে সামনাসামনি দাঁড়াতে সক্ষম নন। আসলে ছয় দফার কাছে পাকিস্তানি সরকারের নৈতিক পরাজয় শুরু হয়ে গিয়েছিল এখান থেকেই। এর আগে মুসলিম লীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন নেতা ছয় দফার সমালোচনা করেছিলেন বটে, কিন্তু ভুট্টোর এই পশ্চাদপসরণ মূলত ছয় দফার গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়।
চার. কেন ছয় দফা দেওয়া হলো—দেশের বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতাকালে বঙ্গবন্ধু তার ব্যাখ্যা করেন। ছয় দফার ব্যাপারে তিনি কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন, তার প্রমাণ রয়েছে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের দীঘিরপাড়ে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতায়। তিনি বলেছিলেন, ‘ছয় দফা দাবি উত্থাপনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের কেউ ব্যক্তিগত কোনো আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করতে চায় না। সরকার যদি ছয় দফা মেনে নেয়, তবে আমি আদালতে হলফ করে লিখিত চুক্তি সম্পাদন করে আজীবন রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণে প্রস্তুত আছি।’ বঙ্গবন্ধু এই ভাষণ দিয়েছিলেন ১৯৬৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি।
এই প্রতিজ্ঞার একটি ইঙ্গিত আগেই পাওয়া যায় ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে দেওয়া এক ভাষণে। পাঠকদের মনে করিয়ে দেব, বঙ্গবন্ধুর বয়স তখন মাত্র ৪৬ বছর। সেই বয়সে ছয় দফার প্রবক্তা বলছেন, ‘আমরাও আজ বার্ধক্যের কোঠায় এসে পৌঁছতে চলেছি।নতুন দিগন্তে আজ আমরা নতুন মুখের দেখা পাচ্ছি। অন্তত এই নতুনদের জীবনকে যাতে আমরা বঞ্চনা ও নির্যাতনমুক্ত করে তাদের 
সুখ ও সমৃদ্ধির নিশ্চয়তার সন্ধান দিয়ে যেতে পারি, সে জন্যই আসুন, আমরা কোরবানির জন্য প্রস্তুত হই।’
এ তাহলে কিসের ইঙ্গিত? প্রস্তাবিত ছয় দফায়ই রয়েছে নতুন প্রজন্মের মুক্তির ইঙ্গিত। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় পুরো পূর্ব পাকিস্তান ছিল অরক্ষিত। সে কথা স্মরণ করে ২৬ মার্চ সন্দ্বীপে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বিগত যুদ্ধের সময় দেখা গেছে, গোটা পূর্ব পাকিস্তানই সন্দ্বীপের মতো একটি দ্বীপ। সারা বিশ্বের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের কোনো সম্পর্ক ছিল না। বিগত ১৮ বছর প্রদেশের ওপর দিয়ে অত্যাচার ও শোষণের ঝঞ্ঝা বয়ে গেছে। শোষণ-জর্জরিত পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ আজ হৃতসর্বস্ব। দেশের রাজধানীর ওপর পূর্ব পাকিস্তানের কোনো কর্তৃত্ব নেই, মূলধনের ওপর কোনো এখতিয়ার নেই। তার ওপর সামরিক বাহিনীর তিনটি সদর দপ্তরই পশ্চিম পাকিস্তানে। পূর্ব পাকিস্তানের যথাযোগ্য প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও নেই। তাই পূর্ব পাকিস্তানকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সর্বনাশের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য একটি নিরাপত্তা বাঁধের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।’
এই নিরাপত্তা বাঁধটি হলো ছয় দফা। ইঙ্গিতগুলো যে কেউ বুঝতে পারবে। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামটি ছিল নিয়মতান্ত্রিক। সে কথা তিনি বারবার উল্লেখ করেছেন। গৃহযুদ্ধ বাধানোর কোনো মতলবি ধারণার বশবর্তী তিনি হননি। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ২৭ মার্চ তিনি বলেছিলেন, ‘যদিও দেশের দায়িত্বশীল মহল থেকে (অর্থাৎ সরকারি মহল) গৃহযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার ডাক পাওয়া গেছে, তবুও আমরা গৃহযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে রাজি নই। আমাদের সংগ্রাম শান্তিপূর্ণ। আমাদের ওপর আঘাত হানা হলে আমরা প্রত্যাঘাত করব না, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আঘাত সহ্য করব।’
খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ কথা। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানের অবস্থানের কথাই তা প্রমাণ করে। কেন ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা করেননি, কেন ২৫ মার্চ ক্র্যাকডাউনের আগপর্যন্ত তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, তার কারণও এ থেকে প্রস্ফুটিত হয়।
আরেকটি বক্তৃতার উদাহরণ দিচ্ছি। খুলনায় এই বক্তৃতা দিয়েছিলেন তিনি ১৭ এপ্রিল। বলেছিলেন, ‘হিন্দু ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের জাঁতাকলে উপমহাদেশের দশ কোটি মুসলমান বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম হলেই পাকিস্তান দাবি উত্থাপিত হয় এবং মুসলমানরা পাকিস্তান কায়েম করে। আজ সাড়ে পাঁচ কোটি পূর্ব পাকিস্তানিকেও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ছয় দফা আদায় করতে হবে।’
অর্থাৎ হিন্দু, খ্রিষ্টান, মুসলমান, যখন যে সুযোগ পেয়েছে, তখনই সে শোষণ করেছে এই অঞ্চলের মানুষদের। সেই শোষণ থেকেই মুক্তি চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
পাঁচ. তাহলে পরিষ্কারভাবে বলা দরকার, ছয় দফার মাধ্যমে এই অঞ্চলের মানুষের মুক্তির স্বপ্নই দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং নিয়মতান্ত্রিক পথেই আসবে সে মুক্তি, সেটাই ছিল তাঁর স্বপ্ন।দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিদেশি শোষণের অবসান হলো ঠিকই, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে কি পৌঁছাতে পারল দেশ? ঘুষ-দুর্নীতি, পেশিশক্তির ব্যবহার, ধর্মব্যবসা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে কি মুক্তি মিলেছে আমাদের? অসাম্প্রদায়িকতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র কি চলার পথের সঙ্গী হলো?
কেন মিলল না মুক্তি, তা নিয়েই তো ভাবতে হবে আমাদের এবং সেই ভাবনাকে সংহত করার জন্য বলি, এই যে ব্যাংকের পর ব্যাংক থেকে লোপাট হচ্ছে জনগণের টাকা এবং লুণ্ঠনকারীদের কেশাগ্র স্পর্শ করা যাচ্ছে না, তার ভেতরেও কি স্বাধীন রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটা চোখে পড়ছে না?
এই লুণ্ঠনকারীদের বিচারের মুখোমুখি করা না গেলে শোষণ-মুক্তির পথ বহুদূরেই থেকে যাবে। তাতে মুখস্থবিদ্যারই জয় হবে, বাস্তব কোনো সদিচ্ছা না থাকায় জীবনে সমতা আনার পথ হবে ব্যাহত। শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাবে না আপামর সাধারণ মানুষ।
বঙ্গবন্ধু যে ‘নিরাপত্তা বাঁধ’-এর কথা বলেছিলেন, সেই বাঁধটির খুব দরকার এখন।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

আমাদের মুক্তিযুদ্ধটা কোনো মুখস্থবিদ্যানির্ভর ছিল না। একটি ধারাবাহিক আন্দোলনের মাধ্যমেই মানুষ পৌঁছেছিল স্বাধিকারের দাবিতে। বাংলার মানুষ কিন্তু পাকিস্তান কায়েমের জন্য জীবন উজাড় করে দিয়েছিল। সেই বাংলার মানুষই পাকিস্তান কায়েমের কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পেরেছিল, যে পথে চলেছে দেশ, তা ঔপনিবেশিক শাসনেরই পথ। শুধু শাসক বদল হয়েছে। ব্রিটিশদের জায়গায়, শোষকের জায়গায় এসেছে পশ্চিম পাকিস্তানি মুসলমানরা।
ইতিহাস এগিয়েছে এই দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্য দিয়ে। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিকে কঠোর হাতে দমন করা শুরু করেছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এবং জন্মের এক দশকের মধ্যেই দেশে নিয়ে এসেছিল সামরিক শাসন। আইয়ুব খান হয়ে উঠেছিলেন সর্বেসর্বা। প্রবীণ রাজনীতিবিদদের রাজনীতির পথ সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছিলেন মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে। কীভাবে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন হলো, কীভাবে ছাত্র-জনতা জীবনকে বাজি রেখে আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে গেল, সে ইতিহাস বারবার বর্ণিত হয়েছে। ইতিহাস-সচেতন মানুষ সে কথা জানে।
এই ‘জানে’ শব্দটির সঙ্গেই আজ বোঝাপড়া হবে। কয়েকটি সাল এবং কয়েকটি নাম মুখস্থ করে রাখলেই কি মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করা যায়? তারই ভিত্তিতে কি নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে প্রমাণ করা যায়? স্বাধীনতার অর্ধযুগ পার হয়ে যাওয়ার পরও ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি’ এবং ‘মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি’ কেন থাকবে একটা দেশে? এ রকম আর কোনো দেশের নাম কি মনে পড়বে, যে দেশে ‘মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি’ অর্থাৎ দেশবিরোধী কোনো শক্তি আছে? এ প্রশ্নটি খুব জরুরি আজকের পরিপ্রেক্ষিতে।
দুই.‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের’ রাজনীতিবিদেরা মুখস্থ কয়েকটি সাল ও কয়েকটি নাম বা ঘটনার উল্লেখ করে বোঝাতে চান, এ দেশের ইতিহাস তিনি জানেন এবং জানেন বলেই এই ইতিহাসকে সঙ্গী করে রাজনীতি করার সব অধিকার তাঁর আছে। কিন্তু তিনি ভুলে যান, এই ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিল একটি স্বপ্নের দেশ গড়ে তোলার জন্য। দেশের এই সংগ্রামী ইতিহাস জানা প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য বটে, কিন্তু শুধু ইতিহাস রোমন্থনে দেশ এগিয়ে যায় না। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সময়োপযোগী পরিকল্পনা লাগে। যে যে সংকটের বিরুদ্ধে ছিল সংগ্রাম, সেই সংকটগুলো উপড়ে ফেলতে হয় রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে। দেশপ্রেম বক্তৃতায় বা ইতিহাস-অধ্যয়নে সীমাবদ্ধ থাকে না, ব্যক্তিজীবনে, সমাজজীবনে, রাষ্ট্রীয় জীবনে তার প্রয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ কথাটি বোঝার চেষ্টা করব আমরা ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কিছু ভাষণ থেকে এবং এখনই মনে করিয়ে দেব, ১৯৬৬ সালের মে মাসে গ্রেপ্তার হয়ে যাওয়ার পর একনাগাড়ে দীর্ঘ সময় যখন কারাগারে অবরুদ্ধ ছিলেন, তখনো ছয় দফার পক্ষে কতটা আন্তরিক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ‘কারাগারের রোজনামচা’য় তার প্রমাণ আমরা বারবার পাই।
কথাগুলো বলার সময় মনে রাখব, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এবং তাদের খবর প্রচারে দৈনিক ইত্তেফাকের যে ভূমিকা, সে কথাগুলো স্মরণ না করলে ইতিহাস ঠিকভাবে উঠে আসে না। অনেকেই ইতিহাসচর্চা করার সময় ছয় দফা আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কালে ছাত্রলীগ ও ইত্তেফাকের ভূমিকাকে গৌণ করে তোলেন। মনে রাখা দরকার, সেই কঠিন সময়ে আওয়ামী নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সবাইকে কারাগারে পুরে ফেলেছিল সরকার। ছাত্রলীগই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সেই আন্দোলন। নিষেধাজ্ঞা আসার আগপর্যন্ত ইত্তেফাকই দিয়েছিল তার ইতিবাচক প্রচার। সেই সময়ের অন্যান্য পত্র-পত্রিকার দিকে চোখ রাখলেও ইত্তেফাকের এই ভূমিকা প্রমাণিত হবে। প্রয়োজন ঠিকভাবে গবেষণা করা।
তিন. আমরা ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ভাষণগুলোর আলোকেই আলোচনা করব। এর আগে বলে রাখা দরকার, পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৬৬ সালের ২০ মার্চ পাকিস্তান মুসলিম লীগের কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা দাবির তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি ছয় দফা নিয়ে বিতর্ক করতে উৎসুক।
আওয়ামী লীগ এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে। ২১ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ ভুট্টোকে নিজ পছন্দ অনুযায়ী প্রদেশের যেকোনো স্থানে ২৭ মার্চ জনসভার আয়োজন করার আহ্বান জানান। ভুট্টো তাতে সাড়া দেননি। ১২ এপ্রিল ঢাকায় এসে ভুট্টো আবার চ্যালেঞ্জ ছোড়েন। বঙ্গবন্ধু এবারও সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন এবং ২৪ এপ্রিল পল্টন ময়দানে জনসমাবেশে সামনাসামনি আলোচনা করার জন্য ভুট্টোকে আহ্বান জানান। ভুট্টো জানান, ২৪ এপ্রিল নয়, ১৭ এপ্রিল তিনি বিতর্ক করতে প্রস্তুত আছেন।
রাজনৈতিক মহলেই শুধু নয়, সাধারণ জনগণের মধ্যেও এতে সাড়া পড়ে যায়। কিন্তু আগেরবারের মতোই এবারও ভুট্টো পিছু হটেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে যশোরে বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দেন, তা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছিলেন, ভুট্টোর এই পশ্চাদপসরণ শুধু তাঁর একারই পরাজয় নয়, তা সামগ্রিকভাবে বর্তমান সরকারেরই পরাজয়। কেন্দ্রীয় সরকারের কেউই ছয় দফা প্রশ্নে সামনাসামনি দাঁড়াতে সক্ষম নন। আসলে ছয় দফার কাছে পাকিস্তানি সরকারের নৈতিক পরাজয় শুরু হয়ে গিয়েছিল এখান থেকেই। এর আগে মুসলিম লীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন নেতা ছয় দফার সমালোচনা করেছিলেন বটে, কিন্তু ভুট্টোর এই পশ্চাদপসরণ মূলত ছয় দফার গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়।
চার. কেন ছয় দফা দেওয়া হলো—দেশের বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতাকালে বঙ্গবন্ধু তার ব্যাখ্যা করেন। ছয় দফার ব্যাপারে তিনি কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন, তার প্রমাণ রয়েছে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের দীঘিরপাড়ে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতায়। তিনি বলেছিলেন, ‘ছয় দফা দাবি উত্থাপনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের কেউ ব্যক্তিগত কোনো আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করতে চায় না। সরকার যদি ছয় দফা মেনে নেয়, তবে আমি আদালতে হলফ করে লিখিত চুক্তি সম্পাদন করে আজীবন রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণে প্রস্তুত আছি।’ বঙ্গবন্ধু এই ভাষণ দিয়েছিলেন ১৯৬৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি।
এই প্রতিজ্ঞার একটি ইঙ্গিত আগেই পাওয়া যায় ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে দেওয়া এক ভাষণে। পাঠকদের মনে করিয়ে দেব, বঙ্গবন্ধুর বয়স তখন মাত্র ৪৬ বছর। সেই বয়সে ছয় দফার প্রবক্তা বলছেন, ‘আমরাও আজ বার্ধক্যের কোঠায় এসে পৌঁছতে চলেছি।নতুন দিগন্তে আজ আমরা নতুন মুখের দেখা পাচ্ছি। অন্তত এই নতুনদের জীবনকে যাতে আমরা বঞ্চনা ও নির্যাতনমুক্ত করে তাদের 
সুখ ও সমৃদ্ধির নিশ্চয়তার সন্ধান দিয়ে যেতে পারি, সে জন্যই আসুন, আমরা কোরবানির জন্য প্রস্তুত হই।’
এ তাহলে কিসের ইঙ্গিত? প্রস্তাবিত ছয় দফায়ই রয়েছে নতুন প্রজন্মের মুক্তির ইঙ্গিত। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় পুরো পূর্ব পাকিস্তান ছিল অরক্ষিত। সে কথা স্মরণ করে ২৬ মার্চ সন্দ্বীপে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বিগত যুদ্ধের সময় দেখা গেছে, গোটা পূর্ব পাকিস্তানই সন্দ্বীপের মতো একটি দ্বীপ। সারা বিশ্বের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের কোনো সম্পর্ক ছিল না। বিগত ১৮ বছর প্রদেশের ওপর দিয়ে অত্যাচার ও শোষণের ঝঞ্ঝা বয়ে গেছে। শোষণ-জর্জরিত পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ আজ হৃতসর্বস্ব। দেশের রাজধানীর ওপর পূর্ব পাকিস্তানের কোনো কর্তৃত্ব নেই, মূলধনের ওপর কোনো এখতিয়ার নেই। তার ওপর সামরিক বাহিনীর তিনটি সদর দপ্তরই পশ্চিম পাকিস্তানে। পূর্ব পাকিস্তানের যথাযোগ্য প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও নেই। তাই পূর্ব পাকিস্তানকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সর্বনাশের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য একটি নিরাপত্তা বাঁধের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।’
এই নিরাপত্তা বাঁধটি হলো ছয় দফা। ইঙ্গিতগুলো যে কেউ বুঝতে পারবে। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামটি ছিল নিয়মতান্ত্রিক। সে কথা তিনি বারবার উল্লেখ করেছেন। গৃহযুদ্ধ বাধানোর কোনো মতলবি ধারণার বশবর্তী তিনি হননি। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ২৭ মার্চ তিনি বলেছিলেন, ‘যদিও দেশের দায়িত্বশীল মহল থেকে (অর্থাৎ সরকারি মহল) গৃহযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার ডাক পাওয়া গেছে, তবুও আমরা গৃহযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে রাজি নই। আমাদের সংগ্রাম শান্তিপূর্ণ। আমাদের ওপর আঘাত হানা হলে আমরা প্রত্যাঘাত করব না, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আঘাত সহ্য করব।’
খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ কথা। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানের অবস্থানের কথাই তা প্রমাণ করে। কেন ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা করেননি, কেন ২৫ মার্চ ক্র্যাকডাউনের আগপর্যন্ত তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, তার কারণও এ থেকে প্রস্ফুটিত হয়।
আরেকটি বক্তৃতার উদাহরণ দিচ্ছি। খুলনায় এই বক্তৃতা দিয়েছিলেন তিনি ১৭ এপ্রিল। বলেছিলেন, ‘হিন্দু ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের জাঁতাকলে উপমহাদেশের দশ কোটি মুসলমান বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম হলেই পাকিস্তান দাবি উত্থাপিত হয় এবং মুসলমানরা পাকিস্তান কায়েম করে। আজ সাড়ে পাঁচ কোটি পূর্ব পাকিস্তানিকেও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ছয় দফা আদায় করতে হবে।’
অর্থাৎ হিন্দু, খ্রিষ্টান, মুসলমান, যখন যে সুযোগ পেয়েছে, তখনই সে শোষণ করেছে এই অঞ্চলের মানুষদের। সেই শোষণ থেকেই মুক্তি চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
পাঁচ. তাহলে পরিষ্কারভাবে বলা দরকার, ছয় দফার মাধ্যমে এই অঞ্চলের মানুষের মুক্তির স্বপ্নই দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং নিয়মতান্ত্রিক পথেই আসবে সে মুক্তি, সেটাই ছিল তাঁর স্বপ্ন।দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিদেশি শোষণের অবসান হলো ঠিকই, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে কি পৌঁছাতে পারল দেশ? ঘুষ-দুর্নীতি, পেশিশক্তির ব্যবহার, ধর্মব্যবসা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে কি মুক্তি মিলেছে আমাদের? অসাম্প্রদায়িকতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র কি চলার পথের সঙ্গী হলো?
কেন মিলল না মুক্তি, তা নিয়েই তো ভাবতে হবে আমাদের এবং সেই ভাবনাকে সংহত করার জন্য বলি, এই যে ব্যাংকের পর ব্যাংক থেকে লোপাট হচ্ছে জনগণের টাকা এবং লুণ্ঠনকারীদের কেশাগ্র স্পর্শ করা যাচ্ছে না, তার ভেতরেও কি স্বাধীন রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটা চোখে পড়ছে না?
এই লুণ্ঠনকারীদের বিচারের মুখোমুখি করা না গেলে শোষণ-মুক্তির পথ বহুদূরেই থেকে যাবে। তাতে মুখস্থবিদ্যারই জয় হবে, বাস্তব কোনো সদিচ্ছা না থাকায় জীবনে সমতা আনার পথ হবে ব্যাহত। শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাবে না আপামর সাধারণ মানুষ।
বঙ্গবন্ধু যে ‘নিরাপত্তা বাঁধ’-এর কথা বলেছিলেন, সেই বাঁধটির খুব দরকার এখন।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা


গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।


আমাদের মুক্তিযুদ্ধটা কোনো মুখস্থবিদ্যানির্ভর ছিল না। একটি ধারাবাহিক আন্দোলনের মাধ্যমেই মানুষ পৌঁছেছিল স্বাধিকারের দাবিতে। বাংলার মানুষ কিন্তু পাকিস্তান কায়েমের জন্য জীবন উজাড় করে দিয়েছিল। সেই বাংলার মানুষই পাকিস্তান কায়েমের কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পেরেছিল
০৫ ডিসেম্বর ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]


আমাদের মুক্তিযুদ্ধটা কোনো মুখস্থবিদ্যানির্ভর ছিল না। একটি ধারাবাহিক আন্দোলনের মাধ্যমেই মানুষ পৌঁছেছিল স্বাধিকারের দাবিতে। বাংলার মানুষ কিন্তু পাকিস্তান কায়েমের জন্য জীবন উজাড় করে দিয়েছিল। সেই বাংলার মানুষই পাকিস্তান কায়েমের কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পেরেছিল
০৫ ডিসেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।


আমাদের মুক্তিযুদ্ধটা কোনো মুখস্থবিদ্যানির্ভর ছিল না। একটি ধারাবাহিক আন্দোলনের মাধ্যমেই মানুষ পৌঁছেছিল স্বাধিকারের দাবিতে। বাংলার মানুষ কিন্তু পাকিস্তান কায়েমের জন্য জীবন উজাড় করে দিয়েছিল। সেই বাংলার মানুষই পাকিস্তান কায়েমের কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পেরেছিল
০৫ ডিসেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।


আমাদের মুক্তিযুদ্ধটা কোনো মুখস্থবিদ্যানির্ভর ছিল না। একটি ধারাবাহিক আন্দোলনের মাধ্যমেই মানুষ পৌঁছেছিল স্বাধিকারের দাবিতে। বাংলার মানুষ কিন্তু পাকিস্তান কায়েমের জন্য জীবন উজাড় করে দিয়েছিল। সেই বাংলার মানুষই পাকিস্তান কায়েমের কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পেরেছিল
০৫ ডিসেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫