জাহীদ রেজা নূর

লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে আগামীকাল ১১ জুলাই বসবে ন্যাটোর শীর্ষ বৈঠক। সবাই উদ্গ্রীব হয়ে সেই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে। রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইউক্রেনকে কবে ন্যাটোভুক্ত করা হবে, সে প্রশ্নটি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর জন্য ইউক্রেন কতটা প্রয়োজনীয়, সে বিষয়েও একটা আভাস মিলবে শীর্ষ সম্মেলনে। নানা বিষয়ে কথাবার্তা হবে এখানে, কিন্তু ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়েই থাকবে মূল আলোচনা আর সেই পথ ধরে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও কিছুটা আঁচ পাওয়া যাবে।
ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর যে কটিতে পারছেন, যাচ্ছেন, কথা বলছেন।ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করে নেওয়ার জন্য দেশগুলোর নেতাদের কাছে অনুরোধ রাখছেন। কোনো কোনো দেশ ইউক্রেনীয় নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার পর নিজেদের অবস্থান কিছুটা নরম করেছে বটে, কিন্তু গোড়ায়ই গলদ আছে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। ‘গোড়া’ বলতে আমরা মার্কিন দেশকেই বোঝাচ্ছি। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজেই সম্ভবত ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার ব্যাপারে ‘ভেটো’ দেবেন। ১১ ও ১২ জুলাই ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর প্রধানেরা কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা জানার জন্য পৃথিবীর সর্বত্রই রাজনীতিসচেতন মানুষ উদ্গ্রীব হয়ে আছেন, এ কথা নতুন করে বলতে হয় না।
৭ জুলাই জেলেনস্কি গিয়েছিলেন তুরস্কে। তিনি ভেবেছিলেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলবেন, ‘ইউক্রেনকে অবশ্যই ন্যাটোর সদস্য করে নেওয়া উচিত।’ কিন্তু সেই বার্তা সহজে ভেসে আসেনি এরদোয়ানের মুখ থেকে। কিন্তু সামিটে এরদোয়ান হয়তো ইউক্রেনীয় নেতার ন্যাটোভুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষার পক্ষে মত দিতেও পারেন। ইউক্রেন বুঝে গেছে, এখনই ন্যাটোভুক্ত হওয়া কঠিন হবে, তাই ন্যাটো সামিটের আগে ইউক্রেন চাইবে ন্যূনতম নিশ্চয়তা। কোন বিষয়ে নিশ্চয়তা? নিশ্চয়তাটুকু হচ্ছে, কীভাবে ইউক্রেন ন্যাটোভুক্ত হতে পারে, তার জন্য ওই শীর্ষ বৈঠকে যেন একটি পরিকল্পনা করা হয়। এ জন্যই ইউক্রেনীয় নেতা ন্যাটোভুক্ত পশ্চিমা দেশগুলোয় যাচ্ছেন আর নিজের দেশের প্রতি সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
কারা ইউক্রেনকে সমর্থন দেবে, কারা দেবে নাএখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, তাতে মনে হয় কানাডা, রোমানিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, মন্টিনেগ্রো, এস্তোনিয়া, লাতভিয়া, পোল্যান্ড, উত্তর মেসেডোনিয়া ও স্লোভাকিয়া, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, নরওয়ে, আইসল্যান্ড, আলবেনিয়া আর ফিনল্যান্ড ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার পক্ষে মত দেবে। কিন্তু এই দেশগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যাবে, হেভিওয়েট দেশগুলো এই তালিকায় কম। পুরোনো সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত এবং একসময়ের বাম বলয়ভুক্ত দেশগুলোর আধিক্য দেখা যাচ্ছে এখানে এবং এখানে যুক্ত হতে পারে তুরস্কের নাম। তবে এই দেশগুলোর কোনো কোনোটি বলছে, ইউক্রেনকে এখনই ন্যাটোভুক্ত না করে ন্যাটোভুক্ত করার ‘প্রক্রিয়া’টি ত্বরান্বিত করা হোক। কিন্তু ‘ত্বরান্বিত’ করার ‘প্রক্রিয়া’ বলে এই জোটে কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই এ কথা দিয়ে আদতে কী বোঝানো হচ্ছে, সেটা স্পষ্ট নয়।
সরাসরি ইউক্রেনকে নিজেদের জোটে নেওয়ার ব্যাপারে দ্ব্যর্থহীন সম্মতি যারা দেয়নি, তাদের নামগুলো জানা থাকলে বোঝা যাবে, ১১ ও ১২ জুলাইয়ের ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তি ঝুলে পড়তে পারে। রাশিয়ার মতো একটি দেশের সঙ্গে লড়াই করা হবে কোন পথে, কীভাবে, তা নিয়ে ন্যাটোর মতো পরাক্রমশালী জোটটি যে সংশয়ের মধ্যে আছে, তা তাদের আচরণেই বোঝা যাচ্ছে। তাই যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ইউক্রেন নিয়ে যে যুদ্ধংদেহী মনোভাবের প্রকাশ দেখা গিয়েছিল পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে, এখন তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। যুদ্ধ এমন কিছু বাস্তব সমস্যার জন্ম দিয়েছে, যেগুলো চাইলেই রাশিয়ানদের সঙ্গে বোঝাপড়া না করে সমাধান করা সম্ভব নয়। এর মধ্যে জ্বালানি তেল, কয়লা এবং খাদ্যপণ্য অন্যতম।
এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে কোন দেশগুলো এখনো ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যভুক্ত করার ব্যাপারে সংশয়ে আছে, সেগুলো জেনে নেওয়া যাক। কোনো সন্দেহ নেই, এই সব নামের অনেকগুলোই দারুণ ওজনদার!। যেমন জার্মানি আর ফ্রান্স। জার্মানি মনে করে, রাশিয়ার সঙ্গে যে যুদ্ধ চলছে, তা শেষ হওয়ার আগে ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। আর ফ্রান্স মনে করে, ইউক্রেনকে এখন সেই গ্যারান্টিই দেওয়া দরকার, যে গ্যারান্টি পেয়েছে ইসরায়েল। ন্যাটোর সদস্য করা হবে না দেশটিকে, কিন্তু সব ধরনের সমর্থন সে পাবে। এটা অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভাবনা। ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তির জোর বিরোধিতা করছে হাঙ্গেরি। হাঙ্গেরি বলছে, এই যুদ্ধে আমরা অনেক বেশি মূল্য দিয়েছি। ট্রান্স-কারপাথিয়ায় হাঙ্গেরীয়-বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠী চরম মূল্য দিয়েছে।
এ জন্য ইউক্রেনীয়রাই দায়ী। বহুসংখ্যক হাঙ্গেরিয়ান সেখানে মারা গেছে। ইউক্রেনে হাঙ্গেরীয়দের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে ন্যাটো-ইউক্রেনীয় কমিশনের বৈঠক ও কিইভকে আর্থিক সহায়তা দান বন্ধ করে দিয়েছে হাঙ্গেরি। হাঙ্গেরি কড়া ভাষায় বলে দিয়েছে, যত দিন পর্যন্ত ইউক্রেন এই সমস্যার সমাধান না করবে, তত দিন পর্যন্ত ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে নেওয়ার ঘোর বিরোধী থাকবে দেশটি। গ্রিসও চায় না ইউক্রেনকে ন্যাটোতে নেওয়া হোক। ইউক্রেন ‘যুদ্ধবাজ আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষক’দের যে কালো তালিকা তৈরি করেছে, তাতে গ্রিসের কোম্পানিগুলো রয়েছে। এর প্রতিবাদেই গ্রিস ইউক্রেনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত না করার কথা আরও যেসব দেশ বলছে, এর মধ্যে আছে ক্রোয়েশিয়া আর স্লোভেনিয়া। স্লোভেনিয়ার সংসদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং দেশটি ঘোষণা করেছে, ‘ন্যাটোর নবীন সদস্যদেশগুলোর মধ্যে আমরা রয়েছি। প্রকাশ্যে ও জোরালোভাবে ঘোষণা করছি, আমরা ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার ঘোর বিরোধী। কারণ, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে আমরা নিরাপত্তা-প্রশ্নে ঝুঁকির মধ্যে পড়ব।’
এবার আমেরিকার কথা
পৃথিবী বহুদিন ধরেই জানে, পশ্চিমা বিশ্বের কোন নেতা কোথায় কী কথা বললেন, তাতে আদতেই কিছু আসে-যায় না। পুঁজিবাদী বিশ্বের হয়ে এখনো সর্বশেষ কথা বলার অধিকার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। জো বাইডেনের কথার ওপর যদি ভরসা রাখতে হয়, তাহলে বলতে হবে, সেদিক থেকে ইউক্রেনের জন্য কোনো আশাপ্রদ খবর আপাতত নেই। জেলেনস্কির মুখ বিবর্ণ হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক, যখন তিনি শুনেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘ইউক্রেন এখনো ন্যাটোভুক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়।’
সম্প্রতি সিএনএনকে দেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকারটি যাঁরা শুনেছেন, তাঁরা জানেন, জো বাইডেন মনে করেন, এখনো ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে নেওয়া যাবে না। যুদ্ধ শেষে ইউক্রেন মার্কিনিদের কাছ থেকে সেই সহযোগিতাটুকুই পাবে, যেটা পেয়ে এসেছে ইসরায়েল। যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ হওয়ার পরই কেবল ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তি বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
কী বলেছেন বাইডেন, তা পরিষ্কার করে শোনা যাক: ‘আমি মনে করি না, ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সবাই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এই সময়ে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার ব্যাপারে একমত হবে। যদি আমরা একমত হতাম, তাহলে আমরা সবাই মিলেই সিদ্ধান্ত নিতাম, ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর প্রতি ইঞ্চি জমি রক্ষা করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতাম। তাহলে আমরা রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করতেও প্রস্তুত থাকতাম।’
ইউক্রেনের ব্যাপারে ইসরায়েলি মডেল অনুসরণ করা হবে বলতে বাইডেন বুঝিয়েছেন, যুদ্ধ শেষেও যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতা করে যাবে। ইসরায়েলকে যেমন তারা নিরাপত্তা দিয়েছে, ইউক্রেনকেও সে রকম নিরাপত্তা দেবে। ইউক্রেনের নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রপাতিও দেওয়া অব্যাহত থাকবে।
ন্যাটো শীর্ষ বৈঠকের পথ চেয়ে
সামরিক দুনিয়া আর সাধারণ দুনিয়ার মধ্যে পার্থক্য বিস্তর। কিন্তু একে অন্যের প্রতি নির্ভরশীলও বটে। যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, তাতে গরিব দেশের গরিব মানুষেরা রয়েছে উৎকণ্ঠায়। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ হয়ে উঠছে দরিদ্র মানুষের সংসার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপের ব্যাপার, কিন্তু তা তো শুধু ইউরোপের নয়। গোটা বিশ্ব এখন মুদ্রাস্ফীতির মোকাবিলা করছে। হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে জিনিসপত্রের দাম।
যুক্তরাষ্ট্রে বা ইউরোপের কোনো কোনো দেশে সামাজিক নিরাপত্তা আছে। তাই কষ্ট হলেও সামলে নেওয়ার একটা পথ খোলা আছে। যাদের সামাজিক নিরাপত্তা নেই, তারা তো বুঝতেই পারছে, কত ধানে কত চাল। তাই নির্দিষ্ট বেতনে বা আয়ের ওপর নির্ভর করে ঊর্ধ্বমুখী দামের সঙ্গে যুদ্ধ করা যে কত কঠিন, সে কথা যুদ্ধবাজ দেশগুলো বুঝবে না।
তাই ন্যাটো শীর্ষ বৈঠকে ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলো কি না হলো, সেটা গরিব দেশগুলোর মানুষেরা আদৌ ভাবে না। তারা ভাবে, যুদ্ধ শেষ হোক, শান্তি নেমে আসুক পৃথিবীতে। বেঁচে থাকার উপকরণগুলো পাওয়া যাক সীমিত আয়ের সীমার মধ্যেই।
কিন্তু অস্ত্র ব্যবসার স্বার্থ কি মানবিক অনুভূতিগুলোকে মূল্য দেয়, দিয়েছে কখনো? জো বাইডেন হোক, ভ্লাদিমির পুতিন হোক কিংবা জেলেনস্কি হোক, তাঁরা কথা বলতে শুরু করলেই মনে হয়, আমাদের কানে এসে লাগছে অস্ত্রের ঝনঝনানি, মৃত্যুপথযাত্রীর আর্তনাদ। তারপরও ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের দিকে থাকে মানুষের চোখ। যদি কোনো ভালো সংবাদ আসে সেখান থেকে!
লেখক: উপসম্পাদক,আজকের পত্রিকা

লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে আগামীকাল ১১ জুলাই বসবে ন্যাটোর শীর্ষ বৈঠক। সবাই উদ্গ্রীব হয়ে সেই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে। রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইউক্রেনকে কবে ন্যাটোভুক্ত করা হবে, সে প্রশ্নটি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর জন্য ইউক্রেন কতটা প্রয়োজনীয়, সে বিষয়েও একটা আভাস মিলবে শীর্ষ সম্মেলনে। নানা বিষয়ে কথাবার্তা হবে এখানে, কিন্তু ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়েই থাকবে মূল আলোচনা আর সেই পথ ধরে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও কিছুটা আঁচ পাওয়া যাবে।
ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর যে কটিতে পারছেন, যাচ্ছেন, কথা বলছেন।ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করে নেওয়ার জন্য দেশগুলোর নেতাদের কাছে অনুরোধ রাখছেন। কোনো কোনো দেশ ইউক্রেনীয় নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার পর নিজেদের অবস্থান কিছুটা নরম করেছে বটে, কিন্তু গোড়ায়ই গলদ আছে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। ‘গোড়া’ বলতে আমরা মার্কিন দেশকেই বোঝাচ্ছি। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজেই সম্ভবত ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার ব্যাপারে ‘ভেটো’ দেবেন। ১১ ও ১২ জুলাই ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর প্রধানেরা কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা জানার জন্য পৃথিবীর সর্বত্রই রাজনীতিসচেতন মানুষ উদ্গ্রীব হয়ে আছেন, এ কথা নতুন করে বলতে হয় না।
৭ জুলাই জেলেনস্কি গিয়েছিলেন তুরস্কে। তিনি ভেবেছিলেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলবেন, ‘ইউক্রেনকে অবশ্যই ন্যাটোর সদস্য করে নেওয়া উচিত।’ কিন্তু সেই বার্তা সহজে ভেসে আসেনি এরদোয়ানের মুখ থেকে। কিন্তু সামিটে এরদোয়ান হয়তো ইউক্রেনীয় নেতার ন্যাটোভুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষার পক্ষে মত দিতেও পারেন। ইউক্রেন বুঝে গেছে, এখনই ন্যাটোভুক্ত হওয়া কঠিন হবে, তাই ন্যাটো সামিটের আগে ইউক্রেন চাইবে ন্যূনতম নিশ্চয়তা। কোন বিষয়ে নিশ্চয়তা? নিশ্চয়তাটুকু হচ্ছে, কীভাবে ইউক্রেন ন্যাটোভুক্ত হতে পারে, তার জন্য ওই শীর্ষ বৈঠকে যেন একটি পরিকল্পনা করা হয়। এ জন্যই ইউক্রেনীয় নেতা ন্যাটোভুক্ত পশ্চিমা দেশগুলোয় যাচ্ছেন আর নিজের দেশের প্রতি সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
কারা ইউক্রেনকে সমর্থন দেবে, কারা দেবে নাএখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, তাতে মনে হয় কানাডা, রোমানিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, মন্টিনেগ্রো, এস্তোনিয়া, লাতভিয়া, পোল্যান্ড, উত্তর মেসেডোনিয়া ও স্লোভাকিয়া, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, নরওয়ে, আইসল্যান্ড, আলবেনিয়া আর ফিনল্যান্ড ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার পক্ষে মত দেবে। কিন্তু এই দেশগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যাবে, হেভিওয়েট দেশগুলো এই তালিকায় কম। পুরোনো সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত এবং একসময়ের বাম বলয়ভুক্ত দেশগুলোর আধিক্য দেখা যাচ্ছে এখানে এবং এখানে যুক্ত হতে পারে তুরস্কের নাম। তবে এই দেশগুলোর কোনো কোনোটি বলছে, ইউক্রেনকে এখনই ন্যাটোভুক্ত না করে ন্যাটোভুক্ত করার ‘প্রক্রিয়া’টি ত্বরান্বিত করা হোক। কিন্তু ‘ত্বরান্বিত’ করার ‘প্রক্রিয়া’ বলে এই জোটে কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই এ কথা দিয়ে আদতে কী বোঝানো হচ্ছে, সেটা স্পষ্ট নয়।
সরাসরি ইউক্রেনকে নিজেদের জোটে নেওয়ার ব্যাপারে দ্ব্যর্থহীন সম্মতি যারা দেয়নি, তাদের নামগুলো জানা থাকলে বোঝা যাবে, ১১ ও ১২ জুলাইয়ের ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তি ঝুলে পড়তে পারে। রাশিয়ার মতো একটি দেশের সঙ্গে লড়াই করা হবে কোন পথে, কীভাবে, তা নিয়ে ন্যাটোর মতো পরাক্রমশালী জোটটি যে সংশয়ের মধ্যে আছে, তা তাদের আচরণেই বোঝা যাচ্ছে। তাই যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ইউক্রেন নিয়ে যে যুদ্ধংদেহী মনোভাবের প্রকাশ দেখা গিয়েছিল পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে, এখন তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। যুদ্ধ এমন কিছু বাস্তব সমস্যার জন্ম দিয়েছে, যেগুলো চাইলেই রাশিয়ানদের সঙ্গে বোঝাপড়া না করে সমাধান করা সম্ভব নয়। এর মধ্যে জ্বালানি তেল, কয়লা এবং খাদ্যপণ্য অন্যতম।
এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে কোন দেশগুলো এখনো ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যভুক্ত করার ব্যাপারে সংশয়ে আছে, সেগুলো জেনে নেওয়া যাক। কোনো সন্দেহ নেই, এই সব নামের অনেকগুলোই দারুণ ওজনদার!। যেমন জার্মানি আর ফ্রান্স। জার্মানি মনে করে, রাশিয়ার সঙ্গে যে যুদ্ধ চলছে, তা শেষ হওয়ার আগে ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। আর ফ্রান্স মনে করে, ইউক্রেনকে এখন সেই গ্যারান্টিই দেওয়া দরকার, যে গ্যারান্টি পেয়েছে ইসরায়েল। ন্যাটোর সদস্য করা হবে না দেশটিকে, কিন্তু সব ধরনের সমর্থন সে পাবে। এটা অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভাবনা। ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তির জোর বিরোধিতা করছে হাঙ্গেরি। হাঙ্গেরি বলছে, এই যুদ্ধে আমরা অনেক বেশি মূল্য দিয়েছি। ট্রান্স-কারপাথিয়ায় হাঙ্গেরীয়-বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠী চরম মূল্য দিয়েছে।
এ জন্য ইউক্রেনীয়রাই দায়ী। বহুসংখ্যক হাঙ্গেরিয়ান সেখানে মারা গেছে। ইউক্রেনে হাঙ্গেরীয়দের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে ন্যাটো-ইউক্রেনীয় কমিশনের বৈঠক ও কিইভকে আর্থিক সহায়তা দান বন্ধ করে দিয়েছে হাঙ্গেরি। হাঙ্গেরি কড়া ভাষায় বলে দিয়েছে, যত দিন পর্যন্ত ইউক্রেন এই সমস্যার সমাধান না করবে, তত দিন পর্যন্ত ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে নেওয়ার ঘোর বিরোধী থাকবে দেশটি। গ্রিসও চায় না ইউক্রেনকে ন্যাটোতে নেওয়া হোক। ইউক্রেন ‘যুদ্ধবাজ আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষক’দের যে কালো তালিকা তৈরি করেছে, তাতে গ্রিসের কোম্পানিগুলো রয়েছে। এর প্রতিবাদেই গ্রিস ইউক্রেনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত না করার কথা আরও যেসব দেশ বলছে, এর মধ্যে আছে ক্রোয়েশিয়া আর স্লোভেনিয়া। স্লোভেনিয়ার সংসদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং দেশটি ঘোষণা করেছে, ‘ন্যাটোর নবীন সদস্যদেশগুলোর মধ্যে আমরা রয়েছি। প্রকাশ্যে ও জোরালোভাবে ঘোষণা করছি, আমরা ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার ঘোর বিরোধী। কারণ, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে আমরা নিরাপত্তা-প্রশ্নে ঝুঁকির মধ্যে পড়ব।’
এবার আমেরিকার কথা
পৃথিবী বহুদিন ধরেই জানে, পশ্চিমা বিশ্বের কোন নেতা কোথায় কী কথা বললেন, তাতে আদতেই কিছু আসে-যায় না। পুঁজিবাদী বিশ্বের হয়ে এখনো সর্বশেষ কথা বলার অধিকার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। জো বাইডেনের কথার ওপর যদি ভরসা রাখতে হয়, তাহলে বলতে হবে, সেদিক থেকে ইউক্রেনের জন্য কোনো আশাপ্রদ খবর আপাতত নেই। জেলেনস্কির মুখ বিবর্ণ হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক, যখন তিনি শুনেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘ইউক্রেন এখনো ন্যাটোভুক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়।’
সম্প্রতি সিএনএনকে দেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকারটি যাঁরা শুনেছেন, তাঁরা জানেন, জো বাইডেন মনে করেন, এখনো ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে নেওয়া যাবে না। যুদ্ধ শেষে ইউক্রেন মার্কিনিদের কাছ থেকে সেই সহযোগিতাটুকুই পাবে, যেটা পেয়ে এসেছে ইসরায়েল। যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ হওয়ার পরই কেবল ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তি বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
কী বলেছেন বাইডেন, তা পরিষ্কার করে শোনা যাক: ‘আমি মনে করি না, ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সবাই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এই সময়ে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার ব্যাপারে একমত হবে। যদি আমরা একমত হতাম, তাহলে আমরা সবাই মিলেই সিদ্ধান্ত নিতাম, ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর প্রতি ইঞ্চি জমি রক্ষা করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতাম। তাহলে আমরা রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করতেও প্রস্তুত থাকতাম।’
ইউক্রেনের ব্যাপারে ইসরায়েলি মডেল অনুসরণ করা হবে বলতে বাইডেন বুঝিয়েছেন, যুদ্ধ শেষেও যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতা করে যাবে। ইসরায়েলকে যেমন তারা নিরাপত্তা দিয়েছে, ইউক্রেনকেও সে রকম নিরাপত্তা দেবে। ইউক্রেনের নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রপাতিও দেওয়া অব্যাহত থাকবে।
ন্যাটো শীর্ষ বৈঠকের পথ চেয়ে
সামরিক দুনিয়া আর সাধারণ দুনিয়ার মধ্যে পার্থক্য বিস্তর। কিন্তু একে অন্যের প্রতি নির্ভরশীলও বটে। যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, তাতে গরিব দেশের গরিব মানুষেরা রয়েছে উৎকণ্ঠায়। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ হয়ে উঠছে দরিদ্র মানুষের সংসার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপের ব্যাপার, কিন্তু তা তো শুধু ইউরোপের নয়। গোটা বিশ্ব এখন মুদ্রাস্ফীতির মোকাবিলা করছে। হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে জিনিসপত্রের দাম।
যুক্তরাষ্ট্রে বা ইউরোপের কোনো কোনো দেশে সামাজিক নিরাপত্তা আছে। তাই কষ্ট হলেও সামলে নেওয়ার একটা পথ খোলা আছে। যাদের সামাজিক নিরাপত্তা নেই, তারা তো বুঝতেই পারছে, কত ধানে কত চাল। তাই নির্দিষ্ট বেতনে বা আয়ের ওপর নির্ভর করে ঊর্ধ্বমুখী দামের সঙ্গে যুদ্ধ করা যে কত কঠিন, সে কথা যুদ্ধবাজ দেশগুলো বুঝবে না।
তাই ন্যাটো শীর্ষ বৈঠকে ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলো কি না হলো, সেটা গরিব দেশগুলোর মানুষেরা আদৌ ভাবে না। তারা ভাবে, যুদ্ধ শেষ হোক, শান্তি নেমে আসুক পৃথিবীতে। বেঁচে থাকার উপকরণগুলো পাওয়া যাক সীমিত আয়ের সীমার মধ্যেই।
কিন্তু অস্ত্র ব্যবসার স্বার্থ কি মানবিক অনুভূতিগুলোকে মূল্য দেয়, দিয়েছে কখনো? জো বাইডেন হোক, ভ্লাদিমির পুতিন হোক কিংবা জেলেনস্কি হোক, তাঁরা কথা বলতে শুরু করলেই মনে হয়, আমাদের কানে এসে লাগছে অস্ত্রের ঝনঝনানি, মৃত্যুপথযাত্রীর আর্তনাদ। তারপরও ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের দিকে থাকে মানুষের চোখ। যদি কোনো ভালো সংবাদ আসে সেখান থেকে!
লেখক: উপসম্পাদক,আজকের পত্রিকা
জাহীদ রেজা নূর

লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে আগামীকাল ১১ জুলাই বসবে ন্যাটোর শীর্ষ বৈঠক। সবাই উদ্গ্রীব হয়ে সেই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে। রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইউক্রেনকে কবে ন্যাটোভুক্ত করা হবে, সে প্রশ্নটি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর জন্য ইউক্রেন কতটা প্রয়োজনীয়, সে বিষয়েও একটা আভাস মিলবে শীর্ষ সম্মেলনে। নানা বিষয়ে কথাবার্তা হবে এখানে, কিন্তু ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়েই থাকবে মূল আলোচনা আর সেই পথ ধরে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও কিছুটা আঁচ পাওয়া যাবে।
ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর যে কটিতে পারছেন, যাচ্ছেন, কথা বলছেন।ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করে নেওয়ার জন্য দেশগুলোর নেতাদের কাছে অনুরোধ রাখছেন। কোনো কোনো দেশ ইউক্রেনীয় নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার পর নিজেদের অবস্থান কিছুটা নরম করেছে বটে, কিন্তু গোড়ায়ই গলদ আছে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। ‘গোড়া’ বলতে আমরা মার্কিন দেশকেই বোঝাচ্ছি। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজেই সম্ভবত ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার ব্যাপারে ‘ভেটো’ দেবেন। ১১ ও ১২ জুলাই ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর প্রধানেরা কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা জানার জন্য পৃথিবীর সর্বত্রই রাজনীতিসচেতন মানুষ উদ্গ্রীব হয়ে আছেন, এ কথা নতুন করে বলতে হয় না।
৭ জুলাই জেলেনস্কি গিয়েছিলেন তুরস্কে। তিনি ভেবেছিলেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলবেন, ‘ইউক্রেনকে অবশ্যই ন্যাটোর সদস্য করে নেওয়া উচিত।’ কিন্তু সেই বার্তা সহজে ভেসে আসেনি এরদোয়ানের মুখ থেকে। কিন্তু সামিটে এরদোয়ান হয়তো ইউক্রেনীয় নেতার ন্যাটোভুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষার পক্ষে মত দিতেও পারেন। ইউক্রেন বুঝে গেছে, এখনই ন্যাটোভুক্ত হওয়া কঠিন হবে, তাই ন্যাটো সামিটের আগে ইউক্রেন চাইবে ন্যূনতম নিশ্চয়তা। কোন বিষয়ে নিশ্চয়তা? নিশ্চয়তাটুকু হচ্ছে, কীভাবে ইউক্রেন ন্যাটোভুক্ত হতে পারে, তার জন্য ওই শীর্ষ বৈঠকে যেন একটি পরিকল্পনা করা হয়। এ জন্যই ইউক্রেনীয় নেতা ন্যাটোভুক্ত পশ্চিমা দেশগুলোয় যাচ্ছেন আর নিজের দেশের প্রতি সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
কারা ইউক্রেনকে সমর্থন দেবে, কারা দেবে নাএখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, তাতে মনে হয় কানাডা, রোমানিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, মন্টিনেগ্রো, এস্তোনিয়া, লাতভিয়া, পোল্যান্ড, উত্তর মেসেডোনিয়া ও স্লোভাকিয়া, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, নরওয়ে, আইসল্যান্ড, আলবেনিয়া আর ফিনল্যান্ড ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার পক্ষে মত দেবে। কিন্তু এই দেশগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যাবে, হেভিওয়েট দেশগুলো এই তালিকায় কম। পুরোনো সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত এবং একসময়ের বাম বলয়ভুক্ত দেশগুলোর আধিক্য দেখা যাচ্ছে এখানে এবং এখানে যুক্ত হতে পারে তুরস্কের নাম। তবে এই দেশগুলোর কোনো কোনোটি বলছে, ইউক্রেনকে এখনই ন্যাটোভুক্ত না করে ন্যাটোভুক্ত করার ‘প্রক্রিয়া’টি ত্বরান্বিত করা হোক। কিন্তু ‘ত্বরান্বিত’ করার ‘প্রক্রিয়া’ বলে এই জোটে কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই এ কথা দিয়ে আদতে কী বোঝানো হচ্ছে, সেটা স্পষ্ট নয়।
সরাসরি ইউক্রেনকে নিজেদের জোটে নেওয়ার ব্যাপারে দ্ব্যর্থহীন সম্মতি যারা দেয়নি, তাদের নামগুলো জানা থাকলে বোঝা যাবে, ১১ ও ১২ জুলাইয়ের ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তি ঝুলে পড়তে পারে। রাশিয়ার মতো একটি দেশের সঙ্গে লড়াই করা হবে কোন পথে, কীভাবে, তা নিয়ে ন্যাটোর মতো পরাক্রমশালী জোটটি যে সংশয়ের মধ্যে আছে, তা তাদের আচরণেই বোঝা যাচ্ছে। তাই যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ইউক্রেন নিয়ে যে যুদ্ধংদেহী মনোভাবের প্রকাশ দেখা গিয়েছিল পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে, এখন তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। যুদ্ধ এমন কিছু বাস্তব সমস্যার জন্ম দিয়েছে, যেগুলো চাইলেই রাশিয়ানদের সঙ্গে বোঝাপড়া না করে সমাধান করা সম্ভব নয়। এর মধ্যে জ্বালানি তেল, কয়লা এবং খাদ্যপণ্য অন্যতম।
এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে কোন দেশগুলো এখনো ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যভুক্ত করার ব্যাপারে সংশয়ে আছে, সেগুলো জেনে নেওয়া যাক। কোনো সন্দেহ নেই, এই সব নামের অনেকগুলোই দারুণ ওজনদার!। যেমন জার্মানি আর ফ্রান্স। জার্মানি মনে করে, রাশিয়ার সঙ্গে যে যুদ্ধ চলছে, তা শেষ হওয়ার আগে ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। আর ফ্রান্স মনে করে, ইউক্রেনকে এখন সেই গ্যারান্টিই দেওয়া দরকার, যে গ্যারান্টি পেয়েছে ইসরায়েল। ন্যাটোর সদস্য করা হবে না দেশটিকে, কিন্তু সব ধরনের সমর্থন সে পাবে। এটা অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভাবনা। ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তির জোর বিরোধিতা করছে হাঙ্গেরি। হাঙ্গেরি বলছে, এই যুদ্ধে আমরা অনেক বেশি মূল্য দিয়েছি। ট্রান্স-কারপাথিয়ায় হাঙ্গেরীয়-বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠী চরম মূল্য দিয়েছে।
এ জন্য ইউক্রেনীয়রাই দায়ী। বহুসংখ্যক হাঙ্গেরিয়ান সেখানে মারা গেছে। ইউক্রেনে হাঙ্গেরীয়দের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে ন্যাটো-ইউক্রেনীয় কমিশনের বৈঠক ও কিইভকে আর্থিক সহায়তা দান বন্ধ করে দিয়েছে হাঙ্গেরি। হাঙ্গেরি কড়া ভাষায় বলে দিয়েছে, যত দিন পর্যন্ত ইউক্রেন এই সমস্যার সমাধান না করবে, তত দিন পর্যন্ত ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে নেওয়ার ঘোর বিরোধী থাকবে দেশটি। গ্রিসও চায় না ইউক্রেনকে ন্যাটোতে নেওয়া হোক। ইউক্রেন ‘যুদ্ধবাজ আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষক’দের যে কালো তালিকা তৈরি করেছে, তাতে গ্রিসের কোম্পানিগুলো রয়েছে। এর প্রতিবাদেই গ্রিস ইউক্রেনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত না করার কথা আরও যেসব দেশ বলছে, এর মধ্যে আছে ক্রোয়েশিয়া আর স্লোভেনিয়া। স্লোভেনিয়ার সংসদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং দেশটি ঘোষণা করেছে, ‘ন্যাটোর নবীন সদস্যদেশগুলোর মধ্যে আমরা রয়েছি। প্রকাশ্যে ও জোরালোভাবে ঘোষণা করছি, আমরা ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার ঘোর বিরোধী। কারণ, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে আমরা নিরাপত্তা-প্রশ্নে ঝুঁকির মধ্যে পড়ব।’
এবার আমেরিকার কথা
পৃথিবী বহুদিন ধরেই জানে, পশ্চিমা বিশ্বের কোন নেতা কোথায় কী কথা বললেন, তাতে আদতেই কিছু আসে-যায় না। পুঁজিবাদী বিশ্বের হয়ে এখনো সর্বশেষ কথা বলার অধিকার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। জো বাইডেনের কথার ওপর যদি ভরসা রাখতে হয়, তাহলে বলতে হবে, সেদিক থেকে ইউক্রেনের জন্য কোনো আশাপ্রদ খবর আপাতত নেই। জেলেনস্কির মুখ বিবর্ণ হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক, যখন তিনি শুনেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘ইউক্রেন এখনো ন্যাটোভুক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়।’
সম্প্রতি সিএনএনকে দেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকারটি যাঁরা শুনেছেন, তাঁরা জানেন, জো বাইডেন মনে করেন, এখনো ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে নেওয়া যাবে না। যুদ্ধ শেষে ইউক্রেন মার্কিনিদের কাছ থেকে সেই সহযোগিতাটুকুই পাবে, যেটা পেয়ে এসেছে ইসরায়েল। যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ হওয়ার পরই কেবল ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তি বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
কী বলেছেন বাইডেন, তা পরিষ্কার করে শোনা যাক: ‘আমি মনে করি না, ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সবাই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এই সময়ে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার ব্যাপারে একমত হবে। যদি আমরা একমত হতাম, তাহলে আমরা সবাই মিলেই সিদ্ধান্ত নিতাম, ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর প্রতি ইঞ্চি জমি রক্ষা করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতাম। তাহলে আমরা রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করতেও প্রস্তুত থাকতাম।’
ইউক্রেনের ব্যাপারে ইসরায়েলি মডেল অনুসরণ করা হবে বলতে বাইডেন বুঝিয়েছেন, যুদ্ধ শেষেও যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতা করে যাবে। ইসরায়েলকে যেমন তারা নিরাপত্তা দিয়েছে, ইউক্রেনকেও সে রকম নিরাপত্তা দেবে। ইউক্রেনের নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রপাতিও দেওয়া অব্যাহত থাকবে।
ন্যাটো শীর্ষ বৈঠকের পথ চেয়ে
সামরিক দুনিয়া আর সাধারণ দুনিয়ার মধ্যে পার্থক্য বিস্তর। কিন্তু একে অন্যের প্রতি নির্ভরশীলও বটে। যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, তাতে গরিব দেশের গরিব মানুষেরা রয়েছে উৎকণ্ঠায়। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ হয়ে উঠছে দরিদ্র মানুষের সংসার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপের ব্যাপার, কিন্তু তা তো শুধু ইউরোপের নয়। গোটা বিশ্ব এখন মুদ্রাস্ফীতির মোকাবিলা করছে। হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে জিনিসপত্রের দাম।
যুক্তরাষ্ট্রে বা ইউরোপের কোনো কোনো দেশে সামাজিক নিরাপত্তা আছে। তাই কষ্ট হলেও সামলে নেওয়ার একটা পথ খোলা আছে। যাদের সামাজিক নিরাপত্তা নেই, তারা তো বুঝতেই পারছে, কত ধানে কত চাল। তাই নির্দিষ্ট বেতনে বা আয়ের ওপর নির্ভর করে ঊর্ধ্বমুখী দামের সঙ্গে যুদ্ধ করা যে কত কঠিন, সে কথা যুদ্ধবাজ দেশগুলো বুঝবে না।
তাই ন্যাটো শীর্ষ বৈঠকে ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলো কি না হলো, সেটা গরিব দেশগুলোর মানুষেরা আদৌ ভাবে না। তারা ভাবে, যুদ্ধ শেষ হোক, শান্তি নেমে আসুক পৃথিবীতে। বেঁচে থাকার উপকরণগুলো পাওয়া যাক সীমিত আয়ের সীমার মধ্যেই।
কিন্তু অস্ত্র ব্যবসার স্বার্থ কি মানবিক অনুভূতিগুলোকে মূল্য দেয়, দিয়েছে কখনো? জো বাইডেন হোক, ভ্লাদিমির পুতিন হোক কিংবা জেলেনস্কি হোক, তাঁরা কথা বলতে শুরু করলেই মনে হয়, আমাদের কানে এসে লাগছে অস্ত্রের ঝনঝনানি, মৃত্যুপথযাত্রীর আর্তনাদ। তারপরও ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের দিকে থাকে মানুষের চোখ। যদি কোনো ভালো সংবাদ আসে সেখান থেকে!
লেখক: উপসম্পাদক,আজকের পত্রিকা

লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে আগামীকাল ১১ জুলাই বসবে ন্যাটোর শীর্ষ বৈঠক। সবাই উদ্গ্রীব হয়ে সেই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে। রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইউক্রেনকে কবে ন্যাটোভুক্ত করা হবে, সে প্রশ্নটি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর জন্য ইউক্রেন কতটা প্রয়োজনীয়, সে বিষয়েও একটা আভাস মিলবে শীর্ষ সম্মেলনে। নানা বিষয়ে কথাবার্তা হবে এখানে, কিন্তু ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়েই থাকবে মূল আলোচনা আর সেই পথ ধরে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও কিছুটা আঁচ পাওয়া যাবে।
ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর যে কটিতে পারছেন, যাচ্ছেন, কথা বলছেন।ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করে নেওয়ার জন্য দেশগুলোর নেতাদের কাছে অনুরোধ রাখছেন। কোনো কোনো দেশ ইউক্রেনীয় নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার পর নিজেদের অবস্থান কিছুটা নরম করেছে বটে, কিন্তু গোড়ায়ই গলদ আছে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। ‘গোড়া’ বলতে আমরা মার্কিন দেশকেই বোঝাচ্ছি। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজেই সম্ভবত ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার ব্যাপারে ‘ভেটো’ দেবেন। ১১ ও ১২ জুলাই ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর প্রধানেরা কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা জানার জন্য পৃথিবীর সর্বত্রই রাজনীতিসচেতন মানুষ উদ্গ্রীব হয়ে আছেন, এ কথা নতুন করে বলতে হয় না।
৭ জুলাই জেলেনস্কি গিয়েছিলেন তুরস্কে। তিনি ভেবেছিলেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলবেন, ‘ইউক্রেনকে অবশ্যই ন্যাটোর সদস্য করে নেওয়া উচিত।’ কিন্তু সেই বার্তা সহজে ভেসে আসেনি এরদোয়ানের মুখ থেকে। কিন্তু সামিটে এরদোয়ান হয়তো ইউক্রেনীয় নেতার ন্যাটোভুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষার পক্ষে মত দিতেও পারেন। ইউক্রেন বুঝে গেছে, এখনই ন্যাটোভুক্ত হওয়া কঠিন হবে, তাই ন্যাটো সামিটের আগে ইউক্রেন চাইবে ন্যূনতম নিশ্চয়তা। কোন বিষয়ে নিশ্চয়তা? নিশ্চয়তাটুকু হচ্ছে, কীভাবে ইউক্রেন ন্যাটোভুক্ত হতে পারে, তার জন্য ওই শীর্ষ বৈঠকে যেন একটি পরিকল্পনা করা হয়। এ জন্যই ইউক্রেনীয় নেতা ন্যাটোভুক্ত পশ্চিমা দেশগুলোয় যাচ্ছেন আর নিজের দেশের প্রতি সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
কারা ইউক্রেনকে সমর্থন দেবে, কারা দেবে নাএখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, তাতে মনে হয় কানাডা, রোমানিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, মন্টিনেগ্রো, এস্তোনিয়া, লাতভিয়া, পোল্যান্ড, উত্তর মেসেডোনিয়া ও স্লোভাকিয়া, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, নরওয়ে, আইসল্যান্ড, আলবেনিয়া আর ফিনল্যান্ড ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার পক্ষে মত দেবে। কিন্তু এই দেশগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যাবে, হেভিওয়েট দেশগুলো এই তালিকায় কম। পুরোনো সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত এবং একসময়ের বাম বলয়ভুক্ত দেশগুলোর আধিক্য দেখা যাচ্ছে এখানে এবং এখানে যুক্ত হতে পারে তুরস্কের নাম। তবে এই দেশগুলোর কোনো কোনোটি বলছে, ইউক্রেনকে এখনই ন্যাটোভুক্ত না করে ন্যাটোভুক্ত করার ‘প্রক্রিয়া’টি ত্বরান্বিত করা হোক। কিন্তু ‘ত্বরান্বিত’ করার ‘প্রক্রিয়া’ বলে এই জোটে কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই এ কথা দিয়ে আদতে কী বোঝানো হচ্ছে, সেটা স্পষ্ট নয়।
সরাসরি ইউক্রেনকে নিজেদের জোটে নেওয়ার ব্যাপারে দ্ব্যর্থহীন সম্মতি যারা দেয়নি, তাদের নামগুলো জানা থাকলে বোঝা যাবে, ১১ ও ১২ জুলাইয়ের ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তি ঝুলে পড়তে পারে। রাশিয়ার মতো একটি দেশের সঙ্গে লড়াই করা হবে কোন পথে, কীভাবে, তা নিয়ে ন্যাটোর মতো পরাক্রমশালী জোটটি যে সংশয়ের মধ্যে আছে, তা তাদের আচরণেই বোঝা যাচ্ছে। তাই যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ইউক্রেন নিয়ে যে যুদ্ধংদেহী মনোভাবের প্রকাশ দেখা গিয়েছিল পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে, এখন তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। যুদ্ধ এমন কিছু বাস্তব সমস্যার জন্ম দিয়েছে, যেগুলো চাইলেই রাশিয়ানদের সঙ্গে বোঝাপড়া না করে সমাধান করা সম্ভব নয়। এর মধ্যে জ্বালানি তেল, কয়লা এবং খাদ্যপণ্য অন্যতম।
এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে কোন দেশগুলো এখনো ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যভুক্ত করার ব্যাপারে সংশয়ে আছে, সেগুলো জেনে নেওয়া যাক। কোনো সন্দেহ নেই, এই সব নামের অনেকগুলোই দারুণ ওজনদার!। যেমন জার্মানি আর ফ্রান্স। জার্মানি মনে করে, রাশিয়ার সঙ্গে যে যুদ্ধ চলছে, তা শেষ হওয়ার আগে ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। আর ফ্রান্স মনে করে, ইউক্রেনকে এখন সেই গ্যারান্টিই দেওয়া দরকার, যে গ্যারান্টি পেয়েছে ইসরায়েল। ন্যাটোর সদস্য করা হবে না দেশটিকে, কিন্তু সব ধরনের সমর্থন সে পাবে। এটা অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভাবনা। ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তির জোর বিরোধিতা করছে হাঙ্গেরি। হাঙ্গেরি বলছে, এই যুদ্ধে আমরা অনেক বেশি মূল্য দিয়েছি। ট্রান্স-কারপাথিয়ায় হাঙ্গেরীয়-বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠী চরম মূল্য দিয়েছে।
এ জন্য ইউক্রেনীয়রাই দায়ী। বহুসংখ্যক হাঙ্গেরিয়ান সেখানে মারা গেছে। ইউক্রেনে হাঙ্গেরীয়দের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে ন্যাটো-ইউক্রেনীয় কমিশনের বৈঠক ও কিইভকে আর্থিক সহায়তা দান বন্ধ করে দিয়েছে হাঙ্গেরি। হাঙ্গেরি কড়া ভাষায় বলে দিয়েছে, যত দিন পর্যন্ত ইউক্রেন এই সমস্যার সমাধান না করবে, তত দিন পর্যন্ত ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে নেওয়ার ঘোর বিরোধী থাকবে দেশটি। গ্রিসও চায় না ইউক্রেনকে ন্যাটোতে নেওয়া হোক। ইউক্রেন ‘যুদ্ধবাজ আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষক’দের যে কালো তালিকা তৈরি করেছে, তাতে গ্রিসের কোম্পানিগুলো রয়েছে। এর প্রতিবাদেই গ্রিস ইউক্রেনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত না করার কথা আরও যেসব দেশ বলছে, এর মধ্যে আছে ক্রোয়েশিয়া আর স্লোভেনিয়া। স্লোভেনিয়ার সংসদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং দেশটি ঘোষণা করেছে, ‘ন্যাটোর নবীন সদস্যদেশগুলোর মধ্যে আমরা রয়েছি। প্রকাশ্যে ও জোরালোভাবে ঘোষণা করছি, আমরা ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার ঘোর বিরোধী। কারণ, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে আমরা নিরাপত্তা-প্রশ্নে ঝুঁকির মধ্যে পড়ব।’
এবার আমেরিকার কথা
পৃথিবী বহুদিন ধরেই জানে, পশ্চিমা বিশ্বের কোন নেতা কোথায় কী কথা বললেন, তাতে আদতেই কিছু আসে-যায় না। পুঁজিবাদী বিশ্বের হয়ে এখনো সর্বশেষ কথা বলার অধিকার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। জো বাইডেনের কথার ওপর যদি ভরসা রাখতে হয়, তাহলে বলতে হবে, সেদিক থেকে ইউক্রেনের জন্য কোনো আশাপ্রদ খবর আপাতত নেই। জেলেনস্কির মুখ বিবর্ণ হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক, যখন তিনি শুনেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘ইউক্রেন এখনো ন্যাটোভুক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়।’
সম্প্রতি সিএনএনকে দেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকারটি যাঁরা শুনেছেন, তাঁরা জানেন, জো বাইডেন মনে করেন, এখনো ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে নেওয়া যাবে না। যুদ্ধ শেষে ইউক্রেন মার্কিনিদের কাছ থেকে সেই সহযোগিতাটুকুই পাবে, যেটা পেয়ে এসেছে ইসরায়েল। যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ হওয়ার পরই কেবল ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তি বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
কী বলেছেন বাইডেন, তা পরিষ্কার করে শোনা যাক: ‘আমি মনে করি না, ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সবাই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এই সময়ে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার ব্যাপারে একমত হবে। যদি আমরা একমত হতাম, তাহলে আমরা সবাই মিলেই সিদ্ধান্ত নিতাম, ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর প্রতি ইঞ্চি জমি রক্ষা করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতাম। তাহলে আমরা রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করতেও প্রস্তুত থাকতাম।’
ইউক্রেনের ব্যাপারে ইসরায়েলি মডেল অনুসরণ করা হবে বলতে বাইডেন বুঝিয়েছেন, যুদ্ধ শেষেও যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতা করে যাবে। ইসরায়েলকে যেমন তারা নিরাপত্তা দিয়েছে, ইউক্রেনকেও সে রকম নিরাপত্তা দেবে। ইউক্রেনের নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রপাতিও দেওয়া অব্যাহত থাকবে।
ন্যাটো শীর্ষ বৈঠকের পথ চেয়ে
সামরিক দুনিয়া আর সাধারণ দুনিয়ার মধ্যে পার্থক্য বিস্তর। কিন্তু একে অন্যের প্রতি নির্ভরশীলও বটে। যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, তাতে গরিব দেশের গরিব মানুষেরা রয়েছে উৎকণ্ঠায়। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ হয়ে উঠছে দরিদ্র মানুষের সংসার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপের ব্যাপার, কিন্তু তা তো শুধু ইউরোপের নয়। গোটা বিশ্ব এখন মুদ্রাস্ফীতির মোকাবিলা করছে। হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে জিনিসপত্রের দাম।
যুক্তরাষ্ট্রে বা ইউরোপের কোনো কোনো দেশে সামাজিক নিরাপত্তা আছে। তাই কষ্ট হলেও সামলে নেওয়ার একটা পথ খোলা আছে। যাদের সামাজিক নিরাপত্তা নেই, তারা তো বুঝতেই পারছে, কত ধানে কত চাল। তাই নির্দিষ্ট বেতনে বা আয়ের ওপর নির্ভর করে ঊর্ধ্বমুখী দামের সঙ্গে যুদ্ধ করা যে কত কঠিন, সে কথা যুদ্ধবাজ দেশগুলো বুঝবে না।
তাই ন্যাটো শীর্ষ বৈঠকে ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলো কি না হলো, সেটা গরিব দেশগুলোর মানুষেরা আদৌ ভাবে না। তারা ভাবে, যুদ্ধ শেষ হোক, শান্তি নেমে আসুক পৃথিবীতে। বেঁচে থাকার উপকরণগুলো পাওয়া যাক সীমিত আয়ের সীমার মধ্যেই।
কিন্তু অস্ত্র ব্যবসার স্বার্থ কি মানবিক অনুভূতিগুলোকে মূল্য দেয়, দিয়েছে কখনো? জো বাইডেন হোক, ভ্লাদিমির পুতিন হোক কিংবা জেলেনস্কি হোক, তাঁরা কথা বলতে শুরু করলেই মনে হয়, আমাদের কানে এসে লাগছে অস্ত্রের ঝনঝনানি, মৃত্যুপথযাত্রীর আর্তনাদ। তারপরও ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের দিকে থাকে মানুষের চোখ। যদি কোনো ভালো সংবাদ আসে সেখান থেকে!
লেখক: উপসম্পাদক,আজকের পত্রিকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে আগামীকাল ১১ জুলাই বসবে ন্যাটোর শীর্ষ বৈঠক। সবাই উদ্গ্রীব হয়ে সেই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে। রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইউক্রেনকে কবে ন্যাটোভুক্ত করা হবে, সে প্রশ্নটি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা বেড়েছে।
১০ জুলাই ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে আগামীকাল ১১ জুলাই বসবে ন্যাটোর শীর্ষ বৈঠক। সবাই উদ্গ্রীব হয়ে সেই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে। রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইউক্রেনকে কবে ন্যাটোভুক্ত করা হবে, সে প্রশ্নটি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা বেড়েছে।
১০ জুলাই ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে আগামীকাল ১১ জুলাই বসবে ন্যাটোর শীর্ষ বৈঠক। সবাই উদ্গ্রীব হয়ে সেই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে। রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইউক্রেনকে কবে ন্যাটোভুক্ত করা হবে, সে প্রশ্নটি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা বেড়েছে।
১০ জুলাই ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে আগামীকাল ১১ জুলাই বসবে ন্যাটোর শীর্ষ বৈঠক। সবাই উদ্গ্রীব হয়ে সেই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে। রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইউক্রেনকে কবে ন্যাটোভুক্ত করা হবে, সে প্রশ্নটি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা বেড়েছে।
১০ জুলাই ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫