Ajker Patrika

ইমরান কি মাইনাস ওয়ান ফর্মুলার শিকার হতে যাচ্ছেন

এ কে এম শামসুদ্দিন
ইমরান কি মাইনাস ওয়ান ফর্মুলার শিকার হতে যাচ্ছেন

পাকিস্তানের রাজনীতি এখন একটি সংকটের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। ইমরান খানের গ্রেপ্তার ও তারপর আদালতের মাধ্যমে জামিন পাওয়ার সময় পর্যন্ত এক জটিল পরিস্থিতি অতিক্রম করেছে পাকিস্তান। ইমরানের আটক থাকাকালে যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে তা ছিল পাকিস্তানের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব ঘটনা। ইমরান খানের মুক্তির পর থেকে তাঁর দল পিটিআইকে শিক্ষা দিতে পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী এক জোট বেঁধেছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ যেন আটঘাট বেঁধেই ইমরান খানের পেছনে লেগেছেন। এই সহিংস ঘটনার জের ধরেই ইমরানের দল পিটিআইয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব নেতাকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর জামিনে মুক্তি পেয়ে জেলগেট পেরোতে না পেরোতেই আবার তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখাওয়ায় দাঙ্গা ও আগুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া পিটিআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মাহমুদ কুরেশি এবং পিটিআইয়ের আরেক নেত্রী মুসারাত জামশেদ চিমাওকে কারামুক্তির কয়েক মিনিটের মধ্যে আবারও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলের বাইরে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে কুরেশি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি এখনো পিটিআইয়ে আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন।

কুরেশি ও মুসারাত জামশেদ ছাড়াও পিটিআইয়ের আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও দলটির মহাসচিব আসাদ ওমরকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সম্প্রতি নিজের টুইটারে এক পোস্টে ইমরান লিখেছেন, ‘প্রায় সাত হাজার পিটিআই-সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই সহিংস ঘটনার নেপথ্যে কে বা কারা রয়েছে, তা তদন্ত না করেই আমাদের সমর্থক, নেতৃত্ব এবং নারীদের জেলে ঢোকানো হয়েছে। আমাদের দলকে নিষিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’ ইমরানের দল পিটিআইকে নিষিদ্ধ করার যে প্রচেষ্টা চলছে, তা দেশটির সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফও বলেছেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইমরানের দল পিটিআইকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

পাকিস্তানের ভিতে আঘাত করেছে পিটিআই। আসিফ এখানে পাকিস্তানের ভিত বলতে সেনাবাহিনীকেই বুঝিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, এর আগে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ কথা ঠিক, ইমরানকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর সমর্থকেরা প্রতিবাদে যেভাবে ফেটে পড়েছিলেন, পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এর কোনো নজির নেই। পিটিআইয়ের সমর্থকেরা এমনভাবে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন যে দেশের বিভিন্ন শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেও ওই বিক্ষোভ ঠেকানো যাচ্ছিল না।

পিটিআইয়ের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর মুহুর্মুহু সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। ৯ মে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পরপরই দেশ অচল করে দেওয়ার ডাক দিয়েছিল তাঁর দল। দলের নেতাদের এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। ইমরানের নিজ শহর লাহোরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে সেনানিবাসে সেনাকর্মকর্তাদের আবাসিক এলাকায় হামলা চালানো হয়েছে। এমনকি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কোর কমান্ডার থ্রি স্টার লে. জেনারেল পদবির সামরিক কর্মকর্তার বাড়িতেও আক্রমণ করা হয়। সেনানিবাসের বিভিন্ন ভবনেও ভাঙচুর চালাতে দেখা গেছে। পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর এক ঘাঁটিতেও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বিক্ষোভ হয়েছে বেলুচিস্তানের কোয়েটায়। সেখানেও সেনানিবাসের বাইরে বিক্ষোভ করেছেন পিটিআইয়ের সমর্থকেরা। ১০ মে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের লাহোরের বাসভবনেও হামলা করা হয়েছিল। এ হামলার সময় অবশ্য শাহবাজ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে ছিলেন না।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পিটিআইয়ের যেসব নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁদের নাকি হুমকি দেওয়া হচ্ছে এই বলে, ইমরানের সঙ্গ ত্যাগ না করলে, অর্থাৎ পিটিআই দল ত্যাগ না করলে তাঁদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে, রাজনীতি করা তো দূরে থাক, সারা জীবন তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মুখ দর্শন করার সুযোগও পাবেন না; বরং তাঁদের জীবনভর পঙ্গুত্ব বহন করতে হবে। এই হুমকি ওষুধের মতো কাজে দিয়েছে। দেখা গেছে, গ্রেপ্তারকৃতরা ছাড়াও ইমরানের অনেক নেতা-কর্মীর পিটিআই ত্যাগের হিড়িক পড়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী। তিনি ২৪ মে দল ছাড়ার কথা ঘোষণা দিয়েছেন। শুধু দল ছাড়াই নয়, ফাওয়াদ ইমরান খানের সঙ্গে কোনো সম্পর্কই রাখবেন না বলে অঙ্গীকারও করেন। দল ছাড়ার সময় বলেন, ‘আমি ইমরানের থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। দলের সব পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি।’ অথচ এই ফাওয়াদই গ্রেপ্তারের আগে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ইমরান খানের গ্রেপ্তারের ঘটনাকে ‘অসাংবিধানিক’ বলেছিলেন। তিনি জোর গলায় সেদিন আরও বলেছিলেন, ‘আমরা একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি। আমাকে সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে গ্রেপ্তারের ঘটনা সেই চ্যালেঞ্জেরই অংশ!’ ইমরানের জমানায় এই পাকিস্তানি তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ পিটিআইয়ের প্রধান মুখপাত্র ছিলেন। তাঁর এই দল ছাড়ার ঘোষণা ইমরানের জন্য ‘বড় ধাক্কা’ বলেই মনে করা হচ্ছে। পদত্যাগের তালিকায় সর্বশেষ নাম লিখিয়েছেন দলটির অন্যতম প্রভাবশালী নেত্রী শিরিন মাজারি। পদত্যাগকালে তিনিও ফাওয়াদের মতো অঙ্গীকার করে বলেছেন, এখন থেকে তিনি পিটিআই কিংবা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রাখবেন না। মাজারি সহিংসতার নিন্দাও জানিয়েছেন। পিটিআই ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির অন্যতম নেতা ও জাতীয় পরিষদের সদস্য আফতাব হোসাইন, পিটিআইয়ের পশ্চিম পাঞ্জাবের সভাপতি ফায়জুল্লাহ্ কামোকা, পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য আব্দুল রাজ্জাক খান নিয়াজী ও মিয়া জলিল। জলিল সহিংস ঘটনার জন্য ইমরান খানকেই দায়ী করেছেন। তিনি অন্য নেতাদেরও ইমরান খান, তাঁর আদর্শ ও রাজনীতি থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে দল থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বানও জানান।

দলের এসব নেতার পদত্যাগের ঘোষণা ইমরানকে রাজনৈতিকভাবে আরও চাপে ফেলে দিল। ওদিকে জানা গেছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও সরকারের হুমকির মধ্যে শাহ মাহমুদ কুরেশি ও মুসারাত জামশেদ চিমাও মাথা নত করেননি বলে তাঁদের উচ্চ আদালতের নির্দেশে মুক্তি দেওয়ার পরপরই অন্য এক মামলা দেখিয়ে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অথচ আদালত জনশৃঙ্খলা আইনে কুরেশিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টিকে ‘বেআইনি’ বলেছেন। পুনরায় গ্রেপ্তারের পর কুরেশিকে পুলিশ অজ্ঞাতনামা এক স্থানে নিয়ে গেছে। তাঁকে কোথায় নিয়ে গেছে, তা জানা যায়নি। এখানে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক হবে, সহিংস ঘটনার পরপরই ১৩ মে পেশোয়ারে সেনাকর্মকর্তাদের একটি অনুষ্ঠানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আসিম মুনির হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যাঁরা সেনা সদর দপ্তর ও সেনাকর্মকর্তাদের বাড়িতে হামলার পরিকল্পনা করেছেন, অংশ নিয়েছেন, প্ররোচনা এবং উসকানি দিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

পাকিস্তান নামের এ দেশটি স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এযাবৎ কোনো সরকারপ্রধানই তাঁদের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। প্রায় ৭৫ বছরের মধ্যে তিনটি সফল সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সে দেশের সেনাবাহিনী মোট ৩৩ বছরের বেশি সময় ধরে সামরিক শাসন চালিয়েছে। এ ছাড়া বাকি সময়ে সেনাবাহিনীকে জমাখরচ দিয়েই বেসামরিক সরকারগুলোকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হয়েছে। যে মুহূর্তে সেনাবাহিনীর সঙ্গে দর-কষাকষিতে হেরফের হয়েছে, তারপরই বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতার চেয়ার থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে। এ কারণেই পাকিস্তানের রাজনীতিতে যেকোনো পালাবদলের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততাকে অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠতে দেখা গেছে। পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর অবস্থান এমনই শক্তিশালী যে যেকোনো রাজনৈতিক দলই তাদের সঙ্গে আপস না করে টিকে থাকতে পারে না।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দুর্বলতাই সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্রক্ষমতায় হস্তক্ষেপের পথ সুগম করে দিয়েছে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব রাজনীতি থেকে সেনাবাহিনীকে পৃথক না করে; বরং বারবার তাদের ওপর নির্ভর করেছে, যার ফলে দেশটিতে সামরিক বাহিনী এত প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। সাড়ে পাঁচ লাখ জনবলের সেনাবাহিনীসহ সাত লাখের একটি সশস্ত্র বাহিনীর বোঝা বহন করতে হচ্ছে পাকিস্তানকে। পাকিস্তানের মোট বাজেটের ২০ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ থাকে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য।

ইমরান খানের জন্য সবচেয়ে দুঃসংবাদ বয়ে নিয়ে এসেছে যখন দলটির মহাসচিব আসাদ ওমর ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি দলের সঙ্গে থাকলেও দলীয় পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন। তিনি বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে তাঁকে কোনো ধরনের চাপ দেওয়া হয়নি। আসাদ ওমরের এমন বক্তব্যে সন্দেহের অবকাশ আছে বৈকি। সামরিক জান্তাদের চাপের মুখে এই রাজনৈতিক ব্যক্তি যে এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছন, তা সহজেই অনুমেয়। তা না হলে ইমরান গ্রেপ্তার হওয়ার পর পিটিআইয়ের যেসব নেতাকে এত সক্রিয় দেখা গেছে, কয়েক দিন কারাবাসের পর তাঁদের ভেতরই বা এত পরিবর্তন এল কীভাবে? ইমরান এরই মধ্যে অভিযোগ করে বলেছেন, ধরপাকড় চালিয়ে তাঁর দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের দল থেকে পদত্যাগের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। ইমরান দাবি, দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের পাশাপাশি তৃণমূল নেতা-কর্মীদেরও লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। এমন রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমান সরকার সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে ইমরান খানের দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিষ্ক্রিয় করে তাঁকে একঘরে করে ফেলার চেষ্টা করছে, যাতে তিনি রাজনীতিতে শিগগিরই সক্রিয় হতে না পারেন। ইমরান নিজেও অভিযোগ করে বলেছেন, ‘তারা সবাইকে জেলে পাঠিয়েছে। এখন কার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে, সেটাও আমি জানি না।’ সামনের দিনগুলোতে ইমরান খানকে যে আরও বেশি রাজনৈতিক হয়রানির শিকার 
হতে হবে তা বলাই বাহুল্য।

ইমরান ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন, প্রয়োজনে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। তবে তার আগে দুটো বিষয় সরকারকে বোঝাতে হবে যে আগামী অক্টোবরে নির্বাচন দিলে কতটা দেশের উপকার হবে এবং ইমরান রাজনীতি ছেড়ে দিলে দেশের কী কল্যাণ হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসবই ইমরানের রাজনৈতিক বক্তব্য ছাড়া কিছু নয়। ইমরানের গ্রেপ্তারের পর উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই ধারণা পোষণ করছেন, পাকিস্তানে সেনাবাহিনী হয়তো পুনরায় ক্ষমতা দখল করবে। এ আশঙ্কা অমূলক না হলেও খুব তাড়াতাড়িই এ ধরনের ঘটনা ঘটবে বলে মনে হয় না। তবে ক্ষমতা দখল না করলেও ইমরান খান যাতে রাজনীতিতে আগের মতো সক্রিয় হতে না পারেন, সে চেষ্টা তাঁরা করে যাবেন। বিশ্লেষকদের মতে, একসময়ের পাকিস্তান সেনাসদস্যদের, বিশেষ করে জুনিয়ার সামরিক কর্মকর্তাদের ‘পোস্টার বয়’ ছিলেন ইমরান খান। তাঁদের অনেকেই এখন সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। তাঁদের ভেতর হয়তো সহানুভূতি থাকতে পারে ইমরানের প্রতি। তবে তাঁদের সেই সহানুভূতি ইমরানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের দুঃসময়ে কতটুকু কাজে আসবে তা হয়তো ভবিষ্যৎই বলতে পারবে।

এ কে এম শামসুদ্দিন, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত