Ajker Patrika

গোখাদ্যের লাগামহীন দাম বন্ধের পথে অনেক খামার

রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী)
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২২, ১১: ৪১
গোখাদ্যের লাগামহীন দাম বন্ধের পথে অনেক খামার

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের ইয়াসিন হোসেনের পাঁচ সদস্যের সংসার। আবাদি জমি নেই। ছয়টি গাভির ছোট একটি খামার আছে। খামার থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে চলে তাঁর সংসার। কিন্তু হঠাৎ গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনি।

গরুগুলোকে আগের মতো খাবার দিতে পারছেন না ইয়াসিন। গরুকে ঠিকমতো খাবার দিতে গেলে সংসারে টানাপোড়েন শুরু হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে গত শুক্রবার সব গাভি বিক্রি করে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি।

ইয়াসিন হোসেন বলেন, ‘গরুর খাবারের যে দাম, না বেচে করিম কি? যেইঠে মাইনষের খাওনের এক কেজি আটা বেচাইছে ৩২ টাকা সেইঠে গরুর খাওনের গমের এক কেজি ভুসির দাম ৪০ টাকা।’

শুধু ইয়াসিন নয়, হঠাৎ গোখাদ্যের দাম বাড়ায় তাঁর মতো এ উপজেলায় গরু ও ছাগলের অনেক খামারি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। বাধ্য হয়ে অনেকেই গরু-ছাগল বিক্রি করে দিচ্ছেন।

সৈয়দপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শ্যামল কুমার রায় বলেন, ‘গোখাদ্যের দাম বাড়ার কথা খামারিদের কাছ থেকে শুনেছি। দাম বাড়া-কমা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে। আমরা খামারিদের বাইরের তৈরি খাবারের পরিবর্তে সবুজ ঘাস খাওয়ানোর পরামর্শ দিচ্ছি। বাড়িতে গরুর সুষম খাদ্য তৈরির পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুরে গরুর খামার রয়েছে ২৭৮টি। এর মধ্যে নিবন্ধিত খামারের সংখ্যা ৭৪টি।

সরেজমিন সৈয়দপুর উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১০ দিন আগেও এক পণ (৮০ আঁটি) খড় বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকায়, গমের ভুসি প্রতি বস্তা (৩৭ কেজি) বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকা ও বুটের খোসা প্রতি বস্তা (২৫ কেজি) ১ হাজার ২৭০ টাকায়। কিন্তু বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে খড় ৬৫০, ভুসি ১ হাজার ৪৮০ টাকা ও বুটের খোসা ১ হাজার ৩২০ টাকায়। ২৫ কেজির প্রতি বস্তা ফিড বিক্রি হয়েছিল ৯৫০ টাকায়, দাম বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৫০ টাকায়। এ ছাড়া চালের খুদের দাম বস্তায় বেড়েছে ১৩০ টাকা। কিছুদিন প্রতি বস্তা খুদ ৫০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন হচ্ছে সাড়ে ৭০০ টাকায়।

নিজের খামারে গরুর দুধ দোহানোতে ব্যস্ত বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের কিশামত কাদিখোল গ্রামের রফিকুল ইসলাম। সাতটি গাভির ছোট একটি খামার আছে তাঁর। দুধ বিক্রির আয়ের টাকায় চলে সংসার। রফিকুল বলেন, ‘আমাদের কষ্ট তো কাহো বোঝে না, শোনে না। গাভির খাবারের দাম হু হু করি বাড়েছে। কিন্তু দুধের দাম বাড়েছে না। হঠাৎ ফিড, ভুসির দাম বাড়ায় গাভিগুলাক ঠিকমতোন খাওন দিবার পাওছি না। এ জন্যে গরুর স্বাস্থ্য শুকি যাইছে, দুধও কম হয়ছে। তাও হামার পেকে কাহোও দেখেছে না।’

শহরের রসুলপুর এলাকার খামারি হাফেজ শাহাজাদা বলেন, ‘ভুসি, ফিড ছাড়া বিদেশি গাভি তো খড় পানি খায় না। একবেলা খাবার না পাইলে চিৎকার শুরু করে। ফিড, ভুসির দাম বাড়ায় আমরা গরুক ঠিকভাবে খাবার খাওয়াতে পারছি না।’

সৈয়দপুর ডেইরি খামার মালিক সমিতির সভাপতি শাহিদ আজিজ বলেন, চলতি বছর গোখাদ্যের দাম তিন দফা বেড়েছে। কিন্তু দুধের দাম বাড়েনি। গত এক মাসের ব্যবধানে গোখাদ্যের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জুন বলেন, ‘প্রয়োজনের তাগিদে অনেক খোলা মাঠ এখন আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। এতে ঘাস সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষক ও খামারিরা কৃত্রিম দানাদার পশুখাদ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।

এই সুযোগটাকে কাজে লাগাচ্ছেন কৃত্রিম খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তাঁরা ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থাকলেও পশুখাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে তাঁদের কোনো কার্যক্রম নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত