Ajker Patrika

দিনের শান্তি রাতেও চাই

আপডেট : ১৯ জুন ২০২২, ০৯: ৪৭
দিনের শান্তি রাতেও চাই

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৫ জুন। ১৬ জুন ‘আজকের পত্রিকা’র প্রধান শিরোনাম ‘দিনের শান্তি রাতে নষ্ট’। আমার কাছে কুসিক নির্বাচনের পর এ শিরোনামটি সবচেয়ে জুতসই মনে হয়েছে। কারণ, সারা দিন ভোট হয়েছে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে। কয়েকটি কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনের কারণে ভোট গ্রহণ কিছুটা শ্লথ হওয়া এবং শুরুর দিকে ভোটার উপস্থিতি কম থাকা ছাড়া ভোট নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। কাউকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে কিংবা কোনো ভোটারকে ইভিএম মেশিনের সামনে দাঁড় করিয়ে কোনো ‘ডাকাত’ বা ‘সন্ত্রাসী’ বলেছে ‘আঙুল আপনার টিপ আমার’—এমন অভিযোগও শোনা যায়নি। ভোটাররা ভীতিমুক্তভাবে নিজের পছন্দের প্রার্থীর মার্কায় টিপ দিতে পেরেছেন। কোনো কেন্দ্র থেকে কোনো প্রার্থীর এজেন্ট বের করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেনি। আমাদের দেশে সাম্প্রতিক সময়ে ভোট নিয়ে যেসব অভিযোগ শোনা যায়, তার একটিও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সারা দিন শোনা যায়নি। ভোট গ্রহণের দায়িত্ব যাঁরা পালন করেছেন, তাঁরা যথেষ্ট দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। এটা ভালো লক্ষণ অবশ্যই। শুধু স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে চিঠি দিয়েও কুমিল্লা ত্যাগে বাধ্য করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। একে অনেকেই কমিশনের অসহায় ‘আত্মসমর্পণ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

ভোটের ফলাফল ঘোষণার শুরুও ভালো ছিল। আমি নিজে টেলিভিশনে দেখেছি, শুরুর দিকে কয়েকটি কেন্দ্রের ঘোষিত ফলে সামান্য এগিয়ে ছিলেন টেবিলঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। তারপর বেশ কিছু সময় এগিয়ে ছিলেন নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। ভোটের ব্যবধান অবশ্য কখনোই হাজার হাজার ছিল না। মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০১টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা পর্যন্ত সাক্কু সামান্য ভোটে এগিয়ে ছিলেন। এ সময় ফল ঘোষণার জায়গায় নৌকা ও টেবিলঘড়ি প্রতীকের দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বচসা ও কথা-কাটাকাটি শুরু হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, শান্তি বিঘ্নিত হয়। ফলাফল ঘোষণা ৪৫ মিনিটের জন্য স্থগিত থাকে। আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ-আনসার সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ৪৫ মিনিট পর রিটার্নিং কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতকে ৩৪৩ ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগের সদস্যরা উল্লাসে মেতে ওঠেন। আগে দুইবারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর মেয়র পদে হ্যাটট্রিক করার স্বপ্ন ভেঙে যায়। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ৪৫ মিনিটের নাটকীয়তায় চার কেন্দ্রের ফলে ইঞ্জিনিয়ারিং করে তাঁকে হারিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উত্থাপন করেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা গোলযোগের সময় কারও সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার পর তাঁকে পরাজিত ঘোষণা করা হয়। সাক্কুর অভিযোগ থেকে মনে হয়, টেলিফোনে কারও নির্দেশ পেয়েই রিটার্নিং কর্মকর্তা ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন।

এই অভিযোগের ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরীর বক্তব্য: কুসিক নির্বাচনে দুই পক্ষের নেতা-কর্মী ও অনুসারীদের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে ফলাফল ঘোষণায় একটু দেরি হয়। এ ছাড়া সে সময় বৃষ্টির কারণে ফল দেরিতে পৌঁছানোকেও একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।

ফোন কলে কারও সঙ্গে কথা বলার পর ভোটের ফল পাল্টে যাওয়ার বিষয়টি একেবারে ভিত্তিহীন বলে দাবি করে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘তখন যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, সেই পরিস্থিতি সম্পর্কে আমি ফোনে কথা বলছিলাম সিইসি, ডিসি ও এসপির সঙ্গে। অন্য কারও ফোন আসেনি। পরাজিত প্রার্থী চাইলে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। ফল ঘোষণার সময় তাঁরা কেন অভিযোগ জানাননি।’ তিনি এটাও স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘যে চারটি কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, সেখানে সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রতিনিধি ছিলেন। সেখানে তাঁদের যে রেজাল্ট শিট দেওয়া হয়েছিল, পরবর্তী সময়ে আমরা যে ঘোষণা দিয়েছি, সেখানে কোনো অমিল থাকলে আমাদের বলতে পারতেন।’

রিটার্নিং কর্মকর্তার মতোই নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরও বলেছেন, ‘প্রতিটা কেন্দ্রে নির্বাচন শেষে গণনা করে প্রিসাইডিং কর্মকর্তারাই ফলাফল ঘোষণা করেন। তাঁর এই ফলাফলটাই হলো চূড়ান্ত। সেটার ভিত্তিতেই রিটার্নিং অফিসার সেই ফলাফল কম্পাইল করে, যোগ-বিয়োগ করে কেন্দ্রীয়ভাবে তা ঘোষণা করেন। ফলাফল পরিবর্তন, পরিবর্ধন করার কোনো সুযোগ তাঁর নেই।’

বিভুরঞ্জন সরকার

সাক্কুর কাছে ওই চার কেন্দ্রের ফলাফল শিট আছে। তাতে গরমিল থাকলে সেই ফলাফল শিট গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে না দিয়ে তাঁকে হারিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুললেন কেন? নিজে জিতলে ঠিক আর হারলে সব বেঠিক—এই নীতি তো সমর্থনযোগ্য নয়। আওয়ামী লীগ পরাজিত হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে আর আওয়ামী লীগ জিতলে বলা হবে নির্বাচন ভালো হয়নি, এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে নির্বাচনের পরিবেশ কীভাবে উন্নত হবে? হারজিত যে নির্বাচনের স্বাভাবিক নিয়ম, সেটা না মানলে তো নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ কখনো তৈরি সহজ হবে না। আওয়ামী লীগকে কেন হেরেই প্রমাণ করতে হবে যে নির্বাচন ভালো হয়েছে?

কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী পাঁচজন থাকলেও মূল আলোচনায় ছিলেন তিনজন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নবনির্বাচিত মেয়র আরফানুল হক রিফাত, বিদায়ী মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবং বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার। কুমিল্লার রাজনীতিসচেতন ব্যক্তিরা মনে করেন, নিজাম উদ্দিন কায়সারের ঘোড়া প্রতীকে নির্বাচন করাই সাক্কুর হারের বড় কারণ। কায়সার ভোট পেয়েছেন ২৯ হাজার ৯৯টি। এর সবই বিএনপির সমর্থকদের। এই ভোটই পারত রিফাত ও সাক্কুর লড়াইয়ে পার্থক্য গড়ে দিতে। সে ক্ষেত্রে হয়তো সাক্কুর জয় সম্ভব ছিল। অন্যদিকে সাক্কু যাঁদের ভোট পেয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিরোধী তথা আওয়ামী লীগবিরোধী ভোটার। বিএনপিকে সমর্থন করেন এমন ভোট সাক্কু খুব কমই পেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। সাক্কুর পাওয়া ভোটের একটা অংশ এসেছে কুমিল্লার জামায়াত ও সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি-গোষ্ঠীর কাছ থেকে।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিল নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রথম পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় কমিশন পাস করতে পেরেছে, না ফেল করেছে—তা নিয়েও আমরা একমত হতে পারব না। কারণ, আমাদের রাজনীতি হলো একমত না হওয়ার। যাঁরা পরীক্ষক, তাঁরাও একমতের মানুষ নন। একজন পাস নম্বর দিলে অন্যজন অবশ্যই ফেল করাবেন। একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজনের কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচন কমিশনকে কুমিল্লায় ফেল করিয়েছেন। কিন্তু এই সংগঠনের কুমিল্লা জেলা সভাপতি আলমগীর খান বলেছেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে যেমন সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চেয়েছি, তার পুরোটাই হয়েছে। নির্বাচনে কোনো অনিয়ম ঘটেনি। বৃষ্টি না হলে ভোটার আরও বাড়ত।’ চার কেন্দ্রের ফল ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি সারা দিন উৎসবের ভোট হওয়ার পর রাতে ফলাফল ঘোষণার সময় হট্টগোল বাধে। ফলাফল ঘোষণায় ৪৫ মিনিট দেরি হওয়ায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ইসি। অন্যদিকে সাক্কুর লোকজন যে অভিযোগ করেছেন, তার প্রমাণ থাকা উচিত ছিল। তাতে চার কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা না করা নিয়ে যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে, তা সেখানেই দূর হয়ে যেত।’

আমাদের রাজনীতিতে যেমন স্বচ্ছতার অভাব, তেমনি অন্য সব ক্ষেত্রেও। আমরা সন্দেহ তৈরি করতে যতটা উৎসাহী, সন্দেহ দূর করতে ততটা নয়। তবে আমরা চাইব, কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে দিনের শান্তি রাতে নষ্ট হওয়ার যে ক্ষতচিহ্ন তৈরি হয়েছে, সেটা যেন পরের নির্বাচনগুলোতে আর না হয়। আওয়ামী লীগকে যেমন বুঝতে হবে দেশে আরও দল আছে, দলমতের সমর্থন করেন না—এমন মানুষও আছেন। দেশের সব মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নন, আবার সবাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শেরও সৈনিক নন। অন্যদিকে বিএনপিকেও বুঝতে হবে, তাদের মতের সঙ্গে দেশের সব মানুষই একমত নন। সরকারবিরোধী হলেই সবাই বিএনপিকে ভোট দেবেন, তা-ও নয়। সরকারের সমালোচনা মানেই বিএনপির পক্ষে নয়। রাজনৈতিক কৌশল ঠিক করার সময় একরৈখিক পথনকশা প্রস্তুত না করাই শ্রেয়।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩৪৩ ভোটে সাক্কুকে হারিয়ে এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছেন আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাত। কুমিল্লার মানুষ এই পরিবর্তনের পক্ষে না থাকলে নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতি শান্ত থাকত না।

বিজয়ী মেয়র রিফাতের সাফল্য কামনা করে নিজের অঙ্গীকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানিয়ে তাঁর বক্তব্যটি এখানে তুলে ধরছি। জয়ী হওয়ার পর আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেছেন, ‘জনগণ যে দায়িত্ব পালনের জন্য আমাকে জয়ী করেছেন, তা আমি পরিপূর্ণভাবে পালন করব। আমি কুমিল্লাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ। তাঁরা আমাকে এবং নৌকাকে ভালোবেসে আমাকে জয়ী করেছেন। আমি তাঁদের সেই সম্মান রাখব। আর সেটা অবশ্যই সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজের মাধ্যমে।’ দায়িত্ব নিয়েই সবার আগে নগরীর সমস্যা চিহ্নিত করবেন বলে জানিয়েছেন রিফাত। তিনি বলেন, ‘কোন সমস্যা আগে সমাধান করব, সেটার জন্য আলোচনায় বসব। সুন্দর নগরী গড়তে দেশের নামকরা নগরবিদদের সাহায্য নেব।’

পরের নির্বাচনের আগে তাঁর বিরুদ্ধে ওয়াদা ভঙ্গের অপবাদ যেন না ওঠে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঘর আলো করেছে ৫ নবজাতক, চোখে অন্ধকার দেখছেন মুদিদোকানি সোহেল

বেতন–ভাতা বাড়িয়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলার না করলে টেসলা ছাড়তে পারেন মাস্ক

আজকের রাশিফল: ভুল ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠিয়ে বিপত্তি বাধাবেন না

ঘনীভূত হচ্ছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’, আঘাত হানবে সন্ধ্যার পর

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঘর আলো করেছে ৫ নবজাতক, চোখে অন্ধকার দেখছেন মুদিদোকানি সোহেল

বেতন–ভাতা বাড়িয়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলার না করলে টেসলা ছাড়তে পারেন মাস্ক

আজকের রাশিফল: ভুল ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠিয়ে বিপত্তি বাধাবেন না

ঘনীভূত হচ্ছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’, আঘাত হানবে সন্ধ্যার পর

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঘর আলো করেছে ৫ নবজাতক, চোখে অন্ধকার দেখছেন মুদিদোকানি সোহেল

বেতন–ভাতা বাড়িয়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলার না করলে টেসলা ছাড়তে পারেন মাস্ক

আজকের রাশিফল: ভুল ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠিয়ে বিপত্তি বাধাবেন না

ঘনীভূত হচ্ছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’, আঘাত হানবে সন্ধ্যার পর

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঘর আলো করেছে ৫ নবজাতক, চোখে অন্ধকার দেখছেন মুদিদোকানি সোহেল

বেতন–ভাতা বাড়িয়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলার না করলে টেসলা ছাড়তে পারেন মাস্ক

আজকের রাশিফল: ভুল ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠিয়ে বিপত্তি বাধাবেন না

ঘনীভূত হচ্ছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’, আঘাত হানবে সন্ধ্যার পর

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঘর আলো করেছে ৫ নবজাতক, চোখে অন্ধকার দেখছেন মুদিদোকানি সোহেল

বেতন–ভাতা বাড়িয়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলার না করলে টেসলা ছাড়তে পারেন মাস্ক

আজকের রাশিফল: ভুল ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠিয়ে বিপত্তি বাধাবেন না

ঘনীভূত হচ্ছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’, আঘাত হানবে সন্ধ্যার পর

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত