Ajker Patrika

ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন প্রকল্প: জন-যন্ত্র ছাড়াই সময় ফুরাচ্ছে

রাশেদ রাব্বি, ঢাকা
ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন প্রকল্প: জন-যন্ত্র ছাড়াই সময় ফুরাচ্ছে

দেশের প্রায় দুই কোটি কিডনি রোগীর মধ্যে দুই থেকে আড়াই লাখ রোগীর ডায়ালাইসিস সেবার প্রয়োজন হয়। অথচ তাদের মধ্যে মাত্র ১২ থেকে ১৫ হাজার রোগী ডায়ালাইসিস সেবা পায়। অর্থাভাবে অন্য রোগীরা থেকে যায় চিকিৎসার বাইরে। সেই রোগীদের চিকিৎসার আওতায় আনতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০ শয্যা এবং জেলা সদর হাসপাতালে ১০ শয্যার কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপনের প্রকল্প নেওয়া হয় ২০২০ সালে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি মাসেই (ডিসেম্বর)। তবে এখনো কেনা হয়নি যন্ত্রপাতি, নিয়োগ দেওয়া হয়নি লোকবল। এমনকি প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টিরই অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রণালয়। ফলে প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম অগ্রাধিকার প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে বছরে প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার মানুষ ডায়ালাইসিস সেবা নিয়ে এবং ১ হাজার মানুষ কিডনি সংযোজন করে বেঁচে থাকে। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রতিস্থাপন কেন্দ্রে শতাধিক রোগীর কিডনি সংযোজন করা হয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১২০টির বেশি ডায়ালাইসিস সেন্টারে ১২ থেকে ১৫ হাজার রোগীর ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হয়। ডায়ালাইসিস করতে একজন রোগীর বছরে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা লাগে। বেশির ভাগ মানুষের পক্ষে এই ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়। ফলে বিপুলসংখ্যক রোগী থেকে যায় চিকিৎসার বাইরে। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার ১৫টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০ শয্যার এবং ৪৪টি জেলা সদর হাসপাতালে ১০ শয্যার করে ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়।

প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) এক চিঠি থেকে জানা গেছে, ‘মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসমূহে বিদ্যমান কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ এবং জেলা সদর হাসপাতালসমূহে ১০ শয্যার কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন’ প্রকল্পটি ২০২০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নের এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ৩০০ কোটি টাকার বেশি। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

প্রকল্প পরিচালক ডা. খান মোহাম্মদ আরিফ গত ৪ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে দেওয়া চিঠিতে বলেছেন, এ ক্ষেত্রে দ্রুততার সঙ্গে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে প্রকল্পের আওতায় যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র কেনার আগেই প্রয়োজনীয় দক্ষ-অভিজ্ঞ জনবলের পদায়ন নিশ্চিত করা জরুরি। চিঠিতে আরও বলা হয়, কিডনি রোগের মানসম্মত চিকিৎসা সম্প্রসারণ, রোগের জটিলতা ও মৃত্যুর হার কমানো, দক্ষ জনবল সরবরাহের মাধ্যমে কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা উন্নীতকরণ, কিডনি রোগীদের পারিবারিক চিকিৎসা ব্যয় কমানো এবং দেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কিডনি প্রতিস্থাপনে এসব প্রতিষ্ঠানে নতুন পদ সৃষ্টি জরুরি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ডা. খান মোহাম্মদ আরিফ বলেন, পদ সৃজন না হলে জনবল নিয়োগ করা সম্ভব নয়। জনবল নিয়োগ না হলে যন্ত্রপাতি কেনা অর্থহীন। কারণ, যন্ত্রপাতি কিনে ফেলে রাখলে সেগুলো ব্যবহারের উপযোগিতা হারাবে। করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো ছাড়া এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।

সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্পে দেখা গেছে, দেশের ১৫টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০ শয্যা করে ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন করা হবে। এসব হাসপাতালে বর্তমানে স্বল্প পরিসরে ডায়ালাইসিস সেবা চালু আছে। সেন্টার স্থাপনের পর্যাপ্ত স্থান রয়েছে সেখানে। বর্তমানে দু-তিনটি জেলায় সীমিত আকারে ডায়ালাইসিস সেবা চালু আছে। রোগীর হার প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকায় এই সেবা সম্প্রসারণ প্রয়োজন। যেসব জেলা সদর হাসপাতালকে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে, সেগুলোতে পর্যাপ্ত জায়গা থাকায় ৪৪টি জেলা সদর হাসপাতালে ১০ শয্যার ডায়ালাইসিস সেন্টার নির্মাণের জন্য নির্বাচিত করা হয়।

যে ৪৪টি জেলা সদর হাসপাতালে ১০ শয্যার ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু করার কথা, সেগুলো হলো—নরসংদী, শরীয়তপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙামাটি, নোয়াখালী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, পাবনা, নাটোর, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, যশোর, মেহেরপুর, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ভোলা, বরগুনা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, শেরপুর, জামালপুর ও নেত্রকোনা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিডনি রোগ নীরব ঘাতক। ধীরগতিতে কিডনি আক্রান্ত হয়ে যখন কার্যকারিতা অর্ধেকের বেশি কমে যায়, তখন এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। ইউরোলজি সোসাইটির তথ্যমতে, দেশে প্রতিবছর প্রায় ২৫ হাজার রোগীর ডায়রিয়া, বমি, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, প্রসবকালীন জটিলতা, ম্যালেরিয়া ও বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় হঠাৎ করেই কিডনি বিকল হয়ে যায়। এ ছাড়া ৩০ হাজার রোগীর কিডনি একেবারেই অকেজো হয়ে যায়। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ৭০ শতাংশ রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, নানা জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শুরু ও শেষ করা সম্ভব হয়নি। প্রথমে প্রকল্পের টেন্ডার নিয়ে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিপিটিইউয়ে (সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট) অভিযোগ করে। সেটি নিষ্পত্তি হতে অনেকটা সময় চলে যায়। এরপর পিডি পরিবর্তন হয়ে নতুন পিডি এসে কাজ শুরু করেন। তবে এরই মধ্যে এই পিডির অন্যত্র পদায়ন হয়। ফলে আবার নতুন পিডি আসেন। সব মিলিয়ে সময় শেষ হয়ে গেছে। এই পর্যায়ে নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো ছাড়া প্রকল্প সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

সাতকানিয়ায় ডাকাত পড়েছে বলে মাইকে ঘোষণা দিয়ে মারধর, নিহত ২

ইউএনওর সামনেই ৪ জামায়াত নেতাকে পেটালেন বিএনপি নেতারা

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত