Ajker Patrika

ঠাকুরগাঁওয়ের ভক্তি নদী: নদী নেই, আছে কেবল সাইনবোর্ডে লেখা নাম

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
Thumbnail image

ঠাকুরগাঁও সদরের ভেলাজান বাজার ব্রিজের দিকে যাওয়ার পথে বাঁ পাশে তাকালে যে কারও চোখে পড়ে রংচটা একটি সাইনবোর্ড। তাতে লেখা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঠাকুরগাঁও। ভক্তি নদী, মোট দৈর্ঘ্য ৫ কিলোমিটার।’ কিন্তু সাইনবোর্ডের ওই লেখা দেখে নদী খুঁজতে গিয়ে নিরাশ হবেন যে কেউ। কারণ, সেখানে কেবলই ফসলের মাঠ। অথচ একসময়ের খরস্রোতা ভক্তি নদীতে জাহাজ চলত।

ভক্তি নদীর কেবল মৃত্যুই ঘটেনি, তার নাম নেই জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তালিকায়ও। জেলা প্রশাসনের কমিটিও নদীটির অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। রংচটা ওই সাইনবোর্ডই কেবল কোনোমতে ভক্তি নদীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ভেলাজান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার সরকার বলেন, ‘২০০ বছর আগে এই নদী দিয়ে জাহাজ চলত। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার সওদাগর ব্যবসার কাজে জাহাজে করে এ পথ দিয়ে মালামাল নিয়ে যেতেন ভারতে। এসব কথা বাবার মুখে শুনেছি।’

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভক্তি নদীর উৎপত্তি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ও চিলারং ইউনিয়নের বিভিন্ন নিম্নভূমি থেকে। নদীটি মূলত রাণীশংকৈল উপজেলার কুলিক নদীর উপনদী। রুহিয়া, আখানগর, চিলারং এবং রায়পুর ইউনিয়ন অতিক্রম করেছে ভক্তি নদী। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও সদরের ভেলাজান এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীটি এখন নিম্নভূমিতে পরিণত হয়েছে। সেখানে চাষ হচ্ছে ধান আর ভুট্টা। নদীর চরে বাড়িঘরও উঠেছে। এর তীরে ভেলাজান বাজার, আখানগর রেলস্টেশন ও দেহন উচ্চবিদ্যালয়।

নদীর পাড়ের বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সী হাসান আলী বলেন, তিনি তাঁর দাদার মুখে শুনেছেন ভক্তি নদীতে একটি জাহাজ ডুবে গিয়েছিল। জনশ্রুতি আছে, এক পীরের অভিশাপে ভেলাজান যাওয়ার পথে ঝোড়ো বাতাস আর খরস্রোতে জাহাজটি ডুবে যায়। এরপর জাহাজটির খোঁজ পাওয়া যায়নি।

আবুল হোসেন নামের একজন বলেন, বিভিন্ন সময়ে খাল খনন করতে গিয়ে জাহাজের পুরোনো লোহার টুকরা আর কাপড়ের পুঁটলি পাওয়া গেছে। তবে কাপড়গুলো হাতে নিলে মিহি গুঁড়া হয়ে যেত। এলাকাবাসীর ধারণা, নদী খননে যেসব ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে, সেগুলো ডুবে যাওয়া ওই জাহাজেরই।

স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্র বলেছে, সম্প্রতি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ভক্তি নদী। এ বিষয়ে কমিশন চিঠি দিলে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক আট সদস্যের একটি কমিটি করেন। কিন্তু সেই কমিটি নদীটির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি।

সদর উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মো. আবু তালেব বলেন, এসএ, সিএস এবং আরএস রেকর্ডের নকশায় নদীটির অস্তিত্ব নেই।

জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম যাকারিয়া বলেন, ‘১৮৩৬ সালে ভয়াবহ এক ভূমিকম্পে নদীটি বিলীন হয়ে যায় বলে জানতে পেরেছি। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন থেকে একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, ঠাকুরগাঁওয়ে ভক্তি নামে একটি নদী রয়েছে। কিন্তু কমিশনের তালিকায় নদীটি বাদ পড়েছে। পরে জেলা প্রশাসক আট সদস্যের কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্যরা একাধিকবার নদীর অববাহিকায় পরিদর্শনে যান। কিন্তু নদীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।’

সাইনবোর্ড প্রসঙ্গ জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘স্থানীয়দের মুখে এ নদীর নাম শুনে এর নামকরণ করা হয়েছে। এখন এটি নিম্নভূমি। বর্ষাকালে দেড় থেকে দুই মাস পানি থাকে। এর সমস্ত জমি ব্যক্তিমালিকানাধীনে রেকর্ড রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত