Ajker Patrika

মহারানির প্রয়াণ দিবস আজ

শাহীন রহমান, পাবনা 
মহারানির প্রয়াণ দিবস আজ

‘সুচিত্রা সেন হতে চাও?’ এটি ঠিক প্রবাদ নয়। এক ভীষণ প্রভাব থেকে প্রজন্মকে বাঁচানোর যেন এক সকরুণ আর্তি ছিল এককালে। ষাটের দশকের পর থেকে দুই বাংলার নারীরা প্রায় তিন দশক যাঁর চলাফেরা, ফ্যাশন, কথা বলার ধরন কিংবা ব্যক্তিত্ব ‘নকল’ করে গেছেন, তাঁর নাম সুচিত্রা সেন। নারীদের মধ্যে কী ভীষণ প্রভাব যে তাঁর ছিল, সেটা ওই একটি বাক্যেই বোঝা যায়।

২৬ বছরের ক্যারিয়ারে ৬০টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয়, তৃতীয় মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর খেতাব এবং দুবার ফিল্ম ফেয়ারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন—এসব তথ্য সুচিত্রা সেনের প্রতিভা বুঝতে সহায়তা করে। কিন্তু বাঙালির বুকে যে অভিনেত্রী দাগ কেটেছিলেন তাঁর হাসি, কান্না, ভ্রুভঙ্গি আর উত্তাল অভিনয় দিয়ে, এসব পরিসংখ্যান আর পুরস্কারে সে নারীকে বোঝা যায় না। বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকেরা তাঁকে চেনে তাঁর ট্রেডমার্ক হাসি, ধনুকের মতো বাঁকা ভ্রু, সাবলীল অভিনয় আর প্রখর ব্যক্তিত্বের কারণে। ১৯৭৮ সালে সেই যে চার দেয়ালে বন্দী করেছিলেন নিজেকে, ৩৬ বছর পর মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তাঁকে আর দেখা যায়নি প্রকাশ্যে! আজ সেই লাস্যময়ী, রহস্যময়ী ও প্রতিভাময়ী মহারানির নবম প্রয়াণ দিবস।

সত্যজিৎ রায়, সুচিত্রা সেন, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়সহ আরও অনেকের কারণে ভারতীয় বাংলা সিনেমার ইতিহাসে সে সময়কার পূর্ব বাংলা বা বর্তমানের বাংলাদেশ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সুচিত্রা সেন সেই গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের সূত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। তাঁর জন্ম ব্রিটিশ ভারতের পাবনা জেলার ভাঙাবাড়ি গ্রামে। প্রশাসনিকভাবে সেটি এখন সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলায় পড়েছে। তাঁর শৈশব-কৈশোরের একটি অংশ কেটেছে পাবনা শহরের হেমসাগর লেনের পৈতৃক বাড়িতে। সেন পরিবারের অবর্তমানে দখল হয়ে যাওয়া সে বাড়িটি সুচিত্রা সেনের মৃত্যুর পর দখলমুক্ত করা হয়েছে। কথা ছিল, সেখানে তৈরি হবে ‘সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা’। সে ‘কথা’ কেউ রাখেনি আজও! বাড়ি উদ্ধার হলেও সংগ্রহশালা গড়ে তোলার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। খানিকটা অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে বাড়িটি। এ বিষয়ে ক্ষোভ আছে স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীদের।

পাবনা থিয়েটার ’৭৭-এর সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম জানিয়েছেন, সুচিত্রা সেন যে পাবনার মেয়ে, তা অনেকেই ভুলতে বসেছে। তাঁর বাড়িতে সংগ্রহশালা করার যে কথা ছিল, তার কিছুই পূরণ হয়নি।

বাংলাদেশ আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী পাবনা জেলা শাখার সভাপতি প্রলয় চাকী বলেছেন, ‘তাঁর পৈতৃক ভিটা ঘিরে সুচিত্রা সংগ্রহশালা করার দাবি আজও পূর্ণতা পায়নি। সব মিলিয়ে আমরা হতাশ।’

সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. নরেশ মধু বলেন, ‘সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা করার জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেটি আজও প্রস্তাব হিসেবেই পড়ে আছে। কোনো উদ্যোগ নেই।’

এসব বিষয়ে পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেছেন, ‘সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়িতে স্মৃতি সংগ্রহশালা করার জন্য সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে কোনো নির্দেশনা না এলে আমাদের কিছু করার নেই।’

সুচিত্রা সেনের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় হেমসাগর লেনের বাড়িতে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

সাতকানিয়ায় ডাকাত পড়েছে বলে মাইকে ঘোষণা দিয়ে মারধর, নিহত ২

ইউএনওর সামনেই ৪ জামায়াত নেতাকে পেটালেন বিএনপি নেতারা

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত