Ajker Patrika

টাকা ছাড়া সই করেন না সাব-রেজিস্ট্রার

রিমন রহমান (রাজশাহী) ও  তারেক রহমান (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)
Thumbnail image

বিশ্ববিদ্যালয়ে একই হলে একই সময়ে থেকেছেন আবদুল গণি জোহা ও ইউসুফ আলী। জোহা এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি, আর ইউসুফ আলী চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার। এই জোহা সুপারিশ করার পরও কয়েকটা দলিল করে দিতে ইউসুফ ছয় লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

শিবগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী এভাবেই সবার কাছ থেকে ঘুষ নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী কিংবা সাধারণ মানুষ—কেউই দলিল করতে পারেন না ঘুষ ছাড়া।

সাব-রেজিস্ট্রার নিজ দপ্তরে হামলার শিকার হন ১০ জানুয়ারি। এখন তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অভিযোগ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াতের নির্দেশে সন্ত্রাসীরা তাঁর ওপর হামলা করেছে। তবে ইউএনও অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, সাব-রেজিস্ট্রার একজন অসৎ লোক। তিনি দিনের পর দিন মানুষকে হয়রানি করেন। তাঁর হয়রানির শিকার কোনো পক্ষ এই হামলা চালাতে পারে। এর সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত নন।

এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গিয়ে জানা গেছে, টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না ইউসুফ আলী। তাঁর প্রতি ক্ষোভের শেষ নেই শিবগঞ্জের মানুষের। ক্ষোভ আছে দলিল লেখকদেরও। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউসুফ আলী শিবগঞ্জে আসার পরই কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন দলিল লেখকেরা। প্রায় তিন মাস তাঁরা কোনো কাজই করেননি। এতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। সে সময় শিবগঞ্জ দলিল লেখক সমিতির সভাপতি তোজাম্মেল হক বলেছিলেন, টাকা ছাড়া কোনো দলিলেই সই করেন না সাব-রেজিস্ট্রার। তাঁরা সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী, অফিস সহকারী আল-মামুন ও মোহরার সেলিম রেজার অপসারণ চেয়েছিলেন। তৎকালীন ইউএনও সাকিব আল রাব্বি দলিল লেখকদের সঙ্গে সাব-রেজিস্ট্রারের মীমাংসা করে দেন।

কিন্তু সাব-রেজিস্ট্রারের ঘুষ-বাণিজ্য এখনো থামেনি। উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিউলী বেগম বলেন, ‘আমার শ্বশুরের জমির দলিল করতে সাব-রেজিস্ট্রার অতিরিক্ত টাকা চেয়েছিলেন। পরে আমি যাওয়ার পরেও ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে।’ সম্প্রতি শিবগঞ্জের চিকিৎসক মাহফুজ রায়হান জমির দলিল করতে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়েছেন সাব-রেজিস্ট্রারকে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমদ নজরুল কবির মুক্তার কাছেও ঘুষ চেয়েছিলেন সাব-রেজিস্ট্রার। সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে শিবগঞ্জের সব জনপ্রতিনিধিরও।

সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে থাকা ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ সম্পর্কে তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তাঁর স্ত্রী অরিনা বরকত খোদা বলেন, হামলায় আহত হয়ে তাঁর স্বামী অস্বাভাবিক আচরণ করছেন। তিনি কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই। ঘুষের অভিযোগের বিষয়ে অরিনা বলেন, তাঁর স্বামী সৎ কর্মকর্তা। ইউএনওর নির্দেশেই হামলা হয়েছে। এখন ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে এসব বলে বেড়ানো হচ্ছে।

জেলা রেজিস্ট্রার আফসানা খাতুন বলেন, ‘আমরা সরকারি চাকরি করি, সবাই খুশি না, এটা সত্য। কিন্তু ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে কখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত