Ajker Patrika

বঙ্গবন্ধু ছিলেন অনেক বড় মাপের, বড় মনের মানুষ

অজিত কুমার সরকার
বঙ্গবন্ধু ছিলেন অনেক বড় মাপের, বড় মনের মানুষ

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আমি আরও এক বছর বুয়েটে পড়াশোনা করেছি। বাহাত্তর সালে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে আমরা ছাত্র ইউনিয়ন প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছিলাম। আমি নির্বাচিত হয়েছিলাম বার্ষিকী সম্পাদক। নতুন দেশ, নতুন উদ্দীপনা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ গড়ার নতুন ধারার আন্দোলন। তখন আমাদের একটা সিদ্ধান্ত হলো, আমরা একটা প্রদর্শনী করব বুয়েটে। বুয়েটে এর আগে কখনো হয়নি সে ধরনের প্রদর্শনী। বিভিন্ন বিভাগে, যেমন স্থাপত্য, মেকানিক্যাল, কেমিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল বা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং—কোন বিভাগে কী ধরনের পড়াশোনা করা হয়, ড্রয়িং, মডেল এগুলো নিয়ে আমরা একটা প্রদর্শনী করব। সেখানে সাধারণ মানুষের প্রত্যেকের প্রবেশাধিকার থাকবে; বিশেষ করে আমরা চাইছিলাম যেসব ছেলেমেয়ে এসব ব্যাপারে জানতে আগ্রহী, তারা যেন বেশি বেশি করে এসে দেখতে পারে যে আমরা এখানে কী পড়াশোনা করি। আর নতুন দেশ, এ দেশকে যদি এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, তাহলে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এগুলোতে আগাতে হবে। এই চিন্তাভাবনা থেকে আমরা এই আয়োজনটা করেছিলাম। সেখানে ছাত্রলীগসহ সবাই যোগ দিয়েছিল। আমরা একসময় ঠিক করলাম, বছরের শেষ দিকে শীতকালে হবে প্রদর্শনীটা।

আমাদের মাথায় একটা চিন্তা এল যে বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে প্রদর্শনীটার উদ্বোধন করালে সবচেয়ে ভালো হয়। যোগাযোগ করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া হলো। তিনি তখন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধায় বসতেন। তাঁর অফিস ছিল ওখানে। ভিপি, জিএস আর আমি—আমরা তিনজন ঠিক করলাম দেখা করব। একদিন সময় দেওয়া হলো সন্ধ্যার পরে। গেলাম। দোতলা ভবনের ওপরতলায় তিনি বসতেন। আমরা যখন ঢুকেছি সেখানে, দেখলাম, কয়েকজন মন্ত্রী বসে আছেন ফাঁকা জায়গায়। হলঘরটা পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর রুমে নক করেছি। তোফায়েল আহমেদ দরজা খুলে দিলেন। আমরা ঢুকলাম। এই প্রথম বঙ্গবন্ধুকে এত কাছে থেকে দেখলাম। একটা টেবিলে অনেকগুলো কাগজপত্র, ফাইল নিয়ে সই করছিলেন তিনি, আর পাইপ টানছিলেন।

আমাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলো। আমাদের বললেন, ‘তোমরা একটু বসো। আমার হাতের কাজটা শেষ করে তোমাদের সঙ্গে কথা বলি।’ আমরা বসলাম। ততক্ষণে তিনি আবার তোফায়েল ভাইকে বললেন, ‘এদের চা-টা দেওয়ার ব্যবস্থা করো।’ মনে হলো যে একটা পরিবারের মধ্যে এসেছি। তিনি যে এত বড় নেতা, আমরা যে তাঁর কাছে কিছুই না—এ রকম কোনো কিছুই মনে হয়নি। মনে হলো, ঘরের ছেলে আমরা এসেছি, তিনি আমাদের পিতৃতুল্য কেউ একজন, সমাদর করছেন। এটা খুব ভালো লেগেছিল।
তারপর একটু পরে তিনি অবসর হয়ে বললেন, ‘বলো, তোমাদের বক্তব্য।’

আমরা বললাম, বুয়েটে একটা প্রদর্শনী করতে চাই, আপনি যাবেন।

তিনি বললেন, ‘যাব, কিন্তু সময়টা কখন?’

সময়টা জানার পর তিনি বললেন, ‘ওই সময়টা তো খুব ব্যস্ত থাকব।’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কিসে ব্যস্ত থাকবেন?’

বললেন, ‘সামনে ইলেকশন দিচ্ছি তো, বছরের শেষ দিকে ইলেকশনের অনেক কাজ থাকে।’

আমি বললাম, ‘আমাদের অনুষ্ঠানে আপনাকে বেশিক্ষণ থাকতে হবে না, যাবেন আর আসবেন। একটু থেকে একটা ভাষণ দেবেন। বড়জোর ঘণ্টা দুয়েক সময় লাগবে সব মিলিয়ে। এটুকু সময় আমাদের দিতেই হবে।’

তিনি বললেন, ‘আচ্ছা, আমি দেখি চিন্তাভাবনা করে। তোমরা তারিখটা রেখে যাও, কবে তোমরা করছ। আমি এর মধ্যে একটু বুঝে নিই যেতে পারব কি না। তোমরা 
পরশু দিন এসো।’

এক দিন গ্যাপ দিয়ে আমরা আবার গেলাম দেখা করতে। সেদিন সময়টা ছিল বিকেলবেলা, দুপুরের খানিক পরে। প্রথম দিন কিন্তু সন্ধ্যায় গেছিলাম। নিচতলায় একটা বিরাট বড় দরবার হলের মতো ছিল। ওখানে বসে ছিলেন। আমরা ঢুকে দেখি তিনি সেদিনও খুব ব্যস্ত। তাঁর সামনে দাঁড়ানো পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ সাহেব। অনেকগুলো ফাইল ছিল তাঁর হাতে। বঙ্গবন্ধু সোফায় বসে পাইপ টানছেন আর মন্ত্রী সাহেবের হাত থেকে ফাইল নিয়ে সেগুলো পড়ছেন। পড়ে কিছু মন্তব্য করছেন বা সই করছেন। আমরা বেশ খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। এর মধ্যে আব্দুস সামাদ আজাদ পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলেন আমরা তিনজন দাঁড়ানো। আমাদের আস্তে করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কে? কোত্থেকে এসেছ?’ 

আমি বললাম, ‘আমরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছি। বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের আসতে বলেছেন।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, ‘দাঁড়াও, আমাদের কাজটা শেষ হলে পরে তোমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন।’ আমি তাঁকে এই ফাঁকে বললাম, ‘তিনি অবশ্য যেতে খুব একটা আগ্রহী নন। সেদিন বলেছিলেন খুব ব্যস্ত থাকবেন। আপনি যদি দয়া করে আমাদের হয়ে একটু বলেন, গেলে ভালো হয়!’
তিনি বললেন, ‘ঠিক আছে, বলব।’

আমি দেখছিলাম, যে ফাইলগুলো দেওয়া হচ্ছিল বঙ্গবন্ধুর হাতে, তিনি পড়ছিলেন। একটা ফাইলের ওপর একটা লেখা ছিল—অ্যাপয়েন্টমেন্ট অব অ্যাম্বাসেডরস। হঠাৎ বঙ্গবন্ধু একটা গালি দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘ওকে তো ফিরায়ে আনতে হবে।’

আমরা একটু হকচকিয়ে গেলাম, কী ব্যাপার, কার কথা বলছেন তিনি! বুঝলাম যে আমাদের কোনো অ্যাম্বাসেডর দেশের বাইরে এমন কিছু একটা করেছেন, যাতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রেখেঢেকে নয়, সাধারণভাবে মানুষ যেভাবে রাগ প্রকাশ করে, সেভাবেই বঙ্গবন্ধু বিষয়টিতে তাঁর উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন।

ঘটনাটি দেখে আমি একটু তটস্থ হয়েছিলাম। তাঁর এই ‘মুড অফ’ অবস্থায় আমরা তাঁর সামনে গিয়ে আমাদের অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা বললে তিনি যদি বলেন, ‘যাও যাও, আমার মেজাজ ভালো না।’ তখন তো আর তাঁকে সম্মত করা সহজ হবে না। এ জন্য আমি একটু ভয়ে ভয়ে ছিলাম। তারপর আরও কিছু ফাইল তিনি দেখলেন। দেখার পর হঠাৎই আমাদের দিকে নজর পড়ায় বললেন, ‘আরে তোমরা এসেছ নাকি! এই বসো বসো।’

সামাদ সাহেবকেও বসতে বললেন। বাকি ফাইলগুলোও দেখা শেষ করলেন। তারপর বললেন, ‘বলো, কী বলবে।’

আমি বললাম, ‘আপনি আমাদের অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন কি না, সেটা জানতে এসেছি। আমরা চাই, যেভাবেই হোক কিছুটা সময় বের করে হলেও যাবেন আপনি।’

তিনি বললেন, ‘যাওয়ার তো আমারও ইচ্ছা। কিন্তু কী যে করি! খুব ঝামেলায় আছি।’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তাহলে কি যাবেন না?’  

তিনি বললেন, ‘আমি তো যেতেই চাই, তবে সময়টা ম্যানেজ করা হলো কথা।’

আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘কবে যেন বলেছিলে সময়টা?’

তিনি একজনকে দূর থেকে ডাক দিলেন, ‘এই বাদশা, এদিকে এসো।’ পরে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হলো। তিনি হলেন আমিনুল হক বাদশা, বঙ্গবন্ধুর প্রেস সচিব। তিনি কাছে এলে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘দেখো তো, ওরা বুয়েট থেকে এসেছে। এই তারিখটায় আমি ফ্রি আছি কি না? যদি হয় তাহলে আমি যেতে পারব। আর তোমরা যাও, বাদশার সঙ্গে, চা-টা খাও।’

এই যে দুদিন তাঁর আপ্যায়নের ব্যাপারটা দেখলাম, খুব ভালো লেগেছিল, নেতৃত্বে থাকার বা উঁচুতে থাকার কোনো ব্যাপারই ছিল না। একেবারে মাটির মানুষ। আমরা বাদশা ভাইয়ের সঙ্গে বসলাম। চা-টা খেলাম। একটু পরে তিনি তারিখটা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ, ওই দিন আপনি ফ্রি আছেন, যেতে পারেন।’

তিনি একপর্যায়ে আমাকে বলেছিলেন, ‘দেখো, আমার তো একটু ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে এ জন্য যে আমার পার্টির লোকদের যে ইলেকশন হবে, সেখানে আমার নিজেকেও অনেক জায়গায় যেতে হবে। ওদের পক্ষে ক্যাম্পেইন করতে হবে। সে জন্য আমি এত ব্যস্ত থাকব যে যেতে পারব কি না, এই দোটানায় আছি।’

আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনাকে কেন যেতে হবে?’ তখন তিনি একটু খেপে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আরে জানো না তো, এদের মধ্যে কেউ কেউ আছে এমপি হওয়ার যোগ্য না।’ আমি বললাম, ‘যোগ্য না, আপনি তাদের জন্য ভোট চাইতে যাবেন?’

বললেন, ‘কী করব বলো? আমার জন্য, দলের জন্য ওরা তো কষ্ট করেছে। আমি যখন জেলে থাকতাম, তখন পার্টিটা তো ওরাই ধরে রেখেছে, চালিয়ে নিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধেও তো ওদের অবদান আছে। এখন ওদের খুব খায়েশ—এমপি-টেমপি হবে! আমি তো ওদের বিমুখ করতে পারি না। ওদের জন্য কিছুটা সময় দিতেই হবে।’ 
দেখলাম, তাঁর যে প্র্যাকটিক্যাল সেন্স, একই সঙ্গে তাঁর যে ন্যায়বোধ, আবার কিছুটা কম্প্রোমাইজ না করলেও রাজনীতি এগিয়ে নেওয়া যায় না, সেটাও অকপটে তিনি বলেছেন। তাঁর এই সরলতা আমার বড় ভালো লেগেছিল।

সেদিন একপর্যায়ে তিনি বলেছিলেন, ‘তোমরা তো মুক্তিযুদ্ধে ছিলে, তো রাজাকারদের তোমরা কেন তখনই মেরে ফেললে না? এই যে আমাকে এত বিচার নিয়ে সময় দিতে হচ্ছে, এত কোর্ট-কাচারি করতে হচ্ছে, এগুলো কিছুই করতে হতো না।’

আমি আবার একটু কায়দা করেই জবাব দিয়েছিলাম, ‘দেখেন, আমরা তখন নিজেরা বিচার হাতে নিইনি এ জন্য, আমরা তখন সবাই অপেক্ষা করছিলাম আপনার মুক্তির জন্য। আমরা যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটাতাম আর সেটার যদি বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতো আপনার মুক্তির ব্যাপারে, আন্তর্জাতিকভাবে দেখা যেত যে এই ঘটনাকে অবলম্বন করে সুযোগ পেত তারা আপনাকে আটকে রাখার। সহজে ছাড়ত না। সেটা আমাদের বিরাট ক্ষতি হতো। সে জন্য আমরা নিজেরা এ রকম কিছু করিনি। ভেবেছিলাম আপনি এসেই সেটা করবেন।’

তিনি বললেন, ‘কিন্তু আমি আসার পরে তোমরা আমাকে বানিয়েছ জাতির পিতা, আমি কী করে এই সন্তানদের মারি?’

মনে হচ্ছিল আমি যেন আমার বাবার সঙ্গেই কথা বলছি। এ রকম সহজভাবে তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়। আমিও একটু খোঁচা দিয়েই বলেছিলাম, ‘হ্যাঁ, আপনি জাতির পিতা। কিন্তু এরা তো জাতির মধ্যে পড়ে না। এরা তো জাতির বিরোধিতা করেছিল। এরা তো বজ্জাত। আপনি তো বজ্জাতের পিতা না।’

তিনি ‘হো হো’ করে হেসেছিলেন।

বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন বুয়েটে, উদ্বোধন করেছিলেন আমাদের প্রদর্শনী। ওই যে দুটো দিন তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, খুব ভালো লেগেছিল এই কারণে যে কত অমায়িক ছিল তাঁর ব্যবহার, একেবারে ঘরের মানুষের মতো। বড়রা আসলে এ রকমই হন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন সত্যিকার অর্থেই অনেক বড় মাপের, অনেক বড় মনের মানুষ। 

লেখক: স্থপতি, চলচ্চিত্র নির্মাতা

শ্রুতিলেখন: সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত