Ajker Patrika

খাদ্যসংকটে বিপাকে খামারি

হোসাইন আহাম্মেদ সুলভ, মুক্তাগাছা
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২১, ১৩: ০৮
খাদ্যসংকটে বিপাকে খামারি

মুক্তাগাছায় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে গরু নিয়ে বিপদে পড়েছেন খামারি ও সাধারণ কৃষকেরা। অনেক খামারি গত কোরবানির ঈদে তাঁদের গরু বিক্রি করতে পারেননি। তাঁরা এখন গরু নিয়ে আছেন বিপাকে। খাদ্য সংকটে গরু পালনে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। গো-খাদ্যের দাম বাড়ায়

তাদের লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে বলে খামারিরা জানিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সংকট দেখা দেওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন বাজারে পুঁটলি আকারে বিক্রি হচ্ছে গো-খাদ্য। চড়া দামে এসব খাদ্য কিনে নিচ্ছেন খামারিরা। তাঁরা বাধ্য হয়ে সামান্য খড় দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছেন খামার। অনেকে কম দামে গরু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার রঘুনাথপুর, আলগিরচর, মানকোনসহ বিভিন্ন স্থানে গবাদিপশু পালন করে জীবিকা নির্বাহ করছে অনেক পরিবার। অল্প পুঁজিতে অনেকেই গবাদিপশুর ছোট ছোট খামারও গড়ে তুলেছেন। আবার অনেক কৃষক গরু পালন করছেন বছরের পর বছর ধরে। ছোট-বড় মিলিয়ে মুক্তাগাছায় শতাধিক গরুর খামার রয়েছে রয়েছে।

রৌয়ারচর গ্রামের খামারি ইব্রাহিম খলিল বলেন, বয়স্ক একটি গরুর জন্য দৈনিক খড় লাগে এক শ টাকার। এ ছাড়া দানাদার ও পানীয় খাদ্যে ব্যয় হয় আরও এক শ টাকা। সব মিলিয়ে একটি গরুর পেছনে দৈনিক ২০০ টাকা খরচ হয়। তবে সংকটের কারণে গরু পালনে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এই খামারি জানান, গত ঈদে তাঁর খামারের একটি গরুও বিক্রি হয়নি। অবিক্রীত গরু নিয়ে তিনি বিপদে পড়েছেন। পরিমাণমতো খাদ্য না পেয়ে অনেক গরু হাড্ডিসার হয়ে গেছে। ফলে লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বোরো মৌসুমে ভারী বৃষ্টির কারণে কৃষকেরা সঠিক সময়ে ও সঠিকভাবে খড় শুকাতে পারেননি। এতে খড় পচে গেছে পানিতেই। এ সব কারণে উপজেলায় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে মুক্তাগাছার লেংড়া বাজারে বসছে গো-খাদ্যের হাট। ১০ থেকে ১২ জন ব্যাপারী এই বাজারে নিয়মিত গো-খাদ্য বিক্রি করছেন।

ব্যাপারীরা জানিয়েছেনম কৃষকদের কাছ থেকে তারা পাইকারি দরে কিনছেন খড়। পরে তাঁরা এ হাটে পুঁটলি (বুজা) আকারে বিক্রি করছেন। প্রতি পুঁটলি খড় বিক্রি করছেন ১৩ শ থেকে শুরু করে ১৫ শ টাকা ধরে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অল্প পুঁজির খামারি ও ছোট ছোট কৃষকেরা এ সব হাট থেকে খড়ের পুঁটলি কিনছেন। চড়া দামে পুঁটলি কিনে গরুগুলোকে কোনো রকমে বাঁচিয়ে রাখছেন তারা। এ অবস্থায় অনেক খামারি খড়ের অভাবে কম মূল্যে গরু বিক্রিও করে দিচ্ছেন। এদিকে ভুসির দামও অনেক বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন খামারিরা।

খামারি ইসমাঈল হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া লাম্পিং স্কিন রোগের চিকিৎসা করতে ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন তাঁরা। এরই মধ্যে খাদ্যের সংকটে পড়ে তাঁরা আরও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। গরু বাঁচিয়ে রাখতে চড়া দামেই খড় কিনছেন।

গো-খাদ্যের সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তফা কামাল চৌধুরী বলেন, বোরো মৌসুমে ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে কৃষক ও খামারিরা সঠিক সময়ে খড় শুকাতে পারেননি। এতে বৃষ্টিতে পচে গেছে খড়। এ কারণে পুরো উপজেলায় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এর থেকে মুক্তি পেতে খামারিদের সড়কের পাশে ও খামারের খালি জায়গায় ঘাস লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া খামারিদের প্রণোদনা দিয়ে সরকার তাঁদের পাশে রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত