Ajker Patrika

পাঠদান না করেই ৯ বছর বেতন ভোগ

কামাল হোসেন, কয়রা
আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২১, ১৫: ৩৬
পাঠদান না করেই ৯ বছর বেতন ভোগ

খুলনার কয়রা উপজেলায় এক প্রভাষকের বিরুদ্ধে কলেজে পাঠদান না করেও ৯ বছর ধরে বেতন তোলার করার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার সরকারি মহিলা কলেজের ভূগোলের প্রভাষক মো. আক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি এলাকায় বিভিন্ন সংসদ সদস্যের সহকারী হিসেবে পরিচিত। তবে সংসদ সদস্যের সহকারীর বিষয়টি মো. আক্তারুজ্জামান অস্বীকার করেন।

কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, মো. আক্তারুজ্জামান কলেজে অনুপস্থিত আছেন বছরের পর বছর। কলেজের পরিচালনা কমিটির যখন যিনি সভাপতি হন, তাঁকে ও অধ্যক্ষকে হাত করে এক দিন এসে হাজিরা খাতায় পুরো মাসের সই করেন এবং বেতন তোলেন।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। মো. আক্তারুজ্জামান ২০০১ সালের ১২ নভেম্বর কলেজে যোগদান করেন। ২০১১ সালের ১ নভেম্বর বেতন চালু হয় এবং ৩০ মার্চ ২০১৬ সালে জাতীয়করণ হয়। তিনিসহ বর্তমানে কলেজে ৩৩ জন শিক্ষক কর্মরত। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৭৮ জন।

গত রোববার বেলা ১১টার দিকে বিদ্যালয়ে গিয়ে কথা হয় বিভিন্ন শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। এ সময় একাদশ শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রী বলেন, আমাদের কলেজে মো. আক্তারুজ্জামান নামের এক শিক্ষকের কথা শুনেছি। কিন্তু তিনি কোনো দিন আমাদের ক্লাস নেননি, তাঁকে চিনিও না।’ এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক শিক্ষার্থী বলেন, ওই নামে কোনো শিক্ষককে তাঁরা চেনেন না এবং তাঁদের ক্লাসও নেন না। এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ‘আমরা আর কী বলব। অধ্যক্ষ স্যার ভালো জানেন।’

প্রভাষক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘একেবারেই ক্লাস করি না, এমন নয়। মাঝেমধ্যে করি। কলেজটি সরকারিকরণের কাজে আমি দীর্ঘ সময় ঢাকায় থেকেছি। এ ছাড়া কয়রার উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প পাস করার জন্য কাজ করেছি। এসব কারণে ক্লাস নিতে পারিনি। এটা আমার ভুল হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার অনেক শত্রু-মিত্র আছে।’

এ ব্যাপারে কলেজের অফিসার-ইন-চার্জ আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রভাষক আক্তারুজ্জামান মাঝেমধ্যে আসেন। কলেজটি সরকারিকরণের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান আছে।’ তাই বলে কলেজে না এসে বেতন পাওয়ার কোনো বিধান আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তা অবশ্যই নেই। তাহলে ওই শিক্ষক কীভাবে বেতন পান, এমন প্রশ্নের জবাব দিতে তিনি রাজি হননি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খুলনা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব আলী সানা বলেন, আমি এখন অসুস্থ। সুস্থ না হয়ে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।

খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘আক্তারুজ্জামান আমার অফিশিয়াল কোনো সহকারী না। আমি যত দূর জানি, সে মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন কাজ করে দেয়। আমার তার সঙ্গে পরিচয় সুজা (মোস্তফা রশীদি সুজা) ভাই বেঁচে থাকতে। আমি তার মাধ্যমে কাজ করে নেই কিন্তু সে আমার এপিএস না।’

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা খুলনা অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর শেখ হারুন অর-রশীদ বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত