হাসান মামুন
নতুন বছর নিয়ে এসেছে একটি জাতীয় নির্বাচন–যা মোটেও বিতর্কমুক্ত নয়। বিতর্ক অবশ্য নিত্যসঙ্গী, বিশেষ করে আমাদের রাজনীতিতে। এ দেশে সবচেয়ে কম বিতর্কিত নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়। তাই বলে কি ‘কম বিতর্কিত’ নির্বাচনের চেষ্টাও করব না? সেটা অবশ্যই করতে হবে। পরপর দুটি খারাপ নির্বাচনের লজ্জা থেকে বেরিয়ে আসতে এবার একটি ভালো নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি অবশ্য দেওয়া হয়েছিল। এর বদলে যে আয়োজন লক্ষ করা যাচ্ছে, তা আন্তর্জাতিকভাবেও আমাদের ভাবমূর্তি বাড়াবে না।
এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিপুল আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ প্রশ্নে তারা অবশ্য বিভক্ত। এর পেছনে মূল্যবোধের উপাদান কতখানি রয়েছে আর কতখানি ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ, সেই প্রশ্নও জোরালো। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রয়েছে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ আর সেটা হারিয়ে গেলে চলবে না।
যে কারণেই হোক, নির্বাচনে প্রধান সব রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে না। নির্বাচন বর্জনকারী পক্ষ এটা প্রতিহত করার চেষ্টাও চালাচ্ছে।তবে সেটা প্রবল হবে বলে মনে হয় না। ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন করার চেষ্টায় এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের ভেতর থেকেই একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটাকে অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও ‘সংঘাতের আয়োজন’ বলে মনে করছেন অনেকে। পুরোনো বছরের শেষ ও নতুন বছর শুরুর এ সময়টায় রোজ মিডিয়ায় থাকছে কোথাও না কোথাও নির্বাচন ঘিরে সহিংসতার খবর। এতে পিঠাপুলির এ সময়টায় অনেক ক্ষেত্রে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে অশান্তি।
এ দেশে প্রধান সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে মানসম্মত নির্বাচন করার দৃষ্টান্ত কিন্তু রয়েছে। তাতে আমাদের গণতন্ত্রের গৌরব বেড়েছিল। তবে নির্বাচন মানসম্পন্ন হলেও এর ভেতর দিয়ে সুশাসন আসেনি। গণতন্ত্রের চর্চাও প্রত্যাশামতো বাড়েনি। কিন্তু এ সমস্যার কথা তুলে তো মানহীন নির্বাচনের দিকে চলে যাওয়া যাবে না। একের পর এক যে ধরনের নির্বাচন হচ্ছে–তাতে এমন শঙ্কা দানা বেঁধে উঠেছে যে আমরা বুঝি স্থায়ীভাবে ঢুকে পড়ছি একপক্ষীয় নির্বাচনের গহ্বরে।
একপক্ষীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে চায় সরকার। এক দশক ধরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোও (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) মানসম্মত হয়নি। তাতে বিভিন্ন দলমত ও প্রবণতার মানুষ নির্বাচনব্যবস্থাতেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ভোট পড়ছে লজ্জাজনকভাবে কম। অথচ ভোটারের সংখ্যা বাড়ছে স্বাভাবিকভাবে। ভোটকেন্দ্র বাড়ছে; বাড়াতে হচ্ছে নির্বাচন কর্মকর্তা। নির্বাচন আয়োজনের খরচ বেড়ে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। আমরা কি লক্ষ করব না, গত নির্বাচনের প্রায় তিন গুণ ব্যয় ধরে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনটি করতে যাচ্ছে ইসি? এর কয়েক মাস পর উপজেলা নির্বাচন সম্পন্নের বিষয়ও রয়েছে। এগুলোয় যে অর্থ ব্যয় হবে, সেটা সারা বছরে সরকারি ব্যয়ের দিক থেকে এমন কিছু নয় অবশ্য। তবে সরকারের ব্যয় করা প্রতিটি পয়সা যেহেতু জনগণের, তাই এর সদ্ব্যবহারের দায় এড়ানো যায় না। একটা মানসম্মত নির্বাচন আয়োজনে একটু বেশি অর্থ ব্যয় হলেও লোকে নিশ্চয়ই তা নিয়ে প্রশ্ন তুলত না।
তবু আশা করব, নির্বাচনে সহিংসতা কমে আসবে। আরেকটি প্রত্যাশা–ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে বিচ্ছিন্নভাবে যেসব চাপ সৃষ্টির খবর আসছে, সেটা সাধারণ রূপ নেবে না। ভোটদানে বাধা দেওয়া যাবে না; ভোট দিতে বাধ্যও করা যাবে না। দেশে একসময় ‘না’ ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল। একজন প্রার্থীও পছন্দ না হলে তাতে লোকে না ভোট দিতে পারত। এমন সুযোগ কেন রহিত করা হলো, এখন কিন্তু সে প্রশ্নটা উঠছে। উঠছে এ জন্যও যে বিরোধী দল-সমর্থকেরা এখন না ভোট দিয়ে অনাস্থা জানাতে পারতেন। তাতে ভোটের হারও বাড়ত বৈকি। না ভোটের সুযোগ রদের সময়টায় হয়তো ভেবে ওঠা যায়নি, ভবিষ্যতে কখনো ভোটের হার বাড়াতেও এটা প্রয়োজনীয় হয়ে উঠতে পারে!
নির্বাচন আসলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতারই অংশ। মানসম্মত নির্বাচনে জনগণ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রয়োগ ঘটাতে পারে। তাতে সিংহভাগ ভোটারের ইচ্ছায় গঠিত হয় সরকার। নির্বাচন-পরবর্তী জবাবদিহিরও ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন, যাতে সরকার স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে না পারে। সংসদে থাকা চাই সত্যিকারের বিরোধী দল ও কার্যকর বিরোধিতা। সাংবিধানিকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে থাকা চাই স্বচ্ছতা।
তারা যেন নিজ দায়িত্ব পালনে ক্রমে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। আইন দ্বারা নির্ধারিত প্রত্যাশিত সেবা পেয়ে জনগণ যেন অনুভব করতে পারে–দেশটা তাদের। এই অনুভূতি না থাকলে বুঝতে হবে, গণতন্ত্র নেই কিংবা দুর্বলভাবে রয়েছে। ‘উন্নয়ন’ও আসলে অনুভব করতে পারার বিষয়। শাসকেরা উন্নয়ন করলেন, সেটা প্রচারেরও ব্যবস্থা হলো; কিন্তু জনগণ তা অনুভব করতে পারল না–এটা কোনো কাজের কথা নয়। নতুন বছরে একটা নির্বাচন হয়ে যাচ্ছে বটে, তবে এর ভেতর দিয়ে এসব আলোচনার অবসান হবে না।
কষ্টের কথা হলো, গেল বছরে একটি মানসম্মত নির্বাচনের সম্ভাবনা আমরা তৈরি করতে পারিনি। তাতে রাজনীতিতে ‘রিকনসিলিয়েশনের’ (বিরোধ মিটিয়ে শান্তি স্থাপন) সুযোগ সৃষ্টি হলো না। এটা জরুরি ছিল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় অংশ, যারা আমাদের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সহযোগী, তারাও ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের’ নামে আসলে এটাই চেয়েছিল। এই চাওয়ার মধ্যে তাদের স্বার্থ ছিল নিশ্চয়ই।
এ দেশের সর্বস্তরের মানুষের স্বার্থও এতে নিহিত। দেশটা যেহেতু সব দল-মতের মানুষের, তাই এর সবকিছুতে তাদের মতের প্রতিফলন ঘটিয়েই এগোতে হবে। নইলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে না; বরং কী ধরনের গণতন্ত্রে আমরা আছি, তা নিয়ে দেশে-বিদেশে বিব্রতকর আলোচনা বাড়বে। নিশ্চয় সবচেয়ে ভালো হতো–আমাদের সমস্যা সমাধানের প্রয়াস যদি নিতে পারতাম নিজেরাই।
সেটা এগোতে পারত নতুন কোনো ফর্মুলায়। আমরা একসময় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছিলাম। সে জন্য সংবিধানের বাধাও কি উপেক্ষা করিনি? প্রয়োজন ছিল এতটাই তীব্র! পরে সেটা আমরা সংবিধানেও অন্তর্ভুক্ত করি। অপব্যবহারে মানসম্মত নির্বাচন লাভের সে উপায়টিও আমরা বিনষ্ট করেছি।
নতুন বছর শুরুর লগ্নে দেশের অর্থনীতিতেও সুখবর কমই। সংকট আছে বরং এবং তা তীব্র হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। সংকটের কথা তুললে অনেক ক্ষেত্রে বিরক্ত ও ক্রুদ্ধ হয়ে উঠতে দেখা যায় সরকারি কর্তৃপক্ষকে। সেই প্রবণতাও কমে এসেছে পরিস্থিতি সত্যিই খারাপ দিকে মোড় নিয়েছে বলে। এ ক্ষেত্রে কিছু আছে ‘জেনুইন’ কারণ, যা হয়তো নিয়ন্ত্রণযোগ্য ছিল না। পাশাপাশি রয়েছে কিছু নীতিগত ব্যর্থতা। সংশ্লিষ্ট বোদ্ধাদের মত উপেক্ষা করে প্রধানত আমলানির্ভর হয়ে চলার কারণেও কিছু সংকট ঘনীভূত হয়ে উঠেছে।
তবে দেরিতে হলেও দেখা যাচ্ছে সরকারের বাইরে থাকা বিশেষজ্ঞদের মত গ্রহণের চেষ্টা। এ প্রয়াস সব ক্ষেত্রেই জারি রাখা প্রয়োজন।বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজের অগ্রযাত্রায় যাদের ঋণসহায়তা, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বড় ভূমিকা রেখেছে; তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক নষ্ট করা যাবে না। আশা থাকবে, সংকটে থাকা অর্থনীতিতে আরও চাপ সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী আরও সংকটে পড়ে—এমন কোনো পদক্ষেপ পশ্চিমাদের তরফ থেকে আসবে না নতুন বছরে। মানসম্মত নির্বাচন করতে না পারার ভেতর দিয়ে থেকে যাওয়া ‘রাজনৈতিক ও নৈতিক গ্রহণযোগ্যতার সংকট’ অতিক্রমেও আমরা নিশ্চয় এগিয়ে যেতে পারব।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
নতুন বছর নিয়ে এসেছে একটি জাতীয় নির্বাচন–যা মোটেও বিতর্কমুক্ত নয়। বিতর্ক অবশ্য নিত্যসঙ্গী, বিশেষ করে আমাদের রাজনীতিতে। এ দেশে সবচেয়ে কম বিতর্কিত নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়। তাই বলে কি ‘কম বিতর্কিত’ নির্বাচনের চেষ্টাও করব না? সেটা অবশ্যই করতে হবে। পরপর দুটি খারাপ নির্বাচনের লজ্জা থেকে বেরিয়ে আসতে এবার একটি ভালো নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি অবশ্য দেওয়া হয়েছিল। এর বদলে যে আয়োজন লক্ষ করা যাচ্ছে, তা আন্তর্জাতিকভাবেও আমাদের ভাবমূর্তি বাড়াবে না।
এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিপুল আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ প্রশ্নে তারা অবশ্য বিভক্ত। এর পেছনে মূল্যবোধের উপাদান কতখানি রয়েছে আর কতখানি ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ, সেই প্রশ্নও জোরালো। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রয়েছে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ আর সেটা হারিয়ে গেলে চলবে না।
যে কারণেই হোক, নির্বাচনে প্রধান সব রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে না। নির্বাচন বর্জনকারী পক্ষ এটা প্রতিহত করার চেষ্টাও চালাচ্ছে।তবে সেটা প্রবল হবে বলে মনে হয় না। ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন করার চেষ্টায় এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের ভেতর থেকেই একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটাকে অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও ‘সংঘাতের আয়োজন’ বলে মনে করছেন অনেকে। পুরোনো বছরের শেষ ও নতুন বছর শুরুর এ সময়টায় রোজ মিডিয়ায় থাকছে কোথাও না কোথাও নির্বাচন ঘিরে সহিংসতার খবর। এতে পিঠাপুলির এ সময়টায় অনেক ক্ষেত্রে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে অশান্তি।
এ দেশে প্রধান সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে মানসম্মত নির্বাচন করার দৃষ্টান্ত কিন্তু রয়েছে। তাতে আমাদের গণতন্ত্রের গৌরব বেড়েছিল। তবে নির্বাচন মানসম্পন্ন হলেও এর ভেতর দিয়ে সুশাসন আসেনি। গণতন্ত্রের চর্চাও প্রত্যাশামতো বাড়েনি। কিন্তু এ সমস্যার কথা তুলে তো মানহীন নির্বাচনের দিকে চলে যাওয়া যাবে না। একের পর এক যে ধরনের নির্বাচন হচ্ছে–তাতে এমন শঙ্কা দানা বেঁধে উঠেছে যে আমরা বুঝি স্থায়ীভাবে ঢুকে পড়ছি একপক্ষীয় নির্বাচনের গহ্বরে।
একপক্ষীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে চায় সরকার। এক দশক ধরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোও (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) মানসম্মত হয়নি। তাতে বিভিন্ন দলমত ও প্রবণতার মানুষ নির্বাচনব্যবস্থাতেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ভোট পড়ছে লজ্জাজনকভাবে কম। অথচ ভোটারের সংখ্যা বাড়ছে স্বাভাবিকভাবে। ভোটকেন্দ্র বাড়ছে; বাড়াতে হচ্ছে নির্বাচন কর্মকর্তা। নির্বাচন আয়োজনের খরচ বেড়ে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। আমরা কি লক্ষ করব না, গত নির্বাচনের প্রায় তিন গুণ ব্যয় ধরে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনটি করতে যাচ্ছে ইসি? এর কয়েক মাস পর উপজেলা নির্বাচন সম্পন্নের বিষয়ও রয়েছে। এগুলোয় যে অর্থ ব্যয় হবে, সেটা সারা বছরে সরকারি ব্যয়ের দিক থেকে এমন কিছু নয় অবশ্য। তবে সরকারের ব্যয় করা প্রতিটি পয়সা যেহেতু জনগণের, তাই এর সদ্ব্যবহারের দায় এড়ানো যায় না। একটা মানসম্মত নির্বাচন আয়োজনে একটু বেশি অর্থ ব্যয় হলেও লোকে নিশ্চয়ই তা নিয়ে প্রশ্ন তুলত না।
তবু আশা করব, নির্বাচনে সহিংসতা কমে আসবে। আরেকটি প্রত্যাশা–ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে বিচ্ছিন্নভাবে যেসব চাপ সৃষ্টির খবর আসছে, সেটা সাধারণ রূপ নেবে না। ভোটদানে বাধা দেওয়া যাবে না; ভোট দিতে বাধ্যও করা যাবে না। দেশে একসময় ‘না’ ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল। একজন প্রার্থীও পছন্দ না হলে তাতে লোকে না ভোট দিতে পারত। এমন সুযোগ কেন রহিত করা হলো, এখন কিন্তু সে প্রশ্নটা উঠছে। উঠছে এ জন্যও যে বিরোধী দল-সমর্থকেরা এখন না ভোট দিয়ে অনাস্থা জানাতে পারতেন। তাতে ভোটের হারও বাড়ত বৈকি। না ভোটের সুযোগ রদের সময়টায় হয়তো ভেবে ওঠা যায়নি, ভবিষ্যতে কখনো ভোটের হার বাড়াতেও এটা প্রয়োজনীয় হয়ে উঠতে পারে!
নির্বাচন আসলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতারই অংশ। মানসম্মত নির্বাচনে জনগণ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রয়োগ ঘটাতে পারে। তাতে সিংহভাগ ভোটারের ইচ্ছায় গঠিত হয় সরকার। নির্বাচন-পরবর্তী জবাবদিহিরও ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন, যাতে সরকার স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে না পারে। সংসদে থাকা চাই সত্যিকারের বিরোধী দল ও কার্যকর বিরোধিতা। সাংবিধানিকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে থাকা চাই স্বচ্ছতা।
তারা যেন নিজ দায়িত্ব পালনে ক্রমে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। আইন দ্বারা নির্ধারিত প্রত্যাশিত সেবা পেয়ে জনগণ যেন অনুভব করতে পারে–দেশটা তাদের। এই অনুভূতি না থাকলে বুঝতে হবে, গণতন্ত্র নেই কিংবা দুর্বলভাবে রয়েছে। ‘উন্নয়ন’ও আসলে অনুভব করতে পারার বিষয়। শাসকেরা উন্নয়ন করলেন, সেটা প্রচারেরও ব্যবস্থা হলো; কিন্তু জনগণ তা অনুভব করতে পারল না–এটা কোনো কাজের কথা নয়। নতুন বছরে একটা নির্বাচন হয়ে যাচ্ছে বটে, তবে এর ভেতর দিয়ে এসব আলোচনার অবসান হবে না।
কষ্টের কথা হলো, গেল বছরে একটি মানসম্মত নির্বাচনের সম্ভাবনা আমরা তৈরি করতে পারিনি। তাতে রাজনীতিতে ‘রিকনসিলিয়েশনের’ (বিরোধ মিটিয়ে শান্তি স্থাপন) সুযোগ সৃষ্টি হলো না। এটা জরুরি ছিল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় অংশ, যারা আমাদের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সহযোগী, তারাও ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের’ নামে আসলে এটাই চেয়েছিল। এই চাওয়ার মধ্যে তাদের স্বার্থ ছিল নিশ্চয়ই।
এ দেশের সর্বস্তরের মানুষের স্বার্থও এতে নিহিত। দেশটা যেহেতু সব দল-মতের মানুষের, তাই এর সবকিছুতে তাদের মতের প্রতিফলন ঘটিয়েই এগোতে হবে। নইলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে না; বরং কী ধরনের গণতন্ত্রে আমরা আছি, তা নিয়ে দেশে-বিদেশে বিব্রতকর আলোচনা বাড়বে। নিশ্চয় সবচেয়ে ভালো হতো–আমাদের সমস্যা সমাধানের প্রয়াস যদি নিতে পারতাম নিজেরাই।
সেটা এগোতে পারত নতুন কোনো ফর্মুলায়। আমরা একসময় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছিলাম। সে জন্য সংবিধানের বাধাও কি উপেক্ষা করিনি? প্রয়োজন ছিল এতটাই তীব্র! পরে সেটা আমরা সংবিধানেও অন্তর্ভুক্ত করি। অপব্যবহারে মানসম্মত নির্বাচন লাভের সে উপায়টিও আমরা বিনষ্ট করেছি।
নতুন বছর শুরুর লগ্নে দেশের অর্থনীতিতেও সুখবর কমই। সংকট আছে বরং এবং তা তীব্র হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। সংকটের কথা তুললে অনেক ক্ষেত্রে বিরক্ত ও ক্রুদ্ধ হয়ে উঠতে দেখা যায় সরকারি কর্তৃপক্ষকে। সেই প্রবণতাও কমে এসেছে পরিস্থিতি সত্যিই খারাপ দিকে মোড় নিয়েছে বলে। এ ক্ষেত্রে কিছু আছে ‘জেনুইন’ কারণ, যা হয়তো নিয়ন্ত্রণযোগ্য ছিল না। পাশাপাশি রয়েছে কিছু নীতিগত ব্যর্থতা। সংশ্লিষ্ট বোদ্ধাদের মত উপেক্ষা করে প্রধানত আমলানির্ভর হয়ে চলার কারণেও কিছু সংকট ঘনীভূত হয়ে উঠেছে।
তবে দেরিতে হলেও দেখা যাচ্ছে সরকারের বাইরে থাকা বিশেষজ্ঞদের মত গ্রহণের চেষ্টা। এ প্রয়াস সব ক্ষেত্রেই জারি রাখা প্রয়োজন।বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজের অগ্রযাত্রায় যাদের ঋণসহায়তা, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বড় ভূমিকা রেখেছে; তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক নষ্ট করা যাবে না। আশা থাকবে, সংকটে থাকা অর্থনীতিতে আরও চাপ সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী আরও সংকটে পড়ে—এমন কোনো পদক্ষেপ পশ্চিমাদের তরফ থেকে আসবে না নতুন বছরে। মানসম্মত নির্বাচন করতে না পারার ভেতর দিয়ে থেকে যাওয়া ‘রাজনৈতিক ও নৈতিক গ্রহণযোগ্যতার সংকট’ অতিক্রমেও আমরা নিশ্চয় এগিয়ে যেতে পারব।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
১৮ দিন আগেবিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪