Ajker Patrika

আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলছে না

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২২, ১২: ১৩
Thumbnail image

প্রথম রোজার দিন গতকাল রোববার তারাগঞ্জে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্যাডেল মেরে ২৫০ টাকা রোজগার করেন যাত্রীবাহী ভ্যানের চালক খয়বার হোসেন। সেই টাকায় চাল, সবজি আর মসলা কিনে বেঁধে নেন গামছায়। বাড়ি ফেরার পথে অগ্রণী ব্যাংকের মোড়ে ইফতারে তৃষ্ণা মেটানোর জন্য নামেন তরমুজ কিনতে। বিক্রেতা প্রতি কেজির দাম হাঁকেন ৫০ টাকা। সেই তরমুজ কিনতে না পেরে পাশের দোকান থেকে দুটি টেস্টি স্যালাইন কেনেন। সেখানেও দেখা যায় কোনো কারণ ছাড়াই পাঁচ টাকার স্যালাইন ছয় টাকা করে নেন বিক্রেতা।

খয়বার আক্ষেপ করে জানান, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মিলছে না। এমনিতে সবকিছুর দাম চড়া, তার ওপর রোজায় ফের প্রতিটি জিনিসের দর বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি লেবু ১০ টাকা, তরমুজ ৫০ টাকা কেজি, তাও এক কেজিতে পাওয়া যায় না। নিম্ন আয়ের মানুষের রোজা রেখে তৃষ্ণা মেটাতেও কষ্ট হচ্ছে।

শুধু খয়বার নয়, তাঁর মতো উপজেলার নিম্ন ও মধ্য আয়ের সব পরিবার ঊর্ধ্বমুখী বাজারে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য করতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

তারাগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি চাল মোটা ৩৫ থেকে ৩৮, স্বর্ণা ৪০ থেকে ৪৪ ও মিনিকেট ৬২ থেকে ৬৪ ও খোলা আটা ৩২ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা লিটার ও ডিম ৩৪ টাকা হালি কিনতে হচ্ছে। প্রতি কেজি মসুর ডাল ১১০ থেকে ১২০, চিনি ৮০, ছোলা বুট ৯৫ থেকে ১০০, হলুদ ২০০, রসুন ৪০, পেঁয়াজ ৩৫, কাচা মরিচ ৬০, আদা ১০০, শজনে ১৪০, বেগুন ৩০ ও করলা ৬৫ টাকা দরে নিতে হচ্ছে।

মেনানগর গ্রামের হোটেলশ্রমিক সোলেমা বেগমের দৈনিক আয় ১৫০ টাকা। এ আয়ে চার সদস্যের সংসার চালান। আগে কোনোরকমে সংসার চালালেও এখন আর কুলিয়ে উঠতে পারছেন না।

সোলেমা বলেন, ‘১৫০ টাকায় এখন সংসার চলে না। ভাত হইলে, তরকাই হয় না। রোজাত আরও খরচ বাড়ছে। আগোত একটা লেবু দুই টাকা দিয়া কিননো, এল্যা তাক ১০ টাকা। খুব কষ্টে আছি।’

ইকরচালী বাজারে কথা হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদেকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি হতাশার সুরে বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রমজান উপলক্ষে যেখানে পণ্যের মূল্য ছাড় দিতে ব্যস্ত, সেখানে কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় নেমেছে। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, মাথাপিছু আয় ঠিকই বাড়ছে, তবে তা গুটিকয়েক মানুষের। যাঁদের কাছে দেশ জিম্মি। একজন দিনমজুর দুই বছর আগে মজুরি ৪০০ টাকা পেত, এখন তাই পায়। ঊর্ধ্বমুখী বাজার দরে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। সংসারের ব্যয় মেটাতে পারছে না।’

ঊর্ধ্বমুখী বাজার দর নিয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়া বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। কিছু ব্যবসায়ীর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানাও করা হয়েছে। পুরো রমজান মাস বাজারগুলো মনিটরিং করা হবে। অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রির সুযোগ নেই। কেউ তা করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত