Ajker Patrika

ভাজা মুড়ির ঐতিহ্য-সংকটে পেশা বদলাচ্ছেন কারিগরেরা

জলঢাকা (নীলফামারী) প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২২, ১৩: ৪৯
Thumbnail image

মুড়ির গ্রাম হিসেবে পরিচিত নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন হিন্দুপাড়া। এক সময় প্রত্যন্ত এই গ্রামটির শতাধিক পরিবার হাতে তৈরি মুড়ি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত। হাতে বানানো মুড়ি জলঢাকার ঐতিহ্য হলেও বর্তমানে কেবল ১২-১৫টি পরিবার এই পেশায় রয়েছে। রমজানে বাড়তি চাহিদার কথা মাথায় রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন হাতে ভাজা মুড়ি প্রস্তুতকারীরা। হাতে ভাজা মুড়ি স্বাস্থ্যসম্মত ও খেতে সুস্বাদু। অপরদিকে, মেশিনে তৈরি মুড়ির দাম তুলনামূলক কম ও আকারে বড়। এতে হাতে ভাজা মুড়ির বেচাকেনা দিন দিন কমছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

হাতে ভাজা মুড়ি সম্পর্কে জানতে চাইলে মিহির কুমার সাহা (৫৩) নামে একজন জানান, আগে সপ্তাহে ৮-১০ মণ মুড়ি বিক্রি করতেন। সংসার ভালোই চলত। কিছু সঞ্চয়ও করতে পারতেন। এখন মেশিনে তৈরি মুড়ি আসায় হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা অনেকটাই কমেছে। এখন সপ্তাহে ৫-৬ মণের বেশি বিক্রি করা যায় না। সারা সপ্তাহে যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর।

পারিবারিক পেশা হিসেবে ছেলেবেলা থেকেই মুড়ি তৈরি করছেন নরেন সাহা (৬২)। বর্তমানে ছেলে ও ছেলের বউ তাঁকে এই কাজে সহায়তা করেন। আলাপকালে নরেন সাহা জানান, মেশিনে তৈরি মুড়িতে ইউরিয়া থাকে বলে সেগুলো দেখতে ভালো হয়। হাতে ভাজা মুড়িতে শুধু লবণ ও পানি ব্যবহার করা হয়। মেশিনে তৈরি প্যাকেটজাত মুড়ির দাম তুলনামূলক কম। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় অনেকেই অন্য পেশায় ঝুঁকছেন বলে জানান তিনি।

নরেন সাহা আরও বলেন, ‘এলাকার বেশির ভাগ মানুষ এক সময় মুড়ি ভাজতেন। বর্তমানে ধান, কাঠ, বালি, মাটির হাঁড়ির দাম বেড়েছে। কিন্তু মুড়ির দাম সেভাবে বাড়েনি। তাই বাধ্য হয়েই অনেকে অন্য পেশা বেঁচে নিচ্ছেন।’

নরেন সাহার ছেলে সুবল সাহা (৩২) জানান, ৪০ কেজি ধান কিনতে হয় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকায়। চাল সিদ্ধ করতে, শুকাতে, প্রস্তুত করতে খরচ হয় আরও ২০০ টাকা। ৪০ কেজি মোটা চাল থেকে প্রায় ২৪ কেজি মুড়ি তৈরি করা হয়। সব মিলিয়ে এক কেজি মুড়ি তৈরি করতে খরচ হয় ৭২-৭৫ টাকা। বাজারে প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে খুচরা বিক্রি হয়। পাইকারি বিক্রি হয় ৯০ টাকা কেজি দরে।

জলঢাকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ বাহাদুর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সম্প্রসারণে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। হাতে বানানো মুড়ি জলঢাকার ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে যা করা দরকার তা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত