Ajker Patrika

বায়ুদূষণ রোধে ইসলামের নির্দেশনা

ড. এ এন এম মাসউদুর রহমান
আপডেট : ১১ মার্চ ২০২২, ১০: ৫৫
বায়ুদূষণ রোধে ইসলামের নির্দেশনা

আল্লাহ তাআলার অফুরন্ত নেয়ামতের মধ্যে বায়ু অন্যতম। এর অভাবে মানুষ, প্রাণিকুল ও উদ্ভিদরাজি বাঁচতে পারে না। শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য বিশুদ্ধ ও নির্মল বায়ুর বিকল্প নেই। একে বিনষ্ট অথবা দূষিত করা সৃষ্টির প্রতি অন্যায় ও বাড়াবাড়ি করার শামিল। তাই মানবজাতিকে তাদের চিন্তা-চেতনা ও অনুভূতি শক্তি কাজে লাগিয়ে সৃষ্টিজগতের প্রতি দৃষ্টিদান এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। বায়ু যে আল্লাহ তাআলার নিদর্শন, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে, সেই নৌকায় যা সমুদ্রে মানুষের জন্য কল্যাণকর বস্তু নিয়ে চলে এবং আসমান থেকে আল্লাহ যে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, এরপর তার মাধ্যমে মরে যাওয়ার পর জমিনকে জীবিত করেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সকল প্রকার বিচরণশীল প্রাণী এবং বাতাসের পরিবর্তনে ও আসমান-জমিনের মধ্যবর্তী স্থানে নিয়োজিত মেঘমালায় রয়েছে বিবেকবান সম্প্রদায়ের জন্য অনেক নিদর্শন।’ (সুরা বাকারা: ১৬৪)

বায়ুদূষণমুক্ত রাখার জন্য ইসলামে বহু দিকনির্দেশনা রয়েছে। যেমন মৃত জীবজন্তু মাটিতে পুঁতে না ফেললে তা পচে বাতাসের সঙ্গে মিশে বায়ু দূষিত করতে পারে। তাই সৃষ্টির আদিতে আদম (আ.)-এর পুত্র কাবিল কর্তৃক হাবিল নিহত হলে কাবিল যখন লাশ সংরক্ষণের কোনো পদ্ধতি পাচ্ছিল না, তখন তা দাফন করার জন্য আল্লাহ দুটি কাক পাঠান। একপর্যায়ে কাক দুটি ঝগড়া করে এবং একটি আরেকটিকে মেরে ফেলে, এরপর মাটি খনন করে মৃত কাকটিকে দাফন করে। এভাবে আল্লাহ লাশের দাফন পদ্ধতি শিখিয়ে দেন। যার ভেতর দিয়ে বায়ু দূষণমুক্ত রাখার পদ্ধতি নিহিত আছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এরপর আল্লাহ একটি কাক পাঠালেন, যা মাটি খুঁড়ছিল, যাতে তাকে দেখাতে পারে, কীভাবে সে ভাইয়ের লাশ গোপন করবে।’ (সুরা মায়িদা: ৩১) কেবল মৃত জীবজন্তু মাটিতে দাফন করাই নয়, বরং মহানবী (সা.) শরীরের কোনো দূষিত বস্তু যত্রতত্র ফেলতেন না। কারণ, তা শুকিয়ে একসময় বাতাসে মিশে যেতে পারে। ফলে পরিবেশ দূষিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্য মহানবী (সা.) রক্ত, কফ ও শরীর থেকে কর্তিত কোনো মাংসপিণ্ড মাটিতে পুঁতে ফেলার নির্দেশ দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) যখন শিঙা লাগাতেন বা লোম পরিষ্কার করতেন অথবা নখ কাটতেন, তখন তা পুঁতে ফেলার জন্য জান্নাতুল বাকিতে পাঠাতেন। (আখলাকুন্নাবি)

মহানবী (সা.) বলেন, ‘ইমানের সত্তরের বেশি শাখা-প্রশাখা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোত্তম হলো, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই—এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া এবং সর্বনিম্ন হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। আর লজ্জা ইমানের অন্যতম শাখা। (মুসলিম) হাদিসটি পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পথে-ঘাটে বিভিন্ন সময় মৃত জীবজন্তু, কাঁটা, ময়লা, গোবর, কলার ছাল, পলিথিন, জ্বলন্ত সিগারেটের অবশিষ্টাংশ পড়ে থাকে; যা খুব সহজেই বায়ু দূষিত করে। ফলে ইমানের দাবি হলো, এসব কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করে মানুষকে ক্ষতি থেকে বাঁচাতে হবে। এ ছাড়া মানুষের দ্বারা বিভিন্নভাবে বায়ু দূষিত হতে পারে। তাই মহানবী (সা.) বায়ু দূষণমুক্ত রাখার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। তিনি এভাবে দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ, এই বাতাসের মধ্যে যা কিছু কল্যাণকর, এতে যে মঙ্গল নিহিত আছে এবং যতটুকু কল্যাণ করার জন্য সে আদিষ্ট হয়েছে, ততটুকু কল্যাণ ও মঙ্গল আমরা তোমার কাছে প্রার্থনা করি। আর এই বাতাসের মধ্যে যা কিছু অনিষ্টকর, তাতে যে অমঙ্গল লুকায়িত আছে এবং যতটুকু অনিষ্ট সাধনের জন্য সে আদিষ্ট হয়েছে, তা থেকে আমরা তোমার কাছে আশ্রয় চাই।’ (তিরমিজি)

বায়ু দূষণমুক্ত করার জন্য ইসলাম হাই তোলা ও হাঁচি-কাশির ব্যাপারেও নির্দেশনা প্রদান করেছে। তা হলো, সাধ্যমতো হাই তোলা সংবরণ করা এবং হাঁচি-কাশির সময় মুখে হাত দেওয়া। এমনকি নামাজের মধ্যেও হাঁচি-কাশি এলে মুখে হাত দিতে হবে। যাতে করে কারও ময়লা-জীবাণু অন্যকে সংক্রমিত না করে। আবার কেউ কেউ রান্না শেষে প্রয়োজন ছাড়া আগুন জ্বালিয়ে রাখে। এতে যেমন বায়ু দূষিত হয়, তেমনি অপচয়ও হয়। অনুরূপভাবে বদ্ধ ঘরে গ্যাসের চুলার আগুন আরও বিপজ্জনক। সম্পূর্ণ ঘরের বাতাস দূষিত হয়ে অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই তো মহানবী (সা.) বলেন, ‘আগুন তোমাদের শত্রু। তাই যখন ঘুমাতে যাবে, তখন তা নিভিয়ে ফেলবে।’ (বুখারি) কোনো কোনো সময় বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে টায়ার জ্বালানো বা গাড়ি পুড়িয়ে বাতাস দূষিত করা হয়, যা সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের শামিল। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রিজিক থেকে পানাহার করো এবং দুষ্কৃতকারীরূপে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে ঘুরে বেড়িয়ো না।’ (সুরা বাকারা: ৬০)

অনুরূপভাবে ধূমপানের মাধ্যমেও বায়ু ব্যাপকভাবে দূষিত হয়। কারণ, সিগারেটে থাকে বিষাক্ত নিকোটিন। দুটি সিগারেটের নিকোটিন যদি ইনজেকশনের মাধ্যমে কারও শরীরে পুশ করা হয়, তখন তার মৃত্যু অনিবার্য। তাহলে উপলব্ধি করা যায় যে তামাক, বিড়ি, সিগারেট, হুক্কা ও চুরুটের ধোঁয়া কত বিপজ্জনক; যা বায়ুদূষণের পাশাপাশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানুষের ক্ষতি করে। বায়ুদূষণ এড়ানোর জন্য মহানবী (সা.) নামাজের প্রাক্কালে অথবা মসজিদে প্রবেশের আগে নির্দিষ্ট কিছু খাবার গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন এবং সুগন্ধি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেছেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে পেঁয়াজ বা রসুন খায় সে যেন ওই সময় আমাদের থেকে আলাদা থাকে অথবা আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে।’ (বুখারি) কোনো কোনো সময় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন রকম জ্বালানি তেল মিশ্রিত করে বিক্রি করেন। তা দিয়ে গাড়ি চালালে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া নির্গত হয়। এতে যেমন বায়ু ও পরিবেশ দূষিত হয়, তেমনি তা প্রতারণারও। আর একজন প্রতারক কখনো মুসলমান হতে পারে না। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে প্রতারণা করে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (তিরমিজি)

মানুষ ও প্রাণিকুলের জীবন ধারণের জন্য বিশুদ্ধ ও নির্মল বায়ুর কোনো বিকল্প নেই। তাই কোনোভাবেই যেন বায়ু দূষিত না হয়, সে ব্যাপারে সবার সচেতন হওয়া উচিত।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত