Ajker Patrika

একের পর এক খুন নিয়ে ঘিওরে আতঙ্ক

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২২, ১৪: ০৫
একের পর এক খুন নিয়ে ঘিওরে আতঙ্ক

একের পর এক লাশ উদ্ধারে চরম উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে মানিকগঞ্জের ঘিওরবাসীর মধ্যে। শান্ত পরিবেশের হঠাৎ এমন ছন্দপতনে ঘিওর পরিণত হয়েছে আতঙ্কের জনপদে। গত তিন মাসের ব্যবধানে আটজন খুন, তিনটি আত্মহত্যা ও অজ্ঞাতনামা দুজনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে।

তবে পুলিশের দাবি, এগুলো বিক্ষিপ্ত ও পারিবারিক ঘটনা। এতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

গত শনিবার আব্দুল কুদ্দুস (৪০) নামের এক আনসার ভিডিপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। উপজেলা আনসার ও ভিডিপির কার্যালয়ের সামনে থেকে বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শাহিনুর ইসলাম (২৮) নামের আরেক আনসার সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ।

গত বৃহস্পতিবার, ২২ জুলাই বিয়ের দুই মাসের মাথায় নববধূর গলা কাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়নের শোলধারা গ্রামে।

৭ জুলাই রাতে হেলিপ্যাড নামক স্থানে এক রিকশাচালকের হাত পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগে নিহতের ছোট ছেলে শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ঘিওর থানায় হত্যা মামলা করেছেন। কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

২৫ জুন ঘিওরের ধলেশ্বরী নদী থেকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২২ জুন স্ত্রীকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যার পর গলা কেটে লাশ ধলেশ্বরী নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে স্বামীর বিরুদ্ধে। এ দুটি ঘটনায় ধলেশ্বরী নদীপাড়ের মানুষজনের মধ্যে অজানা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

গত ১৯ জুন ছয় বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মেহেরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি আটক হয়। তাঁর বাড়ি পাবনা জেলায়। তিনি দিনমজুরের কাজ করতে এসে ওই শিশুকে ধর্ষণ করেন। এ ছাড়া যশোরের বাঘারপাড়ায় একটি হত্যামামলার দুই আসামি শ্রমিক সেজে ঘিওরে কাজ করতে এসে গ্রেপ্তার হন। এ ঘটনায় এলাকার বাইরে থেকে আসা শ্রমিকদের কাজে নিতে ভয় পাচ্ছেন এলাকাবাসী।

১৪ মে বসতবাড়ি লিখে না দেওয়ায় ইট দিয়ে মায়ের মাথা থেঁতলে দেয় ছেলে। উপজেলার চর বাইলজুরী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ১১ মে মহাসড়কের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় দুর্ঘটনায় ৩০ জন গুরুতর আহত হন। বেশির ভাগ যাত্রীই ঘিওরের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।

গত ৮ মে স্ত্রী ও দুই কন্যাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করেন এক ব্যক্তি। উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের আঙ্গারপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। হত্যাকাণ্ডের পর ঘাতক রুবেল পাশের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাঁচুরিয়া এলাকায় আত্মহত্যার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাঁকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।

এসব হত্যা, লাশ উদ্ধারের ঘটনায় উপজেলার সাতটি ইউনিয়নেই বিরাজ করছে অজানা আতঙ্ক। গৃহবধূ ফিরোজা বেগম বলেন, ‘প্রায়ই প্রতিদিনই সকাল হলে একটা না একটা খুনের কথা শুনি। এসব ঘটনায় ভয় তো করবেই।’

আঙ্গারপাড়া গ্রামের মোসলেম মিয়া বলেন, ‘গলাকাটা তিনটি লাশ দেখে এক মাস ঠিকমতো খেতে পারিনি। এলাকার মানুষ সন্ধ্যার পর ভয়ে বাইরে বেরোতে চান না।’

বানিয়াজুরী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এস আর আনসারী বিল্টু বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বানিয়াজুরী ইউপিতে স্ত্রীকে নৃশংসভাবে খুনের এমন ঘটনা বিগত ২০ বছরেও ঘটেনি।’

ঘিওরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আহমদ আলী বলেন, ‘গত কয়েক মাসে খুনোখুনির ঘটনায় মানুষ আতঙ্কিত।’

শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরজাহান লাবনী বলেন, ‘এগুলো বিক্ষিপ্ত ও পারিবারিক ঘটনা। প্রতিটি ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত