Ajker Patrika

তামাক নয়, খাদ্য ফলান

মো. রফিকুল ইসলাম
তামাক নয়, খাদ্য ফলান

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রতিবছর ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সদস্যদেশগুলো যথাযোগ্য 
মর্যাদায় এ দিবসটি সরকারি ও বেসরকারিভাবে পালন করে। এবার এই দিবসের প্রতিপাদ্য ‘গ্রো ফুড, নট টোব্যাকো’। যার বাংলা করা হয়েছে, ‘তামাক নয়, খাদ্য ফলান’।

জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের ফলে খাদ্য, জ্বালানি ও সারের ক্রমবর্ধমান দামের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট বাড়ছে। তামাক চাষ বৃদ্ধি এবং উৎপাদন দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, যা বৈশ্বিক পরিবেশগত ক্ষতির অন্যতম কারণ। এ ছাড়া তামাক চাষের ফলে জলবায়ু পরিবর্তন এবং কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে অন্যতম সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বছর বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের জন্য বিশ্বব্যাপী এই বৈশ্বিক সমস্যা নিরসনে তামাকের জমিতে খাদ্যশস্য উৎপাদনে উৎসাহিতকরণে প্রচারাভিযান ঘোষণা করেছে।

বর্তমানে তামাক একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে ১২৫টির বেশি দেশে উৎপাদিত হয়। তামাক চাষাবাদের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো সাধারণত নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতির ওপর পড়ে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২৫ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হয়। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে দেশে খাদ্য উৎপাদনের জমিতে তামাক চাষের কারণে খাদ্যঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে।

প্রতিবছর দেশে তামাক ব্যবহারের কারণে প্রায় ১ কোটি ৬২ হাজার লোক মৃত্যুবরণ করে এবং প্রায় ৪ লাখ লোক নানা অসুস্থতায় পঙ্গুত্বের শিকার হয়। এ ছাড়া প্রতিবছর ১২ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত প্রধান ৮টি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে দেশের জাতীয় স্বাস্থ্য উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকার কর্তৃক জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এ ছাড়া তামাক চাষের জন্য দুষ্প্রাপ্য আবাদি জমি ও পানি ব্যবহার, তামাক উৎপাদনের জন্য জায়গা তৈরি করতে এবং তামাক পাতা প্রক্রিয়ার জ্বালানি তৈরি করতে হাজার হাজার কাঠ পুড়িয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য জন্মানোর জন্য এসব জমি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, তামাক চাষে জড়িত কৃষকেরা প্রায়ই তামাকশিল্পের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন এবং ঋণের দুষ্টচক্রে আটকে থাকেন। তামাকশিল্প প্রায়ই কৃষকদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য দিতে ব্যর্থ হয় এবং তাঁরা প্রায়ই ঋণের পুরো টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হন।

বিশ্বব্যাপী বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্যের আলোকে তামাকচাষিদের জন্য বিকল্প ফসল উৎপাদন ও বিপণনের সুযোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াবে এবং তাঁদের টেকসই, পুষ্টিকর ফসল চাষে উৎসাহিত করবে। এই ফসলগুলো তাঁদের পরিবার এবং আরও লাখ লাখ পরিবারকে সমগ্র বিশ্বে খাদ্য সরবরাহ করতে সাহায্য করবে। একই সঙ্গে তামাক চাষের দুষ্ট ঋণের চক্র থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করবে এবং সামগ্রিকভাবে একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ উন্নয়নে সহায়তা করবে। তামাকচাষিদের ক্রমবর্ধমান খাদ্যশস্যের দিকে সরে যেতে উপযুক্ত নীতি, কৌশল এবং বাজারের পরিস্থিতি তৈরিতেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই প্রচারণা সরকারকে সহায়তা করবে।

তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার বিশ্বের প্রতিটি দেশে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হয়। তামাকজাত পণ্য ব্যবহারের কারণে চিকিৎসা ব্যয় বহুগুণে বেড়ে গেছে, যা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বিশাল বোঝাস্বরূপ। এ ছাড়া প্রতিটি পরিবার সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবেও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী তামাকজাত পণ্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সোচ্চার হয়েছেন জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

তামাকজাত পণ্য ব্যবহারের কারণে এক বছরে অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হলেও ‘২০৪০ সালের মধ্যে’ তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার কোন বছর কতটুকু কমানো হবে, কীভাবে কমানো হবে তা সুস্পষ্ট বলা হয়নি এবং ওই সময়ে তামাকজাত পণ্য ব্যবহারের ফলে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি ও মানুষের অকাল মৃত্যুর জন্য তামাক কোম্পানিগুলোকে দায়বদ্ধতার আওতায় আনা হয়নি। কৃষি বিপণন আইন, ২০১৮-তে তামাকজাত পণ্যকে অর্থকরী ফসলের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আশার কথা হচ্ছে, সমগ্র বিশ্ব তামাকের এ ভয়াবহতার বিষয়ে সচেতন হওয়ায় তামাক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) প্রণীত হয়েছে। বাংলাদেশ এই চুক্তির প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ। এই চুক্তির অনুস্বাক্ষর-পরবর্তী ধারাবাহিকতায় সরকার এ অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুরোধে ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য ব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধি প্রণয়ন করেছে। এ ছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত (৫ শতাংশে কমিয়ে আনা) করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। সে লক্ষ্যে একটি রোডম্যাপ তৈরির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে তামাক নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় একটি ঐতিহাসিক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে সমাদৃত হবে।

মো. রফিকুল ইসলাম,সহকারী সচিব, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

এলপি গ্যাস, তেল, আটাসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট তুলে দিল এনবিআর

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

বগুড়ায় ইফতারের পর ডেকে নিয়ে যুবককে হত্যা

অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন জামায়াতের আমির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত