Ajker Patrika

কর ফাঁকি দেওয়া বৈধ অস্ত্রের মালিকদের খোঁজে এনবিআর

ফারুক মেহেদী, ঢাকা
কর ফাঁকি দেওয়া বৈধ অস্ত্রের মালিকদের খোঁজে এনবিআর

কর ফাঁকি দেওয়া বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সধারীদের খোঁজে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর জরিপ বিভাগ। বৈধ অস্ত্রের মালিকদের নামের তালিকা, তাঁদের আয়, যাবতীয় সম্পদ ও আয়কর-সংক্রান্ত তথ্য ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠাতে সব কর অঞ্চলের কমিশনারদের চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

এনবিআর সূত্র বলেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্সধারীদের কেউ কর ফাঁকি দিয়ে থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে আয়কর আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ১২ ডিসেম্বর কর জরিপ, ফাঁকি ও আইটিপি বিভাগের দ্বিতীয় সচিব মীর মো. আরিফ হোসেনের সই করা চিঠিতে বৈধ অস্ত্রের মালিকদের নাম-ঠিকানা, গত দুই অর্থবছরে আয়কর রিটার্ন জমা, কোন অর্থবছরে কত আয় দেখিয়ে কত টাকা কর দিয়েছেন, লাইসেন্স পাওয়া অস্ত্রের ক্যাটাগরি, মডেল ও লাইসেন্সের জন্য আবেদনের তারিখও জানতে চাওয়া হয়েছে। মূলত কর ফাঁকির সন্দেহেই এসব তথ্য চাওয়া হয়েছে।

এনবিআরের আয়কর নীতির সাবেক সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে এটি ভালো পদক্ষেপ। অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে কর বিভাগের মাথাব্যথা না থাকলেও নির্বাচনের কিছুদিন আগে কর ফাঁকিবাজ বৈধ অস্ত্রের মালিকদের খুঁজে বের করার উদ্দেশ্য অনেকটাই স্পষ্ট। কর কতটুকু আসবে জানি না। তবে নজরদারির কারণে যাঁরা রিটার্ন দেননি, তাঁদের লাইসেন্স নবায়ন হবে না। তাঁরা শাস্তির আওতায় পড়বেন। নির্বাচনে বৈধ অস্ত্রের ব্যবহারও কমে যাবে।’

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) তথ্যভান্ডার ফায়ার আর্মস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (এফএএমএস) গত অক্টোবরের তথ্য বলছে, দেশে বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা ৫০ হাজার ৩১০টি। এর মধ্যে ব্যক্তির মালিকানায় ৪৫ হাজার ২২৬টি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫ হাজার ৮৪টি অস্ত্র রয়েছে। ব্যক্তির মধ্যে রাজনীতিবিদদের হাতে আছে ১০ হাজার ২১৫টি আগ্নেয়াস্ত্র। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কাছে ৭ হাজার ৫৪৯টি, বিএনপির নেতা-কর্মীদের কাছে ২ হাজার ৫৮৭টি এবং জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে আছে ৭৯টি।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে ভীতি সঞ্চারের আশঙ্কা রয়েছে। বিএনপি থেকে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হওয়া শাহজাহান ওমর এলাকায় অস্ত্রধারী দেহরক্ষী নিয়ে সভা করেছেন। ময়মনসিংহের নান্দাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিলে অস্ত্র প্রদর্শন করেন স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালামের জামাতা জাহিদ হাসানের দেহরক্ষী কামরুজ্জামান। গত কয়েক মাসে বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনের আরও কিছু ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে গণমাধ্যমে।

কর বিভাগ বলেছে, উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আয়করদাতাই আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পান। প্রতিবছর কর দেওয়ার প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই কেবল লাইসেন্স নবায়ন করা হয়। এই শর্ত ঠিকভাবে মানা হচ্ছে না বলেই কর বিভাগের ধারণা। বছরের শুরুতে লাইসেন্স নবায়ন করা হয়।

কর বিভাগের সন্দেহ, বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্সধারী সবাই ঠিকমতো রিটার্ন দাখিল করেন না এবং আয়-ব্যয় ও সম্পদের তথ্য কর বিভাগকে জানান না। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

কর বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কর বিভাগ নির্বাচন সামনে রেখে বৈধ অস্ত্রের ব্যবহার সীমিত করার উদ্দেশ্যে এমন পদক্ষেপ নেয়নি। এটা কর বিভাগের কাজ নয়। এখানে আয়কর আইনে যেসব নীতিমালা পরিপালন করার কথা, সেটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এতে কর ফাঁকিবাজদের চিহ্নিত করা যাবে। তবে যাঁরা রিটার্ন দেননি, তাঁদের লাইসেন্স নবায়ন হবে না। এতে স্বাভাবিকভাবেই অস্ত্রের ব্যবহার সীমিত হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত