তাসলিহা মওলা
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে তাপপ্রবাহ হবে—এটাই স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক ঘটনা। তাপপ্রবাহ এই অঞ্চলে নতুন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়। তবে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অতীতে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী হলেও এতটা বেশি ছিল না যে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পর ১৯৭২ সালে। সে বছরের ১৮ মে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার স্বাধীনতার আগে ১৯৬০ সালে ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি।
অপরদিকে ২০১৪ সালে ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি। গত বছরের এপ্রিল মাসেও একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তবে দেখা যায়, ২০১৪ সালের চেয়ে ২০২৩ সালে একই তাপমাত্রার সহনীয়তায় পার্থক্য আছে। গরম যেন ইদানীং বেশি অনুভূত হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, সেই সময়ে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ হলেও গরম নিয়ে এতটা অভিযোগ বা হা-হুতাশ শোনা যেত না।
এর অন্যতম কারণ হলো তাপসূচক বা ‘হিট ইনডেক্স’—বায়ুর তাপমাত্রা ও জলীয় বাষ্পের জন্য মানুষের দেহে কতটা গরম অনুভূত হবে।সাধারণত আবহাওয়ার তাপমাত্রা থেকে তাপ সূচক, ১ বা ২ ডিগ্রি, ঊর্ধ্বে ৩ ডিগ্রি বেশি থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই তারতম্য অনেক ক্ষেত্রে ৮ বা ৯ ডিগ্রি করে হচ্ছে; যা একেবারেই অস্বাভাবিক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এই তারতম্য? সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে তাপমাত্রা অনেকটা বাড়বে তা আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থাগুলো জানিয়েছিল ২০২০ সালের দিকেই। এর অন্যতম কারণ হলো
‘এল নিনো’র সক্রিয়তা।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে প্রাকৃতিক কারণ থাকলেও মনুষ্য সৃষ্ট কারণগুলোই এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়; বরং আমরা পুরোপুরি উল্টো পথে হাঁটছি। গত ১০ বছরে প্রকৃতি ধ্বংসের যে মহোৎসবে আমরা মেতেছি, এর ফলে যে আবহাওয়ার এই বিরূপ প্রভাব দেখা দেবে, তা বিশেষজ্ঞরা বহু আগেই সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু আমরা কি আদৌ তাঁদের সতর্কবার্তা অনুসরণ করেছি? আমরা কি আদতেই যথাযথ নিয়ম মেনে অগ্রসর হচ্ছি?
যেকোনো উন্নয়নের, স্থাপনার অন্যতম মূল শর্ত হলো সেই দেশের প্রকৃতি, জলবায়ু, আবহাওয়া, বাস্তুসংস্থান—এসবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা। সেটা কোনো ভবন হোক, অবকাঠামো বা নগর। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের নগরগুলো গড়ে উঠেছে ইচ্ছেমতো, যেখানে যা খুশি তা-ই প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রকৃতি, জলবায়ু, আবহাওয়া ইত্যাদি বিবেচনায় আনা হয়নি বললেই চলে। আর অপরিকল্পিত এলাকাগুলোর অবস্থা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ছাড়া বাংলাদেশে এখন ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে।
ফলে বেশ কিছু মেগা প্রজেক্ট, অর্থনৈতিক অঞ্চল ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই এগুলো তৈরি করতে গিয়ে ব্যাপক বৃক্ষনিধন হচ্ছে। উপরন্তু এসব প্রকল্পকে কেন্দ্র করে আশপাশে লোকালয় গড়ে উঠতে শুরু করেছে। ভূমি ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগে আবাসন প্রকল্পের ব্যবসা শুরু করেছেন। ফলে নদী, খাল-বিল যেমন ভরাট হচ্ছে, তেমনি ভরাট হচ্ছে কৃষিজমিও। বিশ্বের অন্যান্য দেশে সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা থাকলেও আমাদের দেশে নেই। ফলে বনভূমি, জলাভূমি, খাল-বিল, কৃষিজমি ইত্যাদি রক্ষা পায় এবং প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকে।
এবারের তাপপ্রবাহের কারণ হিসেবে অনেকে সবুজ কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন। কিন্তু আসলেই কি শুধু সবুজ কমে যাওয়াতেই এতটা তাপ অনুভূত হচ্ছে? পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য গাছের পাশাপাশি নদী-নালা, খাল-বিল ইত্যাদির সমানুপাতিক অবস্থান প্রয়োজন, যার প্রকট অভাব আমরা এখন উপলব্ধি করছি।
বাংলাদেশের গত ৩০ বছরের স্যাটেলাইট ইমেজ যদি পর্যালোচনা করা যায় তাহলে দেখা যাবে, আমরা কত দ্রুত আমাদের সবুজের পরিমাণ হারিয়েছি, নদীগুলো কীভাবে শুকিয়ে গেছে। একে তো বাঁধ দেওয়ার কারণে আমাদের ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার জলপ্রবাহ নিতান্তই কমে গেছে, এরপর নদীগুলোও নির্বিচারে ভরাট করা হয়েছে। ঢাকা শহরে বর্তমানে জলাভূমির পরিমাণ মাত্র ৩ শতাংশ, যেখানে একটি শহরের মোট আয়তনের ১২-১৫ শতাংশ জলাভূমি থাকতে হয়। গত ১০ বছরে শুধু ঢাকা শহরের সবুজ আচ্ছাদন ২১ থেকে ৯ শতাংশে নেমেছে। (তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স)। সুতরাং এ কথা সহজেই অনুমেয়, পুরো দেশে কী পরিমাণ বনভূমি নিধন এবং জলাভূমি ভরাট হয়েছে।
একটি দেশের জন্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিকল্পনা ও পরিচালনা করা একটি অনিবার্য বিষয়। আপনার দেশে যখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্রমবর্ধমান, তখন উন্নয়নবিমুখতাও আত্মঘাতী। আমাদের পাওয়ার প্ল্যান্ট লাগবে, পরিবহন অবকাঠামোর প্রয়োজন হবে, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, অর্থনৈতিক অঞ্চল, এমনকি নতুন নতুন নগর, বাজার, হাট সবকিছুরই প্রয়োজন আছে প্রবৃদ্ধির জন্য। কিন্তু কোনোভাবেই প্রকৃতিকে পাশ কাটিয়ে নয়। মনে রাখতে হবে, প্রকৃতিই আমাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক। প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলেই উল্টো হিতে বিপরীত হয়, যেমনটা আমাদের ক্ষেত্রে হচ্ছে।
আমরা উন্নয়নের নামে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন করেছি। গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে নগর গড়েছি। সামাজিক বনায়নের নামে বিজাতীয় গাছ রোপণ করেছি। নদীগুলোও দূষিত হয়েছে একের পর এক। ফলে ৩০ বছর আগে যে তাপমাত্রায় আমরা হাঁসফাঁস করতাম না, ৩০ বছর পরে তার চেয়ে ২-৩ ডিগ্রি কম তাপমাত্রাও অসহনীয় হয়ে উঠছে। কারণ ছায়া দেওয়ার মতো গাছ নেই, নদীতে যেমন পানি নেই, মাটির নিচেও পানির স্তর গেছে নেমে। প্রকৃতিতে তো সব জিনিসের সমান ও পরিমিত সহাবস্থান প্রয়োজন হয়। প্রকৃতি ও বাস্তুতন্ত্র অত্যন্ত জটিল বিষয়, যার সম্পূর্ণ উল্টোপথে আমরা গিয়েছি।
আমরা নগর গড়েছি, ভাবিনি সেখানে কতটুকু সবুজ, কতখানি জলাশয়, কতগুলো খোলা মাঠের প্রয়োজন। নগরে প্লটগুলো এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে, যাতে করে একটি বাড়ির সঙ্গে আরেকটি বাড়ির দূরত্ব একেবারে ন্যূনতম থাকছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই যাঁরা অবস্থাপন্ন, তাঁরা যান্ত্রিক সমাধান, অর্থাৎ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের দিকে ঝুঁকছেন। পাশের বাড়িটিতে এর কী প্রভাব পড়ছে, বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে কি না, সুউচ্চ ভবনকে কাচ দিয়ে ঘিরে, সেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বসিয়ে ভেতরের পরিবেশকে আরামদায়ক ও শীতল করছি বটে, তবে বায়ুমণ্ডলকে করে তুলেছি উষ্ণতর।
বলা হচ্ছে ঢাকার অনুভূত তাপমাত্রার বেশির ভাগটাই হলো আটকে পড়া তাপের কারণে, যার জন্য ভবন ও যানবাহনের এসির তপ্ত হাওয়া দায়ী। অথচ, আশি বা নব্বইয়ের দশকেও ভবন তৈরির সময় আমরা প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতাম। সে সময়কার ভবনগুলোতে এই তাপপ্রবাহের সময়েও বেশ বাতাস চলাচল করে।
তাপমাত্রা এবং তাপসূচক বৃদ্ধির মূল কারণ, আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়া। আমাদের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা প্রকৃতিকে নিয়ে নয়; বরং পাশ কাটিয়ে করা হয়। এই যে গাছ লাগানোর কথা বলা হচ্ছে, শুধু গাছ লাগালেই কি সমস্যার সমাধান হবে?
নদী, খাল-বিল ও জলাভূমি এবং খোলা মাঠগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে। শহরাঞ্চলে কংক্রিট আচ্ছাদন অত্যন্ত বেড়ে গেছে, যা ভূগর্ভস্থ পানির পুনর্মজুদ হতে দিচ্ছে না। উপরন্তু আমরা ভূ-পৃষ্ঠের পানি, অর্থাৎ নদী, খাল-বিল ইত্যাদি দূষিত করে মাটির নিচের পানির মজুত ধ্বংস করে চলেছি সুপেয় পানি ও সেচের প্রয়োজনে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনের কারণগুলো যেমন সমন্বিত, তেমনি এর প্রতিকারও হতে হবে সমন্বিত। বৃক্ষরোপণের ক্ষেত্রে বিজাতীয় মূল্যবান গাছ নয়, দেশীয় গাছ রোপণ করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সমাধান প্রকৃতিকে পুনরুদ্ধারের মাধ্যমেই করতে হবে, এর কোনো ব্যত্যয় নেই। সামনের দিনগুলোতে পুরো পৃথিবীতেই প্রকৃতি আরও আগ্রাসী হয়ে উঠবে। আমাদের প্রকৃতিবিমুখ এই উন্নয়ন তখন হয়ে উঠবে আত্মঘাতী। সময় অনেকটা চলে গেছে, সর্বনাশও কিছু কম হয়নি। কিন্তু এখনো যতটুকু আছে, তাকে বাঁচিয়ে রেখে প্রকৃতি পুনরুদ্ধারে সমন্বিত উদ্যোগই পারবে আমাদের রক্ষা করতে।
লেখক: স্থপতি ও নগর-পরিকল্পনাবিদ
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে তাপপ্রবাহ হবে—এটাই স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক ঘটনা। তাপপ্রবাহ এই অঞ্চলে নতুন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়। তবে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অতীতে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী হলেও এতটা বেশি ছিল না যে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পর ১৯৭২ সালে। সে বছরের ১৮ মে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার স্বাধীনতার আগে ১৯৬০ সালে ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি।
অপরদিকে ২০১৪ সালে ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি। গত বছরের এপ্রিল মাসেও একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তবে দেখা যায়, ২০১৪ সালের চেয়ে ২০২৩ সালে একই তাপমাত্রার সহনীয়তায় পার্থক্য আছে। গরম যেন ইদানীং বেশি অনুভূত হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, সেই সময়ে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ হলেও গরম নিয়ে এতটা অভিযোগ বা হা-হুতাশ শোনা যেত না।
এর অন্যতম কারণ হলো তাপসূচক বা ‘হিট ইনডেক্স’—বায়ুর তাপমাত্রা ও জলীয় বাষ্পের জন্য মানুষের দেহে কতটা গরম অনুভূত হবে।সাধারণত আবহাওয়ার তাপমাত্রা থেকে তাপ সূচক, ১ বা ২ ডিগ্রি, ঊর্ধ্বে ৩ ডিগ্রি বেশি থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই তারতম্য অনেক ক্ষেত্রে ৮ বা ৯ ডিগ্রি করে হচ্ছে; যা একেবারেই অস্বাভাবিক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এই তারতম্য? সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে তাপমাত্রা অনেকটা বাড়বে তা আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থাগুলো জানিয়েছিল ২০২০ সালের দিকেই। এর অন্যতম কারণ হলো
‘এল নিনো’র সক্রিয়তা।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে প্রাকৃতিক কারণ থাকলেও মনুষ্য সৃষ্ট কারণগুলোই এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়; বরং আমরা পুরোপুরি উল্টো পথে হাঁটছি। গত ১০ বছরে প্রকৃতি ধ্বংসের যে মহোৎসবে আমরা মেতেছি, এর ফলে যে আবহাওয়ার এই বিরূপ প্রভাব দেখা দেবে, তা বিশেষজ্ঞরা বহু আগেই সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু আমরা কি আদৌ তাঁদের সতর্কবার্তা অনুসরণ করেছি? আমরা কি আদতেই যথাযথ নিয়ম মেনে অগ্রসর হচ্ছি?
যেকোনো উন্নয়নের, স্থাপনার অন্যতম মূল শর্ত হলো সেই দেশের প্রকৃতি, জলবায়ু, আবহাওয়া, বাস্তুসংস্থান—এসবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা। সেটা কোনো ভবন হোক, অবকাঠামো বা নগর। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের নগরগুলো গড়ে উঠেছে ইচ্ছেমতো, যেখানে যা খুশি তা-ই প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রকৃতি, জলবায়ু, আবহাওয়া ইত্যাদি বিবেচনায় আনা হয়নি বললেই চলে। আর অপরিকল্পিত এলাকাগুলোর অবস্থা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ছাড়া বাংলাদেশে এখন ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে।
ফলে বেশ কিছু মেগা প্রজেক্ট, অর্থনৈতিক অঞ্চল ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই এগুলো তৈরি করতে গিয়ে ব্যাপক বৃক্ষনিধন হচ্ছে। উপরন্তু এসব প্রকল্পকে কেন্দ্র করে আশপাশে লোকালয় গড়ে উঠতে শুরু করেছে। ভূমি ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগে আবাসন প্রকল্পের ব্যবসা শুরু করেছেন। ফলে নদী, খাল-বিল যেমন ভরাট হচ্ছে, তেমনি ভরাট হচ্ছে কৃষিজমিও। বিশ্বের অন্যান্য দেশে সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা থাকলেও আমাদের দেশে নেই। ফলে বনভূমি, জলাভূমি, খাল-বিল, কৃষিজমি ইত্যাদি রক্ষা পায় এবং প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকে।
এবারের তাপপ্রবাহের কারণ হিসেবে অনেকে সবুজ কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন। কিন্তু আসলেই কি শুধু সবুজ কমে যাওয়াতেই এতটা তাপ অনুভূত হচ্ছে? পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য গাছের পাশাপাশি নদী-নালা, খাল-বিল ইত্যাদির সমানুপাতিক অবস্থান প্রয়োজন, যার প্রকট অভাব আমরা এখন উপলব্ধি করছি।
বাংলাদেশের গত ৩০ বছরের স্যাটেলাইট ইমেজ যদি পর্যালোচনা করা যায় তাহলে দেখা যাবে, আমরা কত দ্রুত আমাদের সবুজের পরিমাণ হারিয়েছি, নদীগুলো কীভাবে শুকিয়ে গেছে। একে তো বাঁধ দেওয়ার কারণে আমাদের ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার জলপ্রবাহ নিতান্তই কমে গেছে, এরপর নদীগুলোও নির্বিচারে ভরাট করা হয়েছে। ঢাকা শহরে বর্তমানে জলাভূমির পরিমাণ মাত্র ৩ শতাংশ, যেখানে একটি শহরের মোট আয়তনের ১২-১৫ শতাংশ জলাভূমি থাকতে হয়। গত ১০ বছরে শুধু ঢাকা শহরের সবুজ আচ্ছাদন ২১ থেকে ৯ শতাংশে নেমেছে। (তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স)। সুতরাং এ কথা সহজেই অনুমেয়, পুরো দেশে কী পরিমাণ বনভূমি নিধন এবং জলাভূমি ভরাট হয়েছে।
একটি দেশের জন্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিকল্পনা ও পরিচালনা করা একটি অনিবার্য বিষয়। আপনার দেশে যখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্রমবর্ধমান, তখন উন্নয়নবিমুখতাও আত্মঘাতী। আমাদের পাওয়ার প্ল্যান্ট লাগবে, পরিবহন অবকাঠামোর প্রয়োজন হবে, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, অর্থনৈতিক অঞ্চল, এমনকি নতুন নতুন নগর, বাজার, হাট সবকিছুরই প্রয়োজন আছে প্রবৃদ্ধির জন্য। কিন্তু কোনোভাবেই প্রকৃতিকে পাশ কাটিয়ে নয়। মনে রাখতে হবে, প্রকৃতিই আমাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক। প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলেই উল্টো হিতে বিপরীত হয়, যেমনটা আমাদের ক্ষেত্রে হচ্ছে।
আমরা উন্নয়নের নামে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন করেছি। গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে নগর গড়েছি। সামাজিক বনায়নের নামে বিজাতীয় গাছ রোপণ করেছি। নদীগুলোও দূষিত হয়েছে একের পর এক। ফলে ৩০ বছর আগে যে তাপমাত্রায় আমরা হাঁসফাঁস করতাম না, ৩০ বছর পরে তার চেয়ে ২-৩ ডিগ্রি কম তাপমাত্রাও অসহনীয় হয়ে উঠছে। কারণ ছায়া দেওয়ার মতো গাছ নেই, নদীতে যেমন পানি নেই, মাটির নিচেও পানির স্তর গেছে নেমে। প্রকৃতিতে তো সব জিনিসের সমান ও পরিমিত সহাবস্থান প্রয়োজন হয়। প্রকৃতি ও বাস্তুতন্ত্র অত্যন্ত জটিল বিষয়, যার সম্পূর্ণ উল্টোপথে আমরা গিয়েছি।
আমরা নগর গড়েছি, ভাবিনি সেখানে কতটুকু সবুজ, কতখানি জলাশয়, কতগুলো খোলা মাঠের প্রয়োজন। নগরে প্লটগুলো এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে, যাতে করে একটি বাড়ির সঙ্গে আরেকটি বাড়ির দূরত্ব একেবারে ন্যূনতম থাকছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই যাঁরা অবস্থাপন্ন, তাঁরা যান্ত্রিক সমাধান, অর্থাৎ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের দিকে ঝুঁকছেন। পাশের বাড়িটিতে এর কী প্রভাব পড়ছে, বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে কি না, সুউচ্চ ভবনকে কাচ দিয়ে ঘিরে, সেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বসিয়ে ভেতরের পরিবেশকে আরামদায়ক ও শীতল করছি বটে, তবে বায়ুমণ্ডলকে করে তুলেছি উষ্ণতর।
বলা হচ্ছে ঢাকার অনুভূত তাপমাত্রার বেশির ভাগটাই হলো আটকে পড়া তাপের কারণে, যার জন্য ভবন ও যানবাহনের এসির তপ্ত হাওয়া দায়ী। অথচ, আশি বা নব্বইয়ের দশকেও ভবন তৈরির সময় আমরা প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতাম। সে সময়কার ভবনগুলোতে এই তাপপ্রবাহের সময়েও বেশ বাতাস চলাচল করে।
তাপমাত্রা এবং তাপসূচক বৃদ্ধির মূল কারণ, আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়া। আমাদের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা প্রকৃতিকে নিয়ে নয়; বরং পাশ কাটিয়ে করা হয়। এই যে গাছ লাগানোর কথা বলা হচ্ছে, শুধু গাছ লাগালেই কি সমস্যার সমাধান হবে?
নদী, খাল-বিল ও জলাভূমি এবং খোলা মাঠগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে। শহরাঞ্চলে কংক্রিট আচ্ছাদন অত্যন্ত বেড়ে গেছে, যা ভূগর্ভস্থ পানির পুনর্মজুদ হতে দিচ্ছে না। উপরন্তু আমরা ভূ-পৃষ্ঠের পানি, অর্থাৎ নদী, খাল-বিল ইত্যাদি দূষিত করে মাটির নিচের পানির মজুত ধ্বংস করে চলেছি সুপেয় পানি ও সেচের প্রয়োজনে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনের কারণগুলো যেমন সমন্বিত, তেমনি এর প্রতিকারও হতে হবে সমন্বিত। বৃক্ষরোপণের ক্ষেত্রে বিজাতীয় মূল্যবান গাছ নয়, দেশীয় গাছ রোপণ করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সমাধান প্রকৃতিকে পুনরুদ্ধারের মাধ্যমেই করতে হবে, এর কোনো ব্যত্যয় নেই। সামনের দিনগুলোতে পুরো পৃথিবীতেই প্রকৃতি আরও আগ্রাসী হয়ে উঠবে। আমাদের প্রকৃতিবিমুখ এই উন্নয়ন তখন হয়ে উঠবে আত্মঘাতী। সময় অনেকটা চলে গেছে, সর্বনাশও কিছু কম হয়নি। কিন্তু এখনো যতটুকু আছে, তাকে বাঁচিয়ে রেখে প্রকৃতি পুনরুদ্ধারে সমন্বিত উদ্যোগই পারবে আমাদের রক্ষা করতে।
লেখক: স্থপতি ও নগর-পরিকল্পনাবিদ
তাসলিহা মওলা
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে তাপপ্রবাহ হবে—এটাই স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক ঘটনা। তাপপ্রবাহ এই অঞ্চলে নতুন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়। তবে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অতীতে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী হলেও এতটা বেশি ছিল না যে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পর ১৯৭২ সালে। সে বছরের ১৮ মে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার স্বাধীনতার আগে ১৯৬০ সালে ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি।
অপরদিকে ২০১৪ সালে ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি। গত বছরের এপ্রিল মাসেও একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তবে দেখা যায়, ২০১৪ সালের চেয়ে ২০২৩ সালে একই তাপমাত্রার সহনীয়তায় পার্থক্য আছে। গরম যেন ইদানীং বেশি অনুভূত হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, সেই সময়ে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ হলেও গরম নিয়ে এতটা অভিযোগ বা হা-হুতাশ শোনা যেত না।
এর অন্যতম কারণ হলো তাপসূচক বা ‘হিট ইনডেক্স’—বায়ুর তাপমাত্রা ও জলীয় বাষ্পের জন্য মানুষের দেহে কতটা গরম অনুভূত হবে।সাধারণত আবহাওয়ার তাপমাত্রা থেকে তাপ সূচক, ১ বা ২ ডিগ্রি, ঊর্ধ্বে ৩ ডিগ্রি বেশি থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই তারতম্য অনেক ক্ষেত্রে ৮ বা ৯ ডিগ্রি করে হচ্ছে; যা একেবারেই অস্বাভাবিক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এই তারতম্য? সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে তাপমাত্রা অনেকটা বাড়বে তা আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থাগুলো জানিয়েছিল ২০২০ সালের দিকেই। এর অন্যতম কারণ হলো
‘এল নিনো’র সক্রিয়তা।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে প্রাকৃতিক কারণ থাকলেও মনুষ্য সৃষ্ট কারণগুলোই এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়; বরং আমরা পুরোপুরি উল্টো পথে হাঁটছি। গত ১০ বছরে প্রকৃতি ধ্বংসের যে মহোৎসবে আমরা মেতেছি, এর ফলে যে আবহাওয়ার এই বিরূপ প্রভাব দেখা দেবে, তা বিশেষজ্ঞরা বহু আগেই সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু আমরা কি আদৌ তাঁদের সতর্কবার্তা অনুসরণ করেছি? আমরা কি আদতেই যথাযথ নিয়ম মেনে অগ্রসর হচ্ছি?
যেকোনো উন্নয়নের, স্থাপনার অন্যতম মূল শর্ত হলো সেই দেশের প্রকৃতি, জলবায়ু, আবহাওয়া, বাস্তুসংস্থান—এসবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা। সেটা কোনো ভবন হোক, অবকাঠামো বা নগর। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের নগরগুলো গড়ে উঠেছে ইচ্ছেমতো, যেখানে যা খুশি তা-ই প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রকৃতি, জলবায়ু, আবহাওয়া ইত্যাদি বিবেচনায় আনা হয়নি বললেই চলে। আর অপরিকল্পিত এলাকাগুলোর অবস্থা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ছাড়া বাংলাদেশে এখন ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে।
ফলে বেশ কিছু মেগা প্রজেক্ট, অর্থনৈতিক অঞ্চল ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই এগুলো তৈরি করতে গিয়ে ব্যাপক বৃক্ষনিধন হচ্ছে। উপরন্তু এসব প্রকল্পকে কেন্দ্র করে আশপাশে লোকালয় গড়ে উঠতে শুরু করেছে। ভূমি ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগে আবাসন প্রকল্পের ব্যবসা শুরু করেছেন। ফলে নদী, খাল-বিল যেমন ভরাট হচ্ছে, তেমনি ভরাট হচ্ছে কৃষিজমিও। বিশ্বের অন্যান্য দেশে সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা থাকলেও আমাদের দেশে নেই। ফলে বনভূমি, জলাভূমি, খাল-বিল, কৃষিজমি ইত্যাদি রক্ষা পায় এবং প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকে।
এবারের তাপপ্রবাহের কারণ হিসেবে অনেকে সবুজ কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন। কিন্তু আসলেই কি শুধু সবুজ কমে যাওয়াতেই এতটা তাপ অনুভূত হচ্ছে? পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য গাছের পাশাপাশি নদী-নালা, খাল-বিল ইত্যাদির সমানুপাতিক অবস্থান প্রয়োজন, যার প্রকট অভাব আমরা এখন উপলব্ধি করছি।
বাংলাদেশের গত ৩০ বছরের স্যাটেলাইট ইমেজ যদি পর্যালোচনা করা যায় তাহলে দেখা যাবে, আমরা কত দ্রুত আমাদের সবুজের পরিমাণ হারিয়েছি, নদীগুলো কীভাবে শুকিয়ে গেছে। একে তো বাঁধ দেওয়ার কারণে আমাদের ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার জলপ্রবাহ নিতান্তই কমে গেছে, এরপর নদীগুলোও নির্বিচারে ভরাট করা হয়েছে। ঢাকা শহরে বর্তমানে জলাভূমির পরিমাণ মাত্র ৩ শতাংশ, যেখানে একটি শহরের মোট আয়তনের ১২-১৫ শতাংশ জলাভূমি থাকতে হয়। গত ১০ বছরে শুধু ঢাকা শহরের সবুজ আচ্ছাদন ২১ থেকে ৯ শতাংশে নেমেছে। (তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স)। সুতরাং এ কথা সহজেই অনুমেয়, পুরো দেশে কী পরিমাণ বনভূমি নিধন এবং জলাভূমি ভরাট হয়েছে।
একটি দেশের জন্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিকল্পনা ও পরিচালনা করা একটি অনিবার্য বিষয়। আপনার দেশে যখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্রমবর্ধমান, তখন উন্নয়নবিমুখতাও আত্মঘাতী। আমাদের পাওয়ার প্ল্যান্ট লাগবে, পরিবহন অবকাঠামোর প্রয়োজন হবে, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, অর্থনৈতিক অঞ্চল, এমনকি নতুন নতুন নগর, বাজার, হাট সবকিছুরই প্রয়োজন আছে প্রবৃদ্ধির জন্য। কিন্তু কোনোভাবেই প্রকৃতিকে পাশ কাটিয়ে নয়। মনে রাখতে হবে, প্রকৃতিই আমাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক। প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলেই উল্টো হিতে বিপরীত হয়, যেমনটা আমাদের ক্ষেত্রে হচ্ছে।
আমরা উন্নয়নের নামে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন করেছি। গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে নগর গড়েছি। সামাজিক বনায়নের নামে বিজাতীয় গাছ রোপণ করেছি। নদীগুলোও দূষিত হয়েছে একের পর এক। ফলে ৩০ বছর আগে যে তাপমাত্রায় আমরা হাঁসফাঁস করতাম না, ৩০ বছর পরে তার চেয়ে ২-৩ ডিগ্রি কম তাপমাত্রাও অসহনীয় হয়ে উঠছে। কারণ ছায়া দেওয়ার মতো গাছ নেই, নদীতে যেমন পানি নেই, মাটির নিচেও পানির স্তর গেছে নেমে। প্রকৃতিতে তো সব জিনিসের সমান ও পরিমিত সহাবস্থান প্রয়োজন হয়। প্রকৃতি ও বাস্তুতন্ত্র অত্যন্ত জটিল বিষয়, যার সম্পূর্ণ উল্টোপথে আমরা গিয়েছি।
আমরা নগর গড়েছি, ভাবিনি সেখানে কতটুকু সবুজ, কতখানি জলাশয়, কতগুলো খোলা মাঠের প্রয়োজন। নগরে প্লটগুলো এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে, যাতে করে একটি বাড়ির সঙ্গে আরেকটি বাড়ির দূরত্ব একেবারে ন্যূনতম থাকছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই যাঁরা অবস্থাপন্ন, তাঁরা যান্ত্রিক সমাধান, অর্থাৎ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের দিকে ঝুঁকছেন। পাশের বাড়িটিতে এর কী প্রভাব পড়ছে, বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে কি না, সুউচ্চ ভবনকে কাচ দিয়ে ঘিরে, সেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বসিয়ে ভেতরের পরিবেশকে আরামদায়ক ও শীতল করছি বটে, তবে বায়ুমণ্ডলকে করে তুলেছি উষ্ণতর।
বলা হচ্ছে ঢাকার অনুভূত তাপমাত্রার বেশির ভাগটাই হলো আটকে পড়া তাপের কারণে, যার জন্য ভবন ও যানবাহনের এসির তপ্ত হাওয়া দায়ী। অথচ, আশি বা নব্বইয়ের দশকেও ভবন তৈরির সময় আমরা প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতাম। সে সময়কার ভবনগুলোতে এই তাপপ্রবাহের সময়েও বেশ বাতাস চলাচল করে।
তাপমাত্রা এবং তাপসূচক বৃদ্ধির মূল কারণ, আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়া। আমাদের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা প্রকৃতিকে নিয়ে নয়; বরং পাশ কাটিয়ে করা হয়। এই যে গাছ লাগানোর কথা বলা হচ্ছে, শুধু গাছ লাগালেই কি সমস্যার সমাধান হবে?
নদী, খাল-বিল ও জলাভূমি এবং খোলা মাঠগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে। শহরাঞ্চলে কংক্রিট আচ্ছাদন অত্যন্ত বেড়ে গেছে, যা ভূগর্ভস্থ পানির পুনর্মজুদ হতে দিচ্ছে না। উপরন্তু আমরা ভূ-পৃষ্ঠের পানি, অর্থাৎ নদী, খাল-বিল ইত্যাদি দূষিত করে মাটির নিচের পানির মজুত ধ্বংস করে চলেছি সুপেয় পানি ও সেচের প্রয়োজনে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনের কারণগুলো যেমন সমন্বিত, তেমনি এর প্রতিকারও হতে হবে সমন্বিত। বৃক্ষরোপণের ক্ষেত্রে বিজাতীয় মূল্যবান গাছ নয়, দেশীয় গাছ রোপণ করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সমাধান প্রকৃতিকে পুনরুদ্ধারের মাধ্যমেই করতে হবে, এর কোনো ব্যত্যয় নেই। সামনের দিনগুলোতে পুরো পৃথিবীতেই প্রকৃতি আরও আগ্রাসী হয়ে উঠবে। আমাদের প্রকৃতিবিমুখ এই উন্নয়ন তখন হয়ে উঠবে আত্মঘাতী। সময় অনেকটা চলে গেছে, সর্বনাশও কিছু কম হয়নি। কিন্তু এখনো যতটুকু আছে, তাকে বাঁচিয়ে রেখে প্রকৃতি পুনরুদ্ধারে সমন্বিত উদ্যোগই পারবে আমাদের রক্ষা করতে।
লেখক: স্থপতি ও নগর-পরিকল্পনাবিদ
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে তাপপ্রবাহ হবে—এটাই স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক ঘটনা। তাপপ্রবাহ এই অঞ্চলে নতুন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়। তবে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অতীতে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী হলেও এতটা বেশি ছিল না যে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পর ১৯৭২ সালে। সে বছরের ১৮ মে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার স্বাধীনতার আগে ১৯৬০ সালে ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি।
অপরদিকে ২০১৪ সালে ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি। গত বছরের এপ্রিল মাসেও একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তবে দেখা যায়, ২০১৪ সালের চেয়ে ২০২৩ সালে একই তাপমাত্রার সহনীয়তায় পার্থক্য আছে। গরম যেন ইদানীং বেশি অনুভূত হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, সেই সময়ে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ হলেও গরম নিয়ে এতটা অভিযোগ বা হা-হুতাশ শোনা যেত না।
এর অন্যতম কারণ হলো তাপসূচক বা ‘হিট ইনডেক্স’—বায়ুর তাপমাত্রা ও জলীয় বাষ্পের জন্য মানুষের দেহে কতটা গরম অনুভূত হবে।সাধারণত আবহাওয়ার তাপমাত্রা থেকে তাপ সূচক, ১ বা ২ ডিগ্রি, ঊর্ধ্বে ৩ ডিগ্রি বেশি থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই তারতম্য অনেক ক্ষেত্রে ৮ বা ৯ ডিগ্রি করে হচ্ছে; যা একেবারেই অস্বাভাবিক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এই তারতম্য? সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে তাপমাত্রা অনেকটা বাড়বে তা আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থাগুলো জানিয়েছিল ২০২০ সালের দিকেই। এর অন্যতম কারণ হলো
‘এল নিনো’র সক্রিয়তা।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে প্রাকৃতিক কারণ থাকলেও মনুষ্য সৃষ্ট কারণগুলোই এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়; বরং আমরা পুরোপুরি উল্টো পথে হাঁটছি। গত ১০ বছরে প্রকৃতি ধ্বংসের যে মহোৎসবে আমরা মেতেছি, এর ফলে যে আবহাওয়ার এই বিরূপ প্রভাব দেখা দেবে, তা বিশেষজ্ঞরা বহু আগেই সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু আমরা কি আদৌ তাঁদের সতর্কবার্তা অনুসরণ করেছি? আমরা কি আদতেই যথাযথ নিয়ম মেনে অগ্রসর হচ্ছি?
যেকোনো উন্নয়নের, স্থাপনার অন্যতম মূল শর্ত হলো সেই দেশের প্রকৃতি, জলবায়ু, আবহাওয়া, বাস্তুসংস্থান—এসবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা। সেটা কোনো ভবন হোক, অবকাঠামো বা নগর। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের নগরগুলো গড়ে উঠেছে ইচ্ছেমতো, যেখানে যা খুশি তা-ই প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রকৃতি, জলবায়ু, আবহাওয়া ইত্যাদি বিবেচনায় আনা হয়নি বললেই চলে। আর অপরিকল্পিত এলাকাগুলোর অবস্থা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ছাড়া বাংলাদেশে এখন ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে।
ফলে বেশ কিছু মেগা প্রজেক্ট, অর্থনৈতিক অঞ্চল ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই এগুলো তৈরি করতে গিয়ে ব্যাপক বৃক্ষনিধন হচ্ছে। উপরন্তু এসব প্রকল্পকে কেন্দ্র করে আশপাশে লোকালয় গড়ে উঠতে শুরু করেছে। ভূমি ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগে আবাসন প্রকল্পের ব্যবসা শুরু করেছেন। ফলে নদী, খাল-বিল যেমন ভরাট হচ্ছে, তেমনি ভরাট হচ্ছে কৃষিজমিও। বিশ্বের অন্যান্য দেশে সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা থাকলেও আমাদের দেশে নেই। ফলে বনভূমি, জলাভূমি, খাল-বিল, কৃষিজমি ইত্যাদি রক্ষা পায় এবং প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকে।
এবারের তাপপ্রবাহের কারণ হিসেবে অনেকে সবুজ কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন। কিন্তু আসলেই কি শুধু সবুজ কমে যাওয়াতেই এতটা তাপ অনুভূত হচ্ছে? পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য গাছের পাশাপাশি নদী-নালা, খাল-বিল ইত্যাদির সমানুপাতিক অবস্থান প্রয়োজন, যার প্রকট অভাব আমরা এখন উপলব্ধি করছি।
বাংলাদেশের গত ৩০ বছরের স্যাটেলাইট ইমেজ যদি পর্যালোচনা করা যায় তাহলে দেখা যাবে, আমরা কত দ্রুত আমাদের সবুজের পরিমাণ হারিয়েছি, নদীগুলো কীভাবে শুকিয়ে গেছে। একে তো বাঁধ দেওয়ার কারণে আমাদের ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার জলপ্রবাহ নিতান্তই কমে গেছে, এরপর নদীগুলোও নির্বিচারে ভরাট করা হয়েছে। ঢাকা শহরে বর্তমানে জলাভূমির পরিমাণ মাত্র ৩ শতাংশ, যেখানে একটি শহরের মোট আয়তনের ১২-১৫ শতাংশ জলাভূমি থাকতে হয়। গত ১০ বছরে শুধু ঢাকা শহরের সবুজ আচ্ছাদন ২১ থেকে ৯ শতাংশে নেমেছে। (তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স)। সুতরাং এ কথা সহজেই অনুমেয়, পুরো দেশে কী পরিমাণ বনভূমি নিধন এবং জলাভূমি ভরাট হয়েছে।
একটি দেশের জন্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিকল্পনা ও পরিচালনা করা একটি অনিবার্য বিষয়। আপনার দেশে যখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্রমবর্ধমান, তখন উন্নয়নবিমুখতাও আত্মঘাতী। আমাদের পাওয়ার প্ল্যান্ট লাগবে, পরিবহন অবকাঠামোর প্রয়োজন হবে, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, অর্থনৈতিক অঞ্চল, এমনকি নতুন নতুন নগর, বাজার, হাট সবকিছুরই প্রয়োজন আছে প্রবৃদ্ধির জন্য। কিন্তু কোনোভাবেই প্রকৃতিকে পাশ কাটিয়ে নয়। মনে রাখতে হবে, প্রকৃতিই আমাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক। প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলেই উল্টো হিতে বিপরীত হয়, যেমনটা আমাদের ক্ষেত্রে হচ্ছে।
আমরা উন্নয়নের নামে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন করেছি। গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে নগর গড়েছি। সামাজিক বনায়নের নামে বিজাতীয় গাছ রোপণ করেছি। নদীগুলোও দূষিত হয়েছে একের পর এক। ফলে ৩০ বছর আগে যে তাপমাত্রায় আমরা হাঁসফাঁস করতাম না, ৩০ বছর পরে তার চেয়ে ২-৩ ডিগ্রি কম তাপমাত্রাও অসহনীয় হয়ে উঠছে। কারণ ছায়া দেওয়ার মতো গাছ নেই, নদীতে যেমন পানি নেই, মাটির নিচেও পানির স্তর গেছে নেমে। প্রকৃতিতে তো সব জিনিসের সমান ও পরিমিত সহাবস্থান প্রয়োজন হয়। প্রকৃতি ও বাস্তুতন্ত্র অত্যন্ত জটিল বিষয়, যার সম্পূর্ণ উল্টোপথে আমরা গিয়েছি।
আমরা নগর গড়েছি, ভাবিনি সেখানে কতটুকু সবুজ, কতখানি জলাশয়, কতগুলো খোলা মাঠের প্রয়োজন। নগরে প্লটগুলো এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে, যাতে করে একটি বাড়ির সঙ্গে আরেকটি বাড়ির দূরত্ব একেবারে ন্যূনতম থাকছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই যাঁরা অবস্থাপন্ন, তাঁরা যান্ত্রিক সমাধান, অর্থাৎ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের দিকে ঝুঁকছেন। পাশের বাড়িটিতে এর কী প্রভাব পড়ছে, বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে কি না, সুউচ্চ ভবনকে কাচ দিয়ে ঘিরে, সেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বসিয়ে ভেতরের পরিবেশকে আরামদায়ক ও শীতল করছি বটে, তবে বায়ুমণ্ডলকে করে তুলেছি উষ্ণতর।
বলা হচ্ছে ঢাকার অনুভূত তাপমাত্রার বেশির ভাগটাই হলো আটকে পড়া তাপের কারণে, যার জন্য ভবন ও যানবাহনের এসির তপ্ত হাওয়া দায়ী। অথচ, আশি বা নব্বইয়ের দশকেও ভবন তৈরির সময় আমরা প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতাম। সে সময়কার ভবনগুলোতে এই তাপপ্রবাহের সময়েও বেশ বাতাস চলাচল করে।
তাপমাত্রা এবং তাপসূচক বৃদ্ধির মূল কারণ, আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়া। আমাদের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা প্রকৃতিকে নিয়ে নয়; বরং পাশ কাটিয়ে করা হয়। এই যে গাছ লাগানোর কথা বলা হচ্ছে, শুধু গাছ লাগালেই কি সমস্যার সমাধান হবে?
নদী, খাল-বিল ও জলাভূমি এবং খোলা মাঠগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে। শহরাঞ্চলে কংক্রিট আচ্ছাদন অত্যন্ত বেড়ে গেছে, যা ভূগর্ভস্থ পানির পুনর্মজুদ হতে দিচ্ছে না। উপরন্তু আমরা ভূ-পৃষ্ঠের পানি, অর্থাৎ নদী, খাল-বিল ইত্যাদি দূষিত করে মাটির নিচের পানির মজুত ধ্বংস করে চলেছি সুপেয় পানি ও সেচের প্রয়োজনে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনের কারণগুলো যেমন সমন্বিত, তেমনি এর প্রতিকারও হতে হবে সমন্বিত। বৃক্ষরোপণের ক্ষেত্রে বিজাতীয় মূল্যবান গাছ নয়, দেশীয় গাছ রোপণ করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সমাধান প্রকৃতিকে পুনরুদ্ধারের মাধ্যমেই করতে হবে, এর কোনো ব্যত্যয় নেই। সামনের দিনগুলোতে পুরো পৃথিবীতেই প্রকৃতি আরও আগ্রাসী হয়ে উঠবে। আমাদের প্রকৃতিবিমুখ এই উন্নয়ন তখন হয়ে উঠবে আত্মঘাতী। সময় অনেকটা চলে গেছে, সর্বনাশও কিছু কম হয়নি। কিন্তু এখনো যতটুকু আছে, তাকে বাঁচিয়ে রেখে প্রকৃতি পুনরুদ্ধারে সমন্বিত উদ্যোগই পারবে আমাদের রক্ষা করতে।
লেখক: স্থপতি ও নগর-পরিকল্পনাবিদ
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে তাপপ্রবাহ হবে—এটাই স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক ঘটনা। তাপপ্রবাহ এই অঞ্চলে নতুন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়। তবে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অতীতে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী হলেও এতটা বেশি ছিল না যে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে।
০৭ মে ২০২৪‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে তাপপ্রবাহ হবে—এটাই স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক ঘটনা। তাপপ্রবাহ এই অঞ্চলে নতুন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়। তবে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অতীতে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী হলেও এতটা বেশি ছিল না যে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে।
০৭ মে ২০২৪গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে তাপপ্রবাহ হবে—এটাই স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক ঘটনা। তাপপ্রবাহ এই অঞ্চলে নতুন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়। তবে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অতীতে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী হলেও এতটা বেশি ছিল না যে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে।
০৭ মে ২০২৪গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে তাপপ্রবাহ হবে—এটাই স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক ঘটনা। তাপপ্রবাহ এই অঞ্চলে নতুন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়। তবে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অতীতে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী হলেও এতটা বেশি ছিল না যে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে।
০৭ মে ২০২৪গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫