Ajker Patrika

ব্রহ্মপুত্রের তীরে ২০০ বছরের পুরোনো হাট

শেখ ফরিদ, সোনারগাঁ
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ৩৫
ব্রহ্মপুত্রের তীরে ২০০ বছরের পুরোনো হাট

ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে চারপাশের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যেই কাইকারটেক সেতু। সেতু থেকে চারদিকে তাকালেই চোখে পড়বে সবুজের সমারোহ। প্রতি রোববার সকালে এখানে এলেই নদের তীরে দেখা মিলবে মানুষের কর্মচঞ্চলতা। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র নিয়ে দোকানিরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কেনাকাটা করতে দলে দলে আসছেন লোকজন।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের কাইকারটেক হাট। সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের সোনারগাঁ ও বন্দর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় কাইকারটেক সেতুর পাশে পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বসে এই হাট। সপ্তাহে শুধু রোববার এই হাট বসে বলে অনেকেই ‘রোববারের হাট’ বলে থাকেন। ২০০ বছরের পুরোনো এই হাট আজও গ্রামবাংলার ঐতিহ্যকে বুকে লালন করে আছে। নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল্লাসহ আশপাশের জেলার মানুষেরা ছুটে আসেন এখানে।

সরেজমিনে দেখা যায়, খাবার থেকে শুরু করে ঘর বানানোর আসবাব—সবই রয়েছে এই হাটে। কবুতর, জাল, দা, কুড়াল, জামাকাপড়, গরু-ছাগল, মিষ্টি, মাছ, হাঁস-মুরগিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুই রয়েছে। পাওয়া যায় ডিঙি নৌকা, সবুজ বনায়নের জন্য গাছগাছালি। এমন অনেক জিনিসপত্র রয়েছে, যা স্মরণ করিয়ে দেবে পুরোনো দিনের কথা।

ঐতিহ্যবাহী কাইকারটেক হাটের নৌকার কেনাবেচার ইতিহাস বহু পুরোনো। এ হাটের নৌকার খ্যাতি এলাকা ছাড়িয়ে আশপাশের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে গেছে। তাই বছরব্যাপী হাট বসলেও আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন—চার মাস অল্প দামে ভালো মানের নৌকা কেনার জন্য হাটে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রচুর ক্রেতা আসেন। এই চার মাস কাইকারটেক হাটে মানুষের চাপ তুলনামূলক বেশি থাকে।

হাটে বিক্রি হওয়া মজার মজার খাবারের স্বাদ ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করে। ঐতিহ্যবাহী এই হাটের প্রধান আকর্ষণই হলো বিশেষ একধরনের মিষ্টি। ওজন আর পরিমাপে অন্যান্য মিষ্টির তুলনায় এই মিষ্টি কয়েক গুণ বড়। একেকটা মিষ্টির ওজন আধা কেজি থেকে দুই কেজি। অর্ডার করলে আরও বড় মিষ্টি পাওয়া যায়। মিষ্টিগুলো দেখতে অনেকটা শিলপুতার মতো। তাই সবার কাছে ‘পুতা মিষ্টি’ নামেই পরিচিত। শুধু এ মিষ্টির স্বাদ নেওয়ার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন মিষ্টিপ্রেমীরা।

হাটের দোকানদার আলী হোসেন বলেন, এ হাটে বাঁশ, কাঠ, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি থেকে শুরু করে তরমুজ, চাল, ডালসহ কৃষকদের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করা হয়। হাটে আসা ক্রেতা শামসুল ইসলাম জানান, ২০০ বছরের পুরোনো এই হাটে বর্তমানে অন্যান্য হাটের মতোই নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিস পাওয়া যায়। নদী, প্রাকৃতিক পরিবেশ, কর্মচঞ্চল হাটের ব্যস্ততা উপভোগ করার পাশাপাশি মুখরোচক খাবারের স্বাদ নিতেই এখানে আসা। কাফুরদী গ্রামের আবদুল হক জানান, তিনি ছোটবেলা থেকেই এই হাটে এসে বাবা-দাদার সঙ্গে মিষ্টি খেয়েছেন। রোববার এলেই হাটে যাওয়ার জন্য কান্না শুরু করে দিতেন।

মিষ্টির পাশাপাশি বিক্রি হয় টক দই ও আখের গুড় দিয়ে বানানো লাচ্ছি, বিশেষ ঝালমুড়ি, মুড়ালি, বুট, পেঁয়াজি, নিমকি, চানাচুর, মোয়াসহ নানা ধরনের লোকজ খাবার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত