
আজকের পত্রিকা: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলেন কোন দায় থেকে?
আফসান চৌধুরী: এটা তো দায়ের বিষয় নয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয়ে পড়েছি। আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য ছিল—ইতিহাসবিদ হওয়া। আমরা তো একাত্তরের প্রজন্ম। তাই আমাদের কাছে একাত্তরটি অন্য রকম ব্যাপার। আমার কাছে নিজের কথা বলাটাই একাত্তরের বিষয় হয়ে যায়। কিন্তু বিষয়টা সে রকম নয়। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ পরীক্ষা দেওয়ার পর তখনো রেজাল্ট বেরোয়নি। সেই সময় আমার একটা চাকরির খুব দরকার ছিল। তখন আমি চাকরি খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রকল্পের খবর পাই। সেখানে গিয়ে গবেষকের সহকারী হিসেবে একটা চাকরি হয়ে যায়। আমি প্রত্নতত্ত্ব ও প্রাচীন ভারতের ইতিহাস নিয়ে এমএ পাস করেছিলাম। আমার ওই বিষয়ে শিক্ষক হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল। তবে আমি শিক্ষক হতে পারিনি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রকল্পে যেহেতু গঠন পর্ব থেকে যুক্ত ছিলাম, সেহেতু একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপিত হলো। আমার পিএইচডি থিসিসের বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশ ধারণার ইতিহাস কত পুরানো’। ১৯৮২ সালে আমি পিএইচডি গবেষণা বন্ধ করে দিই। তখন আমার মনে হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের (তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি) অনেকের দোদুল্যমানতা আছে এবং দরজা খোলা-বন্ধের বিষয় আছে। এ কারণে তাঁদের সঙ্গে আমার মনের মিল হতো না। তাঁদের কাছে ইতিহাসচর্চা হলো শুধু শৌখিনতার বিষয়। আর ওপরতলার চোখ দিয়ে এবং পশ্চিমা দৃষ্টি দিয়ে ইতিহাস দেখার বিষয়টি আমার অপছন্দ ছিল। এর মধ্যে ১৯৮২-৮৩ সালের দিকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমার কাছে নেশার মতো হয়ে দাঁড়ায়। সেই থেকে আমার যাত্রা শুরু। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে গবেষণার সঙ্গে জড়িত হওয়ার কারণে আমার জীবনটা পাল্টে গেছে।
আজকের পত্রিকা: আপনি আপনার বিভিন্ন লেখায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসচর্চার সমস্যা ও ঘাটতির কথা বলেছেন। সমস্যাগুলো আসলে কী ধরনের?
আফসান চৌধুরী: আমার কাছে মনে হয়, একটা তথ্যের এবং অন্যটি হলো তত্ত্বের সমস্যা। সত্যি কথা হলো, আমরা সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করিনি। নিরপেক্ষভাবে এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি আমাদের দেশে কারও মধ্যেই ছিল না। সাধারণ মানুষের তথ্য খুবই কম। যেভাবে এসব তথ্য সংগ্রহ করতে হয়, যেমন সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তথ্য বের করে আনার বিষয়টি আমাদের দেশে দুর্বল। তথ্যের যে ভিত্তি থাকা দরকার, সেটাই আমাদের দুর্বল হয়ে আছে। এটা একটা বড় সমস্যা। সেই ঘাটতিটা মেটানো কতটা সম্ভব, সেটা আমি জানি না। কারণ, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের যাঁরা প্রত্যক্ষদর্শী, তাঁদের বেশির ভাগ লোক মারা গেছেন। আমার বয়স বর্তমানে ৭১ বছর চলছে। সে হিসাবে গ্রামের মানুষের যে গড় আয়ু, তাতে মুক্তিযুদ্ধের বেশির ভাগ সাক্ষী মারা গেছেন, বিশেষ করে যাঁরা বেঁচে আছেন, যাঁরা অবস্থাপন্ন, রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান ও ক্ষমতায় আছেন, প্রভাবশালী সাক্ষী এবং যাঁরা সেনাবাহিনীতে ছিলেন, তাঁরা তো সত্যি কথা বলেন না। তথ্যের যে ভান্ডারটা তৈরি করার দরকার ছিল, সেটা আমরা কেউ নজর দিয়ে তৈরি করিনি। তাই যাঁরা নিজের মতো করে যা কিছু লিখছেন, সেটাকে আমরা ইতিহাস বলতে পারি না। নিজের কথাকেই আমরা প্রমাণ করার চেষ্টা করি, এটা একটা বড় ঝামেলা। আপাতত এ থেকে আমরা মুক্তি পাচ্ছি না। তাই আগামী প্রজন্ম কী ধরনের ইতিহাস পাবে, এটা নিয়ে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। এ কারণে নতুন প্রজন্ম এই ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।
আর তত্ত্বের সমস্যাটি হলো জাতীয়তাবাদ। আগে ছিলাম মুসলমান আর এখন হয়েছি বাঙালি। জাতীয়তাবাদ হলো বাতিল হয়ে যাওয়া এবং পশ্চিমা একটা ধারণা। এটা কী কারণে এ দেশে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হলো, সেটা ভাবা যায় না। ঔপনিবেশিক সমাজে এ ধারণাটা জনপ্রিয় হতে পারে। আমাদের ইতিহাস হলো, দীর্ঘ সময়ের ইতিহাস।আর মুক্তিযুদ্ধকে ‘মহান’ করে দেখাটাও বড় সমস্যা। এটাও আমাদের সঠিকভাবে ইতিহাসচর্চার অন্তরায়। আর এ বিষয়গুলো যত দিন সুশীল ভদ্র লোকের হাতে থাকবে, তার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক যাঁরা জড়িত আছেন, তত দিন পর্যন্ত মোটামুটি বিশ্বাসযোগ্য, নিরপেক্ষ ইতিহাস রচনা অসম্ভব। তাই সাধারণ মানুষের নিজের ইতিহাসটা লেখা এবং অনুসন্ধান করা উচিত। প্রাতিষ্ঠানিক লোকজন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখার কাজটিকে দখল করে রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তো অপ্রাতিষ্ঠানিকতার ইতিহাস। আমাদের প্রধান ইতিহাসবিদেরা তো সমাজতত্ত্ব, রাজনৈতিক দর্শন, নৃ-বিজ্ঞানই পড়েননি। তাহলে তাঁরা কীভাবে সাধারণ মানুষের ইতিহাস লিখবেন!
আজকের পত্রিকা: এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং তাদের বুদ্ধিজীবীরা ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’কেই প্রতিষ্ঠিত করার কাজে ব্যতিব্যস্ত।
আফসান চৌধুরী: কথাটা তো এ রকম যে একটা জাতীয়তাবাদ থাকতে হবে। তাহলে আমরা পাকিস্তান আমলে কেন মুসলিম লীগ করেছি, আমরা যদি বাঙালি হয়ে থাকি তাহলে তো কংগ্রেস করার কথা ছিল। এসব কথা আমাদের বুদ্ধিজীবী ও ইতিহাসবিদেরা কেউই বলেন না। ১৯৪৭ সালে যখন যৌথ বা অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন হলো, তখন বাঙালিত্বই যদি আমাদের প্রধান পরিচয় হতো তাহলে কেন আমরা একটা রাষ্ট্র করতে পারলাম না। সেটা কি তারা জানে? বাংলা ভাগ বাস্তব হলো না কেন? কারণ জওহরলাল নেহরু বললেন, তোমরা এটা করতে পারবে না। তখন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বললেন, একটা স্বাধীন দেশ করা তো যায়। জাতীয়তাবাদের যুক্তিটা হলো যেকোনো উপায়ে রাষ্ট্র গঠন। যে যুক্তিতে রাষ্ট্র গঠন হয়, সেটাই যৌক্তিক। কারণ, ভারত ও পাকিস্তানে রাষ্ট্র গঠনের বিষয়টি একই ইতিহাস থেকে হয়নি। আর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রায় একই কথা বলে। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে দলীয়করণ করে ফেলেছে, বিএনপি তো এটাকে সেনাবাহিনীর যুদ্ধ বানিয়ে দিয়েছে। তাই জনগণ চোখ, কান খুলে বসে আছে। তোমরা ইতিহাস নিয়ে ঝগড়া করো।
আজকের পত্রিকা: নতুন প্রজন্মের কাছে একাত্তরের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহটা কেমন?
আফসান চৌধুরী: আমি একাত্তরের ইতিহাস নিয়ে অধিকাংশ জনগণের কোনো আগ্রহ বা শ্রদ্ধাবোধ দেখতে পাই না। এর কারণটি হলো, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থের ঝগড়াঝাঁটি। আর এক ধারার বামদের কাজ হলো, শেখ মুজিবুর রহমান খারাপ, এটা প্রমাণ করা। তিনি খারাপ হতে পারেন, তাই তাঁর বিরোধিতা করতে হবে। এটাই হলো তাঁদের কাছে শ্রেষ্ঠ ইতিহাসচর্চার কাজ। তাঁরা বলতেও পারেন না শেখ মুজিব আর মওলানা ভাসানী কোন সময় রাজনৈতিক বিষয়ে একত্র হয়েছিলেন। তাই এখানে ইতিহাসের বিষয়টি দাঁড়িয়ে গেছে রাজনৈতিক ঝগড়া হিসেবে।
আজকের পত্রিকা: তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একাত্তরের ইতিহাসটা কীভাবে লেখা যেতে পারে? আপনার পরামর্শ কী?
আফসান চৌধুরী: আমার মনে হয়, ওই সুশীল ভদ্রলোকেরা যদি সরকারি ইতিহাস লেখেন, সেটা কেউই বিশ্বাস করবে না। আর বিরোধী দলের ইতিহাসও বিশ্বাস করবে না। কারণ, তারা তো ইতিহাস লিখবে না, শুধু বিরোধিতা করবে। এসব তাদের নিজেদের স্বার্থের বিষয়ের ঝগড়াঝাঁটি। তাই এসব নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাই না।তবে তথ্য সংগ্রহের দিকে জোর দিতে হবে। আমরা ২০১৮ সালে একটা কাজ করেছি, সেটা এখনো প্রকাশ হয়নি। কাজটা হলো, আমরা একটি জেলার প্রতিটি গ্রামের গণহত্যার ঘটনাগুলো জরিপ করেছি। আমি মনে করি, ওই কাজটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ওই কাজটাকে ভিত্তি করে আরও অনেক কাজ করা যেতে পারে। আমরা যে গ্রামগুলোকে নিয়ে প্রায় ৩৫ বছর ধরে গবেষণা করে যাচ্ছি, আমাদের দল প্রায় ১০ হাজার গ্রামে গেছে। ১০ হাজার গ্রামের তথ্য ও ভাবনা আমরা পেয়েছি।
তবে একটা বিষয় লক্ষ করেছি, আগের দিনের গ্রামের লোকেরা মিথ্যা কথা বলতেন না। কিন্তু এখন তাঁরা এ বিষয়ে সচেতন হয়ে গেছেন। কারণ, যে বিষয়টা বললে অসুবিধা হবে, সেটা তাঁরা বলেন না। এখন এই পরিসরটা কীভাবে একটা স্বাধীন দেশে নষ্ট হয়? নষ্ট হয়, এ কারণে তারা জেনে গেছেন, ইতিহাসটা হয়ে গেছে ক্ষমতাবানদের একটা অস্ত্র। পক্ষে বা বিপক্ষের লোক হন না কেন, তাঁরা এ কারণে চুপ করে থাকেন। এটাই হলো আমাদের সমস্যা। তাই ইতিহাসের সঙ্গে মানুষের যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে, সেটা সহজে যাবে না।
আজকের পত্রিকা: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আফসান চৌধুরী: আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

আজকের পত্রিকা: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলেন কোন দায় থেকে?
আফসান চৌধুরী: এটা তো দায়ের বিষয় নয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয়ে পড়েছি। আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য ছিল—ইতিহাসবিদ হওয়া। আমরা তো একাত্তরের প্রজন্ম। তাই আমাদের কাছে একাত্তরটি অন্য রকম ব্যাপার। আমার কাছে নিজের কথা বলাটাই একাত্তরের বিষয় হয়ে যায়। কিন্তু বিষয়টা সে রকম নয়। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ পরীক্ষা দেওয়ার পর তখনো রেজাল্ট বেরোয়নি। সেই সময় আমার একটা চাকরির খুব দরকার ছিল। তখন আমি চাকরি খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রকল্পের খবর পাই। সেখানে গিয়ে গবেষকের সহকারী হিসেবে একটা চাকরি হয়ে যায়। আমি প্রত্নতত্ত্ব ও প্রাচীন ভারতের ইতিহাস নিয়ে এমএ পাস করেছিলাম। আমার ওই বিষয়ে শিক্ষক হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল। তবে আমি শিক্ষক হতে পারিনি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রকল্পে যেহেতু গঠন পর্ব থেকে যুক্ত ছিলাম, সেহেতু একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপিত হলো। আমার পিএইচডি থিসিসের বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশ ধারণার ইতিহাস কত পুরানো’। ১৯৮২ সালে আমি পিএইচডি গবেষণা বন্ধ করে দিই। তখন আমার মনে হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের (তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি) অনেকের দোদুল্যমানতা আছে এবং দরজা খোলা-বন্ধের বিষয় আছে। এ কারণে তাঁদের সঙ্গে আমার মনের মিল হতো না। তাঁদের কাছে ইতিহাসচর্চা হলো শুধু শৌখিনতার বিষয়। আর ওপরতলার চোখ দিয়ে এবং পশ্চিমা দৃষ্টি দিয়ে ইতিহাস দেখার বিষয়টি আমার অপছন্দ ছিল। এর মধ্যে ১৯৮২-৮৩ সালের দিকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমার কাছে নেশার মতো হয়ে দাঁড়ায়। সেই থেকে আমার যাত্রা শুরু। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে গবেষণার সঙ্গে জড়িত হওয়ার কারণে আমার জীবনটা পাল্টে গেছে।
আজকের পত্রিকা: আপনি আপনার বিভিন্ন লেখায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসচর্চার সমস্যা ও ঘাটতির কথা বলেছেন। সমস্যাগুলো আসলে কী ধরনের?
আফসান চৌধুরী: আমার কাছে মনে হয়, একটা তথ্যের এবং অন্যটি হলো তত্ত্বের সমস্যা। সত্যি কথা হলো, আমরা সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করিনি। নিরপেক্ষভাবে এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি আমাদের দেশে কারও মধ্যেই ছিল না। সাধারণ মানুষের তথ্য খুবই কম। যেভাবে এসব তথ্য সংগ্রহ করতে হয়, যেমন সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তথ্য বের করে আনার বিষয়টি আমাদের দেশে দুর্বল। তথ্যের যে ভিত্তি থাকা দরকার, সেটাই আমাদের দুর্বল হয়ে আছে। এটা একটা বড় সমস্যা। সেই ঘাটতিটা মেটানো কতটা সম্ভব, সেটা আমি জানি না। কারণ, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের যাঁরা প্রত্যক্ষদর্শী, তাঁদের বেশির ভাগ লোক মারা গেছেন। আমার বয়স বর্তমানে ৭১ বছর চলছে। সে হিসাবে গ্রামের মানুষের যে গড় আয়ু, তাতে মুক্তিযুদ্ধের বেশির ভাগ সাক্ষী মারা গেছেন, বিশেষ করে যাঁরা বেঁচে আছেন, যাঁরা অবস্থাপন্ন, রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান ও ক্ষমতায় আছেন, প্রভাবশালী সাক্ষী এবং যাঁরা সেনাবাহিনীতে ছিলেন, তাঁরা তো সত্যি কথা বলেন না। তথ্যের যে ভান্ডারটা তৈরি করার দরকার ছিল, সেটা আমরা কেউ নজর দিয়ে তৈরি করিনি। তাই যাঁরা নিজের মতো করে যা কিছু লিখছেন, সেটাকে আমরা ইতিহাস বলতে পারি না। নিজের কথাকেই আমরা প্রমাণ করার চেষ্টা করি, এটা একটা বড় ঝামেলা। আপাতত এ থেকে আমরা মুক্তি পাচ্ছি না। তাই আগামী প্রজন্ম কী ধরনের ইতিহাস পাবে, এটা নিয়ে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। এ কারণে নতুন প্রজন্ম এই ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।
আর তত্ত্বের সমস্যাটি হলো জাতীয়তাবাদ। আগে ছিলাম মুসলমান আর এখন হয়েছি বাঙালি। জাতীয়তাবাদ হলো বাতিল হয়ে যাওয়া এবং পশ্চিমা একটা ধারণা। এটা কী কারণে এ দেশে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হলো, সেটা ভাবা যায় না। ঔপনিবেশিক সমাজে এ ধারণাটা জনপ্রিয় হতে পারে। আমাদের ইতিহাস হলো, দীর্ঘ সময়ের ইতিহাস।আর মুক্তিযুদ্ধকে ‘মহান’ করে দেখাটাও বড় সমস্যা। এটাও আমাদের সঠিকভাবে ইতিহাসচর্চার অন্তরায়। আর এ বিষয়গুলো যত দিন সুশীল ভদ্র লোকের হাতে থাকবে, তার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক যাঁরা জড়িত আছেন, তত দিন পর্যন্ত মোটামুটি বিশ্বাসযোগ্য, নিরপেক্ষ ইতিহাস রচনা অসম্ভব। তাই সাধারণ মানুষের নিজের ইতিহাসটা লেখা এবং অনুসন্ধান করা উচিত। প্রাতিষ্ঠানিক লোকজন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখার কাজটিকে দখল করে রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তো অপ্রাতিষ্ঠানিকতার ইতিহাস। আমাদের প্রধান ইতিহাসবিদেরা তো সমাজতত্ত্ব, রাজনৈতিক দর্শন, নৃ-বিজ্ঞানই পড়েননি। তাহলে তাঁরা কীভাবে সাধারণ মানুষের ইতিহাস লিখবেন!
আজকের পত্রিকা: এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং তাদের বুদ্ধিজীবীরা ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’কেই প্রতিষ্ঠিত করার কাজে ব্যতিব্যস্ত।
আফসান চৌধুরী: কথাটা তো এ রকম যে একটা জাতীয়তাবাদ থাকতে হবে। তাহলে আমরা পাকিস্তান আমলে কেন মুসলিম লীগ করেছি, আমরা যদি বাঙালি হয়ে থাকি তাহলে তো কংগ্রেস করার কথা ছিল। এসব কথা আমাদের বুদ্ধিজীবী ও ইতিহাসবিদেরা কেউই বলেন না। ১৯৪৭ সালে যখন যৌথ বা অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন হলো, তখন বাঙালিত্বই যদি আমাদের প্রধান পরিচয় হতো তাহলে কেন আমরা একটা রাষ্ট্র করতে পারলাম না। সেটা কি তারা জানে? বাংলা ভাগ বাস্তব হলো না কেন? কারণ জওহরলাল নেহরু বললেন, তোমরা এটা করতে পারবে না। তখন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বললেন, একটা স্বাধীন দেশ করা তো যায়। জাতীয়তাবাদের যুক্তিটা হলো যেকোনো উপায়ে রাষ্ট্র গঠন। যে যুক্তিতে রাষ্ট্র গঠন হয়, সেটাই যৌক্তিক। কারণ, ভারত ও পাকিস্তানে রাষ্ট্র গঠনের বিষয়টি একই ইতিহাস থেকে হয়নি। আর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রায় একই কথা বলে। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে দলীয়করণ করে ফেলেছে, বিএনপি তো এটাকে সেনাবাহিনীর যুদ্ধ বানিয়ে দিয়েছে। তাই জনগণ চোখ, কান খুলে বসে আছে। তোমরা ইতিহাস নিয়ে ঝগড়া করো।
আজকের পত্রিকা: নতুন প্রজন্মের কাছে একাত্তরের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহটা কেমন?
আফসান চৌধুরী: আমি একাত্তরের ইতিহাস নিয়ে অধিকাংশ জনগণের কোনো আগ্রহ বা শ্রদ্ধাবোধ দেখতে পাই না। এর কারণটি হলো, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থের ঝগড়াঝাঁটি। আর এক ধারার বামদের কাজ হলো, শেখ মুজিবুর রহমান খারাপ, এটা প্রমাণ করা। তিনি খারাপ হতে পারেন, তাই তাঁর বিরোধিতা করতে হবে। এটাই হলো তাঁদের কাছে শ্রেষ্ঠ ইতিহাসচর্চার কাজ। তাঁরা বলতেও পারেন না শেখ মুজিব আর মওলানা ভাসানী কোন সময় রাজনৈতিক বিষয়ে একত্র হয়েছিলেন। তাই এখানে ইতিহাসের বিষয়টি দাঁড়িয়ে গেছে রাজনৈতিক ঝগড়া হিসেবে।
আজকের পত্রিকা: তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একাত্তরের ইতিহাসটা কীভাবে লেখা যেতে পারে? আপনার পরামর্শ কী?
আফসান চৌধুরী: আমার মনে হয়, ওই সুশীল ভদ্রলোকেরা যদি সরকারি ইতিহাস লেখেন, সেটা কেউই বিশ্বাস করবে না। আর বিরোধী দলের ইতিহাসও বিশ্বাস করবে না। কারণ, তারা তো ইতিহাস লিখবে না, শুধু বিরোধিতা করবে। এসব তাদের নিজেদের স্বার্থের বিষয়ের ঝগড়াঝাঁটি। তাই এসব নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাই না।তবে তথ্য সংগ্রহের দিকে জোর দিতে হবে। আমরা ২০১৮ সালে একটা কাজ করেছি, সেটা এখনো প্রকাশ হয়নি। কাজটা হলো, আমরা একটি জেলার প্রতিটি গ্রামের গণহত্যার ঘটনাগুলো জরিপ করেছি। আমি মনে করি, ওই কাজটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ওই কাজটাকে ভিত্তি করে আরও অনেক কাজ করা যেতে পারে। আমরা যে গ্রামগুলোকে নিয়ে প্রায় ৩৫ বছর ধরে গবেষণা করে যাচ্ছি, আমাদের দল প্রায় ১০ হাজার গ্রামে গেছে। ১০ হাজার গ্রামের তথ্য ও ভাবনা আমরা পেয়েছি।
তবে একটা বিষয় লক্ষ করেছি, আগের দিনের গ্রামের লোকেরা মিথ্যা কথা বলতেন না। কিন্তু এখন তাঁরা এ বিষয়ে সচেতন হয়ে গেছেন। কারণ, যে বিষয়টা বললে অসুবিধা হবে, সেটা তাঁরা বলেন না। এখন এই পরিসরটা কীভাবে একটা স্বাধীন দেশে নষ্ট হয়? নষ্ট হয়, এ কারণে তারা জেনে গেছেন, ইতিহাসটা হয়ে গেছে ক্ষমতাবানদের একটা অস্ত্র। পক্ষে বা বিপক্ষের লোক হন না কেন, তাঁরা এ কারণে চুপ করে থাকেন। এটাই হলো আমাদের সমস্যা। তাই ইতিহাসের সঙ্গে মানুষের যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে, সেটা সহজে যাবে না।
আজকের পত্রিকা: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আফসান চৌধুরী: আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

আজকের পত্রিকা: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলেন কোন দায় থেকে?
আফসান চৌধুরী: এটা তো দায়ের বিষয় নয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয়ে পড়েছি। আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য ছিল—ইতিহাসবিদ হওয়া। আমরা তো একাত্তরের প্রজন্ম। তাই আমাদের কাছে একাত্তরটি অন্য রকম ব্যাপার। আমার কাছে নিজের কথা বলাটাই একাত্তরের বিষয় হয়ে যায়। কিন্তু বিষয়টা সে রকম নয়। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ পরীক্ষা দেওয়ার পর তখনো রেজাল্ট বেরোয়নি। সেই সময় আমার একটা চাকরির খুব দরকার ছিল। তখন আমি চাকরি খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রকল্পের খবর পাই। সেখানে গিয়ে গবেষকের সহকারী হিসেবে একটা চাকরি হয়ে যায়। আমি প্রত্নতত্ত্ব ও প্রাচীন ভারতের ইতিহাস নিয়ে এমএ পাস করেছিলাম। আমার ওই বিষয়ে শিক্ষক হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল। তবে আমি শিক্ষক হতে পারিনি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রকল্পে যেহেতু গঠন পর্ব থেকে যুক্ত ছিলাম, সেহেতু একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপিত হলো। আমার পিএইচডি থিসিসের বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশ ধারণার ইতিহাস কত পুরানো’। ১৯৮২ সালে আমি পিএইচডি গবেষণা বন্ধ করে দিই। তখন আমার মনে হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের (তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি) অনেকের দোদুল্যমানতা আছে এবং দরজা খোলা-বন্ধের বিষয় আছে। এ কারণে তাঁদের সঙ্গে আমার মনের মিল হতো না। তাঁদের কাছে ইতিহাসচর্চা হলো শুধু শৌখিনতার বিষয়। আর ওপরতলার চোখ দিয়ে এবং পশ্চিমা দৃষ্টি দিয়ে ইতিহাস দেখার বিষয়টি আমার অপছন্দ ছিল। এর মধ্যে ১৯৮২-৮৩ সালের দিকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমার কাছে নেশার মতো হয়ে দাঁড়ায়। সেই থেকে আমার যাত্রা শুরু। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে গবেষণার সঙ্গে জড়িত হওয়ার কারণে আমার জীবনটা পাল্টে গেছে।
আজকের পত্রিকা: আপনি আপনার বিভিন্ন লেখায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসচর্চার সমস্যা ও ঘাটতির কথা বলেছেন। সমস্যাগুলো আসলে কী ধরনের?
আফসান চৌধুরী: আমার কাছে মনে হয়, একটা তথ্যের এবং অন্যটি হলো তত্ত্বের সমস্যা। সত্যি কথা হলো, আমরা সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করিনি। নিরপেক্ষভাবে এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি আমাদের দেশে কারও মধ্যেই ছিল না। সাধারণ মানুষের তথ্য খুবই কম। যেভাবে এসব তথ্য সংগ্রহ করতে হয়, যেমন সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তথ্য বের করে আনার বিষয়টি আমাদের দেশে দুর্বল। তথ্যের যে ভিত্তি থাকা দরকার, সেটাই আমাদের দুর্বল হয়ে আছে। এটা একটা বড় সমস্যা। সেই ঘাটতিটা মেটানো কতটা সম্ভব, সেটা আমি জানি না। কারণ, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের যাঁরা প্রত্যক্ষদর্শী, তাঁদের বেশির ভাগ লোক মারা গেছেন। আমার বয়স বর্তমানে ৭১ বছর চলছে। সে হিসাবে গ্রামের মানুষের যে গড় আয়ু, তাতে মুক্তিযুদ্ধের বেশির ভাগ সাক্ষী মারা গেছেন, বিশেষ করে যাঁরা বেঁচে আছেন, যাঁরা অবস্থাপন্ন, রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান ও ক্ষমতায় আছেন, প্রভাবশালী সাক্ষী এবং যাঁরা সেনাবাহিনীতে ছিলেন, তাঁরা তো সত্যি কথা বলেন না। তথ্যের যে ভান্ডারটা তৈরি করার দরকার ছিল, সেটা আমরা কেউ নজর দিয়ে তৈরি করিনি। তাই যাঁরা নিজের মতো করে যা কিছু লিখছেন, সেটাকে আমরা ইতিহাস বলতে পারি না। নিজের কথাকেই আমরা প্রমাণ করার চেষ্টা করি, এটা একটা বড় ঝামেলা। আপাতত এ থেকে আমরা মুক্তি পাচ্ছি না। তাই আগামী প্রজন্ম কী ধরনের ইতিহাস পাবে, এটা নিয়ে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। এ কারণে নতুন প্রজন্ম এই ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।
আর তত্ত্বের সমস্যাটি হলো জাতীয়তাবাদ। আগে ছিলাম মুসলমান আর এখন হয়েছি বাঙালি। জাতীয়তাবাদ হলো বাতিল হয়ে যাওয়া এবং পশ্চিমা একটা ধারণা। এটা কী কারণে এ দেশে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হলো, সেটা ভাবা যায় না। ঔপনিবেশিক সমাজে এ ধারণাটা জনপ্রিয় হতে পারে। আমাদের ইতিহাস হলো, দীর্ঘ সময়ের ইতিহাস।আর মুক্তিযুদ্ধকে ‘মহান’ করে দেখাটাও বড় সমস্যা। এটাও আমাদের সঠিকভাবে ইতিহাসচর্চার অন্তরায়। আর এ বিষয়গুলো যত দিন সুশীল ভদ্র লোকের হাতে থাকবে, তার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক যাঁরা জড়িত আছেন, তত দিন পর্যন্ত মোটামুটি বিশ্বাসযোগ্য, নিরপেক্ষ ইতিহাস রচনা অসম্ভব। তাই সাধারণ মানুষের নিজের ইতিহাসটা লেখা এবং অনুসন্ধান করা উচিত। প্রাতিষ্ঠানিক লোকজন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখার কাজটিকে দখল করে রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তো অপ্রাতিষ্ঠানিকতার ইতিহাস। আমাদের প্রধান ইতিহাসবিদেরা তো সমাজতত্ত্ব, রাজনৈতিক দর্শন, নৃ-বিজ্ঞানই পড়েননি। তাহলে তাঁরা কীভাবে সাধারণ মানুষের ইতিহাস লিখবেন!
আজকের পত্রিকা: এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং তাদের বুদ্ধিজীবীরা ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’কেই প্রতিষ্ঠিত করার কাজে ব্যতিব্যস্ত।
আফসান চৌধুরী: কথাটা তো এ রকম যে একটা জাতীয়তাবাদ থাকতে হবে। তাহলে আমরা পাকিস্তান আমলে কেন মুসলিম লীগ করেছি, আমরা যদি বাঙালি হয়ে থাকি তাহলে তো কংগ্রেস করার কথা ছিল। এসব কথা আমাদের বুদ্ধিজীবী ও ইতিহাসবিদেরা কেউই বলেন না। ১৯৪৭ সালে যখন যৌথ বা অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন হলো, তখন বাঙালিত্বই যদি আমাদের প্রধান পরিচয় হতো তাহলে কেন আমরা একটা রাষ্ট্র করতে পারলাম না। সেটা কি তারা জানে? বাংলা ভাগ বাস্তব হলো না কেন? কারণ জওহরলাল নেহরু বললেন, তোমরা এটা করতে পারবে না। তখন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বললেন, একটা স্বাধীন দেশ করা তো যায়। জাতীয়তাবাদের যুক্তিটা হলো যেকোনো উপায়ে রাষ্ট্র গঠন। যে যুক্তিতে রাষ্ট্র গঠন হয়, সেটাই যৌক্তিক। কারণ, ভারত ও পাকিস্তানে রাষ্ট্র গঠনের বিষয়টি একই ইতিহাস থেকে হয়নি। আর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রায় একই কথা বলে। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে দলীয়করণ করে ফেলেছে, বিএনপি তো এটাকে সেনাবাহিনীর যুদ্ধ বানিয়ে দিয়েছে। তাই জনগণ চোখ, কান খুলে বসে আছে। তোমরা ইতিহাস নিয়ে ঝগড়া করো।
আজকের পত্রিকা: নতুন প্রজন্মের কাছে একাত্তরের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহটা কেমন?
আফসান চৌধুরী: আমি একাত্তরের ইতিহাস নিয়ে অধিকাংশ জনগণের কোনো আগ্রহ বা শ্রদ্ধাবোধ দেখতে পাই না। এর কারণটি হলো, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থের ঝগড়াঝাঁটি। আর এক ধারার বামদের কাজ হলো, শেখ মুজিবুর রহমান খারাপ, এটা প্রমাণ করা। তিনি খারাপ হতে পারেন, তাই তাঁর বিরোধিতা করতে হবে। এটাই হলো তাঁদের কাছে শ্রেষ্ঠ ইতিহাসচর্চার কাজ। তাঁরা বলতেও পারেন না শেখ মুজিব আর মওলানা ভাসানী কোন সময় রাজনৈতিক বিষয়ে একত্র হয়েছিলেন। তাই এখানে ইতিহাসের বিষয়টি দাঁড়িয়ে গেছে রাজনৈতিক ঝগড়া হিসেবে।
আজকের পত্রিকা: তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একাত্তরের ইতিহাসটা কীভাবে লেখা যেতে পারে? আপনার পরামর্শ কী?
আফসান চৌধুরী: আমার মনে হয়, ওই সুশীল ভদ্রলোকেরা যদি সরকারি ইতিহাস লেখেন, সেটা কেউই বিশ্বাস করবে না। আর বিরোধী দলের ইতিহাসও বিশ্বাস করবে না। কারণ, তারা তো ইতিহাস লিখবে না, শুধু বিরোধিতা করবে। এসব তাদের নিজেদের স্বার্থের বিষয়ের ঝগড়াঝাঁটি। তাই এসব নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাই না।তবে তথ্য সংগ্রহের দিকে জোর দিতে হবে। আমরা ২০১৮ সালে একটা কাজ করেছি, সেটা এখনো প্রকাশ হয়নি। কাজটা হলো, আমরা একটি জেলার প্রতিটি গ্রামের গণহত্যার ঘটনাগুলো জরিপ করেছি। আমি মনে করি, ওই কাজটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ওই কাজটাকে ভিত্তি করে আরও অনেক কাজ করা যেতে পারে। আমরা যে গ্রামগুলোকে নিয়ে প্রায় ৩৫ বছর ধরে গবেষণা করে যাচ্ছি, আমাদের দল প্রায় ১০ হাজার গ্রামে গেছে। ১০ হাজার গ্রামের তথ্য ও ভাবনা আমরা পেয়েছি।
তবে একটা বিষয় লক্ষ করেছি, আগের দিনের গ্রামের লোকেরা মিথ্যা কথা বলতেন না। কিন্তু এখন তাঁরা এ বিষয়ে সচেতন হয়ে গেছেন। কারণ, যে বিষয়টা বললে অসুবিধা হবে, সেটা তাঁরা বলেন না। এখন এই পরিসরটা কীভাবে একটা স্বাধীন দেশে নষ্ট হয়? নষ্ট হয়, এ কারণে তারা জেনে গেছেন, ইতিহাসটা হয়ে গেছে ক্ষমতাবানদের একটা অস্ত্র। পক্ষে বা বিপক্ষের লোক হন না কেন, তাঁরা এ কারণে চুপ করে থাকেন। এটাই হলো আমাদের সমস্যা। তাই ইতিহাসের সঙ্গে মানুষের যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে, সেটা সহজে যাবে না।
আজকের পত্রিকা: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আফসান চৌধুরী: আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

আজকের পত্রিকা: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলেন কোন দায় থেকে?
আফসান চৌধুরী: এটা তো দায়ের বিষয় নয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয়ে পড়েছি। আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য ছিল—ইতিহাসবিদ হওয়া। আমরা তো একাত্তরের প্রজন্ম। তাই আমাদের কাছে একাত্তরটি অন্য রকম ব্যাপার। আমার কাছে নিজের কথা বলাটাই একাত্তরের বিষয় হয়ে যায়। কিন্তু বিষয়টা সে রকম নয়। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ পরীক্ষা দেওয়ার পর তখনো রেজাল্ট বেরোয়নি। সেই সময় আমার একটা চাকরির খুব দরকার ছিল। তখন আমি চাকরি খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রকল্পের খবর পাই। সেখানে গিয়ে গবেষকের সহকারী হিসেবে একটা চাকরি হয়ে যায়। আমি প্রত্নতত্ত্ব ও প্রাচীন ভারতের ইতিহাস নিয়ে এমএ পাস করেছিলাম। আমার ওই বিষয়ে শিক্ষক হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল। তবে আমি শিক্ষক হতে পারিনি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রকল্পে যেহেতু গঠন পর্ব থেকে যুক্ত ছিলাম, সেহেতু একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপিত হলো। আমার পিএইচডি থিসিসের বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশ ধারণার ইতিহাস কত পুরানো’। ১৯৮২ সালে আমি পিএইচডি গবেষণা বন্ধ করে দিই। তখন আমার মনে হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের (তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি) অনেকের দোদুল্যমানতা আছে এবং দরজা খোলা-বন্ধের বিষয় আছে। এ কারণে তাঁদের সঙ্গে আমার মনের মিল হতো না। তাঁদের কাছে ইতিহাসচর্চা হলো শুধু শৌখিনতার বিষয়। আর ওপরতলার চোখ দিয়ে এবং পশ্চিমা দৃষ্টি দিয়ে ইতিহাস দেখার বিষয়টি আমার অপছন্দ ছিল। এর মধ্যে ১৯৮২-৮৩ সালের দিকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমার কাছে নেশার মতো হয়ে দাঁড়ায়। সেই থেকে আমার যাত্রা শুরু। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে গবেষণার সঙ্গে জড়িত হওয়ার কারণে আমার জীবনটা পাল্টে গেছে।
আজকের পত্রিকা: আপনি আপনার বিভিন্ন লেখায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসচর্চার সমস্যা ও ঘাটতির কথা বলেছেন। সমস্যাগুলো আসলে কী ধরনের?
আফসান চৌধুরী: আমার কাছে মনে হয়, একটা তথ্যের এবং অন্যটি হলো তত্ত্বের সমস্যা। সত্যি কথা হলো, আমরা সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করিনি। নিরপেক্ষভাবে এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি আমাদের দেশে কারও মধ্যেই ছিল না। সাধারণ মানুষের তথ্য খুবই কম। যেভাবে এসব তথ্য সংগ্রহ করতে হয়, যেমন সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তথ্য বের করে আনার বিষয়টি আমাদের দেশে দুর্বল। তথ্যের যে ভিত্তি থাকা দরকার, সেটাই আমাদের দুর্বল হয়ে আছে। এটা একটা বড় সমস্যা। সেই ঘাটতিটা মেটানো কতটা সম্ভব, সেটা আমি জানি না। কারণ, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের যাঁরা প্রত্যক্ষদর্শী, তাঁদের বেশির ভাগ লোক মারা গেছেন। আমার বয়স বর্তমানে ৭১ বছর চলছে। সে হিসাবে গ্রামের মানুষের যে গড় আয়ু, তাতে মুক্তিযুদ্ধের বেশির ভাগ সাক্ষী মারা গেছেন, বিশেষ করে যাঁরা বেঁচে আছেন, যাঁরা অবস্থাপন্ন, রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান ও ক্ষমতায় আছেন, প্রভাবশালী সাক্ষী এবং যাঁরা সেনাবাহিনীতে ছিলেন, তাঁরা তো সত্যি কথা বলেন না। তথ্যের যে ভান্ডারটা তৈরি করার দরকার ছিল, সেটা আমরা কেউ নজর দিয়ে তৈরি করিনি। তাই যাঁরা নিজের মতো করে যা কিছু লিখছেন, সেটাকে আমরা ইতিহাস বলতে পারি না। নিজের কথাকেই আমরা প্রমাণ করার চেষ্টা করি, এটা একটা বড় ঝামেলা। আপাতত এ থেকে আমরা মুক্তি পাচ্ছি না। তাই আগামী প্রজন্ম কী ধরনের ইতিহাস পাবে, এটা নিয়ে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। এ কারণে নতুন প্রজন্ম এই ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।
আর তত্ত্বের সমস্যাটি হলো জাতীয়তাবাদ। আগে ছিলাম মুসলমান আর এখন হয়েছি বাঙালি। জাতীয়তাবাদ হলো বাতিল হয়ে যাওয়া এবং পশ্চিমা একটা ধারণা। এটা কী কারণে এ দেশে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হলো, সেটা ভাবা যায় না। ঔপনিবেশিক সমাজে এ ধারণাটা জনপ্রিয় হতে পারে। আমাদের ইতিহাস হলো, দীর্ঘ সময়ের ইতিহাস।আর মুক্তিযুদ্ধকে ‘মহান’ করে দেখাটাও বড় সমস্যা। এটাও আমাদের সঠিকভাবে ইতিহাসচর্চার অন্তরায়। আর এ বিষয়গুলো যত দিন সুশীল ভদ্র লোকের হাতে থাকবে, তার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক যাঁরা জড়িত আছেন, তত দিন পর্যন্ত মোটামুটি বিশ্বাসযোগ্য, নিরপেক্ষ ইতিহাস রচনা অসম্ভব। তাই সাধারণ মানুষের নিজের ইতিহাসটা লেখা এবং অনুসন্ধান করা উচিত। প্রাতিষ্ঠানিক লোকজন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখার কাজটিকে দখল করে রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তো অপ্রাতিষ্ঠানিকতার ইতিহাস। আমাদের প্রধান ইতিহাসবিদেরা তো সমাজতত্ত্ব, রাজনৈতিক দর্শন, নৃ-বিজ্ঞানই পড়েননি। তাহলে তাঁরা কীভাবে সাধারণ মানুষের ইতিহাস লিখবেন!
আজকের পত্রিকা: এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং তাদের বুদ্ধিজীবীরা ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’কেই প্রতিষ্ঠিত করার কাজে ব্যতিব্যস্ত।
আফসান চৌধুরী: কথাটা তো এ রকম যে একটা জাতীয়তাবাদ থাকতে হবে। তাহলে আমরা পাকিস্তান আমলে কেন মুসলিম লীগ করেছি, আমরা যদি বাঙালি হয়ে থাকি তাহলে তো কংগ্রেস করার কথা ছিল। এসব কথা আমাদের বুদ্ধিজীবী ও ইতিহাসবিদেরা কেউই বলেন না। ১৯৪৭ সালে যখন যৌথ বা অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন হলো, তখন বাঙালিত্বই যদি আমাদের প্রধান পরিচয় হতো তাহলে কেন আমরা একটা রাষ্ট্র করতে পারলাম না। সেটা কি তারা জানে? বাংলা ভাগ বাস্তব হলো না কেন? কারণ জওহরলাল নেহরু বললেন, তোমরা এটা করতে পারবে না। তখন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বললেন, একটা স্বাধীন দেশ করা তো যায়। জাতীয়তাবাদের যুক্তিটা হলো যেকোনো উপায়ে রাষ্ট্র গঠন। যে যুক্তিতে রাষ্ট্র গঠন হয়, সেটাই যৌক্তিক। কারণ, ভারত ও পাকিস্তানে রাষ্ট্র গঠনের বিষয়টি একই ইতিহাস থেকে হয়নি। আর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রায় একই কথা বলে। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে দলীয়করণ করে ফেলেছে, বিএনপি তো এটাকে সেনাবাহিনীর যুদ্ধ বানিয়ে দিয়েছে। তাই জনগণ চোখ, কান খুলে বসে আছে। তোমরা ইতিহাস নিয়ে ঝগড়া করো।
আজকের পত্রিকা: নতুন প্রজন্মের কাছে একাত্তরের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহটা কেমন?
আফসান চৌধুরী: আমি একাত্তরের ইতিহাস নিয়ে অধিকাংশ জনগণের কোনো আগ্রহ বা শ্রদ্ধাবোধ দেখতে পাই না। এর কারণটি হলো, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থের ঝগড়াঝাঁটি। আর এক ধারার বামদের কাজ হলো, শেখ মুজিবুর রহমান খারাপ, এটা প্রমাণ করা। তিনি খারাপ হতে পারেন, তাই তাঁর বিরোধিতা করতে হবে। এটাই হলো তাঁদের কাছে শ্রেষ্ঠ ইতিহাসচর্চার কাজ। তাঁরা বলতেও পারেন না শেখ মুজিব আর মওলানা ভাসানী কোন সময় রাজনৈতিক বিষয়ে একত্র হয়েছিলেন। তাই এখানে ইতিহাসের বিষয়টি দাঁড়িয়ে গেছে রাজনৈতিক ঝগড়া হিসেবে।
আজকের পত্রিকা: তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একাত্তরের ইতিহাসটা কীভাবে লেখা যেতে পারে? আপনার পরামর্শ কী?
আফসান চৌধুরী: আমার মনে হয়, ওই সুশীল ভদ্রলোকেরা যদি সরকারি ইতিহাস লেখেন, সেটা কেউই বিশ্বাস করবে না। আর বিরোধী দলের ইতিহাসও বিশ্বাস করবে না। কারণ, তারা তো ইতিহাস লিখবে না, শুধু বিরোধিতা করবে। এসব তাদের নিজেদের স্বার্থের বিষয়ের ঝগড়াঝাঁটি। তাই এসব নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাই না।তবে তথ্য সংগ্রহের দিকে জোর দিতে হবে। আমরা ২০১৮ সালে একটা কাজ করেছি, সেটা এখনো প্রকাশ হয়নি। কাজটা হলো, আমরা একটি জেলার প্রতিটি গ্রামের গণহত্যার ঘটনাগুলো জরিপ করেছি। আমি মনে করি, ওই কাজটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ওই কাজটাকে ভিত্তি করে আরও অনেক কাজ করা যেতে পারে। আমরা যে গ্রামগুলোকে নিয়ে প্রায় ৩৫ বছর ধরে গবেষণা করে যাচ্ছি, আমাদের দল প্রায় ১০ হাজার গ্রামে গেছে। ১০ হাজার গ্রামের তথ্য ও ভাবনা আমরা পেয়েছি।
তবে একটা বিষয় লক্ষ করেছি, আগের দিনের গ্রামের লোকেরা মিথ্যা কথা বলতেন না। কিন্তু এখন তাঁরা এ বিষয়ে সচেতন হয়ে গেছেন। কারণ, যে বিষয়টা বললে অসুবিধা হবে, সেটা তাঁরা বলেন না। এখন এই পরিসরটা কীভাবে একটা স্বাধীন দেশে নষ্ট হয়? নষ্ট হয়, এ কারণে তারা জেনে গেছেন, ইতিহাসটা হয়ে গেছে ক্ষমতাবানদের একটা অস্ত্র। পক্ষে বা বিপক্ষের লোক হন না কেন, তাঁরা এ কারণে চুপ করে থাকেন। এটাই হলো আমাদের সমস্যা। তাই ইতিহাসের সঙ্গে মানুষের যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে, সেটা সহজে যাবে না।
আজকের পত্রিকা: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আফসান চৌধুরী: আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

এটা তো দায়ের বিষয় নয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয়ে পড়েছি। আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য ছিল—ইতিহাসবিদ হওয়া। আমরা তো একাত্তরের প্রজন্ম। তাই আমাদের কাছে একাত্তরটি অন্য রকম ব্যাপার। আমার কাছে নিজের কথা বলাটাই একাত্তরের বিষয় হয়ে যায়। কিন্তু বিষয়টা সে রকম নয়। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ পরীক্ষা দেওয়ার পর
১৯ মার্চ ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

এটা তো দায়ের বিষয় নয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয়ে পড়েছি। আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য ছিল—ইতিহাসবিদ হওয়া। আমরা তো একাত্তরের প্রজন্ম। তাই আমাদের কাছে একাত্তরটি অন্য রকম ব্যাপার। আমার কাছে নিজের কথা বলাটাই একাত্তরের বিষয় হয়ে যায়। কিন্তু বিষয়টা সে রকম নয়। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ পরীক্ষা দেওয়ার পর
১৯ মার্চ ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

এটা তো দায়ের বিষয় নয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয়ে পড়েছি। আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য ছিল—ইতিহাসবিদ হওয়া। আমরা তো একাত্তরের প্রজন্ম। তাই আমাদের কাছে একাত্তরটি অন্য রকম ব্যাপার। আমার কাছে নিজের কথা বলাটাই একাত্তরের বিষয় হয়ে যায়। কিন্তু বিষয়টা সে রকম নয়। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ পরীক্ষা দেওয়ার পর
১৯ মার্চ ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

এটা তো দায়ের বিষয় নয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয়ে পড়েছি। আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য ছিল—ইতিহাসবিদ হওয়া। আমরা তো একাত্তরের প্রজন্ম। তাই আমাদের কাছে একাত্তরটি অন্য রকম ব্যাপার। আমার কাছে নিজের কথা বলাটাই একাত্তরের বিষয় হয়ে যায়। কিন্তু বিষয়টা সে রকম নয়। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ পরীক্ষা দেওয়ার পর
১৯ মার্চ ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫