Ajker Patrika

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির চার বইয়ে ১৮৮ ভুল, ৫৮টি অসংগতি

রাহুল শর্মা, ঢাকা
ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির চার বইয়ে ১৮৮ ভুল, ৫৮টি অসংগতি

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে চলতি বছরের সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৭০ পৃষ্ঠায় তাঁর নাম লেখা হয়েছে শুধু ‘তাজউদ্দিন’। প্রথমত, আহমদ লেখা হয়নি। আবার ‘তাজউদ্দিন’ বানান লিখেছে ‘হ্রস্ব ই-কার’ দিয়ে। একই বইয়ের ৬২ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধের দেশি ও বিদেশী বন্ধুরা’। আসলে হবে ‘মুক্তিযুদ্ধের বিদেশী বন্ধুরা’। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির চার বইয়ের এমন ১৮৮টি ভুল সংশোধনের সুপারিশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি।

এর বাইরেও কমিটি বইগুলোতে ‘অভিশপ্ত চাঁদ’, ‘পড়ো নি’, ‘মুখে গোঁফদাঁড়ির জঙ্গল’—এমন ৫৮টি অসংগতি খুঁজে পেয়েছে। সংশোধনের জন্য চাঁদকে অভিশপ্ত না বলে, ‘চাঁদের গল্প’, ‘পড়ো নি’ দুই শব্দে না লিখে একসঙ্গে ‘পড়োনি’ এবং গোঁফদাঁড়ি থেকে ‘জঙ্গল’ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

চলতি বছর প্রথম, ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান শুরু হয়। পরীক্ষামূলকভাবে এসব শ্রেণিতে প্রণয়ন করা হয় পাঠ্যবই। ক্লাস শুরুর পর বইগুলোর নানা ভুল ও অসংগতি নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক ও সমালোচনা। একপর্যায়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি প্রত্যাহার করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এ ছাড়া এই দুই শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলন পাঠ’ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ এবং বিজ্ঞানের ‘অনুশীলন’ বইয়ের কিছু অধ্যায় সংশোধনের কথা জানানো হয়। পরে এই দুই শ্রেণির সব বইয়ের ভুল-অসংগতিগুলোর সংশোধনী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এনসিটিবি।

গত ৩১ জানুয়ারি পাঠ্যবইয়ের ভুল-ত্রুটি সংশোধনের জন্য সাত সদস্যবিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ কমিটি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল হালিমকে। সম্প্রতি এই কমিটি চারটি বইয়ের ভুল ও সংশোধনীগুলো নিয়ে একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এর একটি কপি আজকের পত্রিকা পেয়েছে।

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে আছে ১০টি অসংগতি ও ২৫টি ভুল, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ৪টি অসংগতি ও ৫০টি ভুল এবং ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ে ৩৫টি অসংগতি ও ৯০টি ভুল রয়েছে। একই শ্রেণির ‘বিজ্ঞান অনুশীলন পাঠ’ বইয়ে ৯টি অসংগতি ও ২৩ ভুল চিহ্নিত করা হয়েছে। ভুলগুলোর মধ্যে বানান ভুলের পরিমাণই বেশি। এর মধ্যে কোনো কোনো শব্দের বানান একাধিকবার ভুল করা হয়েছে।

এনসিটিবি থেকে জানা যায়, এবার পাঁচটি পদ্ধতিতে বইগুলোর ভুল-ত্রুটি ও অসংগতি বের করা হয়েছে। ঈদের ছুটির পর স্কুল খোলার আগেই সংশোধনীগুলো শিক্ষা অধিদপ্তরগুলোর মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে পাঠানো হবে। পরে শ্রেণিশিক্ষকেরা শিক্ষার্থীর পাঠ্যপুস্তকে এই ভুল ও অসংগতিগুলোর সংশোধন নিশ্চিত করবেন।

জানতে চাইলে এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. মশিউজ্জামান বলেন, চলতি বছর পাঠ্যপুস্তকে যেসব ভুল-ত্রুটি সংশোধন করা প্রয়োজন, তার একটি তালিকা মাধ্যমিক ও উচ্চ

মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে পাঠানো হবে। প্রতিষ্ঠানপ্রধানেরা ঈদের পর পাঠদান শুরু হলেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শ্রেণিশিক্ষকের মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পাঠ্যপুস্তকে ভুল-ত্রুটিগুলোর সংশোধন নিশ্চিত করবেন। আর আগামী বছর তা পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক হিসেবে বিতরণ করা হবে।

অধ্যাপক মশিউজ্জামান আরও বলেন, বিশেষজ্ঞ কমিটি এখন পর্যন্ত চারটি বইয়ের বিষয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সব বইয়ের সংশোধনী ধাপে ধাপে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত