মযহারুল ইসলাম বাবলা

আমাদের দেশে জ্ঞানী-পণ্ডিতের সংখ্যা নিতান্ত স্বল্প না হলেও, সমাজে জ্ঞানীর পাশাপাশি বিবেকবান, নীতিনিষ্ঠ পণ্ডিতজনের বড়ই অভাব। হাতে গোনা যে দু-চারজন আছেন, তাঁদেরই একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় আহমদ রফিক। যিনি আমাদের ক্ষমতার রাজনীতির কেনা-বেচার হাটে পার্থিব লোভ-লালসায় নিজেকে কখনো বিকিয়ে দেননি।
বিপরীতে আমাদের শাসকগোষ্ঠীর অগণতান্ত্রিক-স্বেচ্ছাচারী এবং ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বরাবর সোচ্চার থেকেছেন। জনগণের কাতারে এসে শামিল হয়েছেন প্রতিবাদে। আহমদ রফিক—যিনি কারও রফিক স্যার, কারও রফিক ভাই; যাঁকে আমরা জাতীয় নানা দুঃসময়ে কাছে পাই। যিনি মতাদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অটল থাকতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করেন।
তখন দেশভাগের অন্তিম সময়। দেশভাগ ও বাংলাভাগ প্রায় চূড়ান্ত। বাংলাভাগে উত্তাল পূর্ব বাংলার সব অঞ্চল-জনপদ। গ্রামের যুবকেরা পাকিস্তান রাষ্ট্রের পক্ষে মিছিল, সভা-সমাবেশ করে মুসলমানের পৃথক রাষ্ট্রের যৌক্তিকতা তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছেন।
স্লোগানে-স্লোগানে মুখর ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আনন্দ-উল্লাস ধ্বনি চারদিকে। তখন যুবক আহমদ রফিককে দেশভাগ-পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা মোটেও উদ্বুদ্ধ করতে পারেনি। সেই জনস্রোতের ভাবনার বিপরীত ভাবনাই তাঁকে ঘিরে ধরেছিল। সেই ভাবনার কেন্দ্রে ছিল মর্মান্তিক বাংলাভাগের অশুভ পরিণতির উপলব্ধি। দেশভাগে উচ্ছেদ, বিচ্ছেদ এবং উৎপাটনের শঙ্কায় তিনি উদ্বিগ্ন। পরিণতি আঁচ করতে পেরে শঙ্কিত। তিনি দেশভাগের উন্মাদনার কালেই দেশভাগ মেনে নিতে পারেননি। ভবিষ্যৎদ্রষ্টার মতো তাঁর সেই চেতনা কতটা বাস্তবসম্মত ছিল, বাস্তবে সেটা ক্রমেই প্রকাশ পেয়েছে। পরিণত বয়সে তিনি নানা মাত্রার গবেষণার ফাঁকে লিখেছেন অসামান্য গ্রন্থ ‘দেশবিভাগ: ফিরে দেখা’। তাঁর চিন্তার অগ্রসরতা নানাভাবে, নানা ক্ষেত্রে প্রকাশ পেয়েছে। সনাতনী ধ্যানধারণার বিপরীতে তাঁর জনমুক্তির ভাবনা একইভাবে আমরা দেখে আসছি।
রফিক ভাই ছাত্র হিসেবে ছিলেন খুবই মেধাবী। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সংগত কারণে পরিবারের ইচ্ছায় তাঁকে ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হতে হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র আহমদ রফিক জড়িয়ে পড়েন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে। ভাষা আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিরূপে তিনি মেডিকেল কলেজের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত ও নেতৃত্বে ছিলেন এবং ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ যুক্ততার কারণে ভাষা মতিনকে বন্দী করা হয় এবং মেডিকেল কলেজের ছাত্র আহমদ রফিকের ওপর হুলিয়া জারি হলে বাধ্য হয়ে তাঁকে আত্মগোপনে যেতে হয়। প্রায় দুই বছর ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পুলিশি নজর এড়িয়ে গোপনে বসবাস করেন। সেই সময়ে চরম আর্থিক অনটনে খেয়ে-না খেয়ে জীবন কাটাতে হয়েছে। যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেও ছাত্রত্ব ফিরে পাননি। ওদিকে পরিবারের মেধাবী ছেলেটি আর ডাক্তার হতে পারল না—এমন শঙ্কায় পরিবারটির মধ্যেও তীব্র হতাশা নেমে আসে। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে হুলিয়া প্রত্যাহারের পর আবার তিনি মেডিকেল কলেজের ছাত্রত্ব ফিরে পান এবং ইচ্ছাশক্তির কঠিন দৃঢ়তায় এমবিবিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। লক্ষ্য বাস্তবায়নে তাঁর একরোখা একাগ্রতাই এতে প্রমাণ করেছে।
ডাক্তার হয়েও ডাক্তারি পেশায় তিনি যুক্ত হননি। করেননি সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগের চাকরি এবং প্রাইভেট প্র্যাকটিস। ওষুধশিল্পের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। পরে কজন মিলে ওষুধশিল্পও গড়ে তোলেন। কিন্তু সেখানে অংশীদারদের সঙ্গে নীতিগত বিরোধের কারণে শূন্য হাতে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন।
সম্পূর্ণ ভিন্নতর পেশায় থেকেও তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতি, গবেষণা এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন থাকেননি। নাগরিক নামের পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন অনেককাল। ভাষা আন্দোলন নিয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং নানামুখী গবেষণামূলক রচনা লিখেছেন। লিখেছেন অসংখ্য প্রবন্ধ-গবেষণা গ্রন্থ। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তাঁর গবেষণা গ্রন্থগুলো কেবল দেশে নয়, ভারতেও সমান জনপ্রিয়।
ভারতের টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাঁকে রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য উপাধি দিয়েছে। বাংলা একাডেমির উদ্যোগে রবীন্দ্রজীবনীর একটি খণ্ড তিনি লিখেছেন। লেখক-গবেষক হিসেবে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, রাষ্ট্রীয় একুশে পদকসহ অসংখ্য পদক-সম্মাননা তিনি পেয়েছেন।
কিশোর বয়সেই তাঁর চিন্তা-মনন ও দৃষ্টিভঙ্গির উজ্জ্বল চেতনা গড়ে উঠেছিল। সমাজের ধনবৈষম্য, শ্রেণি বিভক্তি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অনাচার এসব দেখে তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন বটে, তবে হতাশাগ্রস্ত হননি; বরং অনাচারী-ব্যবস্থা থেকে মুক্তির উপায়টি তিনি সঠিকভাবে বুঝতে পেরে ক্রমেই মার্ক্সবাদী হয়ে ওঠেন। যোগ দেন কমিউনিস্ট পার্টিতে। পার্টির সদস্যপদও লাভ করেন। কিন্তু অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির ওপর ক্রুশ্চেভের সংশোধনবাদী সোভিয়েত ইউনিয়নের মাত্রাতিরিক্ত খবরদারি-হস্তক্ষেপ তিনি মেনে নিতে পারেননি। আমাদের পরিপ্রেক্ষিতকে এড়িয়ে আন্দোলনে সোভিয়েত নির্দেশ পালনে এবং কমিউনিস্ট পার্টির স্বাতন্ত্র্য ক্রমাগত ক্ষুণ্ন হওয়ার কারণে তিনি পার্টি ত্যাগে বাধ্য হন। তবে পার্টি ত্যাগ করলেও বিলোপবাদী হননি। আজীবন মার্ক্সীয় মতাদর্শকে বহন করে চলেছেন। যার প্রকাশ ঘটেছে তাঁর লেখায় এবং বহুবিধ কর্মকাণ্ডে।
কর্মজীবনের ব্যস্ততা-সীমাবদ্ধতা এমনকি পারিবারিক সীমা পর্যন্ত অতিক্রম করে তিনি মার্ক্সবাদী চেতনায় অবিচল থাকার দৃষ্টান্ত রেখে এসেছেন। নিয়মিত গবেষণা ও জ্ঞান বিতরণে আমাদের ঋদ্ধ করে যাচ্ছেন। তাঁর জ্ঞান বিতরণের মাধ্যম হচ্ছে লেখালেখি, যেটি এখনো অবিরাম সচল রেখেছেন। সময় অপচয় না করে প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগিয়ে নিজে যেমন আলোকিত হয়েছেন, তেমনি সেই আলো ছড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছেন সমাজে। এমন অসামান্য মানুষ আমাদের সমাজে সত্যিই বিরল।
তরুণদের প্রতি তাঁর যেমন ভালোবাসা, তেমনি আকর্ষণও। তরুণদের প্রতিই সর্বাধিক আস্থা-ভরসা রাখেন। তরুণেরাই সমষ্টিগত মুক্তির অধরাকে ধরায় পরিণত করতে পারবে বলে তিনি মনে করেন। তরুণদের সঙ্গে তাঁর নৈকট্য সর্বাধিক। সময় সচেতনতায় অসামান্য দৃষ্টান্ত রফিক ভাই। ঘড়ির কাঁটা ধরে চলেন। সময়জ্ঞানের শিক্ষাটা তরুণদের দিতে ভোলেন না। ব্যতিক্রম হলে কাউকে ছাড়ও তিনি দেন না। রফিক ভাইয়ের সঙ্গে সময় নিয়ে আমরা বরাবরই শঙ্কায় থাকি। সময়ের হেরফেরে স্নেহপূর্ণ তিরস্কার শুনতে হয়।
রফিক ভাই কোনো মার্ক্সবাদী দলভুক্ত না হয়েও আজীবন মার্ক্সবাদী চর্চার মধ্যেই জীবন কাটিয়ে এসেছেন।তিনি অত্যন্ত সহজ-সরল একজন মানুষ। যেমন মানবিক, তেমনি স্নেহপ্রবণ। তাঁর অতিসাধারণ জীবনযাপন আমাদের জন্য অনুকরণীয়। পার্থিব লোভ-লালসা, অর্থবিত্তের মোহ তাঁকে কখনো পথভ্রষ্ট-আদর্শচ্যুত করতে পারেনি। প্রায় আড়াই যুগ আগে স্ত্রী মারা গেছেন। নিঃসন্তান রফিক ভাইকে আগলে রেখেছেন দুজন নারী-পুরুষ। তাঁরাই তাঁকে দেখভাল করেন। স্ত্রীর জীবদ্দশা থেকে তাঁরা দুজন তাঁদের পরিবারে যুক্ত হয়ে আছেন।ওই দুজনকে নিয়েই রফিক ভাই নিউ ইস্কাটনের ভাড়াবাসায় একটি সমতার পরিবারে বসবাস করছেন।
কিশোর বয়স থেকেই রফিক ভাই অত্যন্ত নিয়মানুবর্তিতায় জীবনযাপন করে এসেছেন। খাদ্যাভ্যাস থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে খুবই পরিমিত তাঁর জীবনাচার। পরিণত বয়সেও তারুণ্যে ভাটা পড়েনি। বার্ধক্যজনিত রোগ-ভোগ পোহাতে হয়। কিন্তু এতে তাঁর কর্মস্পৃহা কখনো থেমে থাকেনি। নিয়মিত লিখছেন, পড়ছেন, করছেন গবেষণা। জাতীয় ক্রান্তিলগ্নে প্রতিবাদীদের সমর্থন দিয়ে প্রতিবাদে শামিল হচ্ছেন।
আমাদের সবার অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রিয় রফিক ভাই আজ ১২ সেপ্টেম্বর ৯৫ বছরে পা রাখছেন। তাঁর জন্মদিনে জানাই প্রণতি ও শ্রদ্ধাঞ্জলি।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত

আমাদের দেশে জ্ঞানী-পণ্ডিতের সংখ্যা নিতান্ত স্বল্প না হলেও, সমাজে জ্ঞানীর পাশাপাশি বিবেকবান, নীতিনিষ্ঠ পণ্ডিতজনের বড়ই অভাব। হাতে গোনা যে দু-চারজন আছেন, তাঁদেরই একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় আহমদ রফিক। যিনি আমাদের ক্ষমতার রাজনীতির কেনা-বেচার হাটে পার্থিব লোভ-লালসায় নিজেকে কখনো বিকিয়ে দেননি।
বিপরীতে আমাদের শাসকগোষ্ঠীর অগণতান্ত্রিক-স্বেচ্ছাচারী এবং ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বরাবর সোচ্চার থেকেছেন। জনগণের কাতারে এসে শামিল হয়েছেন প্রতিবাদে। আহমদ রফিক—যিনি কারও রফিক স্যার, কারও রফিক ভাই; যাঁকে আমরা জাতীয় নানা দুঃসময়ে কাছে পাই। যিনি মতাদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অটল থাকতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করেন।
তখন দেশভাগের অন্তিম সময়। দেশভাগ ও বাংলাভাগ প্রায় চূড়ান্ত। বাংলাভাগে উত্তাল পূর্ব বাংলার সব অঞ্চল-জনপদ। গ্রামের যুবকেরা পাকিস্তান রাষ্ট্রের পক্ষে মিছিল, সভা-সমাবেশ করে মুসলমানের পৃথক রাষ্ট্রের যৌক্তিকতা তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছেন।
স্লোগানে-স্লোগানে মুখর ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আনন্দ-উল্লাস ধ্বনি চারদিকে। তখন যুবক আহমদ রফিককে দেশভাগ-পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা মোটেও উদ্বুদ্ধ করতে পারেনি। সেই জনস্রোতের ভাবনার বিপরীত ভাবনাই তাঁকে ঘিরে ধরেছিল। সেই ভাবনার কেন্দ্রে ছিল মর্মান্তিক বাংলাভাগের অশুভ পরিণতির উপলব্ধি। দেশভাগে উচ্ছেদ, বিচ্ছেদ এবং উৎপাটনের শঙ্কায় তিনি উদ্বিগ্ন। পরিণতি আঁচ করতে পেরে শঙ্কিত। তিনি দেশভাগের উন্মাদনার কালেই দেশভাগ মেনে নিতে পারেননি। ভবিষ্যৎদ্রষ্টার মতো তাঁর সেই চেতনা কতটা বাস্তবসম্মত ছিল, বাস্তবে সেটা ক্রমেই প্রকাশ পেয়েছে। পরিণত বয়সে তিনি নানা মাত্রার গবেষণার ফাঁকে লিখেছেন অসামান্য গ্রন্থ ‘দেশবিভাগ: ফিরে দেখা’। তাঁর চিন্তার অগ্রসরতা নানাভাবে, নানা ক্ষেত্রে প্রকাশ পেয়েছে। সনাতনী ধ্যানধারণার বিপরীতে তাঁর জনমুক্তির ভাবনা একইভাবে আমরা দেখে আসছি।
রফিক ভাই ছাত্র হিসেবে ছিলেন খুবই মেধাবী। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সংগত কারণে পরিবারের ইচ্ছায় তাঁকে ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হতে হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র আহমদ রফিক জড়িয়ে পড়েন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে। ভাষা আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিরূপে তিনি মেডিকেল কলেজের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত ও নেতৃত্বে ছিলেন এবং ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ যুক্ততার কারণে ভাষা মতিনকে বন্দী করা হয় এবং মেডিকেল কলেজের ছাত্র আহমদ রফিকের ওপর হুলিয়া জারি হলে বাধ্য হয়ে তাঁকে আত্মগোপনে যেতে হয়। প্রায় দুই বছর ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পুলিশি নজর এড়িয়ে গোপনে বসবাস করেন। সেই সময়ে চরম আর্থিক অনটনে খেয়ে-না খেয়ে জীবন কাটাতে হয়েছে। যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেও ছাত্রত্ব ফিরে পাননি। ওদিকে পরিবারের মেধাবী ছেলেটি আর ডাক্তার হতে পারল না—এমন শঙ্কায় পরিবারটির মধ্যেও তীব্র হতাশা নেমে আসে। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে হুলিয়া প্রত্যাহারের পর আবার তিনি মেডিকেল কলেজের ছাত্রত্ব ফিরে পান এবং ইচ্ছাশক্তির কঠিন দৃঢ়তায় এমবিবিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। লক্ষ্য বাস্তবায়নে তাঁর একরোখা একাগ্রতাই এতে প্রমাণ করেছে।
ডাক্তার হয়েও ডাক্তারি পেশায় তিনি যুক্ত হননি। করেননি সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগের চাকরি এবং প্রাইভেট প্র্যাকটিস। ওষুধশিল্পের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। পরে কজন মিলে ওষুধশিল্পও গড়ে তোলেন। কিন্তু সেখানে অংশীদারদের সঙ্গে নীতিগত বিরোধের কারণে শূন্য হাতে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন।
সম্পূর্ণ ভিন্নতর পেশায় থেকেও তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতি, গবেষণা এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন থাকেননি। নাগরিক নামের পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন অনেককাল। ভাষা আন্দোলন নিয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং নানামুখী গবেষণামূলক রচনা লিখেছেন। লিখেছেন অসংখ্য প্রবন্ধ-গবেষণা গ্রন্থ। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তাঁর গবেষণা গ্রন্থগুলো কেবল দেশে নয়, ভারতেও সমান জনপ্রিয়।
ভারতের টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাঁকে রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য উপাধি দিয়েছে। বাংলা একাডেমির উদ্যোগে রবীন্দ্রজীবনীর একটি খণ্ড তিনি লিখেছেন। লেখক-গবেষক হিসেবে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, রাষ্ট্রীয় একুশে পদকসহ অসংখ্য পদক-সম্মাননা তিনি পেয়েছেন।
কিশোর বয়সেই তাঁর চিন্তা-মনন ও দৃষ্টিভঙ্গির উজ্জ্বল চেতনা গড়ে উঠেছিল। সমাজের ধনবৈষম্য, শ্রেণি বিভক্তি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অনাচার এসব দেখে তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন বটে, তবে হতাশাগ্রস্ত হননি; বরং অনাচারী-ব্যবস্থা থেকে মুক্তির উপায়টি তিনি সঠিকভাবে বুঝতে পেরে ক্রমেই মার্ক্সবাদী হয়ে ওঠেন। যোগ দেন কমিউনিস্ট পার্টিতে। পার্টির সদস্যপদও লাভ করেন। কিন্তু অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির ওপর ক্রুশ্চেভের সংশোধনবাদী সোভিয়েত ইউনিয়নের মাত্রাতিরিক্ত খবরদারি-হস্তক্ষেপ তিনি মেনে নিতে পারেননি। আমাদের পরিপ্রেক্ষিতকে এড়িয়ে আন্দোলনে সোভিয়েত নির্দেশ পালনে এবং কমিউনিস্ট পার্টির স্বাতন্ত্র্য ক্রমাগত ক্ষুণ্ন হওয়ার কারণে তিনি পার্টি ত্যাগে বাধ্য হন। তবে পার্টি ত্যাগ করলেও বিলোপবাদী হননি। আজীবন মার্ক্সীয় মতাদর্শকে বহন করে চলেছেন। যার প্রকাশ ঘটেছে তাঁর লেখায় এবং বহুবিধ কর্মকাণ্ডে।
কর্মজীবনের ব্যস্ততা-সীমাবদ্ধতা এমনকি পারিবারিক সীমা পর্যন্ত অতিক্রম করে তিনি মার্ক্সবাদী চেতনায় অবিচল থাকার দৃষ্টান্ত রেখে এসেছেন। নিয়মিত গবেষণা ও জ্ঞান বিতরণে আমাদের ঋদ্ধ করে যাচ্ছেন। তাঁর জ্ঞান বিতরণের মাধ্যম হচ্ছে লেখালেখি, যেটি এখনো অবিরাম সচল রেখেছেন। সময় অপচয় না করে প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগিয়ে নিজে যেমন আলোকিত হয়েছেন, তেমনি সেই আলো ছড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছেন সমাজে। এমন অসামান্য মানুষ আমাদের সমাজে সত্যিই বিরল।
তরুণদের প্রতি তাঁর যেমন ভালোবাসা, তেমনি আকর্ষণও। তরুণদের প্রতিই সর্বাধিক আস্থা-ভরসা রাখেন। তরুণেরাই সমষ্টিগত মুক্তির অধরাকে ধরায় পরিণত করতে পারবে বলে তিনি মনে করেন। তরুণদের সঙ্গে তাঁর নৈকট্য সর্বাধিক। সময় সচেতনতায় অসামান্য দৃষ্টান্ত রফিক ভাই। ঘড়ির কাঁটা ধরে চলেন। সময়জ্ঞানের শিক্ষাটা তরুণদের দিতে ভোলেন না। ব্যতিক্রম হলে কাউকে ছাড়ও তিনি দেন না। রফিক ভাইয়ের সঙ্গে সময় নিয়ে আমরা বরাবরই শঙ্কায় থাকি। সময়ের হেরফেরে স্নেহপূর্ণ তিরস্কার শুনতে হয়।
রফিক ভাই কোনো মার্ক্সবাদী দলভুক্ত না হয়েও আজীবন মার্ক্সবাদী চর্চার মধ্যেই জীবন কাটিয়ে এসেছেন।তিনি অত্যন্ত সহজ-সরল একজন মানুষ। যেমন মানবিক, তেমনি স্নেহপ্রবণ। তাঁর অতিসাধারণ জীবনযাপন আমাদের জন্য অনুকরণীয়। পার্থিব লোভ-লালসা, অর্থবিত্তের মোহ তাঁকে কখনো পথভ্রষ্ট-আদর্শচ্যুত করতে পারেনি। প্রায় আড়াই যুগ আগে স্ত্রী মারা গেছেন। নিঃসন্তান রফিক ভাইকে আগলে রেখেছেন দুজন নারী-পুরুষ। তাঁরাই তাঁকে দেখভাল করেন। স্ত্রীর জীবদ্দশা থেকে তাঁরা দুজন তাঁদের পরিবারে যুক্ত হয়ে আছেন।ওই দুজনকে নিয়েই রফিক ভাই নিউ ইস্কাটনের ভাড়াবাসায় একটি সমতার পরিবারে বসবাস করছেন।
কিশোর বয়স থেকেই রফিক ভাই অত্যন্ত নিয়মানুবর্তিতায় জীবনযাপন করে এসেছেন। খাদ্যাভ্যাস থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে খুবই পরিমিত তাঁর জীবনাচার। পরিণত বয়সেও তারুণ্যে ভাটা পড়েনি। বার্ধক্যজনিত রোগ-ভোগ পোহাতে হয়। কিন্তু এতে তাঁর কর্মস্পৃহা কখনো থেমে থাকেনি। নিয়মিত লিখছেন, পড়ছেন, করছেন গবেষণা। জাতীয় ক্রান্তিলগ্নে প্রতিবাদীদের সমর্থন দিয়ে প্রতিবাদে শামিল হচ্ছেন।
আমাদের সবার অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রিয় রফিক ভাই আজ ১২ সেপ্টেম্বর ৯৫ বছরে পা রাখছেন। তাঁর জন্মদিনে জানাই প্রণতি ও শ্রদ্ধাঞ্জলি।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
মযহারুল ইসলাম বাবলা

আমাদের দেশে জ্ঞানী-পণ্ডিতের সংখ্যা নিতান্ত স্বল্প না হলেও, সমাজে জ্ঞানীর পাশাপাশি বিবেকবান, নীতিনিষ্ঠ পণ্ডিতজনের বড়ই অভাব। হাতে গোনা যে দু-চারজন আছেন, তাঁদেরই একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় আহমদ রফিক। যিনি আমাদের ক্ষমতার রাজনীতির কেনা-বেচার হাটে পার্থিব লোভ-লালসায় নিজেকে কখনো বিকিয়ে দেননি।
বিপরীতে আমাদের শাসকগোষ্ঠীর অগণতান্ত্রিক-স্বেচ্ছাচারী এবং ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বরাবর সোচ্চার থেকেছেন। জনগণের কাতারে এসে শামিল হয়েছেন প্রতিবাদে। আহমদ রফিক—যিনি কারও রফিক স্যার, কারও রফিক ভাই; যাঁকে আমরা জাতীয় নানা দুঃসময়ে কাছে পাই। যিনি মতাদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অটল থাকতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করেন।
তখন দেশভাগের অন্তিম সময়। দেশভাগ ও বাংলাভাগ প্রায় চূড়ান্ত। বাংলাভাগে উত্তাল পূর্ব বাংলার সব অঞ্চল-জনপদ। গ্রামের যুবকেরা পাকিস্তান রাষ্ট্রের পক্ষে মিছিল, সভা-সমাবেশ করে মুসলমানের পৃথক রাষ্ট্রের যৌক্তিকতা তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছেন।
স্লোগানে-স্লোগানে মুখর ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আনন্দ-উল্লাস ধ্বনি চারদিকে। তখন যুবক আহমদ রফিককে দেশভাগ-পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা মোটেও উদ্বুদ্ধ করতে পারেনি। সেই জনস্রোতের ভাবনার বিপরীত ভাবনাই তাঁকে ঘিরে ধরেছিল। সেই ভাবনার কেন্দ্রে ছিল মর্মান্তিক বাংলাভাগের অশুভ পরিণতির উপলব্ধি। দেশভাগে উচ্ছেদ, বিচ্ছেদ এবং উৎপাটনের শঙ্কায় তিনি উদ্বিগ্ন। পরিণতি আঁচ করতে পেরে শঙ্কিত। তিনি দেশভাগের উন্মাদনার কালেই দেশভাগ মেনে নিতে পারেননি। ভবিষ্যৎদ্রষ্টার মতো তাঁর সেই চেতনা কতটা বাস্তবসম্মত ছিল, বাস্তবে সেটা ক্রমেই প্রকাশ পেয়েছে। পরিণত বয়সে তিনি নানা মাত্রার গবেষণার ফাঁকে লিখেছেন অসামান্য গ্রন্থ ‘দেশবিভাগ: ফিরে দেখা’। তাঁর চিন্তার অগ্রসরতা নানাভাবে, নানা ক্ষেত্রে প্রকাশ পেয়েছে। সনাতনী ধ্যানধারণার বিপরীতে তাঁর জনমুক্তির ভাবনা একইভাবে আমরা দেখে আসছি।
রফিক ভাই ছাত্র হিসেবে ছিলেন খুবই মেধাবী। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সংগত কারণে পরিবারের ইচ্ছায় তাঁকে ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হতে হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র আহমদ রফিক জড়িয়ে পড়েন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে। ভাষা আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিরূপে তিনি মেডিকেল কলেজের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত ও নেতৃত্বে ছিলেন এবং ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ যুক্ততার কারণে ভাষা মতিনকে বন্দী করা হয় এবং মেডিকেল কলেজের ছাত্র আহমদ রফিকের ওপর হুলিয়া জারি হলে বাধ্য হয়ে তাঁকে আত্মগোপনে যেতে হয়। প্রায় দুই বছর ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পুলিশি নজর এড়িয়ে গোপনে বসবাস করেন। সেই সময়ে চরম আর্থিক অনটনে খেয়ে-না খেয়ে জীবন কাটাতে হয়েছে। যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেও ছাত্রত্ব ফিরে পাননি। ওদিকে পরিবারের মেধাবী ছেলেটি আর ডাক্তার হতে পারল না—এমন শঙ্কায় পরিবারটির মধ্যেও তীব্র হতাশা নেমে আসে। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে হুলিয়া প্রত্যাহারের পর আবার তিনি মেডিকেল কলেজের ছাত্রত্ব ফিরে পান এবং ইচ্ছাশক্তির কঠিন দৃঢ়তায় এমবিবিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। লক্ষ্য বাস্তবায়নে তাঁর একরোখা একাগ্রতাই এতে প্রমাণ করেছে।
ডাক্তার হয়েও ডাক্তারি পেশায় তিনি যুক্ত হননি। করেননি সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগের চাকরি এবং প্রাইভেট প্র্যাকটিস। ওষুধশিল্পের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। পরে কজন মিলে ওষুধশিল্পও গড়ে তোলেন। কিন্তু সেখানে অংশীদারদের সঙ্গে নীতিগত বিরোধের কারণে শূন্য হাতে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন।
সম্পূর্ণ ভিন্নতর পেশায় থেকেও তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতি, গবেষণা এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন থাকেননি। নাগরিক নামের পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন অনেককাল। ভাষা আন্দোলন নিয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং নানামুখী গবেষণামূলক রচনা লিখেছেন। লিখেছেন অসংখ্য প্রবন্ধ-গবেষণা গ্রন্থ। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তাঁর গবেষণা গ্রন্থগুলো কেবল দেশে নয়, ভারতেও সমান জনপ্রিয়।
ভারতের টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাঁকে রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য উপাধি দিয়েছে। বাংলা একাডেমির উদ্যোগে রবীন্দ্রজীবনীর একটি খণ্ড তিনি লিখেছেন। লেখক-গবেষক হিসেবে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, রাষ্ট্রীয় একুশে পদকসহ অসংখ্য পদক-সম্মাননা তিনি পেয়েছেন।
কিশোর বয়সেই তাঁর চিন্তা-মনন ও দৃষ্টিভঙ্গির উজ্জ্বল চেতনা গড়ে উঠেছিল। সমাজের ধনবৈষম্য, শ্রেণি বিভক্তি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অনাচার এসব দেখে তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন বটে, তবে হতাশাগ্রস্ত হননি; বরং অনাচারী-ব্যবস্থা থেকে মুক্তির উপায়টি তিনি সঠিকভাবে বুঝতে পেরে ক্রমেই মার্ক্সবাদী হয়ে ওঠেন। যোগ দেন কমিউনিস্ট পার্টিতে। পার্টির সদস্যপদও লাভ করেন। কিন্তু অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির ওপর ক্রুশ্চেভের সংশোধনবাদী সোভিয়েত ইউনিয়নের মাত্রাতিরিক্ত খবরদারি-হস্তক্ষেপ তিনি মেনে নিতে পারেননি। আমাদের পরিপ্রেক্ষিতকে এড়িয়ে আন্দোলনে সোভিয়েত নির্দেশ পালনে এবং কমিউনিস্ট পার্টির স্বাতন্ত্র্য ক্রমাগত ক্ষুণ্ন হওয়ার কারণে তিনি পার্টি ত্যাগে বাধ্য হন। তবে পার্টি ত্যাগ করলেও বিলোপবাদী হননি। আজীবন মার্ক্সীয় মতাদর্শকে বহন করে চলেছেন। যার প্রকাশ ঘটেছে তাঁর লেখায় এবং বহুবিধ কর্মকাণ্ডে।
কর্মজীবনের ব্যস্ততা-সীমাবদ্ধতা এমনকি পারিবারিক সীমা পর্যন্ত অতিক্রম করে তিনি মার্ক্সবাদী চেতনায় অবিচল থাকার দৃষ্টান্ত রেখে এসেছেন। নিয়মিত গবেষণা ও জ্ঞান বিতরণে আমাদের ঋদ্ধ করে যাচ্ছেন। তাঁর জ্ঞান বিতরণের মাধ্যম হচ্ছে লেখালেখি, যেটি এখনো অবিরাম সচল রেখেছেন। সময় অপচয় না করে প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগিয়ে নিজে যেমন আলোকিত হয়েছেন, তেমনি সেই আলো ছড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছেন সমাজে। এমন অসামান্য মানুষ আমাদের সমাজে সত্যিই বিরল।
তরুণদের প্রতি তাঁর যেমন ভালোবাসা, তেমনি আকর্ষণও। তরুণদের প্রতিই সর্বাধিক আস্থা-ভরসা রাখেন। তরুণেরাই সমষ্টিগত মুক্তির অধরাকে ধরায় পরিণত করতে পারবে বলে তিনি মনে করেন। তরুণদের সঙ্গে তাঁর নৈকট্য সর্বাধিক। সময় সচেতনতায় অসামান্য দৃষ্টান্ত রফিক ভাই। ঘড়ির কাঁটা ধরে চলেন। সময়জ্ঞানের শিক্ষাটা তরুণদের দিতে ভোলেন না। ব্যতিক্রম হলে কাউকে ছাড়ও তিনি দেন না। রফিক ভাইয়ের সঙ্গে সময় নিয়ে আমরা বরাবরই শঙ্কায় থাকি। সময়ের হেরফেরে স্নেহপূর্ণ তিরস্কার শুনতে হয়।
রফিক ভাই কোনো মার্ক্সবাদী দলভুক্ত না হয়েও আজীবন মার্ক্সবাদী চর্চার মধ্যেই জীবন কাটিয়ে এসেছেন।তিনি অত্যন্ত সহজ-সরল একজন মানুষ। যেমন মানবিক, তেমনি স্নেহপ্রবণ। তাঁর অতিসাধারণ জীবনযাপন আমাদের জন্য অনুকরণীয়। পার্থিব লোভ-লালসা, অর্থবিত্তের মোহ তাঁকে কখনো পথভ্রষ্ট-আদর্শচ্যুত করতে পারেনি। প্রায় আড়াই যুগ আগে স্ত্রী মারা গেছেন। নিঃসন্তান রফিক ভাইকে আগলে রেখেছেন দুজন নারী-পুরুষ। তাঁরাই তাঁকে দেখভাল করেন। স্ত্রীর জীবদ্দশা থেকে তাঁরা দুজন তাঁদের পরিবারে যুক্ত হয়ে আছেন।ওই দুজনকে নিয়েই রফিক ভাই নিউ ইস্কাটনের ভাড়াবাসায় একটি সমতার পরিবারে বসবাস করছেন।
কিশোর বয়স থেকেই রফিক ভাই অত্যন্ত নিয়মানুবর্তিতায় জীবনযাপন করে এসেছেন। খাদ্যাভ্যাস থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে খুবই পরিমিত তাঁর জীবনাচার। পরিণত বয়সেও তারুণ্যে ভাটা পড়েনি। বার্ধক্যজনিত রোগ-ভোগ পোহাতে হয়। কিন্তু এতে তাঁর কর্মস্পৃহা কখনো থেমে থাকেনি। নিয়মিত লিখছেন, পড়ছেন, করছেন গবেষণা। জাতীয় ক্রান্তিলগ্নে প্রতিবাদীদের সমর্থন দিয়ে প্রতিবাদে শামিল হচ্ছেন।
আমাদের সবার অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রিয় রফিক ভাই আজ ১২ সেপ্টেম্বর ৯৫ বছরে পা রাখছেন। তাঁর জন্মদিনে জানাই প্রণতি ও শ্রদ্ধাঞ্জলি।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত

আমাদের দেশে জ্ঞানী-পণ্ডিতের সংখ্যা নিতান্ত স্বল্প না হলেও, সমাজে জ্ঞানীর পাশাপাশি বিবেকবান, নীতিনিষ্ঠ পণ্ডিতজনের বড়ই অভাব। হাতে গোনা যে দু-চারজন আছেন, তাঁদেরই একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় আহমদ রফিক। যিনি আমাদের ক্ষমতার রাজনীতির কেনা-বেচার হাটে পার্থিব লোভ-লালসায় নিজেকে কখনো বিকিয়ে দেননি।
বিপরীতে আমাদের শাসকগোষ্ঠীর অগণতান্ত্রিক-স্বেচ্ছাচারী এবং ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বরাবর সোচ্চার থেকেছেন। জনগণের কাতারে এসে শামিল হয়েছেন প্রতিবাদে। আহমদ রফিক—যিনি কারও রফিক স্যার, কারও রফিক ভাই; যাঁকে আমরা জাতীয় নানা দুঃসময়ে কাছে পাই। যিনি মতাদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অটল থাকতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করেন।
তখন দেশভাগের অন্তিম সময়। দেশভাগ ও বাংলাভাগ প্রায় চূড়ান্ত। বাংলাভাগে উত্তাল পূর্ব বাংলার সব অঞ্চল-জনপদ। গ্রামের যুবকেরা পাকিস্তান রাষ্ট্রের পক্ষে মিছিল, সভা-সমাবেশ করে মুসলমানের পৃথক রাষ্ট্রের যৌক্তিকতা তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছেন।
স্লোগানে-স্লোগানে মুখর ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আনন্দ-উল্লাস ধ্বনি চারদিকে। তখন যুবক আহমদ রফিককে দেশভাগ-পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা মোটেও উদ্বুদ্ধ করতে পারেনি। সেই জনস্রোতের ভাবনার বিপরীত ভাবনাই তাঁকে ঘিরে ধরেছিল। সেই ভাবনার কেন্দ্রে ছিল মর্মান্তিক বাংলাভাগের অশুভ পরিণতির উপলব্ধি। দেশভাগে উচ্ছেদ, বিচ্ছেদ এবং উৎপাটনের শঙ্কায় তিনি উদ্বিগ্ন। পরিণতি আঁচ করতে পেরে শঙ্কিত। তিনি দেশভাগের উন্মাদনার কালেই দেশভাগ মেনে নিতে পারেননি। ভবিষ্যৎদ্রষ্টার মতো তাঁর সেই চেতনা কতটা বাস্তবসম্মত ছিল, বাস্তবে সেটা ক্রমেই প্রকাশ পেয়েছে। পরিণত বয়সে তিনি নানা মাত্রার গবেষণার ফাঁকে লিখেছেন অসামান্য গ্রন্থ ‘দেশবিভাগ: ফিরে দেখা’। তাঁর চিন্তার অগ্রসরতা নানাভাবে, নানা ক্ষেত্রে প্রকাশ পেয়েছে। সনাতনী ধ্যানধারণার বিপরীতে তাঁর জনমুক্তির ভাবনা একইভাবে আমরা দেখে আসছি।
রফিক ভাই ছাত্র হিসেবে ছিলেন খুবই মেধাবী। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সংগত কারণে পরিবারের ইচ্ছায় তাঁকে ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হতে হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র আহমদ রফিক জড়িয়ে পড়েন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে। ভাষা আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিরূপে তিনি মেডিকেল কলেজের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত ও নেতৃত্বে ছিলেন এবং ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ যুক্ততার কারণে ভাষা মতিনকে বন্দী করা হয় এবং মেডিকেল কলেজের ছাত্র আহমদ রফিকের ওপর হুলিয়া জারি হলে বাধ্য হয়ে তাঁকে আত্মগোপনে যেতে হয়। প্রায় দুই বছর ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পুলিশি নজর এড়িয়ে গোপনে বসবাস করেন। সেই সময়ে চরম আর্থিক অনটনে খেয়ে-না খেয়ে জীবন কাটাতে হয়েছে। যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেও ছাত্রত্ব ফিরে পাননি। ওদিকে পরিবারের মেধাবী ছেলেটি আর ডাক্তার হতে পারল না—এমন শঙ্কায় পরিবারটির মধ্যেও তীব্র হতাশা নেমে আসে। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে হুলিয়া প্রত্যাহারের পর আবার তিনি মেডিকেল কলেজের ছাত্রত্ব ফিরে পান এবং ইচ্ছাশক্তির কঠিন দৃঢ়তায় এমবিবিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। লক্ষ্য বাস্তবায়নে তাঁর একরোখা একাগ্রতাই এতে প্রমাণ করেছে।
ডাক্তার হয়েও ডাক্তারি পেশায় তিনি যুক্ত হননি। করেননি সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগের চাকরি এবং প্রাইভেট প্র্যাকটিস। ওষুধশিল্পের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। পরে কজন মিলে ওষুধশিল্পও গড়ে তোলেন। কিন্তু সেখানে অংশীদারদের সঙ্গে নীতিগত বিরোধের কারণে শূন্য হাতে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন।
সম্পূর্ণ ভিন্নতর পেশায় থেকেও তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতি, গবেষণা এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন থাকেননি। নাগরিক নামের পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন অনেককাল। ভাষা আন্দোলন নিয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং নানামুখী গবেষণামূলক রচনা লিখেছেন। লিখেছেন অসংখ্য প্রবন্ধ-গবেষণা গ্রন্থ। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তাঁর গবেষণা গ্রন্থগুলো কেবল দেশে নয়, ভারতেও সমান জনপ্রিয়।
ভারতের টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাঁকে রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য উপাধি দিয়েছে। বাংলা একাডেমির উদ্যোগে রবীন্দ্রজীবনীর একটি খণ্ড তিনি লিখেছেন। লেখক-গবেষক হিসেবে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, রাষ্ট্রীয় একুশে পদকসহ অসংখ্য পদক-সম্মাননা তিনি পেয়েছেন।
কিশোর বয়সেই তাঁর চিন্তা-মনন ও দৃষ্টিভঙ্গির উজ্জ্বল চেতনা গড়ে উঠেছিল। সমাজের ধনবৈষম্য, শ্রেণি বিভক্তি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অনাচার এসব দেখে তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন বটে, তবে হতাশাগ্রস্ত হননি; বরং অনাচারী-ব্যবস্থা থেকে মুক্তির উপায়টি তিনি সঠিকভাবে বুঝতে পেরে ক্রমেই মার্ক্সবাদী হয়ে ওঠেন। যোগ দেন কমিউনিস্ট পার্টিতে। পার্টির সদস্যপদও লাভ করেন। কিন্তু অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির ওপর ক্রুশ্চেভের সংশোধনবাদী সোভিয়েত ইউনিয়নের মাত্রাতিরিক্ত খবরদারি-হস্তক্ষেপ তিনি মেনে নিতে পারেননি। আমাদের পরিপ্রেক্ষিতকে এড়িয়ে আন্দোলনে সোভিয়েত নির্দেশ পালনে এবং কমিউনিস্ট পার্টির স্বাতন্ত্র্য ক্রমাগত ক্ষুণ্ন হওয়ার কারণে তিনি পার্টি ত্যাগে বাধ্য হন। তবে পার্টি ত্যাগ করলেও বিলোপবাদী হননি। আজীবন মার্ক্সীয় মতাদর্শকে বহন করে চলেছেন। যার প্রকাশ ঘটেছে তাঁর লেখায় এবং বহুবিধ কর্মকাণ্ডে।
কর্মজীবনের ব্যস্ততা-সীমাবদ্ধতা এমনকি পারিবারিক সীমা পর্যন্ত অতিক্রম করে তিনি মার্ক্সবাদী চেতনায় অবিচল থাকার দৃষ্টান্ত রেখে এসেছেন। নিয়মিত গবেষণা ও জ্ঞান বিতরণে আমাদের ঋদ্ধ করে যাচ্ছেন। তাঁর জ্ঞান বিতরণের মাধ্যম হচ্ছে লেখালেখি, যেটি এখনো অবিরাম সচল রেখেছেন। সময় অপচয় না করে প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগিয়ে নিজে যেমন আলোকিত হয়েছেন, তেমনি সেই আলো ছড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছেন সমাজে। এমন অসামান্য মানুষ আমাদের সমাজে সত্যিই বিরল।
তরুণদের প্রতি তাঁর যেমন ভালোবাসা, তেমনি আকর্ষণও। তরুণদের প্রতিই সর্বাধিক আস্থা-ভরসা রাখেন। তরুণেরাই সমষ্টিগত মুক্তির অধরাকে ধরায় পরিণত করতে পারবে বলে তিনি মনে করেন। তরুণদের সঙ্গে তাঁর নৈকট্য সর্বাধিক। সময় সচেতনতায় অসামান্য দৃষ্টান্ত রফিক ভাই। ঘড়ির কাঁটা ধরে চলেন। সময়জ্ঞানের শিক্ষাটা তরুণদের দিতে ভোলেন না। ব্যতিক্রম হলে কাউকে ছাড়ও তিনি দেন না। রফিক ভাইয়ের সঙ্গে সময় নিয়ে আমরা বরাবরই শঙ্কায় থাকি। সময়ের হেরফেরে স্নেহপূর্ণ তিরস্কার শুনতে হয়।
রফিক ভাই কোনো মার্ক্সবাদী দলভুক্ত না হয়েও আজীবন মার্ক্সবাদী চর্চার মধ্যেই জীবন কাটিয়ে এসেছেন।তিনি অত্যন্ত সহজ-সরল একজন মানুষ। যেমন মানবিক, তেমনি স্নেহপ্রবণ। তাঁর অতিসাধারণ জীবনযাপন আমাদের জন্য অনুকরণীয়। পার্থিব লোভ-লালসা, অর্থবিত্তের মোহ তাঁকে কখনো পথভ্রষ্ট-আদর্শচ্যুত করতে পারেনি। প্রায় আড়াই যুগ আগে স্ত্রী মারা গেছেন। নিঃসন্তান রফিক ভাইকে আগলে রেখেছেন দুজন নারী-পুরুষ। তাঁরাই তাঁকে দেখভাল করেন। স্ত্রীর জীবদ্দশা থেকে তাঁরা দুজন তাঁদের পরিবারে যুক্ত হয়ে আছেন।ওই দুজনকে নিয়েই রফিক ভাই নিউ ইস্কাটনের ভাড়াবাসায় একটি সমতার পরিবারে বসবাস করছেন।
কিশোর বয়স থেকেই রফিক ভাই অত্যন্ত নিয়মানুবর্তিতায় জীবনযাপন করে এসেছেন। খাদ্যাভ্যাস থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে খুবই পরিমিত তাঁর জীবনাচার। পরিণত বয়সেও তারুণ্যে ভাটা পড়েনি। বার্ধক্যজনিত রোগ-ভোগ পোহাতে হয়। কিন্তু এতে তাঁর কর্মস্পৃহা কখনো থেমে থাকেনি। নিয়মিত লিখছেন, পড়ছেন, করছেন গবেষণা। জাতীয় ক্রান্তিলগ্নে প্রতিবাদীদের সমর্থন দিয়ে প্রতিবাদে শামিল হচ্ছেন।
আমাদের সবার অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রিয় রফিক ভাই আজ ১২ সেপ্টেম্বর ৯৫ বছরে পা রাখছেন। তাঁর জন্মদিনে জানাই প্রণতি ও শ্রদ্ধাঞ্জলি।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

আমাদের দেশে জ্ঞানী-পণ্ডিতের সংখ্যা নিতান্ত স্বল্প না হলেও, সমাজে জ্ঞানীর পাশাপাশি বিবেকবান, নীতিনিষ্ঠ পণ্ডিতজনের বড়ই অভাব। হাতে গোনা যে দু-চারজন আছেন, তাঁদেরই একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় আহমদ রফিক। যিনি আমাদের ক্ষমতার রাজনীতির কেনা-বেচার হাটে পার্থিব লোভ-লালসায় নিজেকে কখনো বিকিয়ে দেননি।
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

আমাদের দেশে জ্ঞানী-পণ্ডিতের সংখ্যা নিতান্ত স্বল্প না হলেও, সমাজে জ্ঞানীর পাশাপাশি বিবেকবান, নীতিনিষ্ঠ পণ্ডিতজনের বড়ই অভাব। হাতে গোনা যে দু-চারজন আছেন, তাঁদেরই একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় আহমদ রফিক। যিনি আমাদের ক্ষমতার রাজনীতির কেনা-বেচার হাটে পার্থিব লোভ-লালসায় নিজেকে কখনো বিকিয়ে দেননি।
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

আমাদের দেশে জ্ঞানী-পণ্ডিতের সংখ্যা নিতান্ত স্বল্প না হলেও, সমাজে জ্ঞানীর পাশাপাশি বিবেকবান, নীতিনিষ্ঠ পণ্ডিতজনের বড়ই অভাব। হাতে গোনা যে দু-চারজন আছেন, তাঁদেরই একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় আহমদ রফিক। যিনি আমাদের ক্ষমতার রাজনীতির কেনা-বেচার হাটে পার্থিব লোভ-লালসায় নিজেকে কখনো বিকিয়ে দেননি।
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আমাদের দেশে জ্ঞানী-পণ্ডিতের সংখ্যা নিতান্ত স্বল্প না হলেও, সমাজে জ্ঞানীর পাশাপাশি বিবেকবান, নীতিনিষ্ঠ পণ্ডিতজনের বড়ই অভাব। হাতে গোনা যে দু-চারজন আছেন, তাঁদেরই একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় আহমদ রফিক। যিনি আমাদের ক্ষমতার রাজনীতির কেনা-বেচার হাটে পার্থিব লোভ-লালসায় নিজেকে কখনো বিকিয়ে দেননি।
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫