Ajker Patrika

হাহাকার নিয়ে বিলাপ ও বাস্তবতা

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
হাহাকার নিয়ে বিলাপ ও বাস্তবতা

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিশোরগঞ্জে নবপ্রতিষ্ঠিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাস উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন হেলিপ্যাড মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় ভাষণ দেন। এই হাওর অঞ্চল একসময় জনবিচ্ছিন্ন ছিল; ছিল না রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং উন্নত জীবনযাত্রার ব্যবস্থাও। কিন্তু গত ১৩-১৪ বছরে গোটা কিশোরগঞ্জই বদলে গেছে। এ ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সরকারের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। ফলে ওই দিনের জনসভায় গোটা অঞ্চল থেকে বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছিলেন। বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মানুষ খেয়েপরে ভালো থাকে। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। অন্তত ১৪ বছরে আজকের বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’

মিঠামইনের জনসভায় যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় সবাই ছিলেন প্রাণবন্ত, স্বতঃস্ফূর্ত। আগের মতো দারিদ্র্যের ছাপ তাঁদের মধ্যে দেখা যায়নি। বদলে যাওয়া কিশোরগঞ্জের মানুষ ১০-১২ বছর আগের চেয়ে অপেক্ষাকৃত উন্নত যোগাযোগ, যাতায়াত, কৃষি, নানা ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদিতে জীবন অনেকটাই পাল্টে দিতে পেরেছেন। এই অঞ্চলের কোথাও তেমন হাহাকার, অভাব-অনটন কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অসন্তোষের প্রকাশ ঘটানোর মতো তেমন কিছু এ পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি। কিন্তু এক যুগ আগেই এই এলাকার মানুষের বেশির ভাগই হাওর-বিলের কারণে অতি সাধারণ দারিদ্র্য জীবনের মধ্যে আটকে ছিল।

তাই বলে আমরা এ কথা বলব না যে, করোনা অতিমারির দুই বছর এবং ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছরের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের অভিঘাতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সবাই খুব ভালো আছেন, কারও কোনো অভাব নেই, সমস্যা নেই। সারা বিশ্বের মতোই আমাদের দেশেও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার ব্যয় যতটা বেড়েছে, আয় হয়তো ততটা বাড়েনি। তবে সবার অবস্থা এক রকম নয়। হাহাকার করার মতো পরিস্থিতি গ্রামগঞ্জে সৃষ্টি হয়েছে—এমন খবর আমাদের কানে এ পর্যন্ত আসেনি। কিছুটা টানাটানি কোনো কোনো পরিবারে নতুন করে দেখা দিচ্ছে। কিন্তু সেগুলোতেও সরকার নানা ধরনের প্রণোদনা দিচ্ছে, কেউ ন্যায্যমূল্যে টিসিবির পণ্যসামগ্রী কেনার সুযোগ পাচ্ছে, অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ভাতা, শিক্ষার্থীদের পরিবারগুলো উপবৃত্তি পাচ্ছে, ওএমএস এবং কম ও বিনা মূল্যে চালসহ কিছু কিছু পণ্য তারা সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে পাচ্ছে। এর বাইরে বেশির ভাগ মানুষই এখন কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, নানা ধরনের পরিবহন, মৎস্য চাষ, পশুপালন এবং প্রবাসে কর্মরত আছেন। প্রবাসীরা নিয়মিত বিদেশ থেকে অর্থ পাঠাচ্ছেন। গ্রামগঞ্জে অন্যরা যা উপার্জন করছেন, তাতে অনেকে বেশ ভালো আছেন, কেউ কেউ হয়তো ততটা ভালো করতে পারছেন না। কিন্তু খেয়েপরে সবাই কমবেশি স্বাচ্ছন্দ্যেই আছেন।

গ্রামে এখন কাঁচা বাড়ির সংখ্যা কমে যাচ্ছে, পাকা বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে। যাঁদের ঘর নেই, তারা শেখ হাসিনার ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের’ মাধ্যমে আধা পাকা বাড়ি পাচ্ছেন। আয়-উপার্জন করে মোটামুটি সুন্দর জীবনযাপন করছেন। যাঁরা শারীরিক পরিশ্রম করতে পারেন, তাঁরা প্রতিদিনই খেতখামারে কাজ করে ৫০০-৬০০ টাকা আয় করছেন। বদলে যাওয়া এই পরিস্থিতি এখন সাধারণ দৃশ্য। এই দৃশ্য আগে কেউ কল্পনা করতে পারেনি। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রভাব মানুষের আর্থসামাজিক জীবনব্যবস্থায় যে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, তার ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায়ও আমাদের বেশির ভাগ মানুষই নিজস্ব আয়-উপার্জনে যাঁর যাঁর মতো করে চলতে পারছেন। বাকিদের পাশে সরকারি নানা ধরনের প্রণোদনা ও সহযোগিতা থাকায় তাঁদের ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে হচ্ছে না। 
গ্রামে কোথাও তেমন ভিক্ষুকের আনাগোনা চোখে পড়ছে না।

গ্রামের সঙ্গে আমাদের কমবেশি যোগাযোগ মোবাইল ফোনেই রয়েছে। খোঁজখবর প্রায় প্রতিদিনই পাচ্ছি। আত্মীয়স্বজনের কেউ কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য করে এলাকায় বেশ ভালো আছেন। বেচাকেনার কথা জানতে চাইলে কেউ বলেন না যে সাধারণ ক্রেতারা তেল, আটা, মুদি কেনাকাটায় অক্ষম হয়ে পড়েছেন কিংবা না কিনে বাড়ি ফিরে চলে যাচ্ছেন। এই যখন গ্রামের অবস্থা, তখন বুঝতে কষ্ট হয় না যে মানুষ বর্তমান বৈশ্বিক, অর্থনৈতিক সংকটের কালে খুব খারাপ আছে, না খেয়ে দিনাতিপাত করছে কিংবা হাহাকার করে বেড়াচ্ছে। হ্যাঁ, কিছু কিছু আমদানি করা পণ্যের দাম আগের চেয়েও বেশ বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীদেরও একটি বড় অংশ দাম বাড়ানোর নানা অজুহাত, ফন্দিফিকির করে বেড়াচ্ছে। ফলে দামের ওঠানামাটা অনেক ক্ষেত্রেই কৃত্রিম, স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়তি। যদি ব্যবসায়ীরা অতিমুনাফায় পণ্যের দাম ইচ্ছেমতো না বাড়াতেন, তাহলে অনেক পণ্যের দাম নিশ্চয়ই এতটা বেশি হতো না। সে কারণে মাঝেমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যখন কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তখন ক্রেতাসাধারণ পরিমাণে কম কেনেন। কিন্তু একেবারে না কিনে চুলোয় আগুন জ্বালান না, এমন ঘটনা বাংলাদেশে ঘটতে শুনিনি।

এই কথাগুলো লিখতে হলো এ কারণেই যে, ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিশোরগঞ্জের মিঠামইন হেলিপ্যাড মাঠে বক্তৃতায় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার যে চিত্র তুলে ধরেছিলেন, তার বিপক্ষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে চারদিকে শুধু হাহাকার, নাই আর নাই। সমগ্র দেশটাই যেন এক নাইয়ের রাজ্যে পরিণত হয়েছে। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের জাঁতাকলে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এককথায়, দেশের অর্থনীতি এক মহাসংকটে নিমজ্জিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত আগস্টে সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি দেখানো হয় ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি কমছে দেখানো হলেও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি এখনো প্রায় দুই অঙ্কের কাছাকাছি রয়েছে। জানুয়ারি মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ।’ তিনি মন্তব্য করেন, ‘বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বারবার বৃদ্ধি, রিজার্ভ তলানিতে নেমে আসা, ডলারের নজিরবিহীন সংকট, ডলারের বিনিময়ে টাকার অবমূল্যায়ন, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে অব্যবস্থাপনা, অপরিণামদর্শী ভ্রান্তনীতি, লাগামহীন দুর্নীতি, বিদেশে অর্থ পাচার, ঋণখেলাপি বৃদ্ধি পাওয়া, ঋণপ্রাপ্তির অপর্যাপ্ততা, অর্থনৈতিক আয়বৈষম্য, সুশাসনের অভাব এবং গণতন্ত্র না থাকার কারণে দেশে অর্থনৈতিক নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে।’

মির্জা ফখরুল সাহেব যে হাহাকারের বর্ণনা সংবাদ সম্মেলনে দিয়েছেন, সেটি তিনি কোথায় শুনেছেন? তিনি খুব আবেগ দিয়ে যখন এই হাহাকারের কথা বলেন, তখন মনে হতে পারে যে তাঁর মন মানুষের জন্য ছটফট করছে। দেশের নেতৃত্ব এই মুহূর্তে তার হাতে থাকলে বোধ হয় সবাই মহাসুখে থাকতেন। দেশে কোনো অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, লুটপাট, সুশাসনের অভাব, গণতন্ত্রের অভাব, মুদ্রাস্ফীতি বৈশ্বিক এই মহামন্দায়ও আমাদের স্পর্শ করত না! আমাদের রিজার্ভ সম্ভবত পৃথিবীর শীর্ষে অবস্থান করত!

আসলে মির্জা ফখরুল কতগুলো মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষের আবেগকে উসকে দিতে চাইছেন। আমাদের রিজার্ভ তলানিতে ঠেকেছে বলে তিনি কী বোঝাতে চাইছেন? পাকিস্তানের চেয়েও আমাদের রিজার্ভ কি আরও খারাপে চলে গেছে? ৩২ বিলিয়ন রিজার্ভের অর্থ যদি তলানিতে ঠেকার কথা বোঝানো হয়ে থাকে, তাহলে ২০০৬ সালে ক্ষমতায় থাকা বিএনপির বিদায়ের প্রাক্কালে জুন মাসে ৩.৪৮ বিলিয়ন, যা এখন পাকিস্তানের কাছাকাছি, সেটাকে তিনি কী বলবেন? তিনি নিজে একজন অর্থনীতি বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। অর্থনীতি তাঁর পঠিত বিষয়। কিন্তু দেশের অর্থনীতির যে চালচিত্রের ধারণা তিনি দিচ্ছেন, সেটি বাস্তবের সঙ্গে যখন মেলে না তখন অভিযোগটা কার বিরুদ্ধে বলব—রাজনীতি, নাকি অর্থনীতির শিক্ষার বিরুদ্ধে?

মুখে বলে দেশে হাহাকার সৃষ্টি করা যাবে না। সত্যিকার হাহাকার সৃষ্টি হয় অর্থনীতির ভয়াবহ সংকট থেকে। সেটি যখন যে দেশে ঘটে বা ঘটছে, সেখানে কাউকে বলে শোনাতে হবে না দেশে হাহাকার চলছে। সরকার সেটি ধামাচাপা দিতে চাইলেও থামানো যাবে না, ঢাকাও যাবে না। হাহাকার নিবারণের একমাত্র উপায় হচ্ছে মানুষের মধ্যে বিরাজমান সংকট, খাদ্যাভাব, দ্রব্যমূল্য নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা। বাংলাদেশে খাদ্যাভাব, দ্রব্যমূল্য, মানুষের উপার্জন এবং অর্থনীতির সংকট নাগালের বাইরে চলে যায়নি। শহরাঞ্চলে কিংবা গ্রামাঞ্চলেও মানুষের আচার-অনুষ্ঠান, পর্যটন, উৎসব ইত্যাদিতে তেমন কোনো ভাটা চোখে পড়েনি। বাংলাদেশের এক কোটির বেশি মানুষ বিদেশ থেকে নিয়মিত রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, রপ্তানি আয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি অর্থনীতিও যথেষ্ট চাঙা রয়েছে। অর্থনীতির অন্যান্য খাতও স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি দেখাচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে করপোরেট, মধ্যস্বত্বভোগী এবং ছোট ব্যবসায়ীদের মধ্যে আয়ের বৈষম্য থাকলেও ব্যবসা-বাণিজ্য করে কয়েক কোটি মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে। সুতরাং হাহাকারের কাল্পনিক আহাজারি মানুষের খুব বেশি কানে স্পর্শ করলেও অন্তরকে আকৃষ্ট করতে পারছে না। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার কথা বাদ দিলাম, খোদ ইংল্যান্ডে এই মুহূর্তে রেশনিং প্রথার বাইরে কেউ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী ক্রয় করতে পারে না। আরও অনেক দেশেই অবস্থা বেশ সংকটাপন্ন।

২০১৯ সাল পর্যন্ত আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যে গতিতে ছিল, তা দুই বছরের করোনায় কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। ঘুরে দাঁড়ানোর মুহূর্তেই ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞার কবলে আমরাও কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সেই অবস্থায়ও এখনো বড় ধরনের সংকটে বাংলাদেশ পড়েনি। কিন্তু রাজনীতিবিদেরা যদি বাস্তবতাবিবর্জিতভাবে হাহাকারের আহাজারিতে ভোগেন, তাহলে লাভ কার হবে?

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত