Ajker Patrika

ভোটের আগে রাজনীতি: দুই পক্ষই এখন বিদেশমুখী

রেজা করিম ও তানিম আহমেদ, ঢাকা
ভোটের আগে রাজনীতি: দুই পক্ষই এখন বিদেশমুখী

জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এলে বিদেশি কূটনীতিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বেড়ে যাওয়া নতুন কিছু নয়। দলগুলো নিজ নিজ স্বার্থের জায়গা থেকে বিদেশিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে। দূতাবাসগুলোও কাজে লাগায় এমন সুযোগ। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে সেই যোগাযোগটা একটু আগেভাগেই শুরু হয়ে গেছে। প্রধান দুই দল–ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী বিএনপি পরস্পরকে দোষারোপ করলেও দেশের রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে কূটনীতিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় পিছিয়ে নেই কেউই। চলতি বছরের শেষের দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

সর্বশেষ বৈঠকে যোগ দিতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির বাসায় গতকাল বৃহস্পতিবার গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সঙ্গে ছিলেন দলের পাঁচ নেতা। আর হোয়াইটলির সঙ্গে ছিল ইইউভুক্ত ছয় দেশ–জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অথবা মিশনপ্রধানেরা।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সেখানে আলাপ হয়েছে, এমনটি কোনো লুকোছাপা না করেই স্বীকার করেছেন কাদের ও হোয়াইটলি।

বৈঠকের পর তোলা ছবি যুক্ত করে একটি টুইটে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেছেন, সংসদ নির্বাচনের আগে আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে ইইউ মিশনপ্রধানেরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকটি করেছেন।

জার্মান দূতাবাসের পক্ষ থেকে বৈঠকে যোগ দেন উপরাষ্ট্রদূত জেন জেনোস্কি। তিনি এক টুইটে বলেন, চমকপ্রদ এ বৈঠকটি ক্ষমতাসীন দলের চিন্তার প্রক্রিয়াটি বুঝতে সহায়ক হয়েছে।

আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি যোগ দেবে কি না, এমন টানাপোড়েনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বুধবার বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলে এবং ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা। এই বৈঠকটির পর ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই ইউরোপীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের বৈঠকে চমক আছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কূটনীতিকেরা।

ডেরেক শোলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্ব দেন। আর বিনয় কোয়াত্রা শেখ হাসিনার প্রতি ভারত সরকারের পূর্ণ আস্থার কথা জানান। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে এসে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানান।

সংলাপের তাগিদ
জানা গেছে, কূটনীতিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার জন্য সংলাপের বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগকে। যদিও বিষয়টি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘রাজনীতিতে সব সময় সংলাপের সম্ভাবনা আছে। তারা আমাদের সঙ্গে বৈঠকে সংলাপ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’ তবে বন্ধু দেশগুলো আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ চেয়েছে বলে জানান তিনি।

দেশে সংলাপের পরিবেশই দেখছে না বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সংলাপের কোনো পরিবেশ এখন পর্যন্ত নেই। আর হবে বলে মনে হয় না। রাজনৈতিক সমঝোতার যদি কোনো ইচ্ছা থাকত, এর মধ্যে তার প্রতিফলন ঘটত।’

দৌড়ঝাঁপের প্রেক্ষাপট
বিভিন্ন সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দেশের রাজনীতিতে সংকট বা নির্বাচনকালীন ব্যবস্থা নিয়ে টানাপোড়েনের ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় ভূমিকা রেখেছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সমর্থনকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে অনেক কাল ধরে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমানে আবারও এ প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।

একটি সূত্র বলছে, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে যে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে, তা বন্ধ করতে এখন তৎপর হয়েছে উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো। কারণ বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে তাদের নিজেদেরই ক্ষতি হবে। বিষয়টি তারা ক্ষমতাসীনদেরও বোঝাতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করছে সূত্রটি।

সূত্রটির আরও দাবি, আগামী জাতীয় নির্বাচনে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির অংশগ্রহণ চায় উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে হাওয়া বৈঠেকেও এগুলো আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিতে দলটির নেতাদের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিএনপিও যাচ্ছে একের পর এক
সরকার পতনের জন্য সমমনাদের নিয়ে আন্দোলন করছে বিএনপি। আন্দোলনের পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে তারা। সূত্র বলছে, গত তিন মাসে বিদেশিদের সঙ্গে অন্তত ১০টি বৈঠক করেছে দলটি। বেশির ভাগ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক ও দেশটির বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে।

গত ৮ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রসহ চারটি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির প্রতিনিধিদল। ওই বৈঠকে ব্রিটিশ হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব (রাজনৈতিক), মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কাউন্সেলর, কানাডিয়ান হাইকমিশনের পলিটিক্যাল কাউন্সেলর এবং ফ্রান্স দূতাবাসের কালচারাল অ্যাটাশে অংশ নেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল।

এর আগে ও পরে এ রকম আরও বেশ কিছু বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গত ২৬ জানুয়ারি মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা মি. ম্যাথিউ বের সঙ্গে দেখা করে বিএনপির প্রতিনিধিদল।

সবশেষ ৭ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) প্রতিনিধি জেমি স্পাইকারম্যান ও আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফরেস্ট কুকসনের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। এসব বৈঠকে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সব বিষয়ে সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। সূত্রটি বলছে, এসব বৈঠকে বর্তমান সরকারের সময়ে সংঘটিত গুম-খুনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যাতে বিশ্বদরবারে ক্ষমতাসীনদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। বৈঠকে নির্বাচন কারচুপিসহ গণতন্ত্র হরণ ও বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য সরকারের ভূমিকাকেও দায়ী করা হয়।

বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সর্বশেষ বৈঠকটি হয়েছে গত ১৪ নভেম্বর। সেটি ছিল কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলাসের সঙ্গে। এর আগে ৮ নভেম্বর তিনি সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ভন লিন্ডে ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার ভেন্ডসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। 

দুই পক্ষের যুক্তি
গতকালের বৈঠক প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা তাদের আমন্ত্রণে গিয়েছিলাম। কোনো ধরনা দিতে নয়। আর আমরা লুকিয়েও যাইনি। আমরা দেখেছি বিএনপি রাতের অন্ধকারে গোপনে দেখা করতে যায়।’

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেশে যে গণতন্ত্র নাই। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা না থাকলে সব দিক থেকে সংকট তৈরি হয়েছে। রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা নেই। রাজনীতিতে একটা ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি করেছে সরকার, যার প্রভাব সব ক্ষেত্রে পড়েছে—এটাই আমরা বিদেশিদের কাছে বলে আসছি। এখানে বিএনপির চাওয়া এটাই। এর বাইরে তাদের কাছে বিএনপির কিছু চাওয়ার নেই।’ 

নিজ নিজ স্বার্থে বিদেশমুখী
বিদেশিদের কাছে দৌড়ঝাঁপের বিষয়টিকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না বিশ্লেষকেরা। আস্থাহীনতার কারণে রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ স্বার্থে বিদেশমুখী হয়েছে। এই সুযোগে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পাচ্ছেন বিদেশিরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যত দিন বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভাজন থাকবে, তত দিন এ থেকে (বিদেশিদের হস্তক্ষেপ) উত্তরণের সুযোগ নেই। বিরোধী দলের বক্তব্য অনেকাংশে পশ্চিমা দেশগুলো গ্রহণ করেছে। গণতন্ত্রের ঘাটতির কারণে তার ভিত্তিও রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে সরকারি দল মনে করছে চুপ করে থাকলে বিরোধী দলের বক্তব্য শতভাগ সত্য বলে প্রমাণিত হবে। সেই হিসাবে তারাও তৎপর।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গোপনে সহপাঠীদের অপ্রীতিকর ছবি তুলে সিনিয়র ভাইকে পাঠাতেন বাকৃবি ছাত্রী

কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরাতে দিল্লিতে ‘ক্লাউড সিডিং’, প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ ভারত

আপনার রাশিফল: অতি আত্মবিশ্বাসের লাগাম টানুন, ভুল ধরলে রোমান্স বরবাদ

পোশাক রপ্তানি: বাংলাদেশ ও চীনকে পেছনে ফেলার পরিকল্পনা করছে ভারত

সোনার দাম ২ লাখের নিচে নামল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গোপনে সহপাঠীদের অপ্রীতিকর ছবি তুলে সিনিয়র ভাইকে পাঠাতেন বাকৃবি ছাত্রী

কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরাতে দিল্লিতে ‘ক্লাউড সিডিং’, প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ ভারত

আপনার রাশিফল: অতি আত্মবিশ্বাসের লাগাম টানুন, ভুল ধরলে রোমান্স বরবাদ

পোশাক রপ্তানি: বাংলাদেশ ও চীনকে পেছনে ফেলার পরিকল্পনা করছে ভারত

সোনার দাম ২ লাখের নিচে নামল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গোপনে সহপাঠীদের অপ্রীতিকর ছবি তুলে সিনিয়র ভাইকে পাঠাতেন বাকৃবি ছাত্রী

কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরাতে দিল্লিতে ‘ক্লাউড সিডিং’, প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ ভারত

আপনার রাশিফল: অতি আত্মবিশ্বাসের লাগাম টানুন, ভুল ধরলে রোমান্স বরবাদ

পোশাক রপ্তানি: বাংলাদেশ ও চীনকে পেছনে ফেলার পরিকল্পনা করছে ভারত

সোনার দাম ২ লাখের নিচে নামল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গোপনে সহপাঠীদের অপ্রীতিকর ছবি তুলে সিনিয়র ভাইকে পাঠাতেন বাকৃবি ছাত্রী

কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরাতে দিল্লিতে ‘ক্লাউড সিডিং’, প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ ভারত

আপনার রাশিফল: অতি আত্মবিশ্বাসের লাগাম টানুন, ভুল ধরলে রোমান্স বরবাদ

পোশাক রপ্তানি: বাংলাদেশ ও চীনকে পেছনে ফেলার পরিকল্পনা করছে ভারত

সোনার দাম ২ লাখের নিচে নামল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গোপনে সহপাঠীদের অপ্রীতিকর ছবি তুলে সিনিয়র ভাইকে পাঠাতেন বাকৃবি ছাত্রী

কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরাতে দিল্লিতে ‘ক্লাউড সিডিং’, প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ ভারত

আপনার রাশিফল: অতি আত্মবিশ্বাসের লাগাম টানুন, ভুল ধরলে রোমান্স বরবাদ

পোশাক রপ্তানি: বাংলাদেশ ও চীনকে পেছনে ফেলার পরিকল্পনা করছে ভারত

সোনার দাম ২ লাখের নিচে নামল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত