Ajker Patrika

এখনো আঁতকে ওঠেন ফনী

এ জে লাভলু, বড়লেখা (মৌলভীবাজার)
Thumbnail image

দেশ স্বাধীন হয়েছে চার দিন হলো। তখনো ফনী চন্দ্র শীল ও সহযোদ্ধারা মৌলভীবাজার সরকারি হাইস্কুলে থাকতেন। স্কুলের রান্নাঘরের পাশে একটি অস্ত্রাগার ছিল। ওই ঘরে রাখা ছিল বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ও গোলাবারুদ। ২০ ডিসেম্বর দুপুরে অন্তত ২০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা রান্নাঘরে ছিলেন। অস্ত্রাগারে জহির নামের একজন অস্ত্রগুলো নেড়েচেড়ে দেখছিলেন। এ সময় হঠাৎ বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে চারপাশ।

মুহূর্তেই সবার দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান ২০ জন। ফনী চন্দ্র শীলের শরীরে মাইনের স্প্লিন্টার এসে বিঁধে। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। ৫১ বছর আগের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে আঁতকে ওঠেন ফনী চন্দ্র শীল।

ফনী চন্দ্র শীল মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মুছেগুল গ্রামের মৃত হরেন্দ্র চন্দ্র শীলের ছেলে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বয়স ছিল ১৫ বছর। পড়তেন নবম শ্রেণিতে।

আলাপকালে ফনী চন্দ্র শীল বলেন, ‘১৯৭১ সালের এপ্রিল মাস। তারিখটা ঠিক মনে নেই। একদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বড়লেখায় আসে। ঠিক ওই দিন রাতে আমরা ভারতে চলে যাই। তাঁদের শরণার্থী শিবিরে রেখে আমি যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নিই। সবার বাধা উপেক্ষা করে চলে যাই ভারতের লোহারবন্দ ট্রেনিং সেন্টারে। সেখানে এফএফ (ফ্রিডম ফাইটার) ট্রেনিং নিই। এক মাস পর ট্রেনিং শেষে চলে আসি ভারতের রাগনায় (৪ নম্বর সেক্টর) মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে। সেখান থেকে ফিরে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে অংশ নিয়েছি।’

১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার সরকারি হাইস্কুলে ঘটে যাওয়া লোমহর্ষক ঘটনা সম্পর্কে বলেন, ‘৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার হানাদারমুক্ত হয়। এরপর থেকে আমরা মৌলভীবাজার সরকারি হাইস্কুলে থাকতাম। স্কুলের রান্নাঘরের পাশে একটি অস্ত্রাগার ছিল।

বিভিন্ন স্থানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া আর্টিলারি, বোমা, রকেটের বোম, মাইনসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র আর গোলাবারুদ একটি কক্ষে 
রাখা হতো।’

এ সময় তিনি বলেন, ‘২০ ডিসেম্বর ডিউটি থেকে ফিরে আমি অস্ত্র রেখে ভাত খাওয়ার জন্য থালা হাতে নিয়েছি। সবার নাম মনে নেই। ভাত খাব। কেউ ভাত নিচ্ছেন, কেউ ডিম নিচ্ছেন। এ সময় অস্ত্রাগারে জহির নামের একজন অস্ত্রগুলো নাড়াচাড়া করছিলেন। আমি থালায় ডিম নিয়েছি। হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। রান্নাঘরে অন্তত ২০ জন ছিলেন। মুহূর্তেই সবার দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। আমার শরীরে মাইনের স্প্লিন্টার এসে বিদ্ধ হয়। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত