Ajker Patrika

অপরাধী পাকড়াওয়ে ড্রোন

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার ও ইফতিয়াজ নুর নিশান, উখিয়া
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ০৩
Thumbnail image

দুই বছর ধরে অস্থিরতা চলছে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে। প্রতিনিয়ত খুন, অপহরণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ, মাদক পাচার, অগ্নিকাণ্ডসহ নানা ঘটনা ঘটছে। এসব নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানাভাবে তৎপর রয়েছে। এখন অপরাধী শনাক্ত ও আটক করতে ড্রোন ব্যবহার শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, ১২ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সভায় রোহিঙ্গাদের অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কমিটির সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, রোহিঙ্গাদের যাতে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখা যায়, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বেশি সক্রিয় থাকতে বলা হয়েছে।

এরপর ১৩ জানুয়ারি থেকে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধ কর্মকাণ্ড দমাতে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। ড্রোনের মাধ্যমে বিশেষ অভিযানে ইতিমধ্যে সফলতা পেতে শুরু করেছে পুলিশের বিশেষায়িত এই ইউনিট।

১৬ জানুয়ারি ভোরে ড্রোন উড়িয়ে আটক করা হয়েছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির ভাই শাহ আলীকে। এ সময় উদ্ধার করা হয় অপহৃত এক রোহিঙ্গাকে।

২০ জানুয়ারি শাহ আলীকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। তিনি কোনো নাশকতার পরিকল্পনায় ছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার নাইমুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, পাহাড়ি অঞ্চল আর ঘনবসতির কারণে ক্যাম্প এলাকায় অভিযান কষ্টসাধ্য। এ কারণে প্রযুক্তির সাহায্যে অভিযান চালানো হচ্ছে। ড্রোন ব্যবহারে সফলতা আসছে।

১৪ এপিবিএন অধিনায়ক নাইমুল হক আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরের সার্বিক পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অপরাধী ধরা এবং তাদের যেকোনো চক্রান্ত ঠেকাতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক আছি।’

১৪ এপিবিএনের তথ্যমতে, মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর আরসা নামধারী ১১৫ জন সন্ত্রাসীসহ নানা অপরাধে জড়িত পাঁচ শতাধিক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তবে জানুয়ারি মাসে তিনটি অগ্নিকাণ্ড, একই মাসে আরসাপ্রধানের ভাই আটক, এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ জুনুনির অজ্ঞাত স্থান থেকে দেওয়া উসকানিমূলক ভিডিও বার্তা বাড়িয়েছে ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গাদের ভয় ও আতঙ্ক।

আতঙ্কে রাতে ঘুমাতে পারেন না উল্লেখ করে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নুরুল আলম নামের একজন বলেন, ‘আমরা ভয়ে থাকি, কখন কী হয়। দেশেও শান্তি পাইনি, এখানেও পাচ্ছি না। না ঘুমিয়ে রাতে পাহারা দিই, যদি আগুন লাগে! কারণ জীবনের মূল্য বেশি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও এক রোহিঙ্গা বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে হেগে রোহিঙ্গা গণহত্যার ওপর চলমান আন্তর্জাতিক মামলার শুনানি আছে। তাই ক্যাম্পের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে মিয়ানমার সরকারের ইন্ধনে আরসা বড় নাশকতার পরিকল্পনা করছে।’

রোহিঙ্গা শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, নানাভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তাঁরা তৎপর। এর মধ্যে ড্রোনসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করা হয়েছে।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। এ নিয়ে নতুন ও পুরোনো মিলে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত