Ajker Patrika

ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকে তারা

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২২, ১৫: ৪৯
Thumbnail image

তারাগঞ্জ উপজেলার উত্তর রহিমাপুর মুক্তিযোদ্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির একমাত্র ভবনের তিনটি কক্ষ জরাজীর্ণ। দেয়ালে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদ ও ভবনের বিমের পলেস্তারা খসে পড়ছে। এমন অবস্থায় ঝুঁকি নিয়েই চলছে পাঠদান। শুধু শিক্ষার্থীরাই নয় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান করাতে গিয়ে শিক্ষকেরাও পড়ছেন বিড়ম্বনায়।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তামিম শাহ বলে, ‘করোনাত মেলা দিন স্কুল বন্ধ ছিল। তবুও স্যারেরা স্কুল ঠিক করে নাই। এখনো আমাদের ছাদের দিকে তাকিয়ে ক্লাস করতে হয়। সব সময় ভয়ে থাকি কখন ছাদ ভাঙি মাথাত পড়ে।’

চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র বায়েজিদ সরকার বলে, ‘স্কুলোত আসি বসার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। সব খানেই ধুলা আর সিমেন্ট খসে পড়ে। কাপড়, বই নষ্ট হয়া যায়। চোখে বালু ঢুকে জ্বালা করে। স্যারদের বললে বলে ধৈর্য ধরো, নতুন স্কুল হবে। কিন্তু কোনো দিন সেই নতুন স্কুল হবে?’

সরেজমিনে বিদ্যালয়টিতে দেখা গেছে, তিন কক্ষ বিশিষ্ট স্কুল ভবনটি জরাজীর্ণ। কক্ষগুলোর ছাদ ও বিম থেকে পলেস্তারা খসে পড়েছে। দেয়ালে দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় বিদ্যালয়ের বেঞ্চগুলো নড়বড়ে হয়ে গেছে। এর মধ্যেই শিক্ষকেরা পাঠদান করছেন। কেউ বেঞ্চে বসে, কেউবা আবার মেঝেতে বসে শিক্ষকের কথা শুনছে।

ওই বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী জান্নাতি আক্তার বলে, ‘একবার বইয়ের দিকে তাকাই তো আরেকবার ছাদের দিকে তাকাই। রুমে বসে থাকতে ভয় লাগে। স্যার যখন ক্লাস শেষ করে, তখন রুমের বাইরোত যায়া দাঁড়াই।’

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুর্শা ইউনিয়নের জয়বাংলা বাজারের কাছে ১৯৮২ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯০ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) একটি পাকা ভবন নির্মাণ করে। ওই ভবনে তিনটি কক্ষ আছে। কিন্তু নিম্নমানের কাজ হওয়ায় শুরু থেকেই ভবনটির ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়তে থাকে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি লুৎফর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শ্রেণি কক্ষের এমন অবস্থা দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে একাধিকবার পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হয়েছে। ইউএনও, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রকৌশলীও বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিপূর্ণ পাঠদান দেখে গেছেন। কিন্তু আজও কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।’

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৌসুমী বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, ক্লাসে ঢুকে শিক্ষকেরাও ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। বিদ্যালয়ের এই সমস্যাগুলোর কথা উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। সবাই আশ্বাস দেন। কিন্তু কোনো কাজ হয় না। বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস নিতে হচ্ছে।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, ‘স্কুলটির সমস্যার কথা উপজেলা প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলা সমন্বয় কমিটিতেও আলোচনা হয়েছে।’

এ বিষয়ে কথা হলে উপজেলা প্রকৌশলী হায়দার জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিদ্যালয়টির জরাজীর্ণ অবস্থার কথা জানা আছে। বরাদ্দ চেয়ে প্রয়োজনীয় কাগজ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে সেখানে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত