Ajker Patrika

সনদ বাতিল হলেও থামেনি দলিল লেখা

আশরাফুল আলম আপন, বদরগঞ্জ
আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২২, ১২: ৪৫
Thumbnail image

অনিয়মের অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় সনদ হারিয়েছেন বদরগঞ্জ দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস এবং সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম। কিন্তু এখনো তাঁরা সমিতির পদ ধরে রেখেছেন এবং সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে দলিল লিখে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে জমিগ্রহীতার কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি ১০৩ জন দলিল লেখকের গোপন ভোটে কুদ্দুস সমিতির সভাপতি এবং রাশেদুল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপরই তাঁরা সমিতির নামে অর্থ আদায়ে নামেন। এ ছাড়া জমির দাম কমিয়ে শ্রেণি পরিবর্তনে ক্রেতা-বিক্রেতাদের প্রভাবিত করেন।

দুদকের তদন্তে এমন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক নিবন্ধন ২০২০ সালের ১৪ জুন কুদ্দুসের ৬৮ নম্বর এবং রাশেদুলের ৭৭ নম্বর সনদ বাতিল করেন। ওই বছরের ২৬ আগস্ট রংপুর জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম প্রামানিক স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, দলিলে জমির মূল্য কম করে প্রদর্শনে জড়িত থাকায় ও অসদাচরণের দায়ে দলিল লেখক (সনদ) বিধিমালা মোতাবেক কুদ্দুস ও রাশেদুলের সনদ বাতিল করা হয়।

দলিল লেখক সমিতি সূত্র জানায়, সংগঠনের গণতন্ত্র অনুযায়ী কারও সনদ বাতিল হলে সমিতির পদে থাকতে পারবেন না। সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়েও আসতে পারবেন না। কিন্তু কুদ্দুস ও রাশেদুল এখনো প্রভাব খাঁটিয়ে পদ আকরে ধরে আছেন। ছাড়েননি অফিসের বারান্দাও।

কুদ্দুস ও রাশেদুলের সনদ বাতিলের পর কিছুদিন সমিতির নামে জমিগ্রহীতার কাছ থেকে টাকা আদায় বন্ধ ছিল। কিন্তু এক মাস আগে আবারও এই আদায় শুরু করা হয়েছে। নেতৃত্ব দিচ্ছেন সনদ বাতিল হওয়া দুজন।

সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এখানে সপ্তাহে দুই দিন মঙ্গল ও বুধবার দলিল সম্পাদন হয়। এই দুই দিনে প্রায় ৩০০ দলিল করা হয়। প্রতি দলিলে সাবরেজিস্ট্রারের নামে ১ হাজার ২০০ এবং সমিতির নামে ২ থেকে ৪ হাজার আদায় করা হচ্ছে।

দলিল লেখার সময় জমিগ্রহীতার কাছ থেকে দলিল লেখকেরা এই টাকা আদায় করেন। পরে সাবরেজিস্ট্রারের হয়ে নকলনবিশ আনোয়ার ও পিয়ন মোস্তফা তা সংগ্রহ করেন। আর সমিতির টাকা নেন সভাপতি কুদ্দুস ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন দলিল লেখক জানান, সনদ বাতিল হওয়ার পরও কুদ্দুস ও রাশেদুল জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম প্রামানিক ও সাবরেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান কাজীর যোগসাজশে টাকা আদায় করছেন। তাঁরা অন্যের সনদ ব্যবহার করে দলিল সম্পাদন করছেন। সাবরেজিস্ট্রার প্রশ্রয় না দিলে তাঁরা এখান থেকে অনেক আগেই সরে যেতেন।

তিনজন নকলনবিশ দাবি করেন, অফিসের যেকোনো অনুষ্ঠানে কুদ্দুস ও রাশেদুল সামনের সারিতে থাকেন। কারণ তাঁদের দিয়ে সাবরেজিস্ট্রারের ঘুষ বাণিজ্য ভালো হয়।

সনদ বাতিল হওয়ার পরও কুদ্দুস ও রাশেদুলকে নিয়ে একই অনুষ্ঠানে হাজির থাকছেন জেলা রেজিস্ট্রার ও সাবরেজিস্ট্রার। গত বছরের ১৫ আগস্ট সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ের এক দোয়া অনুষ্ঠানে দুজন উপস্থিত ছিলেন। এক মাস আগে জেলা রেজিস্ট্রারের শীতবস্ত্র বিতরণ এবং আরেকটি অনুষ্ঠানেও দুজনকে দেখা গেছে।

এক দলিল লেখক জানান, কিছুদিন আগে সনদ নবায়নের জন্য জেলা রেজিস্ট্রারের নামে প্রতি দলিল লেখকের কাছ থেকে ২ হাজার করে তোলেন সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক।

অভিযোগ সম্পর্কে সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল বলেন, ‘আমরা সমিতির নামে কোনো টাকা তুলি না।’ সনদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সনদ বাতিল হয়েছে ঠিক, তবে ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় আছি। এ কারণে অফিস ছাড়িনি।’ একই কথা বললেন সভাপতি কুদ্দুস।

এ বিষয়ে মুখ খোলেননি সাবরেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান কাজী। তবে জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম প্রামানিক বলেন, ‘সনদ বাতিলের পর তাঁদের অফিস পাত্তা দেওয়ার কথা নয়। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘আমার নামে কেউ টাকা নিলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত