নিজের শিল্পকর্মে নিজেই ভাস্বর রফিকুন নবী

প্রধান অতিথির আসতে খানিক বিলম্ব। তাই শিল্পী রফিকুন নবীকে মঞ্চের মাঝে আসন পেতে দেওয়া হলো। কোনো প্রশ্ন থাকলে এই সময়ে তিনি তার উত্তর দেবেন। একজন জানতে চাইলেন তাঁর সময়ে বাম আন্দোলনের কথা। জানালেন, আর্ট কলেজে পড়া শুধু রেখা অঙ্কন আর তুলি ও ক্যানভাসের কাজ ছিল না। তখন তাঁরা গোটা বাংলার নানা সংগ্রাম-আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মানুষের জীবন দেখেছেন। তাই আজ পেছন ফিরে তাকালে নিজের জীবনের সঙ্গে সঙ্গে এ দেশের ইতিহাসকেও দেখেন শিল্পী রফিকুন নবী, যা ভাস্বর হয়ে ওঠে তাঁর শিল্পকর্মেও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক শিল্পী রফিকুন নবীর ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর শিল্পকর্মের রেট্রোস্পেকটিভ আয়োজন করেছে জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন কমিটি। জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে এই প্রদর্শনী চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। তারই উদ্বোধনী আয়োজন ছিল গতকাল জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মিলনায়তনে।

আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘রফিকুন নবী কেবল একজন বরেণ্য শিল্পীই নন। তিনি আমাদের ইতিহাসের অংশ বটে। তাঁর জীবনের ৮০ বছরের সময়কালে ঘটা এ দেশের নানা চড়াই-উতরাই আন্দোলন-সংগ্রাম তাঁকে স্পর্শ করেছে। এই রেট্রোস্পেকটিভ প্রদর্শনীতে তাঁর ছাত্রজীবন থেকে এ পর্যন্ত করা সব ধরনের শিল্পকর্মের উপস্থিতি রয়েছে, যা তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা দেবে।’

বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘কাজের সুবাদে আমার সুযোগ হয়েছে রফিকুন নবীর সঙ্গে কাজ করার। শিল্পী, শিক্ষকতার ঊর্ধ্বে তিনি একজন ভালো মানুষ। এটাই তাঁর পরিচয়। মানুষের ভালো করার চিন্তার মাঝেই তিনি সময় কাটান। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের নিয়ে চিন্তা করেন। টোকাই কার্টুন দিয়ে তিনি সমাজের বৈষম্য তুলে ধরেছেন।’

স্মৃতিচারণা করে শিল্পী রফিকুন নবী বলেন, ‘৮০ বছর সবাই যত আনন্দের সাথে উদ্‌যাপন করেন, ঘটনাটা কিন্তু আমার জন্য ততটা আনন্দের নয়। কারণ যখন দীর্ঘ ৮০ বছর কিংবা ৬৫ বছরের শিল্পজীবনের দিকে তাকাই, তখন দেখি এই পথ যে সহজ ছিল তা নয়। অন্য দেশের মতো শিল্পী হিসেবে এখানে সুখে-শান্তিতে থাকা যায় না। দেশে সব সময়ই কোনো না কোনো বিপদ আসে। আমাদেরও তার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে।’

শিল্পী আরও বলেন, আবেদিন (জয়নুল আবেদিন) স্যার শিখিয়েছেন, এসবের মধ্যেই চলতে হবে। জানতে হবে কেন ঘটছে, কী ঘটছে। সেই শিক্ষা থেকেই হয়তো বিভিন্ন আন্দোলনে জড়িয়েছিলাম।’

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন গ্যালারি চিত্রকের নির্বাহী পরিচালক শিল্পী মনিরুজ্জামান। জন্মদিন উদ্‌যাপন কমিটির পক্ষে আয়োজন নিয়ে বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। সঞ্চালনায় ছিলেন অভিনেতা আফজাল হোসেন।

অনুষ্ঠানে রনবীর আঁকা শিল্পকর্ম নিয়ে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এ ছাড়া চারুকলা অনুষদ ও গ্যালারি চিত্রকে নভেম্বরের শেষ দিকে বর্ণাঢ্য আয়োজনে শিল্পীর জন্মদিন উদ্‌যাপন করা হবে।

জাদুঘরের প্রদর্শনী দেখা যাবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। এ ছাড়া গ্যালারি চিত্রকেও গতকাল থেকে শিল্পীর শিল্পকর্ম নিয়ে প্রদর্শনী শুরু হয়েছে।