বাসব রায়
কোনোভাবেই ঊর্ধ্বতনেরা অধস্তনদের পুরো কথা শুনতে চান না। ঊর্ধ্বতনেরা অধস্তনের প্রতিটি কথায় যেন প্রগলভতা বা ভয়ানক বাড়াবাড়ি খুঁজে পান। কেবল অফিসের বড় সাহেবরাই সবটা বোঝেন আর বাকি সবার উপলব্ধি অশ্বরম্ভা! এ রকম বিদগ্ধ অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে এবং এটি যে কতখানি অপমানজনক ব্যাপার তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। নিজেদের সবজান্তা ভাবেন বড় সাহেবরা। জানি না বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ রকম হয় কি না, কিন্তু বাংলাদেশে এটি খুব প্রচলিত নেতিবাচক একটি প্রক্রিয়া, যা নেহাতই অনুচিত একটি কাজ, বিশেষ করে তাঁবেদারি সংস্কৃতি আমাদের ঊর্ধ্বতনদের মননে জাঁকিয়ে বসে সাধারণদের সামনে একটি জগদ্দল পাহাড় হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।
একটি অফিসের মাঝারি গোছের এক কর্মকর্তার কাছে আমার প্রতিষ্ঠানবিষয়ক আইনি জটিলতা সম্পর্কে আমাকে শুনানির জন্য ডাকা হয়েছিল; কয়েকজন কর্মকর্তাসহ আইনবিদও ছিলেন সেখানে। ফাইল দেখে কর্মকর্তা মহোদয় আমাকে বললেন, ‘আপনি ট্রেন ফেল করেছেন, সুতরাং আপনার ফাইলটি ক্লোজড করার সুপারিশ করছি।’ আমি নানাভাবে ওনাদের বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু আমার কোনো কথাই ওনারা শুনতে চান না বা আমার কথার কোনো মূল্য নেই—এটা বোঝাতে চাচ্ছিলেন। যা-ই হোক, একটু জোর করে চিৎকার করে আমাকে বলতে হয়েছিল, ‘স্যার, ফাইলটা ভালোভাবে দেখুন, ট্রেন মিস আমি করিনি; বরং চলন্ত ট্রেন থেকে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে।’ কাজ হয়েছিল আমার সঙ্গে সঙ্গেই। যা-ই হোক, এভাবেই নানা রকমের ঘাত-প্রতিঘাত এড়িয়ে-মাড়িয়ে অধস্তনদের চলতে হয়।
পরস্পর সহানুভূতিশীল হতে পারি ইচ্ছে করলেই, একে অপরের পাশাপাশি বা কাছাকাছি এসে দুঃসময় কিংবা সুসময় ভাগাভাগি করতেই পারি; এতে তো দোষের কিছু নেই। কিন্তু বাঙালির কখনো কখনো আত্মম্ভরিতা এতটাই বেশি পরিমাণে হয় যে তা মাত্রাকে অতিক্রম করে ফেলে। তাই তো মানসিক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, পারস্পরিক শ্রদ্ধা বা ভালোবাসা বিনষ্ট হয়। ক্রমেই অসহিষ্ণু হয়ে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে বঞ্চিতের দল। ঊর্ধ্বতনেরা ওপর দিকে দৃষ্টি দিতে এতটাই মগ্ন থাকেন যে অধস্তনদের আকুলতা গ্রাহ্য করার অবকাশটুকু তাঁদের থাকে না। হতেই পারে ঊর্ধ্বতনের সামান্য সহানুভূতি পেলে অসহায় পিতা অবসরভাতা বা পেনশনের টাকাটা পেলে মেয়ের বিয়ে বা ছেলের জন্য কোনো সংস্থান করতে পারবেন; কিন্তু ওপরওয়ালাদের কান এতটাই ভারী যে তা সেখান পর্যন্ত পৌঁছায় না। অধস্তনদের বোবা কান্না শোনার অপেক্ষায় কেউ থাকেন না; বরং ঊর্ধ্বতনদের পেছনে তেল মালিশ করতে মরিয়া সবাই।
আমরা অসহায় হয়ে বড় স্যারের দরজার দিকে চেয়ে থাকি যদি বড় কর্তাটি দয়াপরবশ হন! কিন্তু দিনের পর দিন, মাস, বছর ঘুরে কিছুতেই সুরাহা হয় না। চাতক পাখির মতো বৃষ্টির প্রার্থনা নিয়ে অপেক্ষা ছাড়া কিছুই করার উপায় থাকে না। প্রজাতন্ত্রের বড় কর্তাদের এমন মানসিকতা রাষ্ট্রের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর; আর এসব দেখভালের ব্যাপারটা যেন কালো কাচের ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায় অনায়াসেই। সবার সামনে অনেক প্রশ্ন, অজস্র জিজ্ঞাসার এভাবেই অপমৃত্যু ঘটে অথচ আমরা কেউ কিছুই করতে পারি না। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় না থাকলে বড় সাহেবরা এমন রূঢ় আচরণ করার সাহস এবং শক্তি পেতেন না। ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিরা বর্তমান সময়গুলোতে রাজনৈতিকভাবে খুবই শক্তিশালী হন এবং প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তাঁরা রাজনীতিতে সক্রিয় বলয় সৃষ্টি করে বিশেষ ক্ষমতাধর হয়ে যান; ফলে নিম্নস্তরে গুরুত্ব দেওয়ার মতো সময় ও মানসিকতা কোনোটাই তাঁদের থাকে না।
প্রভাব-প্রতিপত্তির এই বলয় উচ্চমহল থেকে নিম্নপর্যায় পর্যন্ত অলিখিতভাবে চলমান রয়েছে। এভাবেই দুর্নীতির শিকড় আরও পাকাপোক্ত অবস্থান নিয়ে ফেলছে এবং প্রায় সব ক্ষেত্রেই এর শাখা-প্রশাখা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুধীজনেরা জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য আর প্রবন্ধ বা নিবন্ধ রচনা নিয়ে ব্যস্ত, তোষামোদকারীরা ধাপে ধাপে উন্নীত হয়ে আপাদমস্তক ভদ্রলোক হয়ে যাচ্ছেন আর এদিকে প্রকৃত ভদ্রলোকটি পাওয়া না-পাওয়ার দ্বন্দ্ব বুকে নীরবে-নিভৃতে সাহেবদের মুখাপেক্ষী হয়ে দিন কাটিয়ে দিচ্ছেন। একটি জটিল বলয়ে আবদ্ধ হয়ে তাঁবেদারি সংস্কৃতির কাছে হেরে যাচ্ছে সময়, মরে যাচ্ছে সম্ভাবনা। অথচ দেখার কেউ নেই।
এমন বিরুদ্ধ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে এবং সংকল্পবদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণ হয় এরূপ ভাবনাকে জোরদার করতে হবে।
লেখক: কবি
কোনোভাবেই ঊর্ধ্বতনেরা অধস্তনদের পুরো কথা শুনতে চান না। ঊর্ধ্বতনেরা অধস্তনের প্রতিটি কথায় যেন প্রগলভতা বা ভয়ানক বাড়াবাড়ি খুঁজে পান। কেবল অফিসের বড় সাহেবরাই সবটা বোঝেন আর বাকি সবার উপলব্ধি অশ্বরম্ভা! এ রকম বিদগ্ধ অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে এবং এটি যে কতখানি অপমানজনক ব্যাপার তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। নিজেদের সবজান্তা ভাবেন বড় সাহেবরা। জানি না বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ রকম হয় কি না, কিন্তু বাংলাদেশে এটি খুব প্রচলিত নেতিবাচক একটি প্রক্রিয়া, যা নেহাতই অনুচিত একটি কাজ, বিশেষ করে তাঁবেদারি সংস্কৃতি আমাদের ঊর্ধ্বতনদের মননে জাঁকিয়ে বসে সাধারণদের সামনে একটি জগদ্দল পাহাড় হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।
একটি অফিসের মাঝারি গোছের এক কর্মকর্তার কাছে আমার প্রতিষ্ঠানবিষয়ক আইনি জটিলতা সম্পর্কে আমাকে শুনানির জন্য ডাকা হয়েছিল; কয়েকজন কর্মকর্তাসহ আইনবিদও ছিলেন সেখানে। ফাইল দেখে কর্মকর্তা মহোদয় আমাকে বললেন, ‘আপনি ট্রেন ফেল করেছেন, সুতরাং আপনার ফাইলটি ক্লোজড করার সুপারিশ করছি।’ আমি নানাভাবে ওনাদের বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু আমার কোনো কথাই ওনারা শুনতে চান না বা আমার কথার কোনো মূল্য নেই—এটা বোঝাতে চাচ্ছিলেন। যা-ই হোক, একটু জোর করে চিৎকার করে আমাকে বলতে হয়েছিল, ‘স্যার, ফাইলটা ভালোভাবে দেখুন, ট্রেন মিস আমি করিনি; বরং চলন্ত ট্রেন থেকে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে।’ কাজ হয়েছিল আমার সঙ্গে সঙ্গেই। যা-ই হোক, এভাবেই নানা রকমের ঘাত-প্রতিঘাত এড়িয়ে-মাড়িয়ে অধস্তনদের চলতে হয়।
পরস্পর সহানুভূতিশীল হতে পারি ইচ্ছে করলেই, একে অপরের পাশাপাশি বা কাছাকাছি এসে দুঃসময় কিংবা সুসময় ভাগাভাগি করতেই পারি; এতে তো দোষের কিছু নেই। কিন্তু বাঙালির কখনো কখনো আত্মম্ভরিতা এতটাই বেশি পরিমাণে হয় যে তা মাত্রাকে অতিক্রম করে ফেলে। তাই তো মানসিক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, পারস্পরিক শ্রদ্ধা বা ভালোবাসা বিনষ্ট হয়। ক্রমেই অসহিষ্ণু হয়ে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে বঞ্চিতের দল। ঊর্ধ্বতনেরা ওপর দিকে দৃষ্টি দিতে এতটাই মগ্ন থাকেন যে অধস্তনদের আকুলতা গ্রাহ্য করার অবকাশটুকু তাঁদের থাকে না। হতেই পারে ঊর্ধ্বতনের সামান্য সহানুভূতি পেলে অসহায় পিতা অবসরভাতা বা পেনশনের টাকাটা পেলে মেয়ের বিয়ে বা ছেলের জন্য কোনো সংস্থান করতে পারবেন; কিন্তু ওপরওয়ালাদের কান এতটাই ভারী যে তা সেখান পর্যন্ত পৌঁছায় না। অধস্তনদের বোবা কান্না শোনার অপেক্ষায় কেউ থাকেন না; বরং ঊর্ধ্বতনদের পেছনে তেল মালিশ করতে মরিয়া সবাই।
আমরা অসহায় হয়ে বড় স্যারের দরজার দিকে চেয়ে থাকি যদি বড় কর্তাটি দয়াপরবশ হন! কিন্তু দিনের পর দিন, মাস, বছর ঘুরে কিছুতেই সুরাহা হয় না। চাতক পাখির মতো বৃষ্টির প্রার্থনা নিয়ে অপেক্ষা ছাড়া কিছুই করার উপায় থাকে না। প্রজাতন্ত্রের বড় কর্তাদের এমন মানসিকতা রাষ্ট্রের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর; আর এসব দেখভালের ব্যাপারটা যেন কালো কাচের ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায় অনায়াসেই। সবার সামনে অনেক প্রশ্ন, অজস্র জিজ্ঞাসার এভাবেই অপমৃত্যু ঘটে অথচ আমরা কেউ কিছুই করতে পারি না। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় না থাকলে বড় সাহেবরা এমন রূঢ় আচরণ করার সাহস এবং শক্তি পেতেন না। ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিরা বর্তমান সময়গুলোতে রাজনৈতিকভাবে খুবই শক্তিশালী হন এবং প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তাঁরা রাজনীতিতে সক্রিয় বলয় সৃষ্টি করে বিশেষ ক্ষমতাধর হয়ে যান; ফলে নিম্নস্তরে গুরুত্ব দেওয়ার মতো সময় ও মানসিকতা কোনোটাই তাঁদের থাকে না।
প্রভাব-প্রতিপত্তির এই বলয় উচ্চমহল থেকে নিম্নপর্যায় পর্যন্ত অলিখিতভাবে চলমান রয়েছে। এভাবেই দুর্নীতির শিকড় আরও পাকাপোক্ত অবস্থান নিয়ে ফেলছে এবং প্রায় সব ক্ষেত্রেই এর শাখা-প্রশাখা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুধীজনেরা জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য আর প্রবন্ধ বা নিবন্ধ রচনা নিয়ে ব্যস্ত, তোষামোদকারীরা ধাপে ধাপে উন্নীত হয়ে আপাদমস্তক ভদ্রলোক হয়ে যাচ্ছেন আর এদিকে প্রকৃত ভদ্রলোকটি পাওয়া না-পাওয়ার দ্বন্দ্ব বুকে নীরবে-নিভৃতে সাহেবদের মুখাপেক্ষী হয়ে দিন কাটিয়ে দিচ্ছেন। একটি জটিল বলয়ে আবদ্ধ হয়ে তাঁবেদারি সংস্কৃতির কাছে হেরে যাচ্ছে সময়, মরে যাচ্ছে সম্ভাবনা। অথচ দেখার কেউ নেই।
এমন বিরুদ্ধ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে এবং সংকল্পবদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণ হয় এরূপ ভাবনাকে জোরদার করতে হবে।
লেখক: কবি
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪