Ajker Patrika

ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে তাঁরা

মো. নাজিম উদ্দিন ইমন, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা)
আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০: ৫৭
ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে তাঁরা

দুই বছর ধরে চলমান করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লির ব্যবসায়ীরা। উৎপাদনমুখী এ শিল্প অনেক লড়াই-সংগ্রাম করে কয়েক মাস ধরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে। আসন্ন ঈদুল ফিতরের মৌসুমকে লক্ষ্য করে টিকে থাকার লড়াইয়ে পোশাক উৎপাদনে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছে কারখানাগুলো।

উপমহাদেশের একটি বৃহৎ তৈরি পোশাকশিল্প এলাকা কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লি। এ তৈরি পোশাকশিল্প এলাকায় ছয় হাজারের অধিক ছোট-বড় কারখানায় কাজ করেন প্রায় আট লাখ শ্রমিক। এ ছাড়া কেরানীগঞ্জ উপজেলার শুভাঢ্যা ও আগানগর ইউনিয়নে ২ থেকে ৩ শতাধিক বিপণিবিতানে শোরুম রয়েছে ১০ হাজারের অধিক। কেরানীগঞ্জের তৈরি পোশাক রপ্তানি না হলেও সারা দেশের চাহিদা মেটাচ্ছে খুব ভালোভাবেই।

ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশের তৈরি পোশাকের ৬০ ভাগ চাহিদা মেটায় কেরানীগঞ্জের এই গার্মেন্টস পল্লি। এখানে ব্যবসায়ীদের মধ্য ৭০ ভাগ নিজেরা পোশাক উৎপাদন ও বিক্রি করেন এবং বাকি ৩০ ভাগ ব্যবসায়ীরা চীন, ভারত, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পোশাক এনে বিক্রি করেন।

কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি কারখানাতেই পোশাক উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন পোশাকশ্রমিকেরা এ ছাড়া ঈদ মৌসুমকে লক্ষ্য করে বাড়তি প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লি থেকে সারা দেশে পাইকারি মূল্যে পোশাক সরবরাহ করা হয়, ফলে পবিত্র শবে মেরাজের পর থেকেই মূলত শুরু হয় কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লির ঈদুল ফিতরের মৌসুম। প্রথমদিকে বেচাকেনা কম হলেও পবিত্র শবে বরাতের পর বেচাকেনা পুরোদস্তুর জমে ওঠে। আবার রমজানের মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই শেষ হয়ে যায় কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লির ঈদুল ফিতরের মৌসুম।

লাকি সেভেন গার্মেন্টসের মালিক মো. বরকত বলেন, ‘গত দুই বছরে করোনার ধাক্কায় আমরা দিশেহারা। করোনার কারণে আমরা পুঁজি হারাতে বসেছি। অনেক সাহস করে ঝুঁকি নিয়ে এবার ঈদ মৌসুমকে লক্ষ্য করে আট হাজার প্যান্ট তৈরি করেছি। আশা করছি, এবার ব্যবসা ভালো হবে। কোনো কারণে ব্যবসা খারাপ হলে আমার মতো অনেক ব্যবসায়ী আর টিকে থাকতে পারবে না।’

পূর্ব আগানগর এলাকার পোশাকশ্রমিক রহমান মিয়া বলেন, ‘আমরা হারা বছর কারখানায় কাম করি হপ্তা (নামেমাত্র সাপ্তাহিক মজুরি) নিয়ে। যা হপ্তা পাই, তা দিয়া চলি। ঈদের সম (সময়) মাহাজন হিসাব কইরা হারা বছরের পাওনা দিয়া দ্যায়, আর মাহাজনের ব্যবসা ভালা অইলে আমরাও মোডা ট্যাহা বকশিশ পাই। দুই বছর তো করোনার লাইগা ঠিকমতো ট্যাহাই পাই নাই, বকশিশ তো পড়ে। মনে অয় এইবার ভালা কিছু অইব।’

কালীগঞ্জ এলাকার গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আলী আহাম্মদ বলেন, ‘গত কয়েক মৌসুমে আমরা ব্যবসা ভালো করতে পারি নাই। এবার এখন পর্যন্ত দেশের করোনা পরিস্থিতি ভালো। আশা করছি এবার ভালো করতে পারব।’

এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ শেখ কাউসার বলেন, ‘করোনায় কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লির যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়। অনেক ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে পথে বসে গেছে। তবে ব্যবসায়ীদের চেষ্টায় আমরা এটাকে কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছি। এবারের ঈদ মৌসুম ধরতে পারলে অনেক ব্যবসায়ী আবার উঠে দাঁড়াতে পারবে।’

শেখ কাউসার আরও বলেন, ‘পরপর দুই বছর করোনার থাবায় আমরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি। তা ছাড়া আমাদের এই গার্মেন্টস পল্লি শিল্পাঞ্চল ঘোষণা না করায় আমরা তেমন কোনো সরকারি সুবিধাও পাচ্ছি না। এবারও ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিয়ে ব্যাংকঋণ করে সামনের মৌসুমকে উদ্দেশ্য করে পোশাক উৎপাদন করেছে। এবার হোঁচট খেলে এই শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়ে যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত