Ajker Patrika

স্কুলই যেন প্রাণ সুফিয়া বেগমের

শিপুল ইসলাম, রংপুর
স্কুলই যেন প্রাণ সুফিয়া বেগমের

পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ নেই। স্কুলটির মাঠে আবর্জনার নোংরা গন্ধ। গ্রামের ছেলেমেয়েরা স্কুলে আসতে চায় না। তিন কক্ষের একটি পাকা ভবন থাকলেও ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। ভিজে যায় শিক্ষার্থীদের বই খাতা। বেঞ্চ ও চেয়ারের অভাবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মেঝেতে বসেই ক্লাস করতে হয়। জোড়াতালি দিয়ে চলছে সব কার্যক্রম। এমন পরিবেশে ১৯৯৯ সালে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কল্যাণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন সুফিয়া বেগম।

স্কুলটির এমন দুরবস্থা দেখে সুফিয়ার আক্ষেপ হতো। কিছুদিন পেরোতেই স্কুলের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে ডেকে বলেছিলেন, ‘বিদ্যালয়টি কার?’ শিক্ষার্থীদের সমস্বরে উত্তর ছিল, ‘আমাদের’। এরপর সুফিয়া জানতে চেয়েছিলেন, ‘তাহলে বিদ্যালয়ের মাঠ এত নোংরা কেন? আজ আমরা মাঠের মাত্র চার হাত জায়গা পরিষ্কার করব।’ এভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম দিয়ে ধীরে ধীরে পুরো স্কুলের চেহারাই বদলে দেন তরুণ ওই শিক্ষিকা। একে একে আসে নতুন আলমারি, পাকা হয় ক্লাসরুম। স্কুলে চলে আসে বিদ্যুৎও। একপর্যায়ে বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও।

এর মধ্যে পার হয়ে গেছে ২২টি বছর। সেই একই রকম উদ্যমী রয়ে গেলেন সুফিয়া। নাহ্‌, বয়সের ভার তাঁর জন্য কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। পরম মমতায় আপন করে নিয়েছেন শিক্ষার্থীদের। রোজ সকালে নিষ্ঠা ও একাগ্রতায় শুরু করেন পাঠদান। রুটিনকাজের পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক নানা বিষয়ে দায়িত্ব পালন করার পুরস্কার হিসেবে এ বছরও রংপুর জেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন সুফিয়া বেগম। এর আগে ২০১৬ সালে এমন মর্যাদা পান সুফিয়া। এ ছাড়া শিক্ষা, সেবা ও জনকল্যাণমুখী স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে বিএসবি ফাউন্ডেশন কর্তৃক ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস-২০১২’ বেস্ট অ্যাওয়ার্ড পান তিনি।

সম্প্রতি আজকের পত্রিকাকে এসব জানান এ শিক্ষিকা। সুফিয়া বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও স্কুলে শতভাগ শিক্ষার্থীর উপস্থিতির জন্য অভিভাবকদের নিয়ে প্রতি মাসে সমাবেশ করি। শীত-বৃষ্টি সব সময় স্কুলটিতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ৯৫ শতাংশের বেশি থাকে।’

সুফিয়ার বাড়ি রংপুর সদর উপজেলার সাতমাথা মাহিগঞ্জ গ্রামে। বাড়ি থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে নবদিগঞ্জ বাজার হয়ে স্কুলে যেতে হয়। সুফিয়াকে নিয়ে স্কুলের সহকারী শিক্ষক শামীমা নাসরিন বলেন, ‘পাঠ্য বিষয়ের বাইরেও শিক্ষার্থীদের পারিবারিক, সামাজিক নানা বিষয়ে সচেতন করে তোলেন সুফিয়া।’

বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, স্কুলটির সামনে মাঝারি আয়তনের সুন্দর সবুজ মাঠ। মাঠের তিন পাশে গাছ লাগানো। বিদ্যালয় ভবনের বারান্দায় সাজানো হরেক রকম ফুলগাছের টব। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষগুলোর নাম রাখা হয়েছে শাপলা, সূর্যমুখী, জবা, গাঁদা, ডালিয়া, অপরাজিতাসহ বিভিন্ন ফুলের নামে। বিদ্যালয়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামে গ্রামে।

বেগম রোকেয়া সরকারি কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ার সময়ই শিক্ষকতা শুরু করেন সুফিয়া। এরপর বিভিন্ন স্কুল হয়ে ১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে যোগ দেন কল্যাণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের নতুন বেতনকাঠামো আসছে, পে কমিশন গঠন

ব্যাংকে চোখ বেঁধে গ্রাহককে হাতুড়িপেটা, পায়ের নখ তোলার চেষ্টা

‘সোজা কথা, যারে ভালো লাগবে তারে কোপামু’

শুল্ক ছাড়া যুক্তরাজ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানির সুযোগ পেল ভারত

সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়াতে পারে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া—শক্তিতে কে বেশি এগিয়ে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত