Ajker Patrika

লটারিতে ভর্তি নিয়ে ক্ষোভ

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ১০
লটারিতে ভর্তি নিয়ে ক্ষোভ

মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে হলদিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে লটারির মাধ্যমে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়েছে। এতে পঞ্চম শ্রেণিতে ভালো ফল করেও অনেক শিক্ষার্থী সুযোগ পায়নি। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সুযোগ না পাওয়া শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকেরা।

গতকাল শনিবার সকালে উপজেলার একমাত্র সরকারি মাধ্যমিক এই বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুল আউয়াল, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেওয়ান মো. জাহাঙ্গীর, একাডেমিক সুপারভাইজার সোহেল হায়দার খান ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম ভর্তিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে এই লটারি করেন। লটারিতে লৌহজং উপজেলার ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৭৯ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিক্রমপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মাসুদ খান, লৌহজং প্রেসক্লাবের সভাপতি মিজানুর রহমান ঝিলু ও সাধারণ সম্পাদক মো. মানিক মিয়াসহ অন্য শিক্ষক ও অভিভাবকেরা।

জানা যায়, ২৭৯ শিক্ষার্থী ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ফরম কেনে। এর মধ্যে ১৪২ জন ছাত্র ও ১৪৪ জন ছাত্রী। তাদের মধ্য থেকে ১২০ শিক্ষার্থীকে লটারির মাধ্যমে ভর্তি করা হয়, যার মধ্যে ৬০ জন ছাত্র ও ৬০ জন ছাত্রী। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ও বিদ্যালয়ের কর্মচারী কোটায় ৩ জনকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে।

লটারিতে বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভালো ফল করা শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়টিতে ভর্তির সুযোগ না পাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে অভিভাবকসহ স্থানীয় সচেতন মহল। বিদ্যালয়টিতে লটারি শেষে সন্তানদের ভর্তির সুযোগ না মেলায় অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীদের কান্নার দৃশ্য ছিল চোখে পড়ার মতো।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্যে সোনিয়া আক্তার, মৌসুমী আক্তার, সাইফুল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় উপস্থিত ইউএনও, শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষকের কাছে জোড়হাতে আকুতি করেন তাঁদের সন্তানদের ভর্তির সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।

রাফিয়া খান নামের এক শিক্ষার্থী বলে, ‘আমি খলিলুর রহমান আইডিয়াল স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছি। প্রথম শ্রেণি থেকে এ পর্যন্ত প্রথম/দ্বিতীয় স্থান ছাড়া তৃতীয় হইনি কখনো। আজ আমি বাড়ির কাছে অবস্থিত স্কুলে ভর্তি হতে পারলাম না।’

মাইনুল হাসান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলে, ‘আমরা মাত্র প্রাইমারি শেষ করলাম। আমরা বাড়ির কাছে স্কুলে পড়তে পারলে যাতায়াতে অনেক সুবিধা হতো। এখন দূরের স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করতে হবে।’

অভিভাবক সোনিয়া আক্তার জানান, এভাবে লটারি করার কোনো মানে হয় না। ভর্তি পরীক্ষা হবে। পরীক্ষায় যারা সুযোগ পাবে, তারাই ভর্তি হবে। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ লটারি করেছে। এতে মেধাবী শিক্ষার্থীরা এ বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেনি। স্কুলের কাছে থাকা ছোট্ট শিক্ষার্থীদের এখন পাশের ইউনিয়নের স্কুলে ভর্তি হতে হবে।

জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, হলদিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ২০১৯ সালে সরকারীকরণ হয়। এরপর থেকে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের কার্যক্রম চালাতে হয়। এ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে সিট সংখ্যা ১২০ জন। ৬০ জন ছাত্র ও ৬০ জন ছাত্রী। এখন করোনার নির্দেশ পেয়েই এ লটারি করতে হয়েছে। হয়তো এতে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়নি। এটা নিয়ে আমরাও দুঃখ প্রকাশ করছি। লটারিতে বিজয়ী যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হবে না, আবার লটারির মাধ্যমে বাকিদের মধ্য থেকে ওই সিট পূরণ করা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আবদুল আউয়াল বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থী বাদ পড়লে কিছু করার নেই। আশপাশে অনেক স্কুল রয়েছে, সেগুলোতে তাদের ভর্তি হতে হবে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আমরা এ লটারি করেছি।

লৌহজং উপজেলায় ১০টি ইউনিয়নে ১২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১১টি বেসরকারি আর হলদিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এই উপজেলার একমাত্র সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। যার ফলে উপজেলায় শুধু এই একটি বিদ্যালয়ে লটারির মাধ্যমে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত