Ajker Patrika

নতুন ইসির প্রথম পরীক্ষা

মারুফ কিবরিয়া ও তানিম আহমেদ, কুমিল্লা থেকে
আপডেট : ১৫ জুন ২০২২, ১২: ০৯
নতুন ইসির প্রথম পরীক্ষা

একেক সময় রাজনীতির একেক রূপ ধারণ করা জায়গাটির নাম কুমিল্লা। এখানে কখন কী হয় তা বলা কঠিন। স্থানীয় মানুষের ধারণা এমনটাই। তা–ই হয়ে আসছে কুমিল্লায়। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে এখানে রাজনৈতিক অঙ্গনে বটবৃক্ষের মতো আছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।

কুমিল্লা শহরে একটা কথা বেশ চালু–বাহার ভাই যা চাইবো তাই হইবো। প্রচলিত এই কথার সঙ্গে বাস্তবে অনেক মিল পাওয়া গেছে গত কয়েক দিনে। খোদ নির্বাচন কমিশনও এমপি বাহারের কাছে ‘অসহায়’। আর সেই অসহায়ত্বের মধ্যে আজ বুধবার অনুষ্ঠিত হবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)-এর জন্য প্রথম পরীক্ষা। নির্বাচনের ব্যাপারে ভোটারদের আস্থা ফেরাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে নতুন ইসি পারবে কি না, সে দিকে তাকিয়ে আছে দেশের মানুষ।

গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়া কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন প্রথম ধাক্কা খেল কুসিক নির্বাচনে স্থানীয় এমপি বাহারের কাছ থেকে। গতকাল রাত পর্যন্ত সবকিছু ছাপিয়ে তিনিই আলোচনার কেন্দ্রে। এদিকে নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে বাহাউদ্দিন বাহার সাংবাদিকদের ডেকেছিলেন কুমিল্লা ক্লাবে। তবে সেখানে তিনি নিজে উপস্থিত না হয়ে পাঠান স্ত্রী মেহেরুন্নেছা বাহারকে। কেন তিনি আসেননি—এমন প্রশ্নের জবাবে মেহেরুন্নেছা বলেন, ওনার মনে হয়েছে যেহেতু নির্বাচনী কোনো কর্মকাণ্ডে উনি ছিলেন না তাই এখানে আসেননি। স্বামীর পক্ষে তিনি বলেন, ‘উনি কুমিল্লা-৬ আসনের এমপি। এখানে কোনো সমস্যা হলে তিনিই তো সবার আগে আসবেন। উনি এমপি। মহানগর পার্টি অফিস কী বন্ধ করবে? সভাপতি কি লুকিয়ে থাকবে?’ ইসির দেওয়া চিঠিটি ঠিক হয়নি বলে দাবি করেন মেহেরুন্নেছা। বলেন, ইসির দেওয়া চিঠির ভাষাটা একেবারেই ঠিক ছিল না।

কুসিক নির্বাচনের প্রচার শুরু হয় ১৮ দিন আগে। তবে মনোনয়ন বৈধ হওয়ার পর থেকেই জল্পনা, কুমিল্লার পরবর্তী নগরপিতা কে হবেন। এখন পর্যন্ত মেয়রের দৌড়ে এগিয়ে আছেন তিনজন। এরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত আরফানুল হক রিফাত (নৌকা), বিএনপি থেকে দুই বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কু (টেবিলঘড়ি) ও নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া)। মেয়র পদে আরও আছেন ইসলামী আন্দোলনের একজন এবং আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে আগামী ৫ বছরের জন্য নগরপিতা কে হতে চলেছেন তা জানতে আজ রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

মনিরুল হক সাক্কু চান আবার নগরপিতার আসনে বসতে। অন্যদিকে আরফানুল হক রিফাত ও নিজাম উদ্দিন কায়সার দুজনেরই চাওয়া কুমিল্লায় নতুন অধ্যায় রচনা করতে। সাধারণ ভোটাররাও কী চান তা জানা যাবে আজ রাতে। 

শঙ্কায় সাক্কু-কায়সার, রিফাতের আশা সুষ্ঠু ভোট
কুসিক নির্বাচনের ঠিক আগের দিন নানা শঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার। তাঁদের দুজনই মনে করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি ঠিকভাবে কাজ না করে ভোট সুষ্ঠু হবে না।

সাক্কু বলেন, সুষ্ঠু ভোট কখন হবে যখন একটা নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সঠিকভাবে কাজ করে। লোক দেখানো কাজ করলে তো ভোট সুষ্ঠু হবে না। বহিরাগতদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কুমিল্লায় বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। এতে ভোটে বড় প্রভাব পড়তে পারে। নির্বাচন কমিশনে আমি বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছি।’  

বহিরাগতদের নিয়ে শঙ্কার কথা জানালেন কায়সারও। তিনি বলেন, বহিরাগতরা এখনো এলাকায় অবস্থান করছে। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকব।

দুই প্রার্থী ভোট নিয়ে আশঙ্কার কথা জানালেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী রিফাত বললেন সুন্দর ভোট হওয়ার কথা। তিনি বলেন, ‘ভোট শতভাগ সুষ্ঠু হবে। আমরা কোনো অবস্থাতেই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি নষ্ট করব না। জনতা যাকে ভোট দিক সেই নির্বাচিত হবে। আমি কথা দিতে পারি কোনো সমস্যা হবে না।’

স্থানীয় আওয়ামী লীগে বাহার-বিরোধী হিসেবে পরিচিতরা নৌকাকে শেষ পর্যন্ত ভোট দেবে কিনা সন্দেহ করছেন অনেকে। তাঁরা বলছেন, আফজল খানসহ কুমিল্লার যে প্রভাবশালী বাহার বিরোধী পরিবার রয়েছে তাদের সমর্থন শেষ পর্যন্ত নৌকায় আসেনি। অন্যদিকে রিফাতের সঙ্গে তাদের দূরত্ব বরাবরের মতোই রয়ে গেছে।

এদিকে বিএনপি ভোটে না থাকলেও দুই বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী সাক্কু ও কায়সারের ভোট ভাগাভাগি হবে বলে ধারণা স্থানীয়দের। বিভিন্ন ওয়ার্ডে দুজনেরই রয়েছে সমান আধিপত্য।  

কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী 
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পুলিশসহ সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ফারুক আহমেদ। গতকাল তিনি বলেছেন, ‘পুরো কুমিল্লা নগরী নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।’ এসপি বলেন, নির্বাচনে নিরাপত্তা জোরদার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে যত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার সব নেওয়া হয়েছে। নগরীর অন্তত ৭৫টি জায়গায় তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে।

কঠোর হুঁশিয়ারি রিটার্নিং কর্মকর্তার 
ভোটে অনিয়মের চেষ্টা করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী। তিনি বলেন, ভোটারদের লাইনে বা বাইরে যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত জটলা না হয়, সেই চেষ্টা থাকবে। তিনি বলেন, কোনো প্রার্থী বা কেউ যদি মনে করেন গোপন কক্ষে কাউকে বসিয়ে রাখবেন; এমন পরিকল্পনা যদি কারও থাকে তাহলে বলব, তা থেকে সরে আসুন। কারণ কোনোভাবেই এটা হতে দেওয়া যাবে না।

কুসিক নির্বাচন সম্পর্কিত খবর জানতে - এখানে ক্লিক করুন

এবার কুসিকের ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেওয়া হবে। কুসিক নির্বাচনে মোট ভোটার দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। 

কুসিক নির্বাচন ২০২২ সম্পর্কিত পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত