Ajker Patrika

ছয় গ্রামের ভরসা বাঁশের সাঁকো

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪: ১২
ছয় গ্রামের ভরসা বাঁশের সাঁকো

ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ধুলণ্ডী এলাকায় ইছামতীর শাখা নদী। শাখা নদীর পশ্চিম পাশে শিবালয় উপজেলা। দুই পাশে ঘিওর ও শিবালয় উপজেলার ধুলণ্ডী, সাহিলী, চৌবাড়িয়া, কালাচাঁদপুর, ভালকুটিয়া ও বাষ্টিয়া গ্রাম। এই ছয় গ্রামের হাজারো মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ঝুঁকিপূর্ণ একটি বাঁশের সাঁকো।

সরেজমিনে দেখা যায়, ধুলণ্ডী গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতীর শাখা নদীর ওপর ৩০০ ফুট লম্বা ও ২০ ফুট উচ্চতার সরু একটি বাঁশের সাঁকো। ছয় গ্রামের বাসিন্দারা নিজেদের টাকায় ও স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকোটি তৈরি করেছেন। স্বাধীনতার পর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে হাজার মানুষ যাতায়াত করে আসছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে সাঁকো পাড়ি দিয়ে আবার দুই কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে বাজারে যেতে হয়। ছয় গ্রামের কৃষিপণ্য বিক্রি করতে পড়তে হয় ঝামেলায়।

স্থানীয়রা জানান, দুই উপজেলার ধুলণ্ডী, সাহিলী, চৌবাড়িয়া, কালাচাঁদপুর, ভালকুটিয়া, বাষ্টিয়াসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের লোকজন নিত্যপ্রয়োজনে যাতায়াত করে এই সাঁকো দিয়ে। যুগ যুগ ধরে তাদের যাতায়াতের মাধ্যম বাঁশের সাঁকো। মহাদেবপুর ডিগ্রি কলেজ, গার্লস স্কুল, গোপাল চন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন দিশারী, ধুলণ্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে পারাপার হতে হয় এই সাঁকো দিয়ে।

মহাদেবপুর ইউনিয়নের সাহিলী গ্রামের মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সাঁকো দিয়ে শিশু-বয়স্কদের পারাপারে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কোনো যানবাহন গ্রামে যেতে পারে না। এই সাঁকো থেকে পড়ে দুর্ঘটনায় আহত হয় প্রায়ই। এ ছাড়া পণ্য পরিবহনে বাড়তি ঝামেলা ও দ্বিগুণ অর্থ খরচ হচ্ছে।’

স্থানীয় অটোচালক মো. মিজান বলেন, ‘সুস্থ মানুষ সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ছেন। অসুস্থদের অবস্থা বলার মতো নয়। বেশি সমস্যা হয় প্রসূতিদের নিয়ে। কিন্তু সাঁকোটি নিয়মিত সংস্কার করতে না পারায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে, ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।’

বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘এপারে ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন আর অপর পাশে শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর ইউনিয়ন। দুই ইউনিয়নের পাঁচ থেকে ছয় গ্রামের মানুষ এই সাঁকো দিয়ে পারাপার হয়ে থাকে। হাটবাজার, জেলা সদর ও তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই সাঁকোর ওপর নির্ভরশীল। এ ব্যাপারে উপজেলা কর্তৃপক্ষকে অনেকবার জানিয়েছি।’

বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি তাপস কুমার বসু তুফান বলেন, ‘বর্ষাকালে চার মাস সাঁকো ব্যবহার করতে হয়। আর পানি একেবারে শুকিয়ে গেলে তখন হেঁটে চলাচল করা যায়। কিন্তু নদীর উঁচু ঢাল মারিয়ে ওপরে উঠতে হয়। বর্ষার শুরুতেই এলাকাবাসী নিজেরাই চাঁদা তুলে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে আসছিলেন। এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করার এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাই।’

শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডিউক বলেন, ‘এখানে একটি সেতু খুবই জরুরি। এলাকার মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ। দুই উপজেলার দুই ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এখানে সেতু নির্মাণে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।’

ঘিওর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘একটি সেতুর অভাবে কয়েক গ্রামের হাজার মানুষ কষ্ট করছেন। তাঁদের দুর্ভোগ লাঘবে ওই গ্রামে একটি সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় এমপি মহোদয়কে জানানো হয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাকুর রহমান বলেন, ‘ওখানে অ্যাপ্রোচ সড়ক নেই এবং ওই রাস্তার আইডি নম্বর নেই। তাই সেতু করা আপাতত সম্ভব নয়। তবে আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানাব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত