এ কে এম শামসুদ্দিন
দুই মাসের বেশি সময় ধরে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য মণিপুরে জাতিগত সংঘাত, রক্তপাত এবং সন্ত্রাসী আক্রমণে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মণিপুরের চলমান এই সন্ত্রাস ও অসন্তোষ, উত্তর-পূর্ব ভারতে নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি করছে, যা থেকে আশপাশের অঞ্চলও মুক্ত থাকতে পারবে কি না, এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মণিপুরের পরিস্থিতি সেখানকার প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
সেনাবাহিনী নামিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। সংঘাতে এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষ মারা গেছে। প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক নাগরিক অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। তিন শতাধিক গির্জা পুরোপুরি কিংবা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে ১ হাজার ৪১টি অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছে। মণিপুরের এই সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উদ্বিঘ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
মিয়ানমারের জন্যও এ পরিস্থিতি স্বস্তির নয়। এর কারণ, এই সংঘাতের কেন্দ্রস্থল মণিপুর, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সন্নিকটবর্তী; বিদ্রোহী কুকি-চিন জাতিগোষ্ঠী এই তিন দেশেই বসবাস করে এবং তাদের অবাধ যাতায়াত আছে বিধায়, এই সংকটময় পরিস্থিতি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য যে হুমকিস্বরূপ, তা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। মণিপুরের পূর্বাংশের মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে এবং এই সীমান্ত অঞ্চলে যথেষ্ট অস্থিরতাও রয়েছে। বাংলাদেশের সিলেট থেকে পূর্ব দিকে আসামের শিলচর জেলা অতিক্রম করে মণিপুর রাজ্যের সীমানা শুরু।
বাংলাদেশের সঙ্গে যদিও মণিপুরের কোনো সীমান্ত নেই, তবু এ পরিস্থিতিতে চুপ করে বসে থাকা ঠিক হবে না। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হলেও মণিপুর তখনো ভারতভুক্ত হয়নি। ব্রিটিশ আমলে মণিপুর ‘প্রিন্সলি স্টেট’ হিসেবে মর্যাদা পেত। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর কংগ্রেস দলের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা বল্লব ভাই প্যাটেলের অব্যাহত চাপের মুখে মণিপুরের তৎকালীন শাসক, মহারাজা বুদ্ধচরণ ১৯৪৯ সালে ভারত অন্তর্ভুক্তি সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। মণিপুরবাসী কখনো সেই একত্রকরণ মেনে নিতে পারেনি বলেই ওই রাজ্যে সশস্ত্র সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসের সূত্রপাত হয়।
মণিপুরের মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ মেইতেই জনগোষ্ঠী। বাকি ৪৭ শতাংশ নাগা, মিজো ও কুকি তফসিলি জনজাতি। ধর্মে মেইতেইরা হিন্দু। অপরদিকে তফসিলি জনজাতির লোকেরা অধিকাংশই খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসী। এই তফসিলি জনজাতির মধ্যে আদিকাল থেকেই কুকিরা ছিল যোদ্ধা জাতি। এরা বারুদ বানাতে ও বন্দুক চালাতে পারদর্শী। এই কুকি জাতিগোষ্ঠীর বসবাস উত্তর ভারতের নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, আসাম, মিজোরাম, মণিপুর; মিয়ানমারের কাচিন, সাগাইং ও চিন রাজ্যে। বাংলাদেশে তাদের অবস্থান বান্দরবানে।
গোড়ায় কুকিরা খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসী ছিল না। ব্রিটিশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় খ্রিষ্টধর্মীয় মিশনারিরা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎকালীন মিয়ানমারের পার্বত্য এলাকার পিছিয়ে পড়া জনজাতিগোষ্ঠীর ভেতর খ্রিষ্টানধর্মের বিস্তার ঘটানোর উদ্যোগ নেয়। ব্রিটিশরা এই উদ্যোগের মাধ্যমে একটি খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত ‘ক্রাউন কলোনি’ স্থাপনের চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত ক্রাউন কলোনি স্থাপনে ব্যর্থ হলেও এই অঞ্চলের এক বিরাট জনগোষ্ঠীকে তারা খ্রিষ্টানধর্মে দীক্ষা দিতে সক্ষম হয়। এ কারণেই ভারত ও বর্তমান মিয়ানমারের এসব রাজ্যের অধিকাংশ জনগণই খ্রিষ্টান। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের বম, পাংক্ষু, লুসাই, গুণী, ম্রো, খিয়াং নামের ছয়টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণ খ্রিষ্টানধর্মে দীক্ষিত এবং এরা সবাই কুকি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।
সম্প্রতি ভারতের মণিপুরের উচ্চ আদালতের একটি রায়কে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা শুরু হয়েছে, তা কেবল মণিপুরেই সীমাবদ্ধ নেই।আশপাশের রাজ্যের কুকিসহ সমগোত্রীয় সম্প্রদায়ের ভেতর বিস্তার লাভ করছে। কথিত আছে, এই সংঘাতে আশপাশের রাজ্যগুলো থেকে, এমনকি মিয়ানমার ও বাংলাদেশে বসবাসকারী কুকি সম্প্রদায়ের যোদ্ধারা মণিপুরের কুকিদের সঙ্গে অংশ নিচ্ছে। জাতিগত ও ধর্মীয় বিশ্বাসে অভিন্নতা থাকায় মণিপুরের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের কুকি-চিনের ভেতর খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত ‘বৃহত্তর কুকিল্যান্ড’ স্থাপনের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ করতেই পারে। মিয়ানমারের চিন জনগোষ্ঠী ও বাংলাদেশের বম এবং ভারতের মিজো জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকিদের নৃতাত্ত্বিক মিল আছে।
এ ধরনের প্রচেষ্টার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সম্পৃক্ততা থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ইন্দোনেশিয়ার খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত ‘ইস্ট তিমুর’ ও সুদানের ‘দক্ষিণ সুদান’ প্রতিষ্ঠার পেছনে পশ্চিমারা যে ইন্ধন জুগিয়েছিল, তা বলাই বাহুল্য। ইস্ট তিমুর ও দক্ষিণ সুদান নামের দুটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্র সৃষ্টির মাধ্যমে তারা ইতিমধ্যেই এ ধরনের প্রচেষ্টার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বান্দরবানে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার কোনো কারণ দেখি না।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানে হত্যা ও সন্ত্রাসের নতুন আতঙ্কের নাম কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট। ২০০৮ সালে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠিত হলেও, ২০১৬ সালে সংগঠনটি সশস্ত্র গ্রুপ হিসেবে গড়ে ওঠে। শুরুতে এর নাম ছিল ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স’। প্রথম দিকে তারা শান্তিপূর্ণ সামাজিক কর্মসূচি পালন করে ভারতের মণিপুর ও মিয়ানমারের চিন রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। সন্ত্রাসী এই দলের সদস্যদের ভারতের মণিপুর ও মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যে পাঠানো হয় গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য। ২০১৯ সালে প্রশিক্ষণ শেষে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে ফিরে আসে। শুরুতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্যে ব্যস্ত থাকলেও ধীরে ধীরে তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে।
বর্তমানে সংগঠনটির সশস্ত্র উইং কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি বা কেএনএ নামে পরিচিত এবং তাদের তিন থেকে চার হাজার সদস্য রয়েছে। এদের অনেকেই পার্বত্য চট্টগ্রাম ও ভারতের মিজোরামে যাতায়াত করে থাকে। এই দলের সদস্যদের তিন মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে এক মাস ভারতের মিজোরামে তাত্ত্বিক ও শারীরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বাকি দুই মাস মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের সঙ্গে যৌথভাবে সে দেশের আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাধ্যমে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
কুকি-চিনরা নিজেদের পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মনে করে। চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে তারা বার্মিজ ও ভারতীয় জাতিভুক্ত এবং বহিরাগত মনে করে। কেএনএ পার্বত্য তিন জেলার লামা, রুমা, আলীকদম, থানচি, রোয়াংছড়ি, বিলাইছড়ি, জুরাইছড়ি ও বরকল উপজেলার সমন্বয়ে পৃথক রাজ্যের দাবি করে আসছে। উল্লিখিত এলাকা নিয়ে তারা একটি মানচিত্রও তৈরি করেছে। তাদের এই প্রস্তাবিত মানচিত্রের তিন দিকে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতের সীমান্ত।
পৃথক রাজ্য দাবির পেছনে কেএনএ যে যুক্তি উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে, তার পেছনেও ছোট্ট একটি ইতিহাস আছে। উনিশ শতকের শেষ ভাগে তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামের দক্ষিণ-পূর্ব, পূর্ব দিক থেকে নানামুখী আক্রমণ আসতে থাকে। নানামুখী আক্রমণের চাপে কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর লোকেরা ধীরে ধীরে ভারতের মিজোরাম ও ত্রিপুরার পর্বতমালা, লুসাই পাহাড়ের দিকে চলে যায়। তাদের ছেড়ে যাওয়া অঞ্চলগুলোই হলো বর্তমানে কুকিদের দাবি করা লামা, রুমা, আলীকদম, থানচি, রোয়াংছড়ি, বিলাইছড়ি, জুরাইছড়ি ও বরকল উপজেলা।
এই অঞ্চল পরে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোকদের দখলে চলে যায়। ১৮৯২ সালের পর তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকারও কুকি জনগোষ্ঠীকে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে তিন ভাগে ভাগ করে দেয়। তৎকালীন বার্মার চিন পর্বতমালা, বাংলার দক্ষিণভাগে লুসাই পর্বতমালা ও উত্তরে আসামের নিয়ন্ত্রণে দিয়ে দেয়। এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা উচিত। বাংলাদেশে দুই দশক ধরে চাকমাদের নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব নৃগোষ্ঠীর লোকেরা তথাকথিত শান্তিবাহিনীর নামে যে বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল; তারা নিজেদের আদিবাসী হিসেবে দাবি করে আসছে।
আমাদের দেশের তথাকথিত অন্ধ কিছু বুদ্ধিজীবীও তাদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এসব নৃগোষ্ঠীর লোকেরা আদতেই বাংলাদেশের বাইরে থেকে আসা জনগোষ্ঠী; বরং কুকি-চিন জনগোষ্ঠীরা চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়েরও অনেক আগে থেকে এই অঞ্চলে বসবাস করছে! বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বের উল্লিখিত আটটি উপজেলায় কুকি জনগোষ্ঠীর বসবাস। তারা সাধারণত উঁচু পাহাড়ে থাকে। বাংলা বলতে পারে না বলে পার্বত্য চট্টগ্রামসংলগ্ন মানুষের কাছে তারা ‘কুকি’
নামেই পরিচিত। তাদের ‘জো’ জাতির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর যারা বাংলা বলতে পারত, যেমন চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে চট্টগ্রামের মানুষ জুমিয়া বা ‘জুম্ম’ নামে ডাকত।
এই জনগোষ্ঠীই শান্তিবাহিনী সৃষ্টি করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘জম্মু ল্যান্ড’ হিসেবে পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। কুকিরা সেই ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই দুর্ধর্ষ, আগ্রাসী ও হিংস্র জাতি হিসেবে পরিচিত। তারা মনে করে লুসাই পর্বতমালার পাদভূমি তাদের মাতৃভূমি, আর বাকিরা অর্থাৎ চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ইত্যাদি জনগোষ্ঠী সব বহিরাগত। কুকিরা তাই প্রয়োজনে বাইরের শক্তির সাহায্য নিয়ে হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের যে এলাকা থেকে তারা বিতাড়িত হয়েছিল, সেই এলাকাগুলো নিয়ে তাদের কল্পিত স্বপ্ন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে পৃথক
শাসনব্যবস্থা চালু করবে।
ভারতের মণিপুরের সহিংসতাকে কেন্দ্র করে সেখানকার কুকি-চিন জনগোষ্ঠী পুনরায় লড়াই শুরু করেছে। সেই লড়াইয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কুকিরা যেভাবে অংশগ্রহণ করছে বলে শোনা যাচ্ছে, শেষ পর্যন্ত এ পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় বলা যায় না। মনে রাখতে হবে, উত্তর-পূর্ব ভারত ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ঘটনাবলি পশ্চিমা শক্তিগুলোর নজর ও আগ্রহের বাইরে নেই। মণিপুরের পরিস্থিতি তারা গভীর নজরদারিতে রাখবে সন্দেহ নেই। অতএব, এই অঞ্চলে খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত ‘বৃহত্তর কুকি ল্যান্ড’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্রিটিশ আমলের সেই স্বপ্ন ‘ক্রাউন কলোনি’ বাস্তবায়নে পশ্চিমাদের যে ইন্ধন থাকবে না, তা কে বলতে পারে!
পশ্চিমা বিশ্ব ইতিমধ্যেই জানিয়েছে তারা মণিপুরে সংখ্যালঘুদের ওপর যে নির্যাতন চলছে, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ওদিকে ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ভারত চাইলে মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে। মণিপুরের পরিস্থিতি আপাতত শান্ত মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা তুষের আগুনের মতো চাপা পড়ে আছে। এই আগুন যেকোনো সময় ব্যাপক আকারে বিস্তার লাভ করতে পারে। পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে আমাদের নিজেদের স্বার্থেই মণিপুরের পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ রাখতে হবে, যাতে সেই আগুনের আঁচ বাংলাদেশে এসে না পড়ে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক
দুই মাসের বেশি সময় ধরে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য মণিপুরে জাতিগত সংঘাত, রক্তপাত এবং সন্ত্রাসী আক্রমণে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মণিপুরের চলমান এই সন্ত্রাস ও অসন্তোষ, উত্তর-পূর্ব ভারতে নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি করছে, যা থেকে আশপাশের অঞ্চলও মুক্ত থাকতে পারবে কি না, এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মণিপুরের পরিস্থিতি সেখানকার প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
সেনাবাহিনী নামিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। সংঘাতে এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষ মারা গেছে। প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক নাগরিক অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। তিন শতাধিক গির্জা পুরোপুরি কিংবা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে ১ হাজার ৪১টি অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছে। মণিপুরের এই সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উদ্বিঘ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
মিয়ানমারের জন্যও এ পরিস্থিতি স্বস্তির নয়। এর কারণ, এই সংঘাতের কেন্দ্রস্থল মণিপুর, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সন্নিকটবর্তী; বিদ্রোহী কুকি-চিন জাতিগোষ্ঠী এই তিন দেশেই বসবাস করে এবং তাদের অবাধ যাতায়াত আছে বিধায়, এই সংকটময় পরিস্থিতি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য যে হুমকিস্বরূপ, তা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। মণিপুরের পূর্বাংশের মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে এবং এই সীমান্ত অঞ্চলে যথেষ্ট অস্থিরতাও রয়েছে। বাংলাদেশের সিলেট থেকে পূর্ব দিকে আসামের শিলচর জেলা অতিক্রম করে মণিপুর রাজ্যের সীমানা শুরু।
বাংলাদেশের সঙ্গে যদিও মণিপুরের কোনো সীমান্ত নেই, তবু এ পরিস্থিতিতে চুপ করে বসে থাকা ঠিক হবে না। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হলেও মণিপুর তখনো ভারতভুক্ত হয়নি। ব্রিটিশ আমলে মণিপুর ‘প্রিন্সলি স্টেট’ হিসেবে মর্যাদা পেত। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর কংগ্রেস দলের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা বল্লব ভাই প্যাটেলের অব্যাহত চাপের মুখে মণিপুরের তৎকালীন শাসক, মহারাজা বুদ্ধচরণ ১৯৪৯ সালে ভারত অন্তর্ভুক্তি সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। মণিপুরবাসী কখনো সেই একত্রকরণ মেনে নিতে পারেনি বলেই ওই রাজ্যে সশস্ত্র সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসের সূত্রপাত হয়।
মণিপুরের মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ মেইতেই জনগোষ্ঠী। বাকি ৪৭ শতাংশ নাগা, মিজো ও কুকি তফসিলি জনজাতি। ধর্মে মেইতেইরা হিন্দু। অপরদিকে তফসিলি জনজাতির লোকেরা অধিকাংশই খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসী। এই তফসিলি জনজাতির মধ্যে আদিকাল থেকেই কুকিরা ছিল যোদ্ধা জাতি। এরা বারুদ বানাতে ও বন্দুক চালাতে পারদর্শী। এই কুকি জাতিগোষ্ঠীর বসবাস উত্তর ভারতের নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, আসাম, মিজোরাম, মণিপুর; মিয়ানমারের কাচিন, সাগাইং ও চিন রাজ্যে। বাংলাদেশে তাদের অবস্থান বান্দরবানে।
গোড়ায় কুকিরা খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসী ছিল না। ব্রিটিশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় খ্রিষ্টধর্মীয় মিশনারিরা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎকালীন মিয়ানমারের পার্বত্য এলাকার পিছিয়ে পড়া জনজাতিগোষ্ঠীর ভেতর খ্রিষ্টানধর্মের বিস্তার ঘটানোর উদ্যোগ নেয়। ব্রিটিশরা এই উদ্যোগের মাধ্যমে একটি খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত ‘ক্রাউন কলোনি’ স্থাপনের চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত ক্রাউন কলোনি স্থাপনে ব্যর্থ হলেও এই অঞ্চলের এক বিরাট জনগোষ্ঠীকে তারা খ্রিষ্টানধর্মে দীক্ষা দিতে সক্ষম হয়। এ কারণেই ভারত ও বর্তমান মিয়ানমারের এসব রাজ্যের অধিকাংশ জনগণই খ্রিষ্টান। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের বম, পাংক্ষু, লুসাই, গুণী, ম্রো, খিয়াং নামের ছয়টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণ খ্রিষ্টানধর্মে দীক্ষিত এবং এরা সবাই কুকি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।
সম্প্রতি ভারতের মণিপুরের উচ্চ আদালতের একটি রায়কে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা শুরু হয়েছে, তা কেবল মণিপুরেই সীমাবদ্ধ নেই।আশপাশের রাজ্যের কুকিসহ সমগোত্রীয় সম্প্রদায়ের ভেতর বিস্তার লাভ করছে। কথিত আছে, এই সংঘাতে আশপাশের রাজ্যগুলো থেকে, এমনকি মিয়ানমার ও বাংলাদেশে বসবাসকারী কুকি সম্প্রদায়ের যোদ্ধারা মণিপুরের কুকিদের সঙ্গে অংশ নিচ্ছে। জাতিগত ও ধর্মীয় বিশ্বাসে অভিন্নতা থাকায় মণিপুরের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের কুকি-চিনের ভেতর খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত ‘বৃহত্তর কুকিল্যান্ড’ স্থাপনের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ করতেই পারে। মিয়ানমারের চিন জনগোষ্ঠী ও বাংলাদেশের বম এবং ভারতের মিজো জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকিদের নৃতাত্ত্বিক মিল আছে।
এ ধরনের প্রচেষ্টার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সম্পৃক্ততা থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ইন্দোনেশিয়ার খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত ‘ইস্ট তিমুর’ ও সুদানের ‘দক্ষিণ সুদান’ প্রতিষ্ঠার পেছনে পশ্চিমারা যে ইন্ধন জুগিয়েছিল, তা বলাই বাহুল্য। ইস্ট তিমুর ও দক্ষিণ সুদান নামের দুটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্র সৃষ্টির মাধ্যমে তারা ইতিমধ্যেই এ ধরনের প্রচেষ্টার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বান্দরবানে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার কোনো কারণ দেখি না।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানে হত্যা ও সন্ত্রাসের নতুন আতঙ্কের নাম কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট। ২০০৮ সালে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠিত হলেও, ২০১৬ সালে সংগঠনটি সশস্ত্র গ্রুপ হিসেবে গড়ে ওঠে। শুরুতে এর নাম ছিল ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স’। প্রথম দিকে তারা শান্তিপূর্ণ সামাজিক কর্মসূচি পালন করে ভারতের মণিপুর ও মিয়ানমারের চিন রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। সন্ত্রাসী এই দলের সদস্যদের ভারতের মণিপুর ও মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যে পাঠানো হয় গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য। ২০১৯ সালে প্রশিক্ষণ শেষে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে ফিরে আসে। শুরুতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্যে ব্যস্ত থাকলেও ধীরে ধীরে তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে।
বর্তমানে সংগঠনটির সশস্ত্র উইং কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি বা কেএনএ নামে পরিচিত এবং তাদের তিন থেকে চার হাজার সদস্য রয়েছে। এদের অনেকেই পার্বত্য চট্টগ্রাম ও ভারতের মিজোরামে যাতায়াত করে থাকে। এই দলের সদস্যদের তিন মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে এক মাস ভারতের মিজোরামে তাত্ত্বিক ও শারীরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বাকি দুই মাস মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের সঙ্গে যৌথভাবে সে দেশের আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাধ্যমে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
কুকি-চিনরা নিজেদের পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মনে করে। চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে তারা বার্মিজ ও ভারতীয় জাতিভুক্ত এবং বহিরাগত মনে করে। কেএনএ পার্বত্য তিন জেলার লামা, রুমা, আলীকদম, থানচি, রোয়াংছড়ি, বিলাইছড়ি, জুরাইছড়ি ও বরকল উপজেলার সমন্বয়ে পৃথক রাজ্যের দাবি করে আসছে। উল্লিখিত এলাকা নিয়ে তারা একটি মানচিত্রও তৈরি করেছে। তাদের এই প্রস্তাবিত মানচিত্রের তিন দিকে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতের সীমান্ত।
পৃথক রাজ্য দাবির পেছনে কেএনএ যে যুক্তি উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে, তার পেছনেও ছোট্ট একটি ইতিহাস আছে। উনিশ শতকের শেষ ভাগে তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামের দক্ষিণ-পূর্ব, পূর্ব দিক থেকে নানামুখী আক্রমণ আসতে থাকে। নানামুখী আক্রমণের চাপে কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর লোকেরা ধীরে ধীরে ভারতের মিজোরাম ও ত্রিপুরার পর্বতমালা, লুসাই পাহাড়ের দিকে চলে যায়। তাদের ছেড়ে যাওয়া অঞ্চলগুলোই হলো বর্তমানে কুকিদের দাবি করা লামা, রুমা, আলীকদম, থানচি, রোয়াংছড়ি, বিলাইছড়ি, জুরাইছড়ি ও বরকল উপজেলা।
এই অঞ্চল পরে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোকদের দখলে চলে যায়। ১৮৯২ সালের পর তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকারও কুকি জনগোষ্ঠীকে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে তিন ভাগে ভাগ করে দেয়। তৎকালীন বার্মার চিন পর্বতমালা, বাংলার দক্ষিণভাগে লুসাই পর্বতমালা ও উত্তরে আসামের নিয়ন্ত্রণে দিয়ে দেয়। এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা উচিত। বাংলাদেশে দুই দশক ধরে চাকমাদের নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব নৃগোষ্ঠীর লোকেরা তথাকথিত শান্তিবাহিনীর নামে যে বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল; তারা নিজেদের আদিবাসী হিসেবে দাবি করে আসছে।
আমাদের দেশের তথাকথিত অন্ধ কিছু বুদ্ধিজীবীও তাদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এসব নৃগোষ্ঠীর লোকেরা আদতেই বাংলাদেশের বাইরে থেকে আসা জনগোষ্ঠী; বরং কুকি-চিন জনগোষ্ঠীরা চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়েরও অনেক আগে থেকে এই অঞ্চলে বসবাস করছে! বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বের উল্লিখিত আটটি উপজেলায় কুকি জনগোষ্ঠীর বসবাস। তারা সাধারণত উঁচু পাহাড়ে থাকে। বাংলা বলতে পারে না বলে পার্বত্য চট্টগ্রামসংলগ্ন মানুষের কাছে তারা ‘কুকি’
নামেই পরিচিত। তাদের ‘জো’ জাতির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর যারা বাংলা বলতে পারত, যেমন চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে চট্টগ্রামের মানুষ জুমিয়া বা ‘জুম্ম’ নামে ডাকত।
এই জনগোষ্ঠীই শান্তিবাহিনী সৃষ্টি করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘জম্মু ল্যান্ড’ হিসেবে পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। কুকিরা সেই ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই দুর্ধর্ষ, আগ্রাসী ও হিংস্র জাতি হিসেবে পরিচিত। তারা মনে করে লুসাই পর্বতমালার পাদভূমি তাদের মাতৃভূমি, আর বাকিরা অর্থাৎ চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ইত্যাদি জনগোষ্ঠী সব বহিরাগত। কুকিরা তাই প্রয়োজনে বাইরের শক্তির সাহায্য নিয়ে হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের যে এলাকা থেকে তারা বিতাড়িত হয়েছিল, সেই এলাকাগুলো নিয়ে তাদের কল্পিত স্বপ্ন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে পৃথক
শাসনব্যবস্থা চালু করবে।
ভারতের মণিপুরের সহিংসতাকে কেন্দ্র করে সেখানকার কুকি-চিন জনগোষ্ঠী পুনরায় লড়াই শুরু করেছে। সেই লড়াইয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কুকিরা যেভাবে অংশগ্রহণ করছে বলে শোনা যাচ্ছে, শেষ পর্যন্ত এ পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় বলা যায় না। মনে রাখতে হবে, উত্তর-পূর্ব ভারত ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ঘটনাবলি পশ্চিমা শক্তিগুলোর নজর ও আগ্রহের বাইরে নেই। মণিপুরের পরিস্থিতি তারা গভীর নজরদারিতে রাখবে সন্দেহ নেই। অতএব, এই অঞ্চলে খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত ‘বৃহত্তর কুকি ল্যান্ড’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্রিটিশ আমলের সেই স্বপ্ন ‘ক্রাউন কলোনি’ বাস্তবায়নে পশ্চিমাদের যে ইন্ধন থাকবে না, তা কে বলতে পারে!
পশ্চিমা বিশ্ব ইতিমধ্যেই জানিয়েছে তারা মণিপুরে সংখ্যালঘুদের ওপর যে নির্যাতন চলছে, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ওদিকে ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ভারত চাইলে মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে। মণিপুরের পরিস্থিতি আপাতত শান্ত মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা তুষের আগুনের মতো চাপা পড়ে আছে। এই আগুন যেকোনো সময় ব্যাপক আকারে বিস্তার লাভ করতে পারে। পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে আমাদের নিজেদের স্বার্থেই মণিপুরের পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ রাখতে হবে, যাতে সেই আগুনের আঁচ বাংলাদেশে এসে না পড়ে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক
এ কে এম শামসুদ্দিন
দুই মাসের বেশি সময় ধরে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য মণিপুরে জাতিগত সংঘাত, রক্তপাত এবং সন্ত্রাসী আক্রমণে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মণিপুরের চলমান এই সন্ত্রাস ও অসন্তোষ, উত্তর-পূর্ব ভারতে নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি করছে, যা থেকে আশপাশের অঞ্চলও মুক্ত থাকতে পারবে কি না, এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মণিপুরের পরিস্থিতি সেখানকার প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
সেনাবাহিনী নামিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। সংঘাতে এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষ মারা গেছে। প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক নাগরিক অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। তিন শতাধিক গির্জা পুরোপুরি কিংবা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে ১ হাজার ৪১টি অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছে। মণিপুরের এই সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উদ্বিঘ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
মিয়ানমারের জন্যও এ পরিস্থিতি স্বস্তির নয়। এর কারণ, এই সংঘাতের কেন্দ্রস্থল মণিপুর, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সন্নিকটবর্তী; বিদ্রোহী কুকি-চিন জাতিগোষ্ঠী এই তিন দেশেই বসবাস করে এবং তাদের অবাধ যাতায়াত আছে বিধায়, এই সংকটময় পরিস্থিতি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য যে হুমকিস্বরূপ, তা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। মণিপুরের পূর্বাংশের মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে এবং এই সীমান্ত অঞ্চলে যথেষ্ট অস্থিরতাও রয়েছে। বাংলাদেশের সিলেট থেকে পূর্ব দিকে আসামের শিলচর জেলা অতিক্রম করে মণিপুর রাজ্যের সীমানা শুরু।
বাংলাদেশের সঙ্গে যদিও মণিপুরের কোনো সীমান্ত নেই, তবু এ পরিস্থিতিতে চুপ করে বসে থাকা ঠিক হবে না। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হলেও মণিপুর তখনো ভারতভুক্ত হয়নি। ব্রিটিশ আমলে মণিপুর ‘প্রিন্সলি স্টেট’ হিসেবে মর্যাদা পেত। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর কংগ্রেস দলের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা বল্লব ভাই প্যাটেলের অব্যাহত চাপের মুখে মণিপুরের তৎকালীন শাসক, মহারাজা বুদ্ধচরণ ১৯৪৯ সালে ভারত অন্তর্ভুক্তি সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। মণিপুরবাসী কখনো সেই একত্রকরণ মেনে নিতে পারেনি বলেই ওই রাজ্যে সশস্ত্র সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসের সূত্রপাত হয়।
মণিপুরের মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ মেইতেই জনগোষ্ঠী। বাকি ৪৭ শতাংশ নাগা, মিজো ও কুকি তফসিলি জনজাতি। ধর্মে মেইতেইরা হিন্দু। অপরদিকে তফসিলি জনজাতির লোকেরা অধিকাংশই খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসী। এই তফসিলি জনজাতির মধ্যে আদিকাল থেকেই কুকিরা ছিল যোদ্ধা জাতি। এরা বারুদ বানাতে ও বন্দুক চালাতে পারদর্শী। এই কুকি জাতিগোষ্ঠীর বসবাস উত্তর ভারতের নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, আসাম, মিজোরাম, মণিপুর; মিয়ানমারের কাচিন, সাগাইং ও চিন রাজ্যে। বাংলাদেশে তাদের অবস্থান বান্দরবানে।
গোড়ায় কুকিরা খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসী ছিল না। ব্রিটিশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় খ্রিষ্টধর্মীয় মিশনারিরা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎকালীন মিয়ানমারের পার্বত্য এলাকার পিছিয়ে পড়া জনজাতিগোষ্ঠীর ভেতর খ্রিষ্টানধর্মের বিস্তার ঘটানোর উদ্যোগ নেয়। ব্রিটিশরা এই উদ্যোগের মাধ্যমে একটি খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত ‘ক্রাউন কলোনি’ স্থাপনের চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত ক্রাউন কলোনি স্থাপনে ব্যর্থ হলেও এই অঞ্চলের এক বিরাট জনগোষ্ঠীকে তারা খ্রিষ্টানধর্মে দীক্ষা দিতে সক্ষম হয়। এ কারণেই ভারত ও বর্তমান মিয়ানমারের এসব রাজ্যের অধিকাংশ জনগণই খ্রিষ্টান। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের বম, পাংক্ষু, লুসাই, গুণী, ম্রো, খিয়াং নামের ছয়টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণ খ্রিষ্টানধর্মে দীক্ষিত এবং এরা সবাই কুকি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।
সম্প্রতি ভারতের মণিপুরের উচ্চ আদালতের একটি রায়কে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা শুরু হয়েছে, তা কেবল মণিপুরেই সীমাবদ্ধ নেই।আশপাশের রাজ্যের কুকিসহ সমগোত্রীয় সম্প্রদায়ের ভেতর বিস্তার লাভ করছে। কথিত আছে, এই সংঘাতে আশপাশের রাজ্যগুলো থেকে, এমনকি মিয়ানমার ও বাংলাদেশে বসবাসকারী কুকি সম্প্রদায়ের যোদ্ধারা মণিপুরের কুকিদের সঙ্গে অংশ নিচ্ছে। জাতিগত ও ধর্মীয় বিশ্বাসে অভিন্নতা থাকায় মণিপুরের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের কুকি-চিনের ভেতর খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত ‘বৃহত্তর কুকিল্যান্ড’ স্থাপনের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ করতেই পারে। মিয়ানমারের চিন জনগোষ্ঠী ও বাংলাদেশের বম এবং ভারতের মিজো জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকিদের নৃতাত্ত্বিক মিল আছে।
এ ধরনের প্রচেষ্টার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সম্পৃক্ততা থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ইন্দোনেশিয়ার খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত ‘ইস্ট তিমুর’ ও সুদানের ‘দক্ষিণ সুদান’ প্রতিষ্ঠার পেছনে পশ্চিমারা যে ইন্ধন জুগিয়েছিল, তা বলাই বাহুল্য। ইস্ট তিমুর ও দক্ষিণ সুদান নামের দুটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্র সৃষ্টির মাধ্যমে তারা ইতিমধ্যেই এ ধরনের প্রচেষ্টার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বান্দরবানে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার কোনো কারণ দেখি না।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানে হত্যা ও সন্ত্রাসের নতুন আতঙ্কের নাম কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট। ২০০৮ সালে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠিত হলেও, ২০১৬ সালে সংগঠনটি সশস্ত্র গ্রুপ হিসেবে গড়ে ওঠে। শুরুতে এর নাম ছিল ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স’। প্রথম দিকে তারা শান্তিপূর্ণ সামাজিক কর্মসূচি পালন করে ভারতের মণিপুর ও মিয়ানমারের চিন রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। সন্ত্রাসী এই দলের সদস্যদের ভারতের মণিপুর ও মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যে পাঠানো হয় গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য। ২০১৯ সালে প্রশিক্ষণ শেষে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে ফিরে আসে। শুরুতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্যে ব্যস্ত থাকলেও ধীরে ধীরে তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে।
বর্তমানে সংগঠনটির সশস্ত্র উইং কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি বা কেএনএ নামে পরিচিত এবং তাদের তিন থেকে চার হাজার সদস্য রয়েছে। এদের অনেকেই পার্বত্য চট্টগ্রাম ও ভারতের মিজোরামে যাতায়াত করে থাকে। এই দলের সদস্যদের তিন মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে এক মাস ভারতের মিজোরামে তাত্ত্বিক ও শারীরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বাকি দুই মাস মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের সঙ্গে যৌথভাবে সে দেশের আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাধ্যমে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
কুকি-চিনরা নিজেদের পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মনে করে। চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে তারা বার্মিজ ও ভারতীয় জাতিভুক্ত এবং বহিরাগত মনে করে। কেএনএ পার্বত্য তিন জেলার লামা, রুমা, আলীকদম, থানচি, রোয়াংছড়ি, বিলাইছড়ি, জুরাইছড়ি ও বরকল উপজেলার সমন্বয়ে পৃথক রাজ্যের দাবি করে আসছে। উল্লিখিত এলাকা নিয়ে তারা একটি মানচিত্রও তৈরি করেছে। তাদের এই প্রস্তাবিত মানচিত্রের তিন দিকে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতের সীমান্ত।
পৃথক রাজ্য দাবির পেছনে কেএনএ যে যুক্তি উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে, তার পেছনেও ছোট্ট একটি ইতিহাস আছে। উনিশ শতকের শেষ ভাগে তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামের দক্ষিণ-পূর্ব, পূর্ব দিক থেকে নানামুখী আক্রমণ আসতে থাকে। নানামুখী আক্রমণের চাপে কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর লোকেরা ধীরে ধীরে ভারতের মিজোরাম ও ত্রিপুরার পর্বতমালা, লুসাই পাহাড়ের দিকে চলে যায়। তাদের ছেড়ে যাওয়া অঞ্চলগুলোই হলো বর্তমানে কুকিদের দাবি করা লামা, রুমা, আলীকদম, থানচি, রোয়াংছড়ি, বিলাইছড়ি, জুরাইছড়ি ও বরকল উপজেলা।
এই অঞ্চল পরে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোকদের দখলে চলে যায়। ১৮৯২ সালের পর তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকারও কুকি জনগোষ্ঠীকে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে তিন ভাগে ভাগ করে দেয়। তৎকালীন বার্মার চিন পর্বতমালা, বাংলার দক্ষিণভাগে লুসাই পর্বতমালা ও উত্তরে আসামের নিয়ন্ত্রণে দিয়ে দেয়। এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা উচিত। বাংলাদেশে দুই দশক ধরে চাকমাদের নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব নৃগোষ্ঠীর লোকেরা তথাকথিত শান্তিবাহিনীর নামে যে বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল; তারা নিজেদের আদিবাসী হিসেবে দাবি করে আসছে।
আমাদের দেশের তথাকথিত অন্ধ কিছু বুদ্ধিজীবীও তাদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এসব নৃগোষ্ঠীর লোকেরা আদতেই বাংলাদেশের বাইরে থেকে আসা জনগোষ্ঠী; বরং কুকি-চিন জনগোষ্ঠীরা চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়েরও অনেক আগে থেকে এই অঞ্চলে বসবাস করছে! বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বের উল্লিখিত আটটি উপজেলায় কুকি জনগোষ্ঠীর বসবাস। তারা সাধারণত উঁচু পাহাড়ে থাকে। বাংলা বলতে পারে না বলে পার্বত্য চট্টগ্রামসংলগ্ন মানুষের কাছে তারা ‘কুকি’
নামেই পরিচিত। তাদের ‘জো’ জাতির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর যারা বাংলা বলতে পারত, যেমন চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে চট্টগ্রামের মানুষ জুমিয়া বা ‘জুম্ম’ নামে ডাকত।
এই জনগোষ্ঠীই শান্তিবাহিনী সৃষ্টি করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘জম্মু ল্যান্ড’ হিসেবে পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। কুকিরা সেই ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই দুর্ধর্ষ, আগ্রাসী ও হিংস্র জাতি হিসেবে পরিচিত। তারা মনে করে লুসাই পর্বতমালার পাদভূমি তাদের মাতৃভূমি, আর বাকিরা অর্থাৎ চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ইত্যাদি জনগোষ্ঠী সব বহিরাগত। কুকিরা তাই প্রয়োজনে বাইরের শক্তির সাহায্য নিয়ে হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের যে এলাকা থেকে তারা বিতাড়িত হয়েছিল, সেই এলাকাগুলো নিয়ে তাদের কল্পিত স্বপ্ন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে পৃথক
শাসনব্যবস্থা চালু করবে।
ভারতের মণিপুরের সহিংসতাকে কেন্দ্র করে সেখানকার কুকি-চিন জনগোষ্ঠী পুনরায় লড়াই শুরু করেছে। সেই লড়াইয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কুকিরা যেভাবে অংশগ্রহণ করছে বলে শোনা যাচ্ছে, শেষ পর্যন্ত এ পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় বলা যায় না। মনে রাখতে হবে, উত্তর-পূর্ব ভারত ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ঘটনাবলি পশ্চিমা শক্তিগুলোর নজর ও আগ্রহের বাইরে নেই। মণিপুরের পরিস্থিতি তারা গভীর নজরদারিতে রাখবে সন্দেহ নেই। অতএব, এই অঞ্চলে খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত ‘বৃহত্তর কুকি ল্যান্ড’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্রিটিশ আমলের সেই স্বপ্ন ‘ক্রাউন কলোনি’ বাস্তবায়নে পশ্চিমাদের যে ইন্ধন থাকবে না, তা কে বলতে পারে!
পশ্চিমা বিশ্ব ইতিমধ্যেই জানিয়েছে তারা মণিপুরে সংখ্যালঘুদের ওপর যে নির্যাতন চলছে, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ওদিকে ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ভারত চাইলে মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে। মণিপুরের পরিস্থিতি আপাতত শান্ত মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা তুষের আগুনের মতো চাপা পড়ে আছে। এই আগুন যেকোনো সময় ব্যাপক আকারে বিস্তার লাভ করতে পারে। পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে আমাদের নিজেদের স্বার্থেই মণিপুরের পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ রাখতে হবে, যাতে সেই আগুনের আঁচ বাংলাদেশে এসে না পড়ে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক
দুই মাসের বেশি সময় ধরে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য মণিপুরে জাতিগত সংঘাত, রক্তপাত এবং সন্ত্রাসী আক্রমণে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মণিপুরের চলমান এই সন্ত্রাস ও অসন্তোষ, উত্তর-পূর্ব ভারতে নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি করছে, যা থেকে আশপাশের অঞ্চলও মুক্ত থাকতে পারবে কি না, এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মণিপুরের পরিস্থিতি সেখানকার প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
সেনাবাহিনী নামিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। সংঘাতে এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষ মারা গেছে। প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক নাগরিক অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। তিন শতাধিক গির্জা পুরোপুরি কিংবা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে ১ হাজার ৪১টি অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছে। মণিপুরের এই সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উদ্বিঘ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
মিয়ানমারের জন্যও এ পরিস্থিতি স্বস্তির নয়। এর কারণ, এই সংঘাতের কেন্দ্রস্থল মণিপুর, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সন্নিকটবর্তী; বিদ্রোহী কুকি-চিন জাতিগোষ্ঠী এই তিন দেশেই বসবাস করে এবং তাদের অবাধ যাতায়াত আছে বিধায়, এই সংকটময় পরিস্থিতি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য যে হুমকিস্বরূপ, তা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। মণিপুরের পূর্বাংশের মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে এবং এই সীমান্ত অঞ্চলে যথেষ্ট অস্থিরতাও রয়েছে। বাংলাদেশের সিলেট থেকে পূর্ব দিকে আসামের শিলচর জেলা অতিক্রম করে মণিপুর রাজ্যের সীমানা শুরু।
বাংলাদেশের সঙ্গে যদিও মণিপুরের কোনো সীমান্ত নেই, তবু এ পরিস্থিতিতে চুপ করে বসে থাকা ঠিক হবে না। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হলেও মণিপুর তখনো ভারতভুক্ত হয়নি। ব্রিটিশ আমলে মণিপুর ‘প্রিন্সলি স্টেট’ হিসেবে মর্যাদা পেত। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর কংগ্রেস দলের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা বল্লব ভাই প্যাটেলের অব্যাহত চাপের মুখে মণিপুরের তৎকালীন শাসক, মহারাজা বুদ্ধচরণ ১৯৪৯ সালে ভারত অন্তর্ভুক্তি সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। মণিপুরবাসী কখনো সেই একত্রকরণ মেনে নিতে পারেনি বলেই ওই রাজ্যে সশস্ত্র সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসের সূত্রপাত হয়।
মণিপুরের মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ মেইতেই জনগোষ্ঠী। বাকি ৪৭ শতাংশ নাগা, মিজো ও কুকি তফসিলি জনজাতি। ধর্মে মেইতেইরা হিন্দু। অপরদিকে তফসিলি জনজাতির লোকেরা অধিকাংশই খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসী। এই তফসিলি জনজাতির মধ্যে আদিকাল থেকেই কুকিরা ছিল যোদ্ধা জাতি। এরা বারুদ বানাতে ও বন্দুক চালাতে পারদর্শী। এই কুকি জাতিগোষ্ঠীর বসবাস উত্তর ভারতের নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, আসাম, মিজোরাম, মণিপুর; মিয়ানমারের কাচিন, সাগাইং ও চিন রাজ্যে। বাংলাদেশে তাদের অবস্থান বান্দরবানে।
গোড়ায় কুকিরা খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসী ছিল না। ব্রিটিশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় খ্রিষ্টধর্মীয় মিশনারিরা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎকালীন মিয়ানমারের পার্বত্য এলাকার পিছিয়ে পড়া জনজাতিগোষ্ঠীর ভেতর খ্রিষ্টানধর্মের বিস্তার ঘটানোর উদ্যোগ নেয়। ব্রিটিশরা এই উদ্যোগের মাধ্যমে একটি খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত ‘ক্রাউন কলোনি’ স্থাপনের চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত ক্রাউন কলোনি স্থাপনে ব্যর্থ হলেও এই অঞ্চলের এক বিরাট জনগোষ্ঠীকে তারা খ্রিষ্টানধর্মে দীক্ষা দিতে সক্ষম হয়। এ কারণেই ভারত ও বর্তমান মিয়ানমারের এসব রাজ্যের অধিকাংশ জনগণই খ্রিষ্টান। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের বম, পাংক্ষু, লুসাই, গুণী, ম্রো, খিয়াং নামের ছয়টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণ খ্রিষ্টানধর্মে দীক্ষিত এবং এরা সবাই কুকি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।
সম্প্রতি ভারতের মণিপুরের উচ্চ আদালতের একটি রায়কে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা শুরু হয়েছে, তা কেবল মণিপুরেই সীমাবদ্ধ নেই।আশপাশের রাজ্যের কুকিসহ সমগোত্রীয় সম্প্রদায়ের ভেতর বিস্তার লাভ করছে। কথিত আছে, এই সংঘাতে আশপাশের রাজ্যগুলো থেকে, এমনকি মিয়ানমার ও বাংলাদেশে বসবাসকারী কুকি সম্প্রদায়ের যোদ্ধারা মণিপুরের কুকিদের সঙ্গে অংশ নিচ্ছে। জাতিগত ও ধর্মীয় বিশ্বাসে অভিন্নতা থাকায় মণিপুরের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের কুকি-চিনের ভেতর খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত ‘বৃহত্তর কুকিল্যান্ড’ স্থাপনের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ করতেই পারে। মিয়ানমারের চিন জনগোষ্ঠী ও বাংলাদেশের বম এবং ভারতের মিজো জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকিদের নৃতাত্ত্বিক মিল আছে।
এ ধরনের প্রচেষ্টার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সম্পৃক্ততা থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ইন্দোনেশিয়ার খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত ‘ইস্ট তিমুর’ ও সুদানের ‘দক্ষিণ সুদান’ প্রতিষ্ঠার পেছনে পশ্চিমারা যে ইন্ধন জুগিয়েছিল, তা বলাই বাহুল্য। ইস্ট তিমুর ও দক্ষিণ সুদান নামের দুটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্র সৃষ্টির মাধ্যমে তারা ইতিমধ্যেই এ ধরনের প্রচেষ্টার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বান্দরবানে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার কোনো কারণ দেখি না।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানে হত্যা ও সন্ত্রাসের নতুন আতঙ্কের নাম কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট। ২০০৮ সালে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠিত হলেও, ২০১৬ সালে সংগঠনটি সশস্ত্র গ্রুপ হিসেবে গড়ে ওঠে। শুরুতে এর নাম ছিল ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স’। প্রথম দিকে তারা শান্তিপূর্ণ সামাজিক কর্মসূচি পালন করে ভারতের মণিপুর ও মিয়ানমারের চিন রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। সন্ত্রাসী এই দলের সদস্যদের ভারতের মণিপুর ও মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যে পাঠানো হয় গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য। ২০১৯ সালে প্রশিক্ষণ শেষে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে ফিরে আসে। শুরুতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্যে ব্যস্ত থাকলেও ধীরে ধীরে তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে।
বর্তমানে সংগঠনটির সশস্ত্র উইং কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি বা কেএনএ নামে পরিচিত এবং তাদের তিন থেকে চার হাজার সদস্য রয়েছে। এদের অনেকেই পার্বত্য চট্টগ্রাম ও ভারতের মিজোরামে যাতায়াত করে থাকে। এই দলের সদস্যদের তিন মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে এক মাস ভারতের মিজোরামে তাত্ত্বিক ও শারীরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বাকি দুই মাস মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের সঙ্গে যৌথভাবে সে দেশের আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাধ্যমে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
কুকি-চিনরা নিজেদের পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মনে করে। চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে তারা বার্মিজ ও ভারতীয় জাতিভুক্ত এবং বহিরাগত মনে করে। কেএনএ পার্বত্য তিন জেলার লামা, রুমা, আলীকদম, থানচি, রোয়াংছড়ি, বিলাইছড়ি, জুরাইছড়ি ও বরকল উপজেলার সমন্বয়ে পৃথক রাজ্যের দাবি করে আসছে। উল্লিখিত এলাকা নিয়ে তারা একটি মানচিত্রও তৈরি করেছে। তাদের এই প্রস্তাবিত মানচিত্রের তিন দিকে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতের সীমান্ত।
পৃথক রাজ্য দাবির পেছনে কেএনএ যে যুক্তি উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে, তার পেছনেও ছোট্ট একটি ইতিহাস আছে। উনিশ শতকের শেষ ভাগে তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামের দক্ষিণ-পূর্ব, পূর্ব দিক থেকে নানামুখী আক্রমণ আসতে থাকে। নানামুখী আক্রমণের চাপে কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর লোকেরা ধীরে ধীরে ভারতের মিজোরাম ও ত্রিপুরার পর্বতমালা, লুসাই পাহাড়ের দিকে চলে যায়। তাদের ছেড়ে যাওয়া অঞ্চলগুলোই হলো বর্তমানে কুকিদের দাবি করা লামা, রুমা, আলীকদম, থানচি, রোয়াংছড়ি, বিলাইছড়ি, জুরাইছড়ি ও বরকল উপজেলা।
এই অঞ্চল পরে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোকদের দখলে চলে যায়। ১৮৯২ সালের পর তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকারও কুকি জনগোষ্ঠীকে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে তিন ভাগে ভাগ করে দেয়। তৎকালীন বার্মার চিন পর্বতমালা, বাংলার দক্ষিণভাগে লুসাই পর্বতমালা ও উত্তরে আসামের নিয়ন্ত্রণে দিয়ে দেয়। এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা উচিত। বাংলাদেশে দুই দশক ধরে চাকমাদের নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব নৃগোষ্ঠীর লোকেরা তথাকথিত শান্তিবাহিনীর নামে যে বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল; তারা নিজেদের আদিবাসী হিসেবে দাবি করে আসছে।
আমাদের দেশের তথাকথিত অন্ধ কিছু বুদ্ধিজীবীও তাদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এসব নৃগোষ্ঠীর লোকেরা আদতেই বাংলাদেশের বাইরে থেকে আসা জনগোষ্ঠী; বরং কুকি-চিন জনগোষ্ঠীরা চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়েরও অনেক আগে থেকে এই অঞ্চলে বসবাস করছে! বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বের উল্লিখিত আটটি উপজেলায় কুকি জনগোষ্ঠীর বসবাস। তারা সাধারণত উঁচু পাহাড়ে থাকে। বাংলা বলতে পারে না বলে পার্বত্য চট্টগ্রামসংলগ্ন মানুষের কাছে তারা ‘কুকি’
নামেই পরিচিত। তাদের ‘জো’ জাতির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর যারা বাংলা বলতে পারত, যেমন চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে চট্টগ্রামের মানুষ জুমিয়া বা ‘জুম্ম’ নামে ডাকত।
এই জনগোষ্ঠীই শান্তিবাহিনী সৃষ্টি করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘জম্মু ল্যান্ড’ হিসেবে পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। কুকিরা সেই ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই দুর্ধর্ষ, আগ্রাসী ও হিংস্র জাতি হিসেবে পরিচিত। তারা মনে করে লুসাই পর্বতমালার পাদভূমি তাদের মাতৃভূমি, আর বাকিরা অর্থাৎ চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ইত্যাদি জনগোষ্ঠী সব বহিরাগত। কুকিরা তাই প্রয়োজনে বাইরের শক্তির সাহায্য নিয়ে হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের যে এলাকা থেকে তারা বিতাড়িত হয়েছিল, সেই এলাকাগুলো নিয়ে তাদের কল্পিত স্বপ্ন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে পৃথক
শাসনব্যবস্থা চালু করবে।
ভারতের মণিপুরের সহিংসতাকে কেন্দ্র করে সেখানকার কুকি-চিন জনগোষ্ঠী পুনরায় লড়াই শুরু করেছে। সেই লড়াইয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কুকিরা যেভাবে অংশগ্রহণ করছে বলে শোনা যাচ্ছে, শেষ পর্যন্ত এ পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় বলা যায় না। মনে রাখতে হবে, উত্তর-পূর্ব ভারত ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ঘটনাবলি পশ্চিমা শক্তিগুলোর নজর ও আগ্রহের বাইরে নেই। মণিপুরের পরিস্থিতি তারা গভীর নজরদারিতে রাখবে সন্দেহ নেই। অতএব, এই অঞ্চলে খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত ‘বৃহত্তর কুকি ল্যান্ড’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্রিটিশ আমলের সেই স্বপ্ন ‘ক্রাউন কলোনি’ বাস্তবায়নে পশ্চিমাদের যে ইন্ধন থাকবে না, তা কে বলতে পারে!
পশ্চিমা বিশ্ব ইতিমধ্যেই জানিয়েছে তারা মণিপুরে সংখ্যালঘুদের ওপর যে নির্যাতন চলছে, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ওদিকে ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ভারত চাইলে মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে। মণিপুরের পরিস্থিতি আপাতত শান্ত মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা তুষের আগুনের মতো চাপা পড়ে আছে। এই আগুন যেকোনো সময় ব্যাপক আকারে বিস্তার লাভ করতে পারে। পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে আমাদের নিজেদের স্বার্থেই মণিপুরের পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ রাখতে হবে, যাতে সেই আগুনের আঁচ বাংলাদেশে এসে না পড়ে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৭ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
দুই মাসের বেশি সময় ধরে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য মণিপুরে জাতিগত সংঘাত, রক্তপাত এবং সন্ত্রাসী আক্রমণে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মণিপুরের চলমান এই সন্ত্রাস ও অসন্তোষ, উত্তর-পূর্ব ভারতে নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি করছে, যা থেকে আশপাশের অঞ্চলও মুক্ত থাকতে পারবে কি না, এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
২২ জুলাই ২০২৩‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
দুই মাসের বেশি সময় ধরে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য মণিপুরে জাতিগত সংঘাত, রক্তপাত এবং সন্ত্রাসী আক্রমণে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মণিপুরের চলমান এই সন্ত্রাস ও অসন্তোষ, উত্তর-পূর্ব ভারতে নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি করছে, যা থেকে আশপাশের অঞ্চলও মুক্ত থাকতে পারবে কি না, এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
২২ জুলাই ২০২৩গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৭ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
দুই মাসের বেশি সময় ধরে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য মণিপুরে জাতিগত সংঘাত, রক্তপাত এবং সন্ত্রাসী আক্রমণে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মণিপুরের চলমান এই সন্ত্রাস ও অসন্তোষ, উত্তর-পূর্ব ভারতে নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি করছে, যা থেকে আশপাশের অঞ্চলও মুক্ত থাকতে পারবে কি না, এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
২২ জুলাই ২০২৩গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৭ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
দুই মাসের বেশি সময় ধরে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য মণিপুরে জাতিগত সংঘাত, রক্তপাত এবং সন্ত্রাসী আক্রমণে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মণিপুরের চলমান এই সন্ত্রাস ও অসন্তোষ, উত্তর-পূর্ব ভারতে নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি করছে, যা থেকে আশপাশের অঞ্চলও মুক্ত থাকতে পারবে কি না, এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
২২ জুলাই ২০২৩গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৭ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫