Ajker Patrika

সব বেড়েছে, বাড়েনি কেবল মূলধন

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২২, ০৯: ৩৪
Thumbnail image

ক্রমাগত লোকসানে বগুড়ার সারিয়াকান্দির চাতাল ব্যবসায়ীরা। গত কয়েক বছরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও শ্রমিকের মজুরিসহ অন্যান্য খরচ বাড়লেও বাড়েনি তাঁদের মূলধন। ফলে তাঁরা পুঁজিসংকটে পড়েছেন। এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সহজ শর্তে সরকারিভাবে ঋণ চান তাঁরা।

দেখা গেছে, চাতালগুলোতে এ মৌসুমে মরিচ আর কাঠের গুঁড়া শুকানো হচ্ছে। আবার ধান উঠলে তখন তাই শুকানো হবে।

সারিয়াকান্দির চাতাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ চাতালের আনুষঙ্গিক খরচাদি বৃদ্ধির কারণে তাঁরা বিপাকে রয়েছেন। ২০০৭ সালে ১ মণ ধানের ক্রয়মূল্য ছিল ১৫০ টাকা। এখন প্রতি মণ ধান ক্রয় করতে হয় ১৩০০ টাকা পর্যন্ত। ১ মণ ধান শুকাতে লেবার খরচ নিত ৩ টাকা। এখন ১ মণ ধান শুকানোর লেবার খরচ ৬০ টাকা। প্রতি মণ শুকনা মরিচের ক্রয়মূল্য ছিল ১২০০ টাকা। এখন কিনতে হচ্ছে ৭০০০ টাকায়। মরিচ শুকানোর দিন মজুরি ছিল ৩০ টাকা। এখন দিতে হয় ২৫০ টাকা।

বিদ্যুৎ বিল তখন প্রতি ইউনিট ছিল ১ টাকা ৫০ পয়সা। এখন ৯ টাকা। তার সঙ্গে মিটার ভাড়া, ডিমান্ড চার্জ, সার্ভিস চার্জ, সিস্টেম লস, বিবিধ প্রভৃতি যোগ হয়। ফলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১৫ টাকার কাছাকাছি চলে যায়।

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, প্রথমে যে মূলধন নিয়ে তাঁরা ব্যবসা শুরু করেছিলেন এখন সেই মূলধনের প্রায় ২০ গুণের বেশি মূলধন জোগান দিতে হচ্ছে। যার জোগানের অভাবে তাঁদের চাতাল ব্যবসা প্রায় বন্ধের পথে। এ সংকট হতে উত্তরণের জন্য তাঁরা স্বল্প সুদে সরকারি লোন চান।

উপজেলার হাটফুলবাড়ী ইউনিয়নের চাতাল ব্যবসায়ী একাব্বর হোসেন। তিনি জানান, পুঁজিসংকটে বেশ কয়েক দিন ধরে তিনি বিভিন্ন ব্যাংকে ঘুরপাক খাচ্ছেন লোনের আশায়। পরে চড়া সুদে লোন নিতে হয়েছে তাঁকে। এ অবস্থায় ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

একই এলাকার চাতাল ব্যবসায়ী মোকছেদুল আলম বলেন, ‘ক্রমাগত লোকসানের জন্য গত কয়েক বছর ব্যবসা বন্ধ করে চাতাল একটি কোম্পানিকে ভাড়া দিয়েছিলাম। সবেমাত্র আবার চাতালের ব্যবসা শুরু করেছি। তবে অনেক টাকা মূলধন বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। সরকারি সহজ শর্তে লোন আমাদের একান্ত প্রয়োজন।’

সারিয়াকান্দি চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক জানান, এ উপজেলায় ১২০টি চালকল আছে। এর মধ্যে নিবন্ধিত ১০০টি। এর মধ্যে স্কয়ার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ৪০টি। প্রাণ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ৬টি। ফ্রেশ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ৪টি এবং বেশ কয়েকটি একমি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ মরিচের চাতাল আছে। তিনি বলেন, ‘পুঁজির অভাবে চাতাল ব্যবসা টিকিয়ে রাখা খুবই কষ্টসাধ্য হয়েছে। ব্যাংক থেকে আমরা যাতে সহজ শর্তে বেশি লোন নিতে পারি, সেটিই সরকারের কাছে চাওয়া।’

বাংলাদেশ রূপালী ব্যাংক হাটফুলবাড়ী শাখার ব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদ বলেন, যাঁরা ভালো ব্যবসায়ী তাঁদের উপযুক্ত জামানতের ভিত্তিতে লোনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হবে। তবে শর্ত শিথিলের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত।

সারিয়াকান্দি উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা দেওয়ান মো. আতিকুর রহমান বলেন, এ উপজেলায় মাত্র একটি প্রাইভেট ব্যাংক আছে। আর সবই সরকারি ব্যাংক। প্রাইভেট ব্যাংকে আনলিমিটেড লোন পাওয়া যায়। অপরদিকে সরকারি ব্যাংকের লোনের পরিমাণ সীমিত। ফলে ব্যবসায়ীরা সীমিত লোন পাচ্ছেন। তবে চাতাল ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত