Ajker Patrika

টিলা কেটে পরিবেশের সর্বনাশ

ঘাটাইল প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২২, ১৩: ০৫
টিলা কেটে পরিবেশের সর্বনাশ

ঘাটাইল উপজেলার টিলা এলাকার মাটি কেটে বিক্রি করছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। সে মাটি দিয়ে চলছে নিচু এলাকা ভরাটের কাজ। এতে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল। হুমকিতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। আবাসন ও খাদ্যসংকটে পড়েছে বন্য প্রাণী। তারপরও থামছে না পাহাড়খেকো চক্রের দৌরাত্ম্য। এসব ঘটনা প্রকাশ্যে ঘটলেও যেন দেখার কেউ নেই।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন দেখেও দেখছে না। উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের সদস্যরা মাঝেমধ্যে লোকদেখানো অভিযান চালালেও তা কোনো কাজে আসছে না। আইন থাকলেও প্রয়োগের বালাই নেই। দু-একটা অভিযান পরিচালনা ছাড়া প্রশাসন বা বন বিভাগকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। ফলে কোনোভাবেই থামছে না পাহাড় কাটা।

জানা গেছে, ঘাটাইল উপজেলার প্রায় অর্ধেক এলাকাজুড়ে টিলা। এসব পাহাড়ি অঞ্চল বন বিভাগের সংরক্ষিত এলাকা। এসব সংরক্ষিত পাহাড় থেকে খননযন্ত্র দিয়ে প্রকাশ্যে টিলা কাটছেন একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এই মাটি ব্যবহৃত হচ্ছে ইটভাটা ও পুকুর ভরাটের কাজে। শুধু ব্যক্তিগত নয়, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজেও পাহাড়ি লাল মাটি ব্যবহার করতে দেখা গেছে। পোড়াবাড়ি এলাকায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র স্থাপনে বালু দিয়ে ভরাটকাজ করার কথা থাকলেও এক একর জায়গার এক-তৃতীয়াংশেই ব্যবহার করা হয়েছে পাহাড়ি মাটি। এ ছাড়া গত নভেম্বর মাসে পাহাড় কেটে উপজেলার কাইতকাই এলাকায় সরকারি প্রকল্পের রাস্তা নির্মাণের কাজ করেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্য। তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণের কারণে ওই প্রকল্পের কোনো বিল ঠিকাদারকে দেওয়া হবে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘাটাইল পৌরসভার ঝড়কা থেকে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে একটি পাকা সড়ক চলে গেছে দেওপাড়া বাজার পর্যন্ত। এ রাস্তা ধরে এগোলে চোখে পড়বে পাহাড় কাটার দৃশ্য। ওই সড়কের বারইপাড়া এলাকায় প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার একটি টিলা কাটা প্রায় শেষের দিকে। দেওপাড়া ইউনিয়নের ঘোড়ামারা মৌজায় এক বছর আগে ছিল গজারির বন। ওই পাহাড়ের মাটিও বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঘাটাইল সদর থেকে সাগরদিঘি পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে কমপক্ষে ২০টি স্থানে চলছে পাহাড়ের লাল মাটি দিয়ে ভরাটের কাজ। এদিকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপজেলার পাকুটিয়া, পোড়াবাড়ি, বানিয়াপাড়সহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ি মাটি ফেলে স্তূপ করে রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে ধলাপাড়া ইউনিয়নের শহরগোপীনপুর, সংগ্রামপুর ইউনিয়নের খাগরাটা, দেওজানা, নলমা, রসুলপুর ইউনিয়নের সিংহেরচালা, সাগরদিঘি ইউনিয়নের আষারিয়াসহ পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন স্থানে টিলা কাটার চিহ্ন স্পষ্ট। ওই সব এলাকার মানুষ জানান, যাঁরা পাহাড় কাটেন, তাঁরা সবাই প্রভাবশালী। তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ খোলা কঠিন। তবে দেওপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান রুহুল আমিন আকন্দ বলেন, তাঁর ইউনিয়নে পাহাড় কাটা বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বন বিভাগের ঘাটাইল ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, বনের জমিতে যে পাহাড় রয়েছে, তা থেকে এক কোদাল মাটিও কাটতে দেওয়া হয় না। তবে প্রকাশ্যে পাহাড় কাটা হচ্ছে কীভাবে, তা জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘জনগণের রেকর্ডভুক্ত পাহাড় কাটলে সেখানে আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি না।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) টাঙ্গাইল অঞ্চলের গবেষণা কর্মকর্তা সোমনাথ লাহিড়ী বলেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে মাটি বা গাছ কোনো কিছুই কাটা যাবে না। সংরক্ষিত বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য এটা অত্যন্ত জরুরি। কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।

ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমি সদ্য ঘাটাইলে যোগ দিয়েছি। এখন পর্যন্ত পাহাড় কাটার কোনো অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত