Ajker Patrika

ঘুষকে পারিশ্রমিক মনে করেন শিক্ষা কর্মকর্তা

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৯: ২০
ঘুষকে পারিশ্রমিক মনে করেন শিক্ষা কর্মকর্তা

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। টাকা ছাড়া ছাড়েন না কর্মচারী নিয়োগ ও এমপিও ফাইল। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মচারী নিয়োগেও টাকা নিয়ে থাকেন তিনি। এ ছাড়া জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের অনলাইনে এমপিও ফাইল অগ্রায়ন করতেও ঘুষ দিতে হয় তাঁকে। বিষয়টি স্বীকার করেছেন শফিকুল নিজেও। তবে তিনি এটিকে ঘুষ নয়, পারিশ্রমিক বা সম্মানী বলতে স্বচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা গেছে, পাশের বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলা থেকে চলতি বছরের ৭ মে শফিকুল ইসলাম এই উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি প্রতিষ্ঠানভেদে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন। পরবর্তী সময়ে তাঁদের এবং এনটিআরসিএ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের থেকেও এমপিও আবেদন অনলাইনে পাঠাতে জনপ্রতি ২ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন।

উপজেলার সোনামুখী উচ্চ বিদ্যালয়, গোপীনাথপুর উচ্চবিদ্যালয়, গুডুম্বা ডিএস ফাজিল মাদ্রাসা এবং গণিপুর জাফরপুর উচ্চবিদ্যালয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত এবং এনটিআরসিএ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের থেকে পারিশ্রমিকের কথা বলে ওই কর্মকর্তা ঘুষের টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। সেসব টাকা তিনি সরাসরি বা তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নিয়েছেন।

এনটিআরসিএ সূত্রে জানা গেছে, এনটিআরসিএর চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির আওতায় এই উপজেলায় ৩১ জন শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন। এনটিআরসিএ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের হয়রানি বন্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ৯ অক্টোবর একটি পত্র জারি করে।
তাতে বলা হয়েছে, উপজেলা পর্যায় থেকে অনলাইনে এমপিও-সংশ্লিষ্ট আবেদন অগ্রায়নের ক্ষেত্রেও কোনো ধরনের হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রযোজ্য বিধিবিধানের আলোকে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই পত্র উপেক্ষা করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ঘুষ-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন বলে ভুক্তভোগী শিক্ষকেরা জানিয়েছেন।

 শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্কুলে কর্মচারী নিয়োগ বোর্ডে সদস্য হিসেবে থাকেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। স্কুলের কর্মচারী নিয়োগে মো. শফিকুল ইসলাম ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এদিকে নিয়োগ বোর্ডে এক দফা টাকা আদায়ের পর এমপিওর জন্য অনলাইনে ফাইল পাঠানোর সময় আরেক দফা টাকা নেন শফিকুল ইসলাম। এমনকি এনটিআরসিএ থেকে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের বেতন-ভাতার ফাইল পাঠাতেও তাঁকে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়।

আক্কেলপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোমিন বলেন, ‘এনটিআরসিএর চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির সুপারিশে আমার প্রতিষ্ঠানে তিনজন শিক্ষক যোগদান করেন। তাঁরা অনলাইনে এমপিও আবেদন করেন। তিনি তাঁর অফিসে আমাকে ডেকে নিয়ে তিনজনের ফাইল অনলাইনে পাঠাতে ৬ হাজার টাকা দাবি করেন।’

উপজেলার আর কে এম দাখিল মাদ্রাসার সুপার গোলাম আযম বলেন, ‘সম্প্রতি আমার প্রতিষ্ঠানে একজন কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে। সেই নিয়োগে তিনি ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। পরে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীর অনলাইনে এমপিও আবেদন ফাইল পাঠানোর জন্য ৫ হাজার টাকা দাবি করেন এবং সেই টাকাও বিকাশে দিতে বলেন। পরবর্তী সময় প্রার্থী তাঁকে ৩ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে দিয়েছেন।’

জানতে চাইলে আক্কেলপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ‘অনলাইনে এমপিও ফাইল পাঠাতে অফিস চলাকালীন বাইরেও অনেক পরিশ্রম করতে হয়। এটি একপ্রকার পারিশ্রমিক হিসেবে নেওয়া হয়। তবে কর্মচারী নিয়োগে কোনো টাকা নিইনি। আমরা নিয়োগের সময়ে প্রতিষ্ঠানে গেলে তাঁরা আমাদের কিছু সম্মানী দেন, যা ঘুষ নয়।’

জয়পুরহাট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শিশির কুমার উপাধ্যায় বলেন, ‘শফিকুলের বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমপিও ফাইল পাঠানো তাঁর কাজের মধ্যে পড়ে। সেখানে কোনো অর্থ লেনদেনের সুযোগ নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত