Ajker Patrika

সার্জন নেই, অস্ত্রোপচারও নেই

আনিসুল হক জুয়েল, দিনাজপুর
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২১, ১৯: ৪৩
সার্জন নেই, অস্ত্রোপচারও নেই

এক্স-রে মেশিন নষ্ট ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে। ইসিজি ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও নেই সনোলোজিষ্ট ও অপারেটর। অপারেশন থিয়েটার আছে, তবে নেই সার্জন। ফলে হয় না জরুরি অপারেশন। গাইনোকোলোজিষ্ট না থাকায় নরমাল ডেলিভারি হলেও জরুরি সিজারের জন্য রাত-বিরেতে ছুটতে হয় জেলা সদর দিনাজপুর অথবা রংপুরে। এভাবেই জরুরি সেবা ছাড়াই বছরের পর বছর চলছে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সেবা।

প্রায় চার শত বর্গকিলোমিটার আয়তনের পার্বতীপুর উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি, মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি, কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়াও দেশের বৃহৎ রেল জংশন এবং দেশের একমাত্র লোকোমোটিভ কারখানাটি পার্বতীপুরে অবস্থিত। এখানে দেশি-বিদেশি অনেক মানুষ কর্মসূত্রে বসবাস করে থাকেন। কিন্তু এতগুলো মানুষের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দিনের পর দিন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি থাকায় মেজর অপারেশনের সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক মেডিকেল কর্মকর্তা থাকলেও কোনো সার্জন ও গাইনোকোলোজিষ্ট না থাকায় মেজর অপারেশন ও সিজারের জন্য রোগীদের দিনাজপুর অথবা রংপুরে ছুটতে হয়। এক্স-রে মেশিন নষ্ট এবং মেশিন থাকার পরও সনোলোজিষ্ট ও ইসিজি অপারেটর না থাকায় রোগীদের এ পরীক্ষাগুলো বাইরে করাতে হচ্ছে। ফলে রোগীদের গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি অর্থ। শুধু তাই নয়, ঘাটতি আছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর বেলাতেও। জনবল কম থাকায় ব্যাহত হচ্ছে সেবার মান। একাধিক পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র একজন। ফলে হাসপাতালের পরিবেশ অধিকাংশ সময় নোংরা ও অপরিষ্কার থাকে।

জ্বর-সর্দির চিকিৎসা নিতে আসা ফাতেমাতুজ্জহরা (২৮) বলেন, ‘আমার বাবা গত বছর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাঁকে এখানে এনেছিলাম। এখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দিনাজপুর মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন তাঁরা। পরে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রওনা দিলে পথিমধ্যে মারা যান। বড় ডাক্তার থাকলে হয়তো আমার বাবা বেঁচে যেত।’

পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। অবকাঠামো অনুযায়ী উপকরণ নাই, অনেক মেশিন অচল হয়ে পড়ে আছে। ডাক্তার থাকে না, গেলে কোনো সেবা পাওয়া যায় না।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহেল মাফি বলেন, সার্জন, গাইনোকোলোজিষ্ট না থাকায় জরুরি অপারেশনগুলো হচ্ছে না। বাধ্য হয়েই রোগীদের বাইরে পাঠাতে হয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত