মারুফ রসূল

মহান মুক্তিসংগ্রামের প্রায় দুই দশক পর জন্ম নেওয়া প্রজন্মের একজন যখন স্বাধীনতাসংগ্রাম-সম্পর্কিত উপলব্ধির বয়ান লিপিবদ্ধ করতে বসে; তখন কেবল সময়ের কারণেই তার ব্যাসার্ধ যায় বেড়ে, পরিধি হয়ে পড়ে বিস্তৃত। তার ওপর সে প্রজন্ম বেড়ে উঠেছিল এমন একসময়ে, যখন রাষ্ট্রজুড়ে রাজনীতির নামে চলছিল পুতুলের কুচকাওয়াজ। কিন্তু মুক্তিসংগ্রামের অমোঘ ইতিহাস তো আমাদের পরিচয়জ্ঞাপক একমাত্র অঙ্গুরীয়। রাজা দুষ্মন্ত যে অঙ্গুরীয় দেখে চিনেছিলেন শকুন্তলাকে; একাত্তরের সিলমোহর আঁকা সেই অঙ্গুরীয় দিয়েই বাংলার মানুষ নিজেকে তুলে ধরে গোটা বিশ্বে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। প্রণম্য অগ্রজদের মতে, আমাদের প্রহরযাপন মোবাইলমন্থন দোষে দুষ্ট হলেও আমাদের উপলব্ধির সরলরেখায় যাবতীয় সচেতনতা নিয়ে আজও বিন্যস্ত থাকে মানুষ। তাই পঞ্জিকার পাতা ঘুরে মহান স্বাধীনতা দিবসের দিনটি যখন প্রতিবছর আমাদের চেতনার চক্ষুদানপর্ব সমাপ্ত করে, আমরা বুঝতে পারি, এই মহাসংগ্রাম ছিল আদতে মধ্যবিত্তের সংগ্রাম।
কিন্তু তৎক্ষণাৎ ধাক্কা খাই; কেননা, মিডিয়ার ম্যাকবেথ আর ক্লাসরুমের অধ্যাপকেরা আমাদের সামনে মধ্যবিত্তের এমন একটি সংজ্ঞা তৈরি করে দিয়েছেন যে মুক্তিসংগ্রামের মহাবাদলে মধ্যবিত্তের ইলশেগুঁড়ি খোঁজ করার সাহস আর আমাদের হয় না। অথচ আমরা যদি ইতিহাসনিষ্ঠ হই, তবে এ কথা স্বীকার করতেই হবে, সেমিনারনির্মিত মধ্যবিত্ত নয়, বরং ইতিহাসনির্মিত মধ্যবিত্ত শ্রেণিই ছিল আমাদের মুক্তিসংগ্রামের সর্বেসর্বা। গত শতাব্দীর শুরুতে অখণ্ড বাংলায় ঘটে যাওয়া নবজাগরণের ইতিহাসে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজা রামমোহন রায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী মোতাহার হোসেন বা কাজী আবদুল ওদুদের মতো স্বমহিমায় উজ্জ্বল ধ্রুব তারকাদের নাম যতখানি স্পষ্ট, লালন কিংবা বিজয় সরকার যেন ঠিক ততখানিই অস্পষ্ট। এ কথাটির দ্বিধাথরথর চূড়ে ইতিহাসের চিরচঞ্চল গতির সঙ্গে মিলিয়ে দিলে আমরা বুঝতে পারি যে শিক্ষিত আর রাজনীতিসচেতন ভদ্রলোকেরা ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদে ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাঁরাই ৩৬ বছর পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দেশভাগটি অপরিহার্য। বাঁ হাতে কার্ল মার্ক্স আর ডান হাতে গ্রামসি নিয়ে দাঁড়ালেও সাতচল্লিশ-পরবর্তী বাংলার ইতিহাস আমাকে টেনে নিয়ে যায় শাহ আবদুল করিমের দিকে, অর্থাৎ ইতিহাস আমাকে মৃত্তিকামুখী হওয়ার শিক্ষা দেয়।
আমার যুক্তি হলো, ১৯০০-৪৭ পর্যন্ত রাজনীতির ইতিহাসে আমাদের অগ্রজরা যাঁদের ‘মধ্যবিত্ত’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন, আদতে তাঁরা ছিলেন অন্তর্বর্তী শ্রেণি-শিক্ষিত, শিকড়চ্যুত, ঔপনিবেশিক রুচির ভদ্রলোক কিন্তু সুযোগসন্ধানী। আর যে কৃষক, বাউল কিংবা পরবর্তী সময়ে তৈরি হওয়া বাংলার শ্রমিকশ্রেণিকে আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত মানস ‘অশিক্ষিত’, ‘অন্ত্যজ’ বা ‘ব্রাত্য’ হিসেবে দেখে এসেছে, প্রকৃত প্রস্তাবে তাঁরাই হলেন মধ্যবিত্ত। ঔপনিবেশিক শিক্ষাবলয়ে অন্তর্বর্তী শ্রেণির রুচি তৈরি হয় বলেই মাটির সঙ্গে তার সংযোগটি কেটে যায় তারই নিজের মুদ্রাদোষে। আর এ কারণেই শোষক তাকে অনায়াসে ব্যবহার করতে পারে। অন্যদিকে মধ্যবিত্ত কখনো কখনো ঔপনিবেশিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও ঔপনিবেশিক রুচিতে নিজের মানস তৈরি করে না বলেই সময়ের প্রয়োজনে বিপ্লব হয়ে ওঠে তার চূড়ান্ত গন্তব্য।
এই যুক্তির ডানায় ভর করে বাংলার মুক্তিসংগ্রামের দিনগুলোতে ফিরে গেলে দেখতে পাই কী অনায়াসে রাজনৈতিক বিপ্লব অনূদিত হচ্ছে সাংস্কৃতিক পরিভাষায় অথবা সংস্কৃতির লেখচিত্র আঁকা হচ্ছে রাজনীতির সমীকরণে। অন্তর্বর্তী শ্রেণির কাছে রবীন্দ্রনাথ কেবলই শিল্পের অমূল্য অনুষঙ্গ, কিন্তু মধ্যবিত্তের কাছে ১৯৬১ সালের প্রতিবাদী রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ সাক্ষী–বাংলার মানুষ রবীন্দ্রনাথকে লড়ে জিতে নিয়েছিলেন। ফলে গত শতাব্দীর প্রথম সাতচল্লিশটি বছরকে আমরা যদি ধরে নিই অন্তর্বর্তী শ্রেণির জয়জয়কারের যুগ হিসেবে, তবে ১৯৪৭-৭১—এই তেইশটি বছর ছিল বাংলার মধ্যবিত্তের গৌরবগাথাময় মহাকাব্য। এই তেইশ বছরে বাংলার রাজনৈতিক নেতৃত্ব এসেছে মধ্যবিত্ত থেকে, সাংস্কৃতিক মশাল জ্বলেছে মধ্যবিত্তের হাতে এবং সাংবাদিকতার ইতিহাস রচিত হয়েছে মধ্যবিত্তের নেতৃত্বে। আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহযোদ্ধাদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আওয়ামী লীগের ইতিহাস, ছায়ানট থেকে উদীচী পর্যন্ত সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো প্রতিষ্ঠার ইতিহাস আর মানিক মিয়া-সিরাজুদ্দীন হোসেনের ইত্তেফাক থেকে রণেশ দাশগুপ্ত- শহীদুল্লা কায়সারের সংবাদ পত্রিকার গণমুখী ইতিহাস কার্যত বাংলার মৃত্তিকাসংলগ্ন মধ্যবিত্তের ইতিহাস।
প্রশ্ন হতে পারে, অন্তর্বর্তী শ্রেণির শিক্ষিত ভদ্রলোকেরা তখন কোথায় ছিলেন? আশপাশেই ছিলেন, কিন্তু নেতৃত্বে ছিলেন না; কারণ ধর্মের নামে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তাঁরা যখন দেখলেন নেতৃত্ব চলে গেছে অবাঙালি মুসলমানের হাতে, তখন তাঁদের ঘুম ভাঙল বটে কিন্তু আরামের বিছানা তাঁরা ছাড়লেন না। গত শতাব্দীতে অন্তর্বর্তী শ্রেণির সবচেয়ে বিপজ্জনক আবিষ্কার ছিল ‘ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ; এর বিপরীতে মধ্যবিত্তের আবিষ্কার ছিল ‘ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ’। সুযোগসন্ধানী অন্তর্বর্তী শ্রেণি মধ্যবিত্তের নেতৃত্বে পরিচালিত ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন বটে কিন্তু নিরাপদ দূরত্বে থেকে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও তাঁরা অংশ নিয়েছিলেন নানাভাবে। স্বাধীন বাংলাদেশ তাই স্বদেশিকতায় ভাস্বর মধ্যবিত্ত শ্রেণির রক্তসংগ্রামের ফসল; আমলা বা সেনাতান্ত্রিক অন্তর্বর্তী শ্রেণির নয়। এ কথা বঙ্গবন্ধু নিশ্চিত জানতেন–আর জানতেন বলেই তিনি গণতন্ত্র নয়, বরং শোষিতের গণতন্ত্রের কথা বলেছিলেন। বারবার বলেছিলেন, ‘আমার কৃষক দুর্নীতি করে না, আমার শ্রমিক দুর্নীতি করে না...দুর্নীতি করি আমরা ৫% শিক্ষিত মানুষ।’ তাঁর বক্তব্যগুলো থেকে এটুকু পরিষ্কার হয়, তিনি ঔপনিবেশিক আমলাতান্ত্রিক বা সেনাতান্ত্রিক অন্তর্বর্তী শ্রেণির নেতৃত্বসর্বস্ব বাংলাদেশ গড়তে চাননি, তিনি চেয়েছিলেন স্বভাষী, স্বদেশি মধ্যবিত্ত শ্রেণির নেতৃত্বনির্ভর দেশ গড়তে।
ফলে আমাদের শ্রদ্ধেয় বুদ্ধিজীবীরা যে নানা গ্রন্থে লিখে গেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশে শোষক-শোষিতের দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গিয়েছিল বাহাত্তর সাল থেকেই, এ কথাটি আসলে সত্যের বিকৃতি। স্বাধীন দেশে শ্রেণিদ্বন্দ্ব অবশ্যই ছিল, কিন্তু সেটা মধ্যবিত্ত ও অন্তর্বর্তী শ্রেণির দ্বন্দ্ব। নিরাপদ দূরত্বে থেকে সংগ্রাম করলেও অন্তর্বর্তী শ্রেণি ঠিকই বুঝতে পেরেছিল একবার মধ্যবিত্তের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলে, নিজেদের ঔপনিবেশিক মানমর্যাদা আর থাকবে না। জনগণের পয়সায় বাংলো-ক্যান্টনমেন্ট সংস্কৃতি তারা চালাতে পারবে না। ফলে স্বাধীন দেশে হঠাৎ করেই তারা মুক্তিসংগ্রামের রাজাধিরাজ হয়ে উঠতে চাইলেন।
১৯৪৮-৭১ পর্যন্ত রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু যেমন হয়ে উঠেছিলেন মধ্যবিত্তের রাজনৈতিক ভাষ্যকার, তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশে তিনিই আশিরনখপদে হয়ে উঠেছিলেন মধ্যবিত্তের সাংবিধানিক ভাষ্যকার। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মধ্যবিত্তের কণ্ঠনালিটিও কেটে দিয়েছে সুবিধাবাদী অন্তর্বর্তী শ্রেণি। এরপরের বাংলাদেশ সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, মোল্লাতন্ত্র আর কালোটাকার রাজনীতিবিদদের হম্বিতম্বির বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেছে। মুক্তিসংগ্রামের কক্ষপথে একটু একটু করে ফিরে আসছে প্রিয় স্বদেশ। কিন্তু যে দার্শনিক দার্ঢ্যতায় রচিত হয়েছিল বাংলার মানুষের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস, তা এখনো যেন স্বপ্নকথা, দূরের শোনা গল্প। যে মধ্যবিত্তের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ, সেই মধ্যবিত্তের রাজনীতিই আজ ঘরছাড়া, উদ্বাস্তু। তাকে ঘরে ফেরাতে না পারলে আমাদের স্বাধীনতার বর্ণপরিচয় ফিকে হয়ে যাবে, আমাদের ইতিহাসপাঠ হয়ে উঠবে কেবলই সাজানো তথ্যের তোড়া।
মারুফ রসূল: লেখক ও ব্লগার

মহান মুক্তিসংগ্রামের প্রায় দুই দশক পর জন্ম নেওয়া প্রজন্মের একজন যখন স্বাধীনতাসংগ্রাম-সম্পর্কিত উপলব্ধির বয়ান লিপিবদ্ধ করতে বসে; তখন কেবল সময়ের কারণেই তার ব্যাসার্ধ যায় বেড়ে, পরিধি হয়ে পড়ে বিস্তৃত। তার ওপর সে প্রজন্ম বেড়ে উঠেছিল এমন একসময়ে, যখন রাষ্ট্রজুড়ে রাজনীতির নামে চলছিল পুতুলের কুচকাওয়াজ। কিন্তু মুক্তিসংগ্রামের অমোঘ ইতিহাস তো আমাদের পরিচয়জ্ঞাপক একমাত্র অঙ্গুরীয়। রাজা দুষ্মন্ত যে অঙ্গুরীয় দেখে চিনেছিলেন শকুন্তলাকে; একাত্তরের সিলমোহর আঁকা সেই অঙ্গুরীয় দিয়েই বাংলার মানুষ নিজেকে তুলে ধরে গোটা বিশ্বে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। প্রণম্য অগ্রজদের মতে, আমাদের প্রহরযাপন মোবাইলমন্থন দোষে দুষ্ট হলেও আমাদের উপলব্ধির সরলরেখায় যাবতীয় সচেতনতা নিয়ে আজও বিন্যস্ত থাকে মানুষ। তাই পঞ্জিকার পাতা ঘুরে মহান স্বাধীনতা দিবসের দিনটি যখন প্রতিবছর আমাদের চেতনার চক্ষুদানপর্ব সমাপ্ত করে, আমরা বুঝতে পারি, এই মহাসংগ্রাম ছিল আদতে মধ্যবিত্তের সংগ্রাম।
কিন্তু তৎক্ষণাৎ ধাক্কা খাই; কেননা, মিডিয়ার ম্যাকবেথ আর ক্লাসরুমের অধ্যাপকেরা আমাদের সামনে মধ্যবিত্তের এমন একটি সংজ্ঞা তৈরি করে দিয়েছেন যে মুক্তিসংগ্রামের মহাবাদলে মধ্যবিত্তের ইলশেগুঁড়ি খোঁজ করার সাহস আর আমাদের হয় না। অথচ আমরা যদি ইতিহাসনিষ্ঠ হই, তবে এ কথা স্বীকার করতেই হবে, সেমিনারনির্মিত মধ্যবিত্ত নয়, বরং ইতিহাসনির্মিত মধ্যবিত্ত শ্রেণিই ছিল আমাদের মুক্তিসংগ্রামের সর্বেসর্বা। গত শতাব্দীর শুরুতে অখণ্ড বাংলায় ঘটে যাওয়া নবজাগরণের ইতিহাসে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজা রামমোহন রায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী মোতাহার হোসেন বা কাজী আবদুল ওদুদের মতো স্বমহিমায় উজ্জ্বল ধ্রুব তারকাদের নাম যতখানি স্পষ্ট, লালন কিংবা বিজয় সরকার যেন ঠিক ততখানিই অস্পষ্ট। এ কথাটির দ্বিধাথরথর চূড়ে ইতিহাসের চিরচঞ্চল গতির সঙ্গে মিলিয়ে দিলে আমরা বুঝতে পারি যে শিক্ষিত আর রাজনীতিসচেতন ভদ্রলোকেরা ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদে ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাঁরাই ৩৬ বছর পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দেশভাগটি অপরিহার্য। বাঁ হাতে কার্ল মার্ক্স আর ডান হাতে গ্রামসি নিয়ে দাঁড়ালেও সাতচল্লিশ-পরবর্তী বাংলার ইতিহাস আমাকে টেনে নিয়ে যায় শাহ আবদুল করিমের দিকে, অর্থাৎ ইতিহাস আমাকে মৃত্তিকামুখী হওয়ার শিক্ষা দেয়।
আমার যুক্তি হলো, ১৯০০-৪৭ পর্যন্ত রাজনীতির ইতিহাসে আমাদের অগ্রজরা যাঁদের ‘মধ্যবিত্ত’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন, আদতে তাঁরা ছিলেন অন্তর্বর্তী শ্রেণি-শিক্ষিত, শিকড়চ্যুত, ঔপনিবেশিক রুচির ভদ্রলোক কিন্তু সুযোগসন্ধানী। আর যে কৃষক, বাউল কিংবা পরবর্তী সময়ে তৈরি হওয়া বাংলার শ্রমিকশ্রেণিকে আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত মানস ‘অশিক্ষিত’, ‘অন্ত্যজ’ বা ‘ব্রাত্য’ হিসেবে দেখে এসেছে, প্রকৃত প্রস্তাবে তাঁরাই হলেন মধ্যবিত্ত। ঔপনিবেশিক শিক্ষাবলয়ে অন্তর্বর্তী শ্রেণির রুচি তৈরি হয় বলেই মাটির সঙ্গে তার সংযোগটি কেটে যায় তারই নিজের মুদ্রাদোষে। আর এ কারণেই শোষক তাকে অনায়াসে ব্যবহার করতে পারে। অন্যদিকে মধ্যবিত্ত কখনো কখনো ঔপনিবেশিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও ঔপনিবেশিক রুচিতে নিজের মানস তৈরি করে না বলেই সময়ের প্রয়োজনে বিপ্লব হয়ে ওঠে তার চূড়ান্ত গন্তব্য।
এই যুক্তির ডানায় ভর করে বাংলার মুক্তিসংগ্রামের দিনগুলোতে ফিরে গেলে দেখতে পাই কী অনায়াসে রাজনৈতিক বিপ্লব অনূদিত হচ্ছে সাংস্কৃতিক পরিভাষায় অথবা সংস্কৃতির লেখচিত্র আঁকা হচ্ছে রাজনীতির সমীকরণে। অন্তর্বর্তী শ্রেণির কাছে রবীন্দ্রনাথ কেবলই শিল্পের অমূল্য অনুষঙ্গ, কিন্তু মধ্যবিত্তের কাছে ১৯৬১ সালের প্রতিবাদী রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ সাক্ষী–বাংলার মানুষ রবীন্দ্রনাথকে লড়ে জিতে নিয়েছিলেন। ফলে গত শতাব্দীর প্রথম সাতচল্লিশটি বছরকে আমরা যদি ধরে নিই অন্তর্বর্তী শ্রেণির জয়জয়কারের যুগ হিসেবে, তবে ১৯৪৭-৭১—এই তেইশটি বছর ছিল বাংলার মধ্যবিত্তের গৌরবগাথাময় মহাকাব্য। এই তেইশ বছরে বাংলার রাজনৈতিক নেতৃত্ব এসেছে মধ্যবিত্ত থেকে, সাংস্কৃতিক মশাল জ্বলেছে মধ্যবিত্তের হাতে এবং সাংবাদিকতার ইতিহাস রচিত হয়েছে মধ্যবিত্তের নেতৃত্বে। আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহযোদ্ধাদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আওয়ামী লীগের ইতিহাস, ছায়ানট থেকে উদীচী পর্যন্ত সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো প্রতিষ্ঠার ইতিহাস আর মানিক মিয়া-সিরাজুদ্দীন হোসেনের ইত্তেফাক থেকে রণেশ দাশগুপ্ত- শহীদুল্লা কায়সারের সংবাদ পত্রিকার গণমুখী ইতিহাস কার্যত বাংলার মৃত্তিকাসংলগ্ন মধ্যবিত্তের ইতিহাস।
প্রশ্ন হতে পারে, অন্তর্বর্তী শ্রেণির শিক্ষিত ভদ্রলোকেরা তখন কোথায় ছিলেন? আশপাশেই ছিলেন, কিন্তু নেতৃত্বে ছিলেন না; কারণ ধর্মের নামে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তাঁরা যখন দেখলেন নেতৃত্ব চলে গেছে অবাঙালি মুসলমানের হাতে, তখন তাঁদের ঘুম ভাঙল বটে কিন্তু আরামের বিছানা তাঁরা ছাড়লেন না। গত শতাব্দীতে অন্তর্বর্তী শ্রেণির সবচেয়ে বিপজ্জনক আবিষ্কার ছিল ‘ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ; এর বিপরীতে মধ্যবিত্তের আবিষ্কার ছিল ‘ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ’। সুযোগসন্ধানী অন্তর্বর্তী শ্রেণি মধ্যবিত্তের নেতৃত্বে পরিচালিত ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন বটে কিন্তু নিরাপদ দূরত্বে থেকে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও তাঁরা অংশ নিয়েছিলেন নানাভাবে। স্বাধীন বাংলাদেশ তাই স্বদেশিকতায় ভাস্বর মধ্যবিত্ত শ্রেণির রক্তসংগ্রামের ফসল; আমলা বা সেনাতান্ত্রিক অন্তর্বর্তী শ্রেণির নয়। এ কথা বঙ্গবন্ধু নিশ্চিত জানতেন–আর জানতেন বলেই তিনি গণতন্ত্র নয়, বরং শোষিতের গণতন্ত্রের কথা বলেছিলেন। বারবার বলেছিলেন, ‘আমার কৃষক দুর্নীতি করে না, আমার শ্রমিক দুর্নীতি করে না...দুর্নীতি করি আমরা ৫% শিক্ষিত মানুষ।’ তাঁর বক্তব্যগুলো থেকে এটুকু পরিষ্কার হয়, তিনি ঔপনিবেশিক আমলাতান্ত্রিক বা সেনাতান্ত্রিক অন্তর্বর্তী শ্রেণির নেতৃত্বসর্বস্ব বাংলাদেশ গড়তে চাননি, তিনি চেয়েছিলেন স্বভাষী, স্বদেশি মধ্যবিত্ত শ্রেণির নেতৃত্বনির্ভর দেশ গড়তে।
ফলে আমাদের শ্রদ্ধেয় বুদ্ধিজীবীরা যে নানা গ্রন্থে লিখে গেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশে শোষক-শোষিতের দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গিয়েছিল বাহাত্তর সাল থেকেই, এ কথাটি আসলে সত্যের বিকৃতি। স্বাধীন দেশে শ্রেণিদ্বন্দ্ব অবশ্যই ছিল, কিন্তু সেটা মধ্যবিত্ত ও অন্তর্বর্তী শ্রেণির দ্বন্দ্ব। নিরাপদ দূরত্বে থেকে সংগ্রাম করলেও অন্তর্বর্তী শ্রেণি ঠিকই বুঝতে পেরেছিল একবার মধ্যবিত্তের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলে, নিজেদের ঔপনিবেশিক মানমর্যাদা আর থাকবে না। জনগণের পয়সায় বাংলো-ক্যান্টনমেন্ট সংস্কৃতি তারা চালাতে পারবে না। ফলে স্বাধীন দেশে হঠাৎ করেই তারা মুক্তিসংগ্রামের রাজাধিরাজ হয়ে উঠতে চাইলেন।
১৯৪৮-৭১ পর্যন্ত রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু যেমন হয়ে উঠেছিলেন মধ্যবিত্তের রাজনৈতিক ভাষ্যকার, তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশে তিনিই আশিরনখপদে হয়ে উঠেছিলেন মধ্যবিত্তের সাংবিধানিক ভাষ্যকার। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মধ্যবিত্তের কণ্ঠনালিটিও কেটে দিয়েছে সুবিধাবাদী অন্তর্বর্তী শ্রেণি। এরপরের বাংলাদেশ সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, মোল্লাতন্ত্র আর কালোটাকার রাজনীতিবিদদের হম্বিতম্বির বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেছে। মুক্তিসংগ্রামের কক্ষপথে একটু একটু করে ফিরে আসছে প্রিয় স্বদেশ। কিন্তু যে দার্শনিক দার্ঢ্যতায় রচিত হয়েছিল বাংলার মানুষের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস, তা এখনো যেন স্বপ্নকথা, দূরের শোনা গল্প। যে মধ্যবিত্তের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ, সেই মধ্যবিত্তের রাজনীতিই আজ ঘরছাড়া, উদ্বাস্তু। তাকে ঘরে ফেরাতে না পারলে আমাদের স্বাধীনতার বর্ণপরিচয় ফিকে হয়ে যাবে, আমাদের ইতিহাসপাঠ হয়ে উঠবে কেবলই সাজানো তথ্যের তোড়া।
মারুফ রসূল: লেখক ও ব্লগার
মারুফ রসূল

মহান মুক্তিসংগ্রামের প্রায় দুই দশক পর জন্ম নেওয়া প্রজন্মের একজন যখন স্বাধীনতাসংগ্রাম-সম্পর্কিত উপলব্ধির বয়ান লিপিবদ্ধ করতে বসে; তখন কেবল সময়ের কারণেই তার ব্যাসার্ধ যায় বেড়ে, পরিধি হয়ে পড়ে বিস্তৃত। তার ওপর সে প্রজন্ম বেড়ে উঠেছিল এমন একসময়ে, যখন রাষ্ট্রজুড়ে রাজনীতির নামে চলছিল পুতুলের কুচকাওয়াজ। কিন্তু মুক্তিসংগ্রামের অমোঘ ইতিহাস তো আমাদের পরিচয়জ্ঞাপক একমাত্র অঙ্গুরীয়। রাজা দুষ্মন্ত যে অঙ্গুরীয় দেখে চিনেছিলেন শকুন্তলাকে; একাত্তরের সিলমোহর আঁকা সেই অঙ্গুরীয় দিয়েই বাংলার মানুষ নিজেকে তুলে ধরে গোটা বিশ্বে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। প্রণম্য অগ্রজদের মতে, আমাদের প্রহরযাপন মোবাইলমন্থন দোষে দুষ্ট হলেও আমাদের উপলব্ধির সরলরেখায় যাবতীয় সচেতনতা নিয়ে আজও বিন্যস্ত থাকে মানুষ। তাই পঞ্জিকার পাতা ঘুরে মহান স্বাধীনতা দিবসের দিনটি যখন প্রতিবছর আমাদের চেতনার চক্ষুদানপর্ব সমাপ্ত করে, আমরা বুঝতে পারি, এই মহাসংগ্রাম ছিল আদতে মধ্যবিত্তের সংগ্রাম।
কিন্তু তৎক্ষণাৎ ধাক্কা খাই; কেননা, মিডিয়ার ম্যাকবেথ আর ক্লাসরুমের অধ্যাপকেরা আমাদের সামনে মধ্যবিত্তের এমন একটি সংজ্ঞা তৈরি করে দিয়েছেন যে মুক্তিসংগ্রামের মহাবাদলে মধ্যবিত্তের ইলশেগুঁড়ি খোঁজ করার সাহস আর আমাদের হয় না। অথচ আমরা যদি ইতিহাসনিষ্ঠ হই, তবে এ কথা স্বীকার করতেই হবে, সেমিনারনির্মিত মধ্যবিত্ত নয়, বরং ইতিহাসনির্মিত মধ্যবিত্ত শ্রেণিই ছিল আমাদের মুক্তিসংগ্রামের সর্বেসর্বা। গত শতাব্দীর শুরুতে অখণ্ড বাংলায় ঘটে যাওয়া নবজাগরণের ইতিহাসে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজা রামমোহন রায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী মোতাহার হোসেন বা কাজী আবদুল ওদুদের মতো স্বমহিমায় উজ্জ্বল ধ্রুব তারকাদের নাম যতখানি স্পষ্ট, লালন কিংবা বিজয় সরকার যেন ঠিক ততখানিই অস্পষ্ট। এ কথাটির দ্বিধাথরথর চূড়ে ইতিহাসের চিরচঞ্চল গতির সঙ্গে মিলিয়ে দিলে আমরা বুঝতে পারি যে শিক্ষিত আর রাজনীতিসচেতন ভদ্রলোকেরা ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদে ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাঁরাই ৩৬ বছর পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দেশভাগটি অপরিহার্য। বাঁ হাতে কার্ল মার্ক্স আর ডান হাতে গ্রামসি নিয়ে দাঁড়ালেও সাতচল্লিশ-পরবর্তী বাংলার ইতিহাস আমাকে টেনে নিয়ে যায় শাহ আবদুল করিমের দিকে, অর্থাৎ ইতিহাস আমাকে মৃত্তিকামুখী হওয়ার শিক্ষা দেয়।
আমার যুক্তি হলো, ১৯০০-৪৭ পর্যন্ত রাজনীতির ইতিহাসে আমাদের অগ্রজরা যাঁদের ‘মধ্যবিত্ত’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন, আদতে তাঁরা ছিলেন অন্তর্বর্তী শ্রেণি-শিক্ষিত, শিকড়চ্যুত, ঔপনিবেশিক রুচির ভদ্রলোক কিন্তু সুযোগসন্ধানী। আর যে কৃষক, বাউল কিংবা পরবর্তী সময়ে তৈরি হওয়া বাংলার শ্রমিকশ্রেণিকে আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত মানস ‘অশিক্ষিত’, ‘অন্ত্যজ’ বা ‘ব্রাত্য’ হিসেবে দেখে এসেছে, প্রকৃত প্রস্তাবে তাঁরাই হলেন মধ্যবিত্ত। ঔপনিবেশিক শিক্ষাবলয়ে অন্তর্বর্তী শ্রেণির রুচি তৈরি হয় বলেই মাটির সঙ্গে তার সংযোগটি কেটে যায় তারই নিজের মুদ্রাদোষে। আর এ কারণেই শোষক তাকে অনায়াসে ব্যবহার করতে পারে। অন্যদিকে মধ্যবিত্ত কখনো কখনো ঔপনিবেশিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও ঔপনিবেশিক রুচিতে নিজের মানস তৈরি করে না বলেই সময়ের প্রয়োজনে বিপ্লব হয়ে ওঠে তার চূড়ান্ত গন্তব্য।
এই যুক্তির ডানায় ভর করে বাংলার মুক্তিসংগ্রামের দিনগুলোতে ফিরে গেলে দেখতে পাই কী অনায়াসে রাজনৈতিক বিপ্লব অনূদিত হচ্ছে সাংস্কৃতিক পরিভাষায় অথবা সংস্কৃতির লেখচিত্র আঁকা হচ্ছে রাজনীতির সমীকরণে। অন্তর্বর্তী শ্রেণির কাছে রবীন্দ্রনাথ কেবলই শিল্পের অমূল্য অনুষঙ্গ, কিন্তু মধ্যবিত্তের কাছে ১৯৬১ সালের প্রতিবাদী রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ সাক্ষী–বাংলার মানুষ রবীন্দ্রনাথকে লড়ে জিতে নিয়েছিলেন। ফলে গত শতাব্দীর প্রথম সাতচল্লিশটি বছরকে আমরা যদি ধরে নিই অন্তর্বর্তী শ্রেণির জয়জয়কারের যুগ হিসেবে, তবে ১৯৪৭-৭১—এই তেইশটি বছর ছিল বাংলার মধ্যবিত্তের গৌরবগাথাময় মহাকাব্য। এই তেইশ বছরে বাংলার রাজনৈতিক নেতৃত্ব এসেছে মধ্যবিত্ত থেকে, সাংস্কৃতিক মশাল জ্বলেছে মধ্যবিত্তের হাতে এবং সাংবাদিকতার ইতিহাস রচিত হয়েছে মধ্যবিত্তের নেতৃত্বে। আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহযোদ্ধাদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আওয়ামী লীগের ইতিহাস, ছায়ানট থেকে উদীচী পর্যন্ত সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো প্রতিষ্ঠার ইতিহাস আর মানিক মিয়া-সিরাজুদ্দীন হোসেনের ইত্তেফাক থেকে রণেশ দাশগুপ্ত- শহীদুল্লা কায়সারের সংবাদ পত্রিকার গণমুখী ইতিহাস কার্যত বাংলার মৃত্তিকাসংলগ্ন মধ্যবিত্তের ইতিহাস।
প্রশ্ন হতে পারে, অন্তর্বর্তী শ্রেণির শিক্ষিত ভদ্রলোকেরা তখন কোথায় ছিলেন? আশপাশেই ছিলেন, কিন্তু নেতৃত্বে ছিলেন না; কারণ ধর্মের নামে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তাঁরা যখন দেখলেন নেতৃত্ব চলে গেছে অবাঙালি মুসলমানের হাতে, তখন তাঁদের ঘুম ভাঙল বটে কিন্তু আরামের বিছানা তাঁরা ছাড়লেন না। গত শতাব্দীতে অন্তর্বর্তী শ্রেণির সবচেয়ে বিপজ্জনক আবিষ্কার ছিল ‘ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ; এর বিপরীতে মধ্যবিত্তের আবিষ্কার ছিল ‘ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ’। সুযোগসন্ধানী অন্তর্বর্তী শ্রেণি মধ্যবিত্তের নেতৃত্বে পরিচালিত ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন বটে কিন্তু নিরাপদ দূরত্বে থেকে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও তাঁরা অংশ নিয়েছিলেন নানাভাবে। স্বাধীন বাংলাদেশ তাই স্বদেশিকতায় ভাস্বর মধ্যবিত্ত শ্রেণির রক্তসংগ্রামের ফসল; আমলা বা সেনাতান্ত্রিক অন্তর্বর্তী শ্রেণির নয়। এ কথা বঙ্গবন্ধু নিশ্চিত জানতেন–আর জানতেন বলেই তিনি গণতন্ত্র নয়, বরং শোষিতের গণতন্ত্রের কথা বলেছিলেন। বারবার বলেছিলেন, ‘আমার কৃষক দুর্নীতি করে না, আমার শ্রমিক দুর্নীতি করে না...দুর্নীতি করি আমরা ৫% শিক্ষিত মানুষ।’ তাঁর বক্তব্যগুলো থেকে এটুকু পরিষ্কার হয়, তিনি ঔপনিবেশিক আমলাতান্ত্রিক বা সেনাতান্ত্রিক অন্তর্বর্তী শ্রেণির নেতৃত্বসর্বস্ব বাংলাদেশ গড়তে চাননি, তিনি চেয়েছিলেন স্বভাষী, স্বদেশি মধ্যবিত্ত শ্রেণির নেতৃত্বনির্ভর দেশ গড়তে।
ফলে আমাদের শ্রদ্ধেয় বুদ্ধিজীবীরা যে নানা গ্রন্থে লিখে গেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশে শোষক-শোষিতের দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গিয়েছিল বাহাত্তর সাল থেকেই, এ কথাটি আসলে সত্যের বিকৃতি। স্বাধীন দেশে শ্রেণিদ্বন্দ্ব অবশ্যই ছিল, কিন্তু সেটা মধ্যবিত্ত ও অন্তর্বর্তী শ্রেণির দ্বন্দ্ব। নিরাপদ দূরত্বে থেকে সংগ্রাম করলেও অন্তর্বর্তী শ্রেণি ঠিকই বুঝতে পেরেছিল একবার মধ্যবিত্তের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলে, নিজেদের ঔপনিবেশিক মানমর্যাদা আর থাকবে না। জনগণের পয়সায় বাংলো-ক্যান্টনমেন্ট সংস্কৃতি তারা চালাতে পারবে না। ফলে স্বাধীন দেশে হঠাৎ করেই তারা মুক্তিসংগ্রামের রাজাধিরাজ হয়ে উঠতে চাইলেন।
১৯৪৮-৭১ পর্যন্ত রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু যেমন হয়ে উঠেছিলেন মধ্যবিত্তের রাজনৈতিক ভাষ্যকার, তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশে তিনিই আশিরনখপদে হয়ে উঠেছিলেন মধ্যবিত্তের সাংবিধানিক ভাষ্যকার। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মধ্যবিত্তের কণ্ঠনালিটিও কেটে দিয়েছে সুবিধাবাদী অন্তর্বর্তী শ্রেণি। এরপরের বাংলাদেশ সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, মোল্লাতন্ত্র আর কালোটাকার রাজনীতিবিদদের হম্বিতম্বির বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেছে। মুক্তিসংগ্রামের কক্ষপথে একটু একটু করে ফিরে আসছে প্রিয় স্বদেশ। কিন্তু যে দার্শনিক দার্ঢ্যতায় রচিত হয়েছিল বাংলার মানুষের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস, তা এখনো যেন স্বপ্নকথা, দূরের শোনা গল্প। যে মধ্যবিত্তের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ, সেই মধ্যবিত্তের রাজনীতিই আজ ঘরছাড়া, উদ্বাস্তু। তাকে ঘরে ফেরাতে না পারলে আমাদের স্বাধীনতার বর্ণপরিচয় ফিকে হয়ে যাবে, আমাদের ইতিহাসপাঠ হয়ে উঠবে কেবলই সাজানো তথ্যের তোড়া।
মারুফ রসূল: লেখক ও ব্লগার

মহান মুক্তিসংগ্রামের প্রায় দুই দশক পর জন্ম নেওয়া প্রজন্মের একজন যখন স্বাধীনতাসংগ্রাম-সম্পর্কিত উপলব্ধির বয়ান লিপিবদ্ধ করতে বসে; তখন কেবল সময়ের কারণেই তার ব্যাসার্ধ যায় বেড়ে, পরিধি হয়ে পড়ে বিস্তৃত। তার ওপর সে প্রজন্ম বেড়ে উঠেছিল এমন একসময়ে, যখন রাষ্ট্রজুড়ে রাজনীতির নামে চলছিল পুতুলের কুচকাওয়াজ। কিন্তু মুক্তিসংগ্রামের অমোঘ ইতিহাস তো আমাদের পরিচয়জ্ঞাপক একমাত্র অঙ্গুরীয়। রাজা দুষ্মন্ত যে অঙ্গুরীয় দেখে চিনেছিলেন শকুন্তলাকে; একাত্তরের সিলমোহর আঁকা সেই অঙ্গুরীয় দিয়েই বাংলার মানুষ নিজেকে তুলে ধরে গোটা বিশ্বে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। প্রণম্য অগ্রজদের মতে, আমাদের প্রহরযাপন মোবাইলমন্থন দোষে দুষ্ট হলেও আমাদের উপলব্ধির সরলরেখায় যাবতীয় সচেতনতা নিয়ে আজও বিন্যস্ত থাকে মানুষ। তাই পঞ্জিকার পাতা ঘুরে মহান স্বাধীনতা দিবসের দিনটি যখন প্রতিবছর আমাদের চেতনার চক্ষুদানপর্ব সমাপ্ত করে, আমরা বুঝতে পারি, এই মহাসংগ্রাম ছিল আদতে মধ্যবিত্তের সংগ্রাম।
কিন্তু তৎক্ষণাৎ ধাক্কা খাই; কেননা, মিডিয়ার ম্যাকবেথ আর ক্লাসরুমের অধ্যাপকেরা আমাদের সামনে মধ্যবিত্তের এমন একটি সংজ্ঞা তৈরি করে দিয়েছেন যে মুক্তিসংগ্রামের মহাবাদলে মধ্যবিত্তের ইলশেগুঁড়ি খোঁজ করার সাহস আর আমাদের হয় না। অথচ আমরা যদি ইতিহাসনিষ্ঠ হই, তবে এ কথা স্বীকার করতেই হবে, সেমিনারনির্মিত মধ্যবিত্ত নয়, বরং ইতিহাসনির্মিত মধ্যবিত্ত শ্রেণিই ছিল আমাদের মুক্তিসংগ্রামের সর্বেসর্বা। গত শতাব্দীর শুরুতে অখণ্ড বাংলায় ঘটে যাওয়া নবজাগরণের ইতিহাসে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজা রামমোহন রায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী মোতাহার হোসেন বা কাজী আবদুল ওদুদের মতো স্বমহিমায় উজ্জ্বল ধ্রুব তারকাদের নাম যতখানি স্পষ্ট, লালন কিংবা বিজয় সরকার যেন ঠিক ততখানিই অস্পষ্ট। এ কথাটির দ্বিধাথরথর চূড়ে ইতিহাসের চিরচঞ্চল গতির সঙ্গে মিলিয়ে দিলে আমরা বুঝতে পারি যে শিক্ষিত আর রাজনীতিসচেতন ভদ্রলোকেরা ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদে ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাঁরাই ৩৬ বছর পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দেশভাগটি অপরিহার্য। বাঁ হাতে কার্ল মার্ক্স আর ডান হাতে গ্রামসি নিয়ে দাঁড়ালেও সাতচল্লিশ-পরবর্তী বাংলার ইতিহাস আমাকে টেনে নিয়ে যায় শাহ আবদুল করিমের দিকে, অর্থাৎ ইতিহাস আমাকে মৃত্তিকামুখী হওয়ার শিক্ষা দেয়।
আমার যুক্তি হলো, ১৯০০-৪৭ পর্যন্ত রাজনীতির ইতিহাসে আমাদের অগ্রজরা যাঁদের ‘মধ্যবিত্ত’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন, আদতে তাঁরা ছিলেন অন্তর্বর্তী শ্রেণি-শিক্ষিত, শিকড়চ্যুত, ঔপনিবেশিক রুচির ভদ্রলোক কিন্তু সুযোগসন্ধানী। আর যে কৃষক, বাউল কিংবা পরবর্তী সময়ে তৈরি হওয়া বাংলার শ্রমিকশ্রেণিকে আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত মানস ‘অশিক্ষিত’, ‘অন্ত্যজ’ বা ‘ব্রাত্য’ হিসেবে দেখে এসেছে, প্রকৃত প্রস্তাবে তাঁরাই হলেন মধ্যবিত্ত। ঔপনিবেশিক শিক্ষাবলয়ে অন্তর্বর্তী শ্রেণির রুচি তৈরি হয় বলেই মাটির সঙ্গে তার সংযোগটি কেটে যায় তারই নিজের মুদ্রাদোষে। আর এ কারণেই শোষক তাকে অনায়াসে ব্যবহার করতে পারে। অন্যদিকে মধ্যবিত্ত কখনো কখনো ঔপনিবেশিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও ঔপনিবেশিক রুচিতে নিজের মানস তৈরি করে না বলেই সময়ের প্রয়োজনে বিপ্লব হয়ে ওঠে তার চূড়ান্ত গন্তব্য।
এই যুক্তির ডানায় ভর করে বাংলার মুক্তিসংগ্রামের দিনগুলোতে ফিরে গেলে দেখতে পাই কী অনায়াসে রাজনৈতিক বিপ্লব অনূদিত হচ্ছে সাংস্কৃতিক পরিভাষায় অথবা সংস্কৃতির লেখচিত্র আঁকা হচ্ছে রাজনীতির সমীকরণে। অন্তর্বর্তী শ্রেণির কাছে রবীন্দ্রনাথ কেবলই শিল্পের অমূল্য অনুষঙ্গ, কিন্তু মধ্যবিত্তের কাছে ১৯৬১ সালের প্রতিবাদী রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ সাক্ষী–বাংলার মানুষ রবীন্দ্রনাথকে লড়ে জিতে নিয়েছিলেন। ফলে গত শতাব্দীর প্রথম সাতচল্লিশটি বছরকে আমরা যদি ধরে নিই অন্তর্বর্তী শ্রেণির জয়জয়কারের যুগ হিসেবে, তবে ১৯৪৭-৭১—এই তেইশটি বছর ছিল বাংলার মধ্যবিত্তের গৌরবগাথাময় মহাকাব্য। এই তেইশ বছরে বাংলার রাজনৈতিক নেতৃত্ব এসেছে মধ্যবিত্ত থেকে, সাংস্কৃতিক মশাল জ্বলেছে মধ্যবিত্তের হাতে এবং সাংবাদিকতার ইতিহাস রচিত হয়েছে মধ্যবিত্তের নেতৃত্বে। আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহযোদ্ধাদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আওয়ামী লীগের ইতিহাস, ছায়ানট থেকে উদীচী পর্যন্ত সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো প্রতিষ্ঠার ইতিহাস আর মানিক মিয়া-সিরাজুদ্দীন হোসেনের ইত্তেফাক থেকে রণেশ দাশগুপ্ত- শহীদুল্লা কায়সারের সংবাদ পত্রিকার গণমুখী ইতিহাস কার্যত বাংলার মৃত্তিকাসংলগ্ন মধ্যবিত্তের ইতিহাস।
প্রশ্ন হতে পারে, অন্তর্বর্তী শ্রেণির শিক্ষিত ভদ্রলোকেরা তখন কোথায় ছিলেন? আশপাশেই ছিলেন, কিন্তু নেতৃত্বে ছিলেন না; কারণ ধর্মের নামে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তাঁরা যখন দেখলেন নেতৃত্ব চলে গেছে অবাঙালি মুসলমানের হাতে, তখন তাঁদের ঘুম ভাঙল বটে কিন্তু আরামের বিছানা তাঁরা ছাড়লেন না। গত শতাব্দীতে অন্তর্বর্তী শ্রেণির সবচেয়ে বিপজ্জনক আবিষ্কার ছিল ‘ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ; এর বিপরীতে মধ্যবিত্তের আবিষ্কার ছিল ‘ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ’। সুযোগসন্ধানী অন্তর্বর্তী শ্রেণি মধ্যবিত্তের নেতৃত্বে পরিচালিত ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন বটে কিন্তু নিরাপদ দূরত্বে থেকে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও তাঁরা অংশ নিয়েছিলেন নানাভাবে। স্বাধীন বাংলাদেশ তাই স্বদেশিকতায় ভাস্বর মধ্যবিত্ত শ্রেণির রক্তসংগ্রামের ফসল; আমলা বা সেনাতান্ত্রিক অন্তর্বর্তী শ্রেণির নয়। এ কথা বঙ্গবন্ধু নিশ্চিত জানতেন–আর জানতেন বলেই তিনি গণতন্ত্র নয়, বরং শোষিতের গণতন্ত্রের কথা বলেছিলেন। বারবার বলেছিলেন, ‘আমার কৃষক দুর্নীতি করে না, আমার শ্রমিক দুর্নীতি করে না...দুর্নীতি করি আমরা ৫% শিক্ষিত মানুষ।’ তাঁর বক্তব্যগুলো থেকে এটুকু পরিষ্কার হয়, তিনি ঔপনিবেশিক আমলাতান্ত্রিক বা সেনাতান্ত্রিক অন্তর্বর্তী শ্রেণির নেতৃত্বসর্বস্ব বাংলাদেশ গড়তে চাননি, তিনি চেয়েছিলেন স্বভাষী, স্বদেশি মধ্যবিত্ত শ্রেণির নেতৃত্বনির্ভর দেশ গড়তে।
ফলে আমাদের শ্রদ্ধেয় বুদ্ধিজীবীরা যে নানা গ্রন্থে লিখে গেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশে শোষক-শোষিতের দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গিয়েছিল বাহাত্তর সাল থেকেই, এ কথাটি আসলে সত্যের বিকৃতি। স্বাধীন দেশে শ্রেণিদ্বন্দ্ব অবশ্যই ছিল, কিন্তু সেটা মধ্যবিত্ত ও অন্তর্বর্তী শ্রেণির দ্বন্দ্ব। নিরাপদ দূরত্বে থেকে সংগ্রাম করলেও অন্তর্বর্তী শ্রেণি ঠিকই বুঝতে পেরেছিল একবার মধ্যবিত্তের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলে, নিজেদের ঔপনিবেশিক মানমর্যাদা আর থাকবে না। জনগণের পয়সায় বাংলো-ক্যান্টনমেন্ট সংস্কৃতি তারা চালাতে পারবে না। ফলে স্বাধীন দেশে হঠাৎ করেই তারা মুক্তিসংগ্রামের রাজাধিরাজ হয়ে উঠতে চাইলেন।
১৯৪৮-৭১ পর্যন্ত রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু যেমন হয়ে উঠেছিলেন মধ্যবিত্তের রাজনৈতিক ভাষ্যকার, তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশে তিনিই আশিরনখপদে হয়ে উঠেছিলেন মধ্যবিত্তের সাংবিধানিক ভাষ্যকার। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মধ্যবিত্তের কণ্ঠনালিটিও কেটে দিয়েছে সুবিধাবাদী অন্তর্বর্তী শ্রেণি। এরপরের বাংলাদেশ সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, মোল্লাতন্ত্র আর কালোটাকার রাজনীতিবিদদের হম্বিতম্বির বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেছে। মুক্তিসংগ্রামের কক্ষপথে একটু একটু করে ফিরে আসছে প্রিয় স্বদেশ। কিন্তু যে দার্শনিক দার্ঢ্যতায় রচিত হয়েছিল বাংলার মানুষের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস, তা এখনো যেন স্বপ্নকথা, দূরের শোনা গল্প। যে মধ্যবিত্তের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ, সেই মধ্যবিত্তের রাজনীতিই আজ ঘরছাড়া, উদ্বাস্তু। তাকে ঘরে ফেরাতে না পারলে আমাদের স্বাধীনতার বর্ণপরিচয় ফিকে হয়ে যাবে, আমাদের ইতিহাসপাঠ হয়ে উঠবে কেবলই সাজানো তথ্যের তোড়া।
মারুফ রসূল: লেখক ও ব্লগার

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

মহান মুক্তিসংগ্রামের প্রায় দুই দশক পর জন্ম নেওয়া প্রজন্মের একজন যখন স্বাধীনতাসংগ্রাম-সম্পর্কিত উপলব্ধির বয়ান লিপিবদ্ধ করতে বসে; তখন কেবল সময়ের কারণেই তার ব্যাসার্ধ যায় বেড়ে, পরিধি হয়ে পড়ে বিস্তৃত। তার ওপর সে প্রজন্ম বেড়ে উঠেছিল এমন একসময়ে, যখন রাষ্ট্রজুড়ে রাজনীতির নামে চলছিল পুতুলের কুচকাওয়াজ।
২৬ মার্চ ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

মহান মুক্তিসংগ্রামের প্রায় দুই দশক পর জন্ম নেওয়া প্রজন্মের একজন যখন স্বাধীনতাসংগ্রাম-সম্পর্কিত উপলব্ধির বয়ান লিপিবদ্ধ করতে বসে; তখন কেবল সময়ের কারণেই তার ব্যাসার্ধ যায় বেড়ে, পরিধি হয়ে পড়ে বিস্তৃত। তার ওপর সে প্রজন্ম বেড়ে উঠেছিল এমন একসময়ে, যখন রাষ্ট্রজুড়ে রাজনীতির নামে চলছিল পুতুলের কুচকাওয়াজ।
২৬ মার্চ ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

মহান মুক্তিসংগ্রামের প্রায় দুই দশক পর জন্ম নেওয়া প্রজন্মের একজন যখন স্বাধীনতাসংগ্রাম-সম্পর্কিত উপলব্ধির বয়ান লিপিবদ্ধ করতে বসে; তখন কেবল সময়ের কারণেই তার ব্যাসার্ধ যায় বেড়ে, পরিধি হয়ে পড়ে বিস্তৃত। তার ওপর সে প্রজন্ম বেড়ে উঠেছিল এমন একসময়ে, যখন রাষ্ট্রজুড়ে রাজনীতির নামে চলছিল পুতুলের কুচকাওয়াজ।
২৬ মার্চ ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

মহান মুক্তিসংগ্রামের প্রায় দুই দশক পর জন্ম নেওয়া প্রজন্মের একজন যখন স্বাধীনতাসংগ্রাম-সম্পর্কিত উপলব্ধির বয়ান লিপিবদ্ধ করতে বসে; তখন কেবল সময়ের কারণেই তার ব্যাসার্ধ যায় বেড়ে, পরিধি হয়ে পড়ে বিস্তৃত। তার ওপর সে প্রজন্ম বেড়ে উঠেছিল এমন একসময়ে, যখন রাষ্ট্রজুড়ে রাজনীতির নামে চলছিল পুতুলের কুচকাওয়াজ।
২৬ মার্চ ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫