Ajker Patrika

‘অনিয়মে দখল’ সরকারি পুকুর

অরূপ রায়, সাভার
আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২২, ১৩: ৩৩
‘অনিয়মে দখল’ সরকারি পুকুর

ঢাকার সাভারের আশুলিয়া থানার শিমুলিয়া ইউনিয়নের কবিরপুর গ্রামের বাসিন্দারা গোসলসহ গৃহস্থালি কাজের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সরকারি মালিকানাধীন একটি পুকুর ব্যবহার করে আসছিলেন। স্থানীয় এক প্রভাবশালী ভুয়া তথ্য দিয়ে পুকুরটি বন্দোবস্ত নিয়ে তাঁর দুই ছেলে ও নিজের নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন। এরপর থেকে গ্রামের লোকজন তা ব্যবহার করতে পারছেন না।

পুকুরটি ব্যবহার করতে না পেরে এলাকাবাসী প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছিলেন। এরপর তদন্ত হলেও অজ্ঞাত কারণে পুকুর উদ্ধারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চার বিঘা আয়তনের পুকুরসহ কবিরপুর মৌজায় বিস্তর ভূমির মালিক ছিলেন গাজীপুরের কাশিমপুরের তৎকালীন জমিদার সারদা প্রসাদ চৌধুরী। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর ওই সব জমি খাস খতিয়ানভুক্ত হিসেবে সরকারের নামে রেকর্ড হয়।

১৯৭৮ সালে কবিরপুর গ্রামের প্রভাবশালী রহিম উদ্দীন পুকুরটি বন্দোবস্ত নেওয়ার জন্য ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছিলেন। আবেদনে রহিম উদ্দীন নিজেকে ভূমিহীন হিসেবে দাবি করলেও তাঁর কয়েক বিঘা জমি আছে। জেলা প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত না করে উল্টো পুকুরকে নাল শ্রেণির ভূমি (চাষাবাদ যোগ্য) দেখিয়ে চাষাবাদের জন্য তা ১৫ বছরের জন্য রহিম উদ্দীন বন্দোবস্ত দিয়ে দেয়।

স্থানীয় গোয়ালবাড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুর রউফ বলেন, এলাকার লোকজন বছরের পর বছর ধরে পুকুরটি ব্যবহার করে আসছিলেন। রহিম উদ্দীনকে ওই পুকুর বন্দোবস্ত দেওয়ায় এলাকার লোকজনে তা ব্যবহার করতে পারছেন না। বন্দোবস্ত বাতিলের জন্য ১৯৯৮ সালে তাঁরা ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছিলেন।

আব্দুর রউফ বলেন, ওই আবেদনে ঢাকা-১৯ আসনের তৎকালীন সাংসদ দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছিলেন। পরে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সাভার উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের তৎকালীন কানুনগো হাবিব উল্লাহ খান সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দেন।

সেই প্রতিবেদনে দেখা যায়, রহিম উদ্দীনের নামে বন্দোবস্ত দেওয়া পুকুরটির শ্রেণি এসএ ও আরএস রেকর্ডে পুকুর হিসেবে উল্লেখ থাকার পরেও তা নাল জমি (চাষের জমি) দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। এ জন্য প্রতিবেদনে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন।

কবিরপুরের বাসিন্দা, আইনজীবী সোহেল আল মামুন বলেন, তদন্তে জালিয়াতি প্রমাণিত হলেও পরবর্তী সময়ে জেলা প্রশাসন থেকে কোনো ২০০৭ সালে বিআরএস রেকর্ড চলাকালে সেটেলমেন্ট কর্তৃপক্ষ সরকারি মালিকানাধীন পুকুরকে ডোবা দেখিয়ে রহিম উদ্দীন ও তাঁর তিন ছেলের নামে রেকর্ড করে দেয়।

শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হেলাল উদ্দিন সিকদার বলেন, এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় পুকুরটিসহ সরকারি ভূমির বন্দোবস্ত বা দখল নিয়ে তা ভোগ করছেন। অনেকে ওই সব সরকারি জমির দখল হস্তান্তর করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

রহিম উদ্দীনের ছেলে স্বপন আহাম্মেদ বলেন, তাঁরা সরকারের কাছ থেকে পুকুরটি ১৫ বছরের জন্য বন্দোবস্ত নিয়েছেন। এর পর থেকে তাঁরা পুকুরটি ভোগ করছেন। দখলে থাকা অবস্থায় পুকুরটির মালিক হিসেবে তাঁরা বিআরএস রেকর্ড পেয়েছেন।

সাভারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি পুকুর এক বা তিন বছরের জন্য লিজ দেওয়া যায়, বন্দোবস্ত দেওয়া যায় না।’

সাভারের সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার রায় বলেন, ‘১৫ বছরের জন্য বন্দোবস্ত দেওয়া ভূমি বন্দোবস্ত পাওয়া ব্যক্তির নামে রেকর্ড দেওয়া যায়। সেই অনুযায়ী হয়তো রহিম উদ্দীন ও তাঁর ছেলেরা বিআরএস রেকর্ড পেয়েছেন।’

বন্দোবস্ত দলিলের শর্ত ও বাস্তবতা খতিয়ে না দেখে পুকুরকে ডোবা দেখিয়ে রেকর্ড দেওয়ার বিষয়ে সুশান্ত কুমার রায় বলেন, রেকর্ড দেওয়া ক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটে থাকলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে।

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারীর সঙ্গে এনসিপি নেতা তুষারের কথোপকথন ফাঁস নিয়ে যা বললেন সহযোদ্ধা ইমি

সকালে পরীক্ষা, রাতেই ফল: সেই নিয়োগের তদন্তে কমিটি

পাকিস্তানিওঁ কি কাতিল—যুক্তরাষ্ট্রে সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের উদ্দেশে স্লোগান

চোখের সামনে খামেনির অন্তরঙ্গ মহল ফাঁকা করে দিচ্ছে ইসরায়েল

আমাদের হয়ে ‘নোংরা কাজটা’ করে দিচ্ছে ইসরায়েল: জার্মান চ্যান্সেলর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত