রেজা করিম ও তানিম আহমেদ, ঢাকা
গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় যেতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। সেই লক্ষ্যে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনে আনার চেষ্টাসহ মাঠেও কড়া দৃষ্টি রেখেছে দলটি, নিয়েছে নানা কৌশল। কম যাচ্ছে না তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিও। সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে মাঠ দখলের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে তারা।
প্রধান দুই দলের দ্বৈরথের মাঝে ক্ষমতাসীনদের গৃহপালিত বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টির (জাপা) কর্মকাণ্ড রহস্যাবৃত। ভোট ও মাঠের লাভালাভের হিসাব কষছে অন্য দলগুলোও। এমন পরিস্থিতিকে রাজনীতির বসন্তকালের আগমনী বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাঁদের বিবেচনায় এমন অবস্থা চূড়ান্ত একটা পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনাকেই ইঙ্গিত করছে।
দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে দফায় দফায় সংলাপ করে ১৪ সেপ্টেম্বর আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষে অথবা ২০২৪ সালের শুরুতেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। এ জন্য জোরেশোরে প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি। এর আগে দেড় শ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের কথা জানিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ১৯ সেপ্টেম্বর ২ লাখ নতুন ইভিএম কেনার প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে সংস্থাটি।
ইসির প্রস্তুতির সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিয়ে আগামী নির্বাচনে জয়ী হতে দল গোছানোর পাশাপাশি নানা কৌশল নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচন কঠিন হবে মেনে মাঠেও সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে দলটি। দলের নেতারা বলছেন, প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি দলীয় নেতাদের মাধ্যমে বর্তমান সংসদ সদস্য এবং মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আমলনামা যাচাই-বাছাই চলছে। এমপিদের মধ্যে যাঁদের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হবে, তাঁদের বাদ দিয়ে সৎ, যোগ্য, জনপ্রিয় ও দক্ষ প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের সূত্র বলছে, আগের দুটি নির্বাচন (২০১৪ ও ২০১৮) নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় এবার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ রয়েছে। এই তাগিদ থেকে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে বিএনপির একটি অংশ ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে গোপনে বৈঠক করেছে বলেও দাবি সূত্রটির। আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি প্রস্তুতি নিতে শুরু করছে বলে জানান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান। আর তাই আওয়ামী লীগ আসনভিত্তিক জরিপের কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কতগুলো আসনে আওয়ামী লীগের ভালো অবস্থা, কতগুলোতে খারাপ ও কতগুলো আসনে ফিফটি-ফিফটি চান্স, তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি খারাপ অবস্থা কীভাবে ভালো করা সম্ভব, সেই উদ্যোগও নেওয়া হবে।’
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে জানা গেছে, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে ক্ষুদ্র পরিসরে মাঠে থাকার সুযোগ দিয়ে তাদের ভোটে আনার চেষ্টা চলছে। তবে মাঠ দখলের চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করারও পরিকল্পনা আছে।
শাসক দলের এমন ভাবনা থাকলেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান এখনো বদলায়নি বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হচ্ছে, এই সরকারের অধীনে কোনোভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবে না তারা। তাদের দাবি বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নিরপেক্ষ ওই সরকার যে নির্বাচন কমিশন করবে, সেই কমিশন নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে, সেখানে তারা অংশ নেবে।
এসব দাবি আদায়ে বর্তমান সরকারের পতনের বিকল্প কিছু নেই মেনে বিএনপি আন্দোলন করছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা বলেছেন, এই আন্দোলনের সঙ্গে সমমনাদের সমর্থনও রয়েছে। বিএনপির চলমান আন্দোলনে ভীত হয়ে কর্মসূচিতে হামলা করা হচ্ছে, মামলা দিয়ে নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। বিএনপির মাঠ দখলের সম্ভাবনা জোরালো হওয়ায় এখন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নানা ধরনের বিভ্রান্তিমূলক কথা ছড়ানো হচ্ছে। এর অংশ হিসেবেই বলা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে আসবে।
গত বুধবার মুন্সিগঞ্জে বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে সৃষ্ট সংঘর্ষের উদাহরণ দিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘একটা থানার কর্মসূচিতেই যারা ভয় পাচ্ছে, তারা এমন কথা বলবেই। ওবায়দুল কাদেররা বিএনপির আন্দোলন নিয়ে অনেক রসিকতা করেছেন। এখন সামান্য রিহার্সেলেই তাঁদের হাত-পা কাঁপছে। যে কারণে বিএনপির আন্দোলন নিয়ে ওনারা বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন।’
আগামী দিনের রাজনৈতিক রূপরেখা প্রণয়নেও কাজ করছে বিএনপি। গত বছর দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার মধ্য দিয়ে এই কাজ শুরু হয়। এরপর সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথমে অনানুষ্ঠানিক এবং পরে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে দলটি। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সবার মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের রূপরেখা প্রকাশ করা হবে।
এদিকে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত মিত্র জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির চলমান সম্পর্ক নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। জামায়াতকে নিয়ে বিএনপির সমমনাদের অনেকে অস্বস্তিতে রয়েছে। এমন বাস্তবতায় বিএনপির জামায়াতকে নিয়ে ভাবনা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জামায়াত তো বলেনি যে তারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচন করবে। তারা বলেছে, যুগপৎ আন্দোলন করবে। তার মানে সরকারের বিরুদ্ধেই তো তাদের অবস্থান। সেই অবস্থানকে অস্বীকার করার উপায় নেই। আর এটা অনেকটাই নিশ্চিত যে যারা জামায়াতকে অপছন্দ করে, তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদৌ আন্দোলন করবে কি না—এ ব্যাপারে সন্দেহ আছে। কারণ পাণ্ডিত্য আর বাস্তবায়ন এক নয়।’
রহস্যে ঘেরা জাতীয় পার্টি
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মুখোমুখি অবস্থানের মাঝে রহস্যময় ভূমিকায় রয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলটি মাঠে না থেকেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং সরকারের সমালোচনা করে আলোচনায় রয়েছে। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে জাপা চেয়ারম্যান বলেছেন, তাঁরা কোনো জোটে নেই। তবে ভবিষ্যতে জোটে যাবেন কি না, সেটা না বলে বিষয়টা ঝুলিয়ে রেখেছেন।
দলের সূত্র বলছে, জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার সামর্থ্য নেই। কারও না কারও ভরসায় বরাবরের মতো নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার ইচ্ছা। সে কারণে জোটে যাওয়া না-যাওয়ার বিষয়টি ইচ্ছা করেই পরিষ্কার করা হচ্ছে না।
দলটির কেন্দ্রীয় এক নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, নির্বাচনের ঠিক আগে আগে জাপা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। দলের বর্তমান কোন্দল ও অস্থিরতা আলোচনায় থাকার কৌশল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হতে পারে...তবে এ বিষয়ে আর বেশি কিছু বলতে চাই না।’
সম্প্রতি জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের অনুসারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। দুটি পক্ষই দলে নিজেদের আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারে চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে দৃশ্যমান হচ্ছে। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও অস্থিরতার বিষয়কে পাত্তা দিচ্ছেন না জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, ‘একটা দলে এ রকম ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এগুলো (কোন্দল ও অস্থিরতা) নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।’
চুন্নুর দাবি রওশন এরশাদ পার্টির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছায় কিছু করছেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই দাবি করে বলেন, রওশন এরশাদের যে চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, সেই চিঠি তাঁরা আমলেই নিচ্ছেন না।
গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় যেতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। সেই লক্ষ্যে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনে আনার চেষ্টাসহ মাঠেও কড়া দৃষ্টি রেখেছে দলটি, নিয়েছে নানা কৌশল। কম যাচ্ছে না তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিও। সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে মাঠ দখলের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে তারা।
প্রধান দুই দলের দ্বৈরথের মাঝে ক্ষমতাসীনদের গৃহপালিত বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টির (জাপা) কর্মকাণ্ড রহস্যাবৃত। ভোট ও মাঠের লাভালাভের হিসাব কষছে অন্য দলগুলোও। এমন পরিস্থিতিকে রাজনীতির বসন্তকালের আগমনী বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাঁদের বিবেচনায় এমন অবস্থা চূড়ান্ত একটা পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনাকেই ইঙ্গিত করছে।
দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে দফায় দফায় সংলাপ করে ১৪ সেপ্টেম্বর আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষে অথবা ২০২৪ সালের শুরুতেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। এ জন্য জোরেশোরে প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি। এর আগে দেড় শ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের কথা জানিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ১৯ সেপ্টেম্বর ২ লাখ নতুন ইভিএম কেনার প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে সংস্থাটি।
ইসির প্রস্তুতির সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিয়ে আগামী নির্বাচনে জয়ী হতে দল গোছানোর পাশাপাশি নানা কৌশল নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচন কঠিন হবে মেনে মাঠেও সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে দলটি। দলের নেতারা বলছেন, প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি দলীয় নেতাদের মাধ্যমে বর্তমান সংসদ সদস্য এবং মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আমলনামা যাচাই-বাছাই চলছে। এমপিদের মধ্যে যাঁদের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হবে, তাঁদের বাদ দিয়ে সৎ, যোগ্য, জনপ্রিয় ও দক্ষ প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের সূত্র বলছে, আগের দুটি নির্বাচন (২০১৪ ও ২০১৮) নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় এবার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ রয়েছে। এই তাগিদ থেকে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে বিএনপির একটি অংশ ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে গোপনে বৈঠক করেছে বলেও দাবি সূত্রটির। আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি প্রস্তুতি নিতে শুরু করছে বলে জানান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান। আর তাই আওয়ামী লীগ আসনভিত্তিক জরিপের কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কতগুলো আসনে আওয়ামী লীগের ভালো অবস্থা, কতগুলোতে খারাপ ও কতগুলো আসনে ফিফটি-ফিফটি চান্স, তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি খারাপ অবস্থা কীভাবে ভালো করা সম্ভব, সেই উদ্যোগও নেওয়া হবে।’
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে জানা গেছে, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে ক্ষুদ্র পরিসরে মাঠে থাকার সুযোগ দিয়ে তাদের ভোটে আনার চেষ্টা চলছে। তবে মাঠ দখলের চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করারও পরিকল্পনা আছে।
শাসক দলের এমন ভাবনা থাকলেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান এখনো বদলায়নি বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হচ্ছে, এই সরকারের অধীনে কোনোভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবে না তারা। তাদের দাবি বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নিরপেক্ষ ওই সরকার যে নির্বাচন কমিশন করবে, সেই কমিশন নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে, সেখানে তারা অংশ নেবে।
এসব দাবি আদায়ে বর্তমান সরকারের পতনের বিকল্প কিছু নেই মেনে বিএনপি আন্দোলন করছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা বলেছেন, এই আন্দোলনের সঙ্গে সমমনাদের সমর্থনও রয়েছে। বিএনপির চলমান আন্দোলনে ভীত হয়ে কর্মসূচিতে হামলা করা হচ্ছে, মামলা দিয়ে নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। বিএনপির মাঠ দখলের সম্ভাবনা জোরালো হওয়ায় এখন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নানা ধরনের বিভ্রান্তিমূলক কথা ছড়ানো হচ্ছে। এর অংশ হিসেবেই বলা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে আসবে।
গত বুধবার মুন্সিগঞ্জে বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে সৃষ্ট সংঘর্ষের উদাহরণ দিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘একটা থানার কর্মসূচিতেই যারা ভয় পাচ্ছে, তারা এমন কথা বলবেই। ওবায়দুল কাদেররা বিএনপির আন্দোলন নিয়ে অনেক রসিকতা করেছেন। এখন সামান্য রিহার্সেলেই তাঁদের হাত-পা কাঁপছে। যে কারণে বিএনপির আন্দোলন নিয়ে ওনারা বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন।’
আগামী দিনের রাজনৈতিক রূপরেখা প্রণয়নেও কাজ করছে বিএনপি। গত বছর দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার মধ্য দিয়ে এই কাজ শুরু হয়। এরপর সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথমে অনানুষ্ঠানিক এবং পরে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে দলটি। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সবার মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের রূপরেখা প্রকাশ করা হবে।
এদিকে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত মিত্র জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির চলমান সম্পর্ক নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। জামায়াতকে নিয়ে বিএনপির সমমনাদের অনেকে অস্বস্তিতে রয়েছে। এমন বাস্তবতায় বিএনপির জামায়াতকে নিয়ে ভাবনা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জামায়াত তো বলেনি যে তারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচন করবে। তারা বলেছে, যুগপৎ আন্দোলন করবে। তার মানে সরকারের বিরুদ্ধেই তো তাদের অবস্থান। সেই অবস্থানকে অস্বীকার করার উপায় নেই। আর এটা অনেকটাই নিশ্চিত যে যারা জামায়াতকে অপছন্দ করে, তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদৌ আন্দোলন করবে কি না—এ ব্যাপারে সন্দেহ আছে। কারণ পাণ্ডিত্য আর বাস্তবায়ন এক নয়।’
রহস্যে ঘেরা জাতীয় পার্টি
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মুখোমুখি অবস্থানের মাঝে রহস্যময় ভূমিকায় রয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলটি মাঠে না থেকেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং সরকারের সমালোচনা করে আলোচনায় রয়েছে। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে জাপা চেয়ারম্যান বলেছেন, তাঁরা কোনো জোটে নেই। তবে ভবিষ্যতে জোটে যাবেন কি না, সেটা না বলে বিষয়টা ঝুলিয়ে রেখেছেন।
দলের সূত্র বলছে, জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার সামর্থ্য নেই। কারও না কারও ভরসায় বরাবরের মতো নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার ইচ্ছা। সে কারণে জোটে যাওয়া না-যাওয়ার বিষয়টি ইচ্ছা করেই পরিষ্কার করা হচ্ছে না।
দলটির কেন্দ্রীয় এক নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, নির্বাচনের ঠিক আগে আগে জাপা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। দলের বর্তমান কোন্দল ও অস্থিরতা আলোচনায় থাকার কৌশল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হতে পারে...তবে এ বিষয়ে আর বেশি কিছু বলতে চাই না।’
সম্প্রতি জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের অনুসারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। দুটি পক্ষই দলে নিজেদের আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারে চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে দৃশ্যমান হচ্ছে। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও অস্থিরতার বিষয়কে পাত্তা দিচ্ছেন না জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, ‘একটা দলে এ রকম ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এগুলো (কোন্দল ও অস্থিরতা) নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।’
চুন্নুর দাবি রওশন এরশাদ পার্টির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছায় কিছু করছেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই দাবি করে বলেন, রওশন এরশাদের যে চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, সেই চিঠি তাঁরা আমলেই নিচ্ছেন না।
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৭ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪