Ajker Patrika

দোকানের জামানতের টাকা ব্যয় করা যাবে?

মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩, ১৪: ৩৮
দোকানের জামানতের  টাকা ব্যয়  করা যাবে?

দোকান ভাড়া দেওয়ার সময় ভাড়াদাতা (মালিক) ভাড়াগ্রহীতার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা জামানত হিসেবে নেওয়ার প্রচলন আছে। ইসলামি শরিয়তে এর বিধান কী? 
মোশাররফা খানম আঁখি, কক্সবাজার

দোকান ভাড়া দেওয়ার সময় ভাড়াদাতা ভাড়াগ্রহীতার কাছ থেকে যে টাকা নেন, তা কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। ধরন অনুযায়ী এর বিধান ভিন্ন ভিন্ন হয়। এখানে সর্বাধিক প্রচলিত দুটি ধরনের বিধান তুলে ধরা হলো।

এক. অগ্রিম ভাড়া: ভাড়া দেওয়ার সময় দোকান বা বাড়ির মালিক ভাড়াগ্রহীতার কাছ থেকে অগ্রিম ভাড়া বাবদ এককালীন একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নিয়ে নেন, যা থেকে প্রতি মাসে কিছু কিছু করে ভাড়া হিসেবে কাটা হয়। পরে ভাড়াগ্রহীতাকে এ টাকা ফেরত দিতে হয় না। একে অগ্রিম ভাড়া বা অ্যাডভান্স মানি বলা হয়। এর বিধান হচ্ছে, মালিককে বুঝিয়ে দেওয়ার পর থেকেই ওই টাকা মালিকের হয়ে যায়। সুতরাং তিনি নিজ প্রয়োজনে যেখানে ইচ্ছা তা খরচ বা বিনিয়োগ করতে পারবেন। 

দুই. সিকিউরিটি মানি বা জামানত: ভাড়াদাতা ভাড়াগ্রহীতার থেকে জামানত হিসেবে এ শর্তে মোটা অঙ্কের টাকা গ্রহণ করেন যে ভাড়ার চুক্তি শেষে ভাড়াগ্রহীতাকে তা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এটাকে সিকিউরিটি মানি, জামানত বলা হয়। এর বিধান বেশ জটিল ও মতবিরোধপূর্ণ। 
একদল আলেমের মতে, সিকিউরিটি মানি ভাড়াদাতার কাছে বন্ধক হিসেবে থাকে। তাই ভাড়াদাতা ওই টাকা কেবল সিকিউরিটি হিসেবে জমা রাখতে পারবেন, নিজের কোনো কাজে ব্যবহার করতে পারবেন না। কারণ বন্ধকি সম্পদ ব্যবহার করা সুদের অন্তর্ভুক্ত। হাদিসে বর্ণিত আছে, একদা ইবনে মাসউদ (রা.)-এর কাছে এক লোক এসে বলল, ‘আমার কাছে একটি ঘোড়া বন্ধক রাখা হয়েছে আর আমি তাতে আরোহণ করেছি। এর কী হুকুম?’ তিনি বললেন, ‘তা সুদের অন্তর্ভুক্ত।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক)

তবে বর্তমান সময়ে ‘সিকিউরিটি মানি’ মালিকদের নিজ প্রয়োজনে খরচ করাটা খুবই স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অন্য একদল আলেম একে বন্ধক হিসেবে না নিয়ে ঋণ হিসেবে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তখন ভাড়াদাতার জন্য তা ব্যবহারে কোনো সমস্যা থাকে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অন্য একটি সমস্যার সৃষ্টি হয়। তা হচ্ছে, ভাড়া চুক্তির সময় ঋণ প্রদানের শর্ত করলে একের ভেতর দুই চুক্তি হয়ে যায়, যা রাসুল (সা.) নিষেধ করেছেন। (মুসনাদে আহমদ) তাই আলেমগণ ‘সিকিউরিটি মানি’ গ্রহণ করাকে ভাড়া চুক্তির সঙ্গে শর্তযুক্ত না করে ভিন্ন একটি চুক্তিতে ঋণ হিসেবে গ্রহণ করতে বলেন। তবুও শেষোক্ত পদ্ধতিটি নানাভাবে জটিলতাপূর্ণ থেকে যায়। তাই আলেমগণ সিকিউরিটি মানি নিজ কাজে ব্যবহার না করে গচ্ছিত রাখতে অথবা ব্যবহার করার ইচ্ছা থাকলে অগ্রিম ভাড়া হিসেবে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। 

জামানতের কারণে ভাড়া কমবেশি করা: সিকিউরিটি মানি ভাড়াদাতার কাছে ঋণ হিসেবে থাকে বলে এর পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে ভাড়া কমবেশি করা, যেমন সিকিউরিটি মানি ১০ লাখ টাকা দিলে ভাড়া ৪ হাজার টাকা, আর ৫ লাখ দিলে ভাড়া ৬ হাজার টাকা হবে—এ ধরনের চুক্তি অবৈধ। কারণ ঋণের টাকার ওপর অতিরিক্ত যেকোনো সুবিধা ভোগ করা সুদের অন্তর্ভুক্ত। পক্ষান্তরে অগ্রিম ভাড়া হিসেবে নিলে পরিমাণ অনুপাতে ভাড়া বৃদ্ধি করা ও কমানো জায়েজ আছে। (বায়হাকি, মাজাল্লাতুল আহকামিল আদালিয়্যাহ) 

সূত্র: জাদিদ ফিকহি মাসায়িল ৪ /৭৭-৮০। 

উত্তর দিয়েছেন, মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ, শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোররাতে হাঁসের মাংস খেতে ৩০০ ফুটে যান আসিফ মাহমুদ, না পেয়ে যান ওয়েস্টিনে

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ভুলভাবে কথা বলেছেন: প্রেস সচিব

নীলা মার্কেটের হাঁসের মাংস নাকি ওয়েস্টিনের—কোনটি সেরা

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শিবির নেতা, ছাত্রলীগ সন্দেহে মারধর করল ছাত্রদল

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ: ভাতা দ্বিগুণ হয়ে ১২০০, ঘণ্টায় সম্মানী ২৫০০ থেকে বেড়ে ৩৬০০ টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত