সেলিম জাহান

সব সময় যে তাঁর কথা মনে হয়, তা কিন্তু নয়; তবে মাঝেমধ্যেই তাঁর কথা ভাবি। কোনো বই ওলটালে তাঁর স্মৃতি ভেসে ওঠে, ছবির তাড়া বের করলে তাঁকে দেখি, কিংবা কারও সঙ্গে আলাপচারিতায় তাঁর কথা উঠে আসে। এই যেমন, সেদিন বুলবুল (বুলবুল হাসান) আর সায়েমার (সায়দা সায়েমা আহমেদ) সঙ্গে আড্ডার সময়ে তাঁর কথা হলো। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ওরা দুজন—ওদের শিক্ষক ছিলেন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, কিংবা হপ্তাহখানেক আগে যখন বিভু (বিভুরঞ্জন সরকার) ও হাসানের (হাসান মামুন) সঙ্গে কথা বলছিলাম অন্য প্রসঙ্গে, তখনো তাঁর স্মৃতিচারিতায় আমরা নিমগ্ন ছিলাম।
তাঁর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি, দীর্ঘকালের। তবে সেসব স্মৃতিতে অন্যরাও আছেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে আমার কিছু কিছু স্মৃতি আছে, যেখানে তিনি আর আমি ছাড়া কেউ নেই। দুর্লভ সেসব স্মৃতি। এই যেমন, ১৯৮৮ সালে এয়ারোফ্লোট বিমান ভ্রমণের স্মৃতি। আমি ঢাকা ফিরছিলাম লন্ডন থেকে, তিনি উঠলেন মস্কো থেকে। বহু আসন খালি ছিল। পাশাপাশি আসনে বসে অনেক গল্প করেছিলাম আমরা দুজন। তাঁর সেই সব গল্পের মধ্যে একটি গল্পের কথা খুব মনে আছে।
তিনি যখন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র, তখন নোয়াখালীর চাটখিলের এক গ্রামে তাঁর এক চাচাতো বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন একবার। ভাইকে দেখে তাঁর বোন শ্বশুরালয়ের সব প্রথাগত বিধিনিষেধ ভঙ্গ করে ঘোমটা-টোমটা ভুলে ছুটে এসেছিলেন। জড়িয়ে ধরেছিলেন ভাইকে। কান্নায় ভেসে গিয়ে বারবার বলছিলেন, ‘আঁর ভাই আইছেরে, আঁর ভাই আইছে। এদ্দিনে আঁর কথা তোর মনে অইল?’
তারপর নোয়াখালীর গ্রামের প্রথায় তাঁর বোন মাটিতে বসে কোল পেতে দিয়ে ভাইকে কোলে নিয়েছিলেন। দুড়দাড় করে ঘরের মাচায় উঠে কচি তাল নামিয়ে এনেছিলেন, দা দিয়ে একটা একটা করে কেটে দিয়ে ভাইয়ের মুখে শাঁস তুলে দিয়েছিলেন। ‘সেই শাঁসের স্বাদ আমি আজও ভুলিনি।’ বড় গাঢ় মায়াময় স্বরে বলেছিলেন তিনি আমাকে। তাঁর শেষ বাক্যটি আমার এখনো মনে আছে, ‘আমার সেই বোনের সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি।’ তাঁর কথার সেই বেদনা আমার হৃদয় স্পর্শ করেছিল, কথা শেষে তাঁর চাপা দীর্ঘশ্বাসটিও আমি ভুলিনি। আমার মুখে কথা সরেনি—এত বছর বাদেও গ্রামের সেই বোনটির কথা তিনি বিস্মৃত হননি।
নিউইয়র্কের রুজভেল্ট দ্বীপে একদিন চায়ের পেয়ালা হাতে আমরা দুজন গল্প করছিলাম আমাদের আবাসনের বারান্দায় দুলুনি চেয়ারে বসে। বাড়িতে আর কেউ ছিল না। আমাদের সামনে খোলা ছিল একটি পারিবারিক ছবির অ্যালবাম। তাঁর অনুজ প্রয়াত শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর একটি ছবি ছিল তাতে। ছবিটি দেখতে দেখতে চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘মুনীরকে ছবিতে যতটা শান্ত মনে হয়, মুনীর কিন্তু মোটেই ততটা শান্ত ছিল না।’ শুরু হয় তাঁর গল্প।
‘আমরা তখন খুলনায় থাকি। বাবা সেখানে জেলা প্রশাসক। আমাদের বাড়ির দরজা-জানালাগুলো কাচের। একদিন আমি আমার ঘরের দরজা বন্ধ করে মনোযোগ দিয়ে পড়ছি। কাচের দরজার বাইরে থেকে উঁকি দিয়ে মুনীর দেখল আমি পড়ছি। তার বোধ হয় মনে হলো, আমাকে একটু বিরক্ত করা দরকার। সে প্রথমে দরজায় টোকা দিল। আমি মাথা ঘুরিয়ে ওকে দেখে আবার পড়ায় ফিরে গেলাম। দরজা খুললাম না। এবার মুনীর হাত দিয়ে বেশ জোরে জোরেই দরজায় থাপ্পড় লাগাল। আমি নির্বিকার। দেখি মুনীর কী করে। আমার নির্বিকারত্ব মুনীরকে খেপিয়ে তুলল। সে বেশ চেঁচিয়ে বলল, “দ্যাখো, আমি তিন পর্যন্ত গুনব। এর মধ্যে তুমি দরজা না খুললে আমি কিন্তু দরজা ভেঙে ফেলব। এক... দুই...।” মুনীরের কণ্ঠস্বর ক্রমান্বয়ে চড়তে থাকে।
আমি মনে মনে হাসলাম, বললে কী হবে? মুনীর কি দরজা ভাঙবে নাকি? আমাকে মিছামিছি ভয় দেখাচ্ছে। আমি চুপচাপ বসে থাকি। “তিন...।” তারপরই ঝনঝন শব্দে কাচ ভেঙে পড়ে, সশব্দে দরজা খুলে যায়। চেয়ে দেখি, মুনীরের ডান হাত রক্তাক্ত। ঘুষি মেরে সে দরজার শার্সি ভেঙে ফেলেছে। সবাই দৌড়ে এল, আয়োডিন এল, এল ব্যান্ডেজ। মুনীরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তার দুচোখে বিশ্বজয়ের আনন্দ, ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি। মাঝখানে আমি মায়ের কাছে বকা খেলাম।’ তাঁর চোখে লাজুক হাসি। সে হাসি বকা খাওয়া এক কিশোরের হাসির মতো।
মজার স্মৃতিও আছে অনেক। নব্বইয়ের দশকে আমরা দুজন নিউইয়র্কের রেডিও সিটি মিউজিক হলে ডায়ানা রসের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। অসম্ভব ভালো লেগেছিল আমাদের। অনুষ্ঠান শেষে বাইরে এসে দেখি, মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে। নিউইয়র্কের জন্য যা অভাবিত। চারদিকে লোকজনের প্রচণ্ড ভিড়, হলুদ ট্যাক্সি দুষ্প্রাপ্য। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। তিনিই সহাস্যে বললেন, ‘চলো ভিজি। ভিজে ভিজে একটা সাবওয়ে স্টেশনে চলে যাই। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে যাব।’ উপায়ান্তর না দেখে তাই করলাম। বৃষ্টিতে ভিজতে পেরে তাঁর সে কী আনন্দ! একটি শিশুর মতো উচ্চকিত স্বরে বললেন, ‘নিউইয়র্কে বৃষ্টিতে ভিজছি, ভাবা যায়?’ বাড়ি ফিরে এই ভেজার জন্য গল্প বানাতে হলো। বিশ্বাস করলেন না কেউই, না আমার শ্বশ্রূমাতা, না তাঁর কন্যাটি। মাঝখান দিয়ে তাঁর কন্যাটির বকাঝকা খেতে হলো আমাকে আমার দায়িত্বহীনতার জন্য।
২০১১ সালের ৬ বা ৭ ডিসেম্বরের কথা। অসুস্থ হয়ে তিনি হাসপাতালে। সে রাতে আমার তাঁর হাসপাতালে থাকার কথা। বিকেলের গল্পের পরে সবাই তখন একে একে বিদায় নিচ্ছে। বাইরে থেকে শুনতে পেলাম, কন্যাকে বিদায় দিতে দিতে তিনি বলছেন, ‘সেলিমের পড়ার রেঞ্জ অনেক বেশি।’ আমি মনে মনে হাসলাম, এ কথাটা তিনি প্রায়ই বলেন। আমার প্রতি তাঁর স্নেহের এ-ও এক প্রকাশ। দুপুরে বই নিয়ে কথাবার্তার কারণে হয়তো তাঁর এটা আবারও মনে হয়েছে।
সবাই চলে গেলে আবারও ধনগোপাল মুখার্জ্জির কথা উঠল। ধনগোপাল মুখার্জ্জি ১৯২৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিশুসাহিত্যের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার ‘নিউবেরি মেডেল’ জিতেছিলেন তাঁর শিশুতোষ গ্রন্থ ‘গে-নেক: দ্য স্টোরি অব আ পিজন’-এর জন্য। তিনি জানতে চাইলেন ধনগোপাল মুখার্জ্জির বৃত্তান্ত। বললাম তাঁকে সে উপাখ্যান, ‘আইনবিদ পিতার সন্তান ছিলেন ধনগোপাল। অগ্রজ জাদুগোপালের উৎসাহে তিনি অতি অল্প বয়সে যোগ দিয়েছিলেন সন্ত্রাসী আন্দোলনে। তখন তাঁকে শিল্প-প্রকৌশলে পড়াশোনা করার জন্য জাপানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি পড়াশোনা করেন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে তিনি পাড়ি জমান সানফ্রান্সিসকোতে। পড়াশোনা করেন বার্কলে ও স্ট্যানফোর্ডে। ১৯২০ সালে তিনি থিতু হন নিউইয়র্ক শহরে। সেখানেই তাঁর সব সাহিত্য সৃষ্টি। ধনগোপাল মুখার্জ্জি লিখেছেন একাধিক গ্রন্থ। ১৯২৭-এ এসেছে সেই সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি। কিন্তু কী ঘটল তাঁর জীবনে, কে জানে! মাত্র ৪৮ বছর বয়সে গলায় ফাঁস লাগিয়ে তিনি আত্মহত্যা করলেন নিউইয়র্ক শহরে।’
আমি গল্প শেষ করি। তিনি বলেন, ‘কত দিন আগে একজন ভারতীয় এমন দুর্লভ সম্মান পেলেন!’ তারপর দেখি, তাঁর নোটবুকে কী যেন টুকে রাখছেন। আমার চোখে চোখ পড়তেই একটু অপ্রতিভ হাসি হেসে বললেন, ‘ধনগোপাল মুখার্জ্জির জীবনের কটি কথা টুকে রাখলাম। একদিন লিখব।’ না, তা লেখার সময় আর তিনি পাননি।
একটা কথা আজকাল প্রায়ই মনে হয়। চলে যাওয়ার আগে শেষ যে কাজটি তিনি করছিলেন, সেটি হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক জে এম কুৎসিয়ার ‘ইন দ্য হার্ট অব দ্য কান্ট্রি’ গ্রন্থটির বাংলায় অনুবাদ। তাঁর মৃত্যুর দুদিন আগে আমরা যখন ঢাকা থেকে চলে আসছিলাম, তখন মূল বইটি এবং তাঁর অনূদিত পুরো অংশটুকু আমার হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলেন, ‘এটা তোমার কাছেই থাক।’ কেন এ কাজটি তিনি করেছিলেন, আমার জানা নেই। হয়তো তাঁর মন কিছু জানত, কে জানে? আমার ইচ্ছে আছে তাঁর অসমাপ্ত কলমে তাঁর অনুবাদটি শেষ করার।
আজ ৯ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর জন্মশতবার্ষিকী। বেঁচে থাকলে আজ তিনি শতায়ু হতেন। আজ অনেকের মনেই তাঁকে নিয়ে নানান স্মৃতির আনাগোনা ঘটবে। তার কিছু কিছু অনেককে ঘিরেই, কিন্তু কিছু কিছু নিজস্ব। তাঁকে নিয়ে আমার নিজস্ব স্মৃতির ভান্ডারও বিশাল। কেন জানি, সে ব্যাপ্ত আধারের কটা গল্প আপনাদের শোনালাম।

সব সময় যে তাঁর কথা মনে হয়, তা কিন্তু নয়; তবে মাঝেমধ্যেই তাঁর কথা ভাবি। কোনো বই ওলটালে তাঁর স্মৃতি ভেসে ওঠে, ছবির তাড়া বের করলে তাঁকে দেখি, কিংবা কারও সঙ্গে আলাপচারিতায় তাঁর কথা উঠে আসে। এই যেমন, সেদিন বুলবুল (বুলবুল হাসান) আর সায়েমার (সায়দা সায়েমা আহমেদ) সঙ্গে আড্ডার সময়ে তাঁর কথা হলো। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ওরা দুজন—ওদের শিক্ষক ছিলেন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, কিংবা হপ্তাহখানেক আগে যখন বিভু (বিভুরঞ্জন সরকার) ও হাসানের (হাসান মামুন) সঙ্গে কথা বলছিলাম অন্য প্রসঙ্গে, তখনো তাঁর স্মৃতিচারিতায় আমরা নিমগ্ন ছিলাম।
তাঁর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি, দীর্ঘকালের। তবে সেসব স্মৃতিতে অন্যরাও আছেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে আমার কিছু কিছু স্মৃতি আছে, যেখানে তিনি আর আমি ছাড়া কেউ নেই। দুর্লভ সেসব স্মৃতি। এই যেমন, ১৯৮৮ সালে এয়ারোফ্লোট বিমান ভ্রমণের স্মৃতি। আমি ঢাকা ফিরছিলাম লন্ডন থেকে, তিনি উঠলেন মস্কো থেকে। বহু আসন খালি ছিল। পাশাপাশি আসনে বসে অনেক গল্প করেছিলাম আমরা দুজন। তাঁর সেই সব গল্পের মধ্যে একটি গল্পের কথা খুব মনে আছে।
তিনি যখন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র, তখন নোয়াখালীর চাটখিলের এক গ্রামে তাঁর এক চাচাতো বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন একবার। ভাইকে দেখে তাঁর বোন শ্বশুরালয়ের সব প্রথাগত বিধিনিষেধ ভঙ্গ করে ঘোমটা-টোমটা ভুলে ছুটে এসেছিলেন। জড়িয়ে ধরেছিলেন ভাইকে। কান্নায় ভেসে গিয়ে বারবার বলছিলেন, ‘আঁর ভাই আইছেরে, আঁর ভাই আইছে। এদ্দিনে আঁর কথা তোর মনে অইল?’
তারপর নোয়াখালীর গ্রামের প্রথায় তাঁর বোন মাটিতে বসে কোল পেতে দিয়ে ভাইকে কোলে নিয়েছিলেন। দুড়দাড় করে ঘরের মাচায় উঠে কচি তাল নামিয়ে এনেছিলেন, দা দিয়ে একটা একটা করে কেটে দিয়ে ভাইয়ের মুখে শাঁস তুলে দিয়েছিলেন। ‘সেই শাঁসের স্বাদ আমি আজও ভুলিনি।’ বড় গাঢ় মায়াময় স্বরে বলেছিলেন তিনি আমাকে। তাঁর শেষ বাক্যটি আমার এখনো মনে আছে, ‘আমার সেই বোনের সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি।’ তাঁর কথার সেই বেদনা আমার হৃদয় স্পর্শ করেছিল, কথা শেষে তাঁর চাপা দীর্ঘশ্বাসটিও আমি ভুলিনি। আমার মুখে কথা সরেনি—এত বছর বাদেও গ্রামের সেই বোনটির কথা তিনি বিস্মৃত হননি।
নিউইয়র্কের রুজভেল্ট দ্বীপে একদিন চায়ের পেয়ালা হাতে আমরা দুজন গল্প করছিলাম আমাদের আবাসনের বারান্দায় দুলুনি চেয়ারে বসে। বাড়িতে আর কেউ ছিল না। আমাদের সামনে খোলা ছিল একটি পারিবারিক ছবির অ্যালবাম। তাঁর অনুজ প্রয়াত শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর একটি ছবি ছিল তাতে। ছবিটি দেখতে দেখতে চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘মুনীরকে ছবিতে যতটা শান্ত মনে হয়, মুনীর কিন্তু মোটেই ততটা শান্ত ছিল না।’ শুরু হয় তাঁর গল্প।
‘আমরা তখন খুলনায় থাকি। বাবা সেখানে জেলা প্রশাসক। আমাদের বাড়ির দরজা-জানালাগুলো কাচের। একদিন আমি আমার ঘরের দরজা বন্ধ করে মনোযোগ দিয়ে পড়ছি। কাচের দরজার বাইরে থেকে উঁকি দিয়ে মুনীর দেখল আমি পড়ছি। তার বোধ হয় মনে হলো, আমাকে একটু বিরক্ত করা দরকার। সে প্রথমে দরজায় টোকা দিল। আমি মাথা ঘুরিয়ে ওকে দেখে আবার পড়ায় ফিরে গেলাম। দরজা খুললাম না। এবার মুনীর হাত দিয়ে বেশ জোরে জোরেই দরজায় থাপ্পড় লাগাল। আমি নির্বিকার। দেখি মুনীর কী করে। আমার নির্বিকারত্ব মুনীরকে খেপিয়ে তুলল। সে বেশ চেঁচিয়ে বলল, “দ্যাখো, আমি তিন পর্যন্ত গুনব। এর মধ্যে তুমি দরজা না খুললে আমি কিন্তু দরজা ভেঙে ফেলব। এক... দুই...।” মুনীরের কণ্ঠস্বর ক্রমান্বয়ে চড়তে থাকে।
আমি মনে মনে হাসলাম, বললে কী হবে? মুনীর কি দরজা ভাঙবে নাকি? আমাকে মিছামিছি ভয় দেখাচ্ছে। আমি চুপচাপ বসে থাকি। “তিন...।” তারপরই ঝনঝন শব্দে কাচ ভেঙে পড়ে, সশব্দে দরজা খুলে যায়। চেয়ে দেখি, মুনীরের ডান হাত রক্তাক্ত। ঘুষি মেরে সে দরজার শার্সি ভেঙে ফেলেছে। সবাই দৌড়ে এল, আয়োডিন এল, এল ব্যান্ডেজ। মুনীরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তার দুচোখে বিশ্বজয়ের আনন্দ, ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি। মাঝখানে আমি মায়ের কাছে বকা খেলাম।’ তাঁর চোখে লাজুক হাসি। সে হাসি বকা খাওয়া এক কিশোরের হাসির মতো।
মজার স্মৃতিও আছে অনেক। নব্বইয়ের দশকে আমরা দুজন নিউইয়র্কের রেডিও সিটি মিউজিক হলে ডায়ানা রসের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। অসম্ভব ভালো লেগেছিল আমাদের। অনুষ্ঠান শেষে বাইরে এসে দেখি, মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে। নিউইয়র্কের জন্য যা অভাবিত। চারদিকে লোকজনের প্রচণ্ড ভিড়, হলুদ ট্যাক্সি দুষ্প্রাপ্য। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। তিনিই সহাস্যে বললেন, ‘চলো ভিজি। ভিজে ভিজে একটা সাবওয়ে স্টেশনে চলে যাই। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে যাব।’ উপায়ান্তর না দেখে তাই করলাম। বৃষ্টিতে ভিজতে পেরে তাঁর সে কী আনন্দ! একটি শিশুর মতো উচ্চকিত স্বরে বললেন, ‘নিউইয়র্কে বৃষ্টিতে ভিজছি, ভাবা যায়?’ বাড়ি ফিরে এই ভেজার জন্য গল্প বানাতে হলো। বিশ্বাস করলেন না কেউই, না আমার শ্বশ্রূমাতা, না তাঁর কন্যাটি। মাঝখান দিয়ে তাঁর কন্যাটির বকাঝকা খেতে হলো আমাকে আমার দায়িত্বহীনতার জন্য।
২০১১ সালের ৬ বা ৭ ডিসেম্বরের কথা। অসুস্থ হয়ে তিনি হাসপাতালে। সে রাতে আমার তাঁর হাসপাতালে থাকার কথা। বিকেলের গল্পের পরে সবাই তখন একে একে বিদায় নিচ্ছে। বাইরে থেকে শুনতে পেলাম, কন্যাকে বিদায় দিতে দিতে তিনি বলছেন, ‘সেলিমের পড়ার রেঞ্জ অনেক বেশি।’ আমি মনে মনে হাসলাম, এ কথাটা তিনি প্রায়ই বলেন। আমার প্রতি তাঁর স্নেহের এ-ও এক প্রকাশ। দুপুরে বই নিয়ে কথাবার্তার কারণে হয়তো তাঁর এটা আবারও মনে হয়েছে।
সবাই চলে গেলে আবারও ধনগোপাল মুখার্জ্জির কথা উঠল। ধনগোপাল মুখার্জ্জি ১৯২৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিশুসাহিত্যের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার ‘নিউবেরি মেডেল’ জিতেছিলেন তাঁর শিশুতোষ গ্রন্থ ‘গে-নেক: দ্য স্টোরি অব আ পিজন’-এর জন্য। তিনি জানতে চাইলেন ধনগোপাল মুখার্জ্জির বৃত্তান্ত। বললাম তাঁকে সে উপাখ্যান, ‘আইনবিদ পিতার সন্তান ছিলেন ধনগোপাল। অগ্রজ জাদুগোপালের উৎসাহে তিনি অতি অল্প বয়সে যোগ দিয়েছিলেন সন্ত্রাসী আন্দোলনে। তখন তাঁকে শিল্প-প্রকৌশলে পড়াশোনা করার জন্য জাপানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি পড়াশোনা করেন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে তিনি পাড়ি জমান সানফ্রান্সিসকোতে। পড়াশোনা করেন বার্কলে ও স্ট্যানফোর্ডে। ১৯২০ সালে তিনি থিতু হন নিউইয়র্ক শহরে। সেখানেই তাঁর সব সাহিত্য সৃষ্টি। ধনগোপাল মুখার্জ্জি লিখেছেন একাধিক গ্রন্থ। ১৯২৭-এ এসেছে সেই সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি। কিন্তু কী ঘটল তাঁর জীবনে, কে জানে! মাত্র ৪৮ বছর বয়সে গলায় ফাঁস লাগিয়ে তিনি আত্মহত্যা করলেন নিউইয়র্ক শহরে।’
আমি গল্প শেষ করি। তিনি বলেন, ‘কত দিন আগে একজন ভারতীয় এমন দুর্লভ সম্মান পেলেন!’ তারপর দেখি, তাঁর নোটবুকে কী যেন টুকে রাখছেন। আমার চোখে চোখ পড়তেই একটু অপ্রতিভ হাসি হেসে বললেন, ‘ধনগোপাল মুখার্জ্জির জীবনের কটি কথা টুকে রাখলাম। একদিন লিখব।’ না, তা লেখার সময় আর তিনি পাননি।
একটা কথা আজকাল প্রায়ই মনে হয়। চলে যাওয়ার আগে শেষ যে কাজটি তিনি করছিলেন, সেটি হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক জে এম কুৎসিয়ার ‘ইন দ্য হার্ট অব দ্য কান্ট্রি’ গ্রন্থটির বাংলায় অনুবাদ। তাঁর মৃত্যুর দুদিন আগে আমরা যখন ঢাকা থেকে চলে আসছিলাম, তখন মূল বইটি এবং তাঁর অনূদিত পুরো অংশটুকু আমার হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলেন, ‘এটা তোমার কাছেই থাক।’ কেন এ কাজটি তিনি করেছিলেন, আমার জানা নেই। হয়তো তাঁর মন কিছু জানত, কে জানে? আমার ইচ্ছে আছে তাঁর অসমাপ্ত কলমে তাঁর অনুবাদটি শেষ করার।
আজ ৯ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর জন্মশতবার্ষিকী। বেঁচে থাকলে আজ তিনি শতায়ু হতেন। আজ অনেকের মনেই তাঁকে নিয়ে নানান স্মৃতির আনাগোনা ঘটবে। তার কিছু কিছু অনেককে ঘিরেই, কিন্তু কিছু কিছু নিজস্ব। তাঁকে নিয়ে আমার নিজস্ব স্মৃতির ভান্ডারও বিশাল। কেন জানি, সে ব্যাপ্ত আধারের কটা গল্প আপনাদের শোনালাম।
সেলিম জাহান

সব সময় যে তাঁর কথা মনে হয়, তা কিন্তু নয়; তবে মাঝেমধ্যেই তাঁর কথা ভাবি। কোনো বই ওলটালে তাঁর স্মৃতি ভেসে ওঠে, ছবির তাড়া বের করলে তাঁকে দেখি, কিংবা কারও সঙ্গে আলাপচারিতায় তাঁর কথা উঠে আসে। এই যেমন, সেদিন বুলবুল (বুলবুল হাসান) আর সায়েমার (সায়দা সায়েমা আহমেদ) সঙ্গে আড্ডার সময়ে তাঁর কথা হলো। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ওরা দুজন—ওদের শিক্ষক ছিলেন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, কিংবা হপ্তাহখানেক আগে যখন বিভু (বিভুরঞ্জন সরকার) ও হাসানের (হাসান মামুন) সঙ্গে কথা বলছিলাম অন্য প্রসঙ্গে, তখনো তাঁর স্মৃতিচারিতায় আমরা নিমগ্ন ছিলাম।
তাঁর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি, দীর্ঘকালের। তবে সেসব স্মৃতিতে অন্যরাও আছেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে আমার কিছু কিছু স্মৃতি আছে, যেখানে তিনি আর আমি ছাড়া কেউ নেই। দুর্লভ সেসব স্মৃতি। এই যেমন, ১৯৮৮ সালে এয়ারোফ্লোট বিমান ভ্রমণের স্মৃতি। আমি ঢাকা ফিরছিলাম লন্ডন থেকে, তিনি উঠলেন মস্কো থেকে। বহু আসন খালি ছিল। পাশাপাশি আসনে বসে অনেক গল্প করেছিলাম আমরা দুজন। তাঁর সেই সব গল্পের মধ্যে একটি গল্পের কথা খুব মনে আছে।
তিনি যখন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র, তখন নোয়াখালীর চাটখিলের এক গ্রামে তাঁর এক চাচাতো বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন একবার। ভাইকে দেখে তাঁর বোন শ্বশুরালয়ের সব প্রথাগত বিধিনিষেধ ভঙ্গ করে ঘোমটা-টোমটা ভুলে ছুটে এসেছিলেন। জড়িয়ে ধরেছিলেন ভাইকে। কান্নায় ভেসে গিয়ে বারবার বলছিলেন, ‘আঁর ভাই আইছেরে, আঁর ভাই আইছে। এদ্দিনে আঁর কথা তোর মনে অইল?’
তারপর নোয়াখালীর গ্রামের প্রথায় তাঁর বোন মাটিতে বসে কোল পেতে দিয়ে ভাইকে কোলে নিয়েছিলেন। দুড়দাড় করে ঘরের মাচায় উঠে কচি তাল নামিয়ে এনেছিলেন, দা দিয়ে একটা একটা করে কেটে দিয়ে ভাইয়ের মুখে শাঁস তুলে দিয়েছিলেন। ‘সেই শাঁসের স্বাদ আমি আজও ভুলিনি।’ বড় গাঢ় মায়াময় স্বরে বলেছিলেন তিনি আমাকে। তাঁর শেষ বাক্যটি আমার এখনো মনে আছে, ‘আমার সেই বোনের সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি।’ তাঁর কথার সেই বেদনা আমার হৃদয় স্পর্শ করেছিল, কথা শেষে তাঁর চাপা দীর্ঘশ্বাসটিও আমি ভুলিনি। আমার মুখে কথা সরেনি—এত বছর বাদেও গ্রামের সেই বোনটির কথা তিনি বিস্মৃত হননি।
নিউইয়র্কের রুজভেল্ট দ্বীপে একদিন চায়ের পেয়ালা হাতে আমরা দুজন গল্প করছিলাম আমাদের আবাসনের বারান্দায় দুলুনি চেয়ারে বসে। বাড়িতে আর কেউ ছিল না। আমাদের সামনে খোলা ছিল একটি পারিবারিক ছবির অ্যালবাম। তাঁর অনুজ প্রয়াত শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর একটি ছবি ছিল তাতে। ছবিটি দেখতে দেখতে চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘মুনীরকে ছবিতে যতটা শান্ত মনে হয়, মুনীর কিন্তু মোটেই ততটা শান্ত ছিল না।’ শুরু হয় তাঁর গল্প।
‘আমরা তখন খুলনায় থাকি। বাবা সেখানে জেলা প্রশাসক। আমাদের বাড়ির দরজা-জানালাগুলো কাচের। একদিন আমি আমার ঘরের দরজা বন্ধ করে মনোযোগ দিয়ে পড়ছি। কাচের দরজার বাইরে থেকে উঁকি দিয়ে মুনীর দেখল আমি পড়ছি। তার বোধ হয় মনে হলো, আমাকে একটু বিরক্ত করা দরকার। সে প্রথমে দরজায় টোকা দিল। আমি মাথা ঘুরিয়ে ওকে দেখে আবার পড়ায় ফিরে গেলাম। দরজা খুললাম না। এবার মুনীর হাত দিয়ে বেশ জোরে জোরেই দরজায় থাপ্পড় লাগাল। আমি নির্বিকার। দেখি মুনীর কী করে। আমার নির্বিকারত্ব মুনীরকে খেপিয়ে তুলল। সে বেশ চেঁচিয়ে বলল, “দ্যাখো, আমি তিন পর্যন্ত গুনব। এর মধ্যে তুমি দরজা না খুললে আমি কিন্তু দরজা ভেঙে ফেলব। এক... দুই...।” মুনীরের কণ্ঠস্বর ক্রমান্বয়ে চড়তে থাকে।
আমি মনে মনে হাসলাম, বললে কী হবে? মুনীর কি দরজা ভাঙবে নাকি? আমাকে মিছামিছি ভয় দেখাচ্ছে। আমি চুপচাপ বসে থাকি। “তিন...।” তারপরই ঝনঝন শব্দে কাচ ভেঙে পড়ে, সশব্দে দরজা খুলে যায়। চেয়ে দেখি, মুনীরের ডান হাত রক্তাক্ত। ঘুষি মেরে সে দরজার শার্সি ভেঙে ফেলেছে। সবাই দৌড়ে এল, আয়োডিন এল, এল ব্যান্ডেজ। মুনীরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তার দুচোখে বিশ্বজয়ের আনন্দ, ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি। মাঝখানে আমি মায়ের কাছে বকা খেলাম।’ তাঁর চোখে লাজুক হাসি। সে হাসি বকা খাওয়া এক কিশোরের হাসির মতো।
মজার স্মৃতিও আছে অনেক। নব্বইয়ের দশকে আমরা দুজন নিউইয়র্কের রেডিও সিটি মিউজিক হলে ডায়ানা রসের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। অসম্ভব ভালো লেগেছিল আমাদের। অনুষ্ঠান শেষে বাইরে এসে দেখি, মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে। নিউইয়র্কের জন্য যা অভাবিত। চারদিকে লোকজনের প্রচণ্ড ভিড়, হলুদ ট্যাক্সি দুষ্প্রাপ্য। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। তিনিই সহাস্যে বললেন, ‘চলো ভিজি। ভিজে ভিজে একটা সাবওয়ে স্টেশনে চলে যাই। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে যাব।’ উপায়ান্তর না দেখে তাই করলাম। বৃষ্টিতে ভিজতে পেরে তাঁর সে কী আনন্দ! একটি শিশুর মতো উচ্চকিত স্বরে বললেন, ‘নিউইয়র্কে বৃষ্টিতে ভিজছি, ভাবা যায়?’ বাড়ি ফিরে এই ভেজার জন্য গল্প বানাতে হলো। বিশ্বাস করলেন না কেউই, না আমার শ্বশ্রূমাতা, না তাঁর কন্যাটি। মাঝখান দিয়ে তাঁর কন্যাটির বকাঝকা খেতে হলো আমাকে আমার দায়িত্বহীনতার জন্য।
২০১১ সালের ৬ বা ৭ ডিসেম্বরের কথা। অসুস্থ হয়ে তিনি হাসপাতালে। সে রাতে আমার তাঁর হাসপাতালে থাকার কথা। বিকেলের গল্পের পরে সবাই তখন একে একে বিদায় নিচ্ছে। বাইরে থেকে শুনতে পেলাম, কন্যাকে বিদায় দিতে দিতে তিনি বলছেন, ‘সেলিমের পড়ার রেঞ্জ অনেক বেশি।’ আমি মনে মনে হাসলাম, এ কথাটা তিনি প্রায়ই বলেন। আমার প্রতি তাঁর স্নেহের এ-ও এক প্রকাশ। দুপুরে বই নিয়ে কথাবার্তার কারণে হয়তো তাঁর এটা আবারও মনে হয়েছে।
সবাই চলে গেলে আবারও ধনগোপাল মুখার্জ্জির কথা উঠল। ধনগোপাল মুখার্জ্জি ১৯২৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিশুসাহিত্যের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার ‘নিউবেরি মেডেল’ জিতেছিলেন তাঁর শিশুতোষ গ্রন্থ ‘গে-নেক: দ্য স্টোরি অব আ পিজন’-এর জন্য। তিনি জানতে চাইলেন ধনগোপাল মুখার্জ্জির বৃত্তান্ত। বললাম তাঁকে সে উপাখ্যান, ‘আইনবিদ পিতার সন্তান ছিলেন ধনগোপাল। অগ্রজ জাদুগোপালের উৎসাহে তিনি অতি অল্প বয়সে যোগ দিয়েছিলেন সন্ত্রাসী আন্দোলনে। তখন তাঁকে শিল্প-প্রকৌশলে পড়াশোনা করার জন্য জাপানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি পড়াশোনা করেন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে তিনি পাড়ি জমান সানফ্রান্সিসকোতে। পড়াশোনা করেন বার্কলে ও স্ট্যানফোর্ডে। ১৯২০ সালে তিনি থিতু হন নিউইয়র্ক শহরে। সেখানেই তাঁর সব সাহিত্য সৃষ্টি। ধনগোপাল মুখার্জ্জি লিখেছেন একাধিক গ্রন্থ। ১৯২৭-এ এসেছে সেই সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি। কিন্তু কী ঘটল তাঁর জীবনে, কে জানে! মাত্র ৪৮ বছর বয়সে গলায় ফাঁস লাগিয়ে তিনি আত্মহত্যা করলেন নিউইয়র্ক শহরে।’
আমি গল্প শেষ করি। তিনি বলেন, ‘কত দিন আগে একজন ভারতীয় এমন দুর্লভ সম্মান পেলেন!’ তারপর দেখি, তাঁর নোটবুকে কী যেন টুকে রাখছেন। আমার চোখে চোখ পড়তেই একটু অপ্রতিভ হাসি হেসে বললেন, ‘ধনগোপাল মুখার্জ্জির জীবনের কটি কথা টুকে রাখলাম। একদিন লিখব।’ না, তা লেখার সময় আর তিনি পাননি।
একটা কথা আজকাল প্রায়ই মনে হয়। চলে যাওয়ার আগে শেষ যে কাজটি তিনি করছিলেন, সেটি হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক জে এম কুৎসিয়ার ‘ইন দ্য হার্ট অব দ্য কান্ট্রি’ গ্রন্থটির বাংলায় অনুবাদ। তাঁর মৃত্যুর দুদিন আগে আমরা যখন ঢাকা থেকে চলে আসছিলাম, তখন মূল বইটি এবং তাঁর অনূদিত পুরো অংশটুকু আমার হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলেন, ‘এটা তোমার কাছেই থাক।’ কেন এ কাজটি তিনি করেছিলেন, আমার জানা নেই। হয়তো তাঁর মন কিছু জানত, কে জানে? আমার ইচ্ছে আছে তাঁর অসমাপ্ত কলমে তাঁর অনুবাদটি শেষ করার।
আজ ৯ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর জন্মশতবার্ষিকী। বেঁচে থাকলে আজ তিনি শতায়ু হতেন। আজ অনেকের মনেই তাঁকে নিয়ে নানান স্মৃতির আনাগোনা ঘটবে। তার কিছু কিছু অনেককে ঘিরেই, কিন্তু কিছু কিছু নিজস্ব। তাঁকে নিয়ে আমার নিজস্ব স্মৃতির ভান্ডারও বিশাল। কেন জানি, সে ব্যাপ্ত আধারের কটা গল্প আপনাদের শোনালাম।

সব সময় যে তাঁর কথা মনে হয়, তা কিন্তু নয়; তবে মাঝেমধ্যেই তাঁর কথা ভাবি। কোনো বই ওলটালে তাঁর স্মৃতি ভেসে ওঠে, ছবির তাড়া বের করলে তাঁকে দেখি, কিংবা কারও সঙ্গে আলাপচারিতায় তাঁর কথা উঠে আসে। এই যেমন, সেদিন বুলবুল (বুলবুল হাসান) আর সায়েমার (সায়দা সায়েমা আহমেদ) সঙ্গে আড্ডার সময়ে তাঁর কথা হলো। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ওরা দুজন—ওদের শিক্ষক ছিলেন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, কিংবা হপ্তাহখানেক আগে যখন বিভু (বিভুরঞ্জন সরকার) ও হাসানের (হাসান মামুন) সঙ্গে কথা বলছিলাম অন্য প্রসঙ্গে, তখনো তাঁর স্মৃতিচারিতায় আমরা নিমগ্ন ছিলাম।
তাঁর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি, দীর্ঘকালের। তবে সেসব স্মৃতিতে অন্যরাও আছেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে আমার কিছু কিছু স্মৃতি আছে, যেখানে তিনি আর আমি ছাড়া কেউ নেই। দুর্লভ সেসব স্মৃতি। এই যেমন, ১৯৮৮ সালে এয়ারোফ্লোট বিমান ভ্রমণের স্মৃতি। আমি ঢাকা ফিরছিলাম লন্ডন থেকে, তিনি উঠলেন মস্কো থেকে। বহু আসন খালি ছিল। পাশাপাশি আসনে বসে অনেক গল্প করেছিলাম আমরা দুজন। তাঁর সেই সব গল্পের মধ্যে একটি গল্পের কথা খুব মনে আছে।
তিনি যখন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র, তখন নোয়াখালীর চাটখিলের এক গ্রামে তাঁর এক চাচাতো বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন একবার। ভাইকে দেখে তাঁর বোন শ্বশুরালয়ের সব প্রথাগত বিধিনিষেধ ভঙ্গ করে ঘোমটা-টোমটা ভুলে ছুটে এসেছিলেন। জড়িয়ে ধরেছিলেন ভাইকে। কান্নায় ভেসে গিয়ে বারবার বলছিলেন, ‘আঁর ভাই আইছেরে, আঁর ভাই আইছে। এদ্দিনে আঁর কথা তোর মনে অইল?’
তারপর নোয়াখালীর গ্রামের প্রথায় তাঁর বোন মাটিতে বসে কোল পেতে দিয়ে ভাইকে কোলে নিয়েছিলেন। দুড়দাড় করে ঘরের মাচায় উঠে কচি তাল নামিয়ে এনেছিলেন, দা দিয়ে একটা একটা করে কেটে দিয়ে ভাইয়ের মুখে শাঁস তুলে দিয়েছিলেন। ‘সেই শাঁসের স্বাদ আমি আজও ভুলিনি।’ বড় গাঢ় মায়াময় স্বরে বলেছিলেন তিনি আমাকে। তাঁর শেষ বাক্যটি আমার এখনো মনে আছে, ‘আমার সেই বোনের সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি।’ তাঁর কথার সেই বেদনা আমার হৃদয় স্পর্শ করেছিল, কথা শেষে তাঁর চাপা দীর্ঘশ্বাসটিও আমি ভুলিনি। আমার মুখে কথা সরেনি—এত বছর বাদেও গ্রামের সেই বোনটির কথা তিনি বিস্মৃত হননি।
নিউইয়র্কের রুজভেল্ট দ্বীপে একদিন চায়ের পেয়ালা হাতে আমরা দুজন গল্প করছিলাম আমাদের আবাসনের বারান্দায় দুলুনি চেয়ারে বসে। বাড়িতে আর কেউ ছিল না। আমাদের সামনে খোলা ছিল একটি পারিবারিক ছবির অ্যালবাম। তাঁর অনুজ প্রয়াত শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর একটি ছবি ছিল তাতে। ছবিটি দেখতে দেখতে চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘মুনীরকে ছবিতে যতটা শান্ত মনে হয়, মুনীর কিন্তু মোটেই ততটা শান্ত ছিল না।’ শুরু হয় তাঁর গল্প।
‘আমরা তখন খুলনায় থাকি। বাবা সেখানে জেলা প্রশাসক। আমাদের বাড়ির দরজা-জানালাগুলো কাচের। একদিন আমি আমার ঘরের দরজা বন্ধ করে মনোযোগ দিয়ে পড়ছি। কাচের দরজার বাইরে থেকে উঁকি দিয়ে মুনীর দেখল আমি পড়ছি। তার বোধ হয় মনে হলো, আমাকে একটু বিরক্ত করা দরকার। সে প্রথমে দরজায় টোকা দিল। আমি মাথা ঘুরিয়ে ওকে দেখে আবার পড়ায় ফিরে গেলাম। দরজা খুললাম না। এবার মুনীর হাত দিয়ে বেশ জোরে জোরেই দরজায় থাপ্পড় লাগাল। আমি নির্বিকার। দেখি মুনীর কী করে। আমার নির্বিকারত্ব মুনীরকে খেপিয়ে তুলল। সে বেশ চেঁচিয়ে বলল, “দ্যাখো, আমি তিন পর্যন্ত গুনব। এর মধ্যে তুমি দরজা না খুললে আমি কিন্তু দরজা ভেঙে ফেলব। এক... দুই...।” মুনীরের কণ্ঠস্বর ক্রমান্বয়ে চড়তে থাকে।
আমি মনে মনে হাসলাম, বললে কী হবে? মুনীর কি দরজা ভাঙবে নাকি? আমাকে মিছামিছি ভয় দেখাচ্ছে। আমি চুপচাপ বসে থাকি। “তিন...।” তারপরই ঝনঝন শব্দে কাচ ভেঙে পড়ে, সশব্দে দরজা খুলে যায়। চেয়ে দেখি, মুনীরের ডান হাত রক্তাক্ত। ঘুষি মেরে সে দরজার শার্সি ভেঙে ফেলেছে। সবাই দৌড়ে এল, আয়োডিন এল, এল ব্যান্ডেজ। মুনীরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তার দুচোখে বিশ্বজয়ের আনন্দ, ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি। মাঝখানে আমি মায়ের কাছে বকা খেলাম।’ তাঁর চোখে লাজুক হাসি। সে হাসি বকা খাওয়া এক কিশোরের হাসির মতো।
মজার স্মৃতিও আছে অনেক। নব্বইয়ের দশকে আমরা দুজন নিউইয়র্কের রেডিও সিটি মিউজিক হলে ডায়ানা রসের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। অসম্ভব ভালো লেগেছিল আমাদের। অনুষ্ঠান শেষে বাইরে এসে দেখি, মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে। নিউইয়র্কের জন্য যা অভাবিত। চারদিকে লোকজনের প্রচণ্ড ভিড়, হলুদ ট্যাক্সি দুষ্প্রাপ্য। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। তিনিই সহাস্যে বললেন, ‘চলো ভিজি। ভিজে ভিজে একটা সাবওয়ে স্টেশনে চলে যাই। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে যাব।’ উপায়ান্তর না দেখে তাই করলাম। বৃষ্টিতে ভিজতে পেরে তাঁর সে কী আনন্দ! একটি শিশুর মতো উচ্চকিত স্বরে বললেন, ‘নিউইয়র্কে বৃষ্টিতে ভিজছি, ভাবা যায়?’ বাড়ি ফিরে এই ভেজার জন্য গল্প বানাতে হলো। বিশ্বাস করলেন না কেউই, না আমার শ্বশ্রূমাতা, না তাঁর কন্যাটি। মাঝখান দিয়ে তাঁর কন্যাটির বকাঝকা খেতে হলো আমাকে আমার দায়িত্বহীনতার জন্য।
২০১১ সালের ৬ বা ৭ ডিসেম্বরের কথা। অসুস্থ হয়ে তিনি হাসপাতালে। সে রাতে আমার তাঁর হাসপাতালে থাকার কথা। বিকেলের গল্পের পরে সবাই তখন একে একে বিদায় নিচ্ছে। বাইরে থেকে শুনতে পেলাম, কন্যাকে বিদায় দিতে দিতে তিনি বলছেন, ‘সেলিমের পড়ার রেঞ্জ অনেক বেশি।’ আমি মনে মনে হাসলাম, এ কথাটা তিনি প্রায়ই বলেন। আমার প্রতি তাঁর স্নেহের এ-ও এক প্রকাশ। দুপুরে বই নিয়ে কথাবার্তার কারণে হয়তো তাঁর এটা আবারও মনে হয়েছে।
সবাই চলে গেলে আবারও ধনগোপাল মুখার্জ্জির কথা উঠল। ধনগোপাল মুখার্জ্জি ১৯২৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিশুসাহিত্যের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার ‘নিউবেরি মেডেল’ জিতেছিলেন তাঁর শিশুতোষ গ্রন্থ ‘গে-নেক: দ্য স্টোরি অব আ পিজন’-এর জন্য। তিনি জানতে চাইলেন ধনগোপাল মুখার্জ্জির বৃত্তান্ত। বললাম তাঁকে সে উপাখ্যান, ‘আইনবিদ পিতার সন্তান ছিলেন ধনগোপাল। অগ্রজ জাদুগোপালের উৎসাহে তিনি অতি অল্প বয়সে যোগ দিয়েছিলেন সন্ত্রাসী আন্দোলনে। তখন তাঁকে শিল্প-প্রকৌশলে পড়াশোনা করার জন্য জাপানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি পড়াশোনা করেন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে তিনি পাড়ি জমান সানফ্রান্সিসকোতে। পড়াশোনা করেন বার্কলে ও স্ট্যানফোর্ডে। ১৯২০ সালে তিনি থিতু হন নিউইয়র্ক শহরে। সেখানেই তাঁর সব সাহিত্য সৃষ্টি। ধনগোপাল মুখার্জ্জি লিখেছেন একাধিক গ্রন্থ। ১৯২৭-এ এসেছে সেই সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি। কিন্তু কী ঘটল তাঁর জীবনে, কে জানে! মাত্র ৪৮ বছর বয়সে গলায় ফাঁস লাগিয়ে তিনি আত্মহত্যা করলেন নিউইয়র্ক শহরে।’
আমি গল্প শেষ করি। তিনি বলেন, ‘কত দিন আগে একজন ভারতীয় এমন দুর্লভ সম্মান পেলেন!’ তারপর দেখি, তাঁর নোটবুকে কী যেন টুকে রাখছেন। আমার চোখে চোখ পড়তেই একটু অপ্রতিভ হাসি হেসে বললেন, ‘ধনগোপাল মুখার্জ্জির জীবনের কটি কথা টুকে রাখলাম। একদিন লিখব।’ না, তা লেখার সময় আর তিনি পাননি।
একটা কথা আজকাল প্রায়ই মনে হয়। চলে যাওয়ার আগে শেষ যে কাজটি তিনি করছিলেন, সেটি হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক জে এম কুৎসিয়ার ‘ইন দ্য হার্ট অব দ্য কান্ট্রি’ গ্রন্থটির বাংলায় অনুবাদ। তাঁর মৃত্যুর দুদিন আগে আমরা যখন ঢাকা থেকে চলে আসছিলাম, তখন মূল বইটি এবং তাঁর অনূদিত পুরো অংশটুকু আমার হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলেন, ‘এটা তোমার কাছেই থাক।’ কেন এ কাজটি তিনি করেছিলেন, আমার জানা নেই। হয়তো তাঁর মন কিছু জানত, কে জানে? আমার ইচ্ছে আছে তাঁর অসমাপ্ত কলমে তাঁর অনুবাদটি শেষ করার।
আজ ৯ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর জন্মশতবার্ষিকী। বেঁচে থাকলে আজ তিনি শতায়ু হতেন। আজ অনেকের মনেই তাঁকে নিয়ে নানান স্মৃতির আনাগোনা ঘটবে। তার কিছু কিছু অনেককে ঘিরেই, কিন্তু কিছু কিছু নিজস্ব। তাঁকে নিয়ে আমার নিজস্ব স্মৃতির ভান্ডারও বিশাল। কেন জানি, সে ব্যাপ্ত আধারের কটা গল্প আপনাদের শোনালাম।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৩ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

সব সময় যে তাঁর কথা মনে হয়, তা কিন্তু নয়; তবে মাঝেমধ্যেই তাঁর কথা ভাবি। কোনো বই ওলটালে তাঁর স্মৃতি ভেসে ওঠে, ছবির তাড়া বের করলে তাঁকে দেখি, কিংবা কারও সঙ্গে আলাপচারিতায় তাঁর কথা উঠে আসে। এই যেমন, সেদিন বুলবুল
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

সব সময় যে তাঁর কথা মনে হয়, তা কিন্তু নয়; তবে মাঝেমধ্যেই তাঁর কথা ভাবি। কোনো বই ওলটালে তাঁর স্মৃতি ভেসে ওঠে, ছবির তাড়া বের করলে তাঁকে দেখি, কিংবা কারও সঙ্গে আলাপচারিতায় তাঁর কথা উঠে আসে। এই যেমন, সেদিন বুলবুল
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৩ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

সব সময় যে তাঁর কথা মনে হয়, তা কিন্তু নয়; তবে মাঝেমধ্যেই তাঁর কথা ভাবি। কোনো বই ওলটালে তাঁর স্মৃতি ভেসে ওঠে, ছবির তাড়া বের করলে তাঁকে দেখি, কিংবা কারও সঙ্গে আলাপচারিতায় তাঁর কথা উঠে আসে। এই যেমন, সেদিন বুলবুল
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৩ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

সব সময় যে তাঁর কথা মনে হয়, তা কিন্তু নয়; তবে মাঝেমধ্যেই তাঁর কথা ভাবি। কোনো বই ওলটালে তাঁর স্মৃতি ভেসে ওঠে, ছবির তাড়া বের করলে তাঁকে দেখি, কিংবা কারও সঙ্গে আলাপচারিতায় তাঁর কথা উঠে আসে। এই যেমন, সেদিন বুলবুল
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৩ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫