Ajker Patrika

দুর্ঘটনা রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮: ৪৬
দুর্ঘটনা রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে

আমাদের দেশে জাহাজভাঙা শিল্পে দুর্ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও অসংখ্যবার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সরকার থেকে কোনো ধরনের বিচার করা হয়নি। প্রতিরোধেরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করাহয়নি। তাই এ শিল্পে দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না।

গত শনিবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের শীতলপুরের তেঁতুলতলা এলাকার সাগরের কাছে অবস্থিত ‘এসএন করপোরেশন’ নামের জাহাজভাঙা কারখানায় পাম্প রুমে বিস্ফোরণের ঘটনায় ১২ শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আটজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে রোববার একজনের মৃত্যু হয়েছে। 

বিশ্বের উন্নত দেশসমূহ মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যবাহী বা যাত্রীবাহী জাহাজগুলো আমাদের মতো দেশে বিক্রি করে। এই জাহাজগুলো চলাচলের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। আমাদের মতো দেশের সমুদ্রসৈকত এলাকায় বড় বড় জাহাজভাঙা বা রিসাইক্লিং শিল্প গড়ে উঠেছে।

অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এ শিল্প ব্যবসায় আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এ শিল্প দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখলেও বিপরীতভাবে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করছে। শুধু পরিবেশের ক্ষতিই নয়, এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে থাকেন। দুর্ঘটনায় অনেক শ্রমিক পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু মালিকপক্ষ বারবারই শ্রমিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে অবহেলা করেছেন। 

পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোয় আধুনিক পদ্ধতিতে জাহাজ ভাঙা হয়। বাংলাদেশ, ভারতসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোয় এখনো প্রাচীন পদ্ধতিতে জাহাজ ভাঙা হয়। বর্তমানে বিশ্বে জাহাজ ভাঙার ১০টি পদ্ধতি চালু আছে বলে জানা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতিটি হচ্ছে, সমুদ্রসৈকতে জাহাজ এনে স্থানীয় শ্রমিকদের দিয়ে ভাঙা। এ পদ্ধতিতে খরচ অল্প হয় আর কম মজুরিতে শ্রমিক পাওয়া যায়। 

বাংলাদেশে জাহাজভাঙা শিল্প বিকশিত হয়েছে সহজে শ্রমিক পাওয়া যায় বলে। শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা বা জীবনঝুঁকি এবং শারীরিক ক্ষতির দিকটিও বিবেচনায় নেওয়া হয় না। যে শ্রমিকেরা জাহাজ ভাঙেন, তাঁদের অধিকাংশই কোনো না কোনোভাবে তাৎক্ষণিক শারীরিক ক্ষতির শিকার হন। অনেকে হাত-পায়ের আঙুল হারান। শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ক্ষতের শিকার হন। চোখ-কানের সমস্যা হয়। দীর্ঘ মেয়াদে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। 

জাহাজভাঙা শিল্পে পরিবেশের ক্ষতির দিক বিবেচনার পাশাপাশি শ্রমিকদের নিরাপত্তা দেওয়াটা খুব জরুরি। এদিক দিয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা বরাবরই দেখা যায়। শ্রমিকদের পক্ষে রাষ্ট্রকে পাওয়া যায় না। এ কারণে এ শিল্পের মালিকেরা বারবারই পার পেয়ে যাচ্ছেন। 

এ শিল্পের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্যোগ জরুরি। পুরোনো পদ্ধতিতে জাহাজ ভাঙা বন্ধ করতে আইন প্রণয়ন করা দরকার। পাশাপাশি শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিতে হবে, যাতে তাঁদের আর শুধু হাতের ওপর নির্ভর করে জাহাজ কাটা বা ভাঙতে না হয়। মালিকেরাও যেন শ্রমিকদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করতে না পারেন, তার জন্য আইনে কোনো নির্দেশনা থাকা দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, মাদ্রাসা সুপারসহ তিনজন আটক

মধুচন্দ্রিমায় স্বামী নিহত, কফিন জড়িয়ে হিমাশি

বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক সাফিনুলের পরিবারের ৫৬ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

১৬ বছর আগে নিহত শিশু ও সাত বছর ধরে প্রবাসী অষ্টগ্রামে মামলার আসামি!

এটা ছোটখাটো অপহরণ: চবির ৫ শিক্ষার্থীকে নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত