Ajker Patrika

নদীগুলোকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে হবে

আনু মুহাম্মদ
নদীগুলোকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে হবে

সম্প্রতি একজন মন্ত্রী মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশের নদীগুলো অনেক প্রশস্ত, আমাদের এত প্রশস্ত নদীর প্রয়োজন নেই। সেগুলো কেটে সরু করতে হবে, রিসোর্ট ও রাস্তা তৈরি এবং নানা ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য নদীতীর থেকে জমি পুনরুদ্ধার করতে হবে। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম, মাঝেমধ্যে আমাদের মন্ত্রীরা তো দায়িত্বজ্ঞানহীন নানা রকম বক্তব্য দেন; সুতরাং এগুলোকে গুরুত্ব না দিলেও চলে। কিন্তু পরে দেখলাম, এগুলো নিছক মন্ত্রীর দায়িত্বহীন মন্তব্য নয়, এটা সর্বনাশা পরিকল্পনার অংশ। বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন নদীর নাব্যতা এবং জলপ্রবাহ বাড়ানোর নামে এগুলোকে কেটে সরু করার বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, মেঘনা—সব এই আগ্রাসী পরিকল্পনার মধ্যে আছে। সর্বশেষ, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যমুনা নদী কেটে সরু করার জন্য এক হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক! ঋণ করে নদী শেষ করার মহাযজ্ঞ!

এসব প্রকল্পের অনেক দিকের মধ্যে অপরিহার্যভাবে থাকে প্রকল্প নিয়ে বহু রকম ‘স্টাডি’, বিদেশ সফর, কর্মশালা, সেমিনার এবং নির্মাণসংক্রান্ত কাজ। এসব প্রকল্পের সঙ্গে তাই দেশি-বিদেশি অনেকের স্বার্থ যুক্ত। এ রকম অনেকের জন্য এসব প্রকল্প তাই সুখবরই বটে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি এসব প্রকল্পের ব্যাপারে উদার, কেননা তাদের সঙ্গেই যুক্ত আছে অনেক সুবিধাভোগী। যমুনা ছাড়াও ব্রহ্মপুত্র নদের চারপাশে আরও একটি প্রকল্পও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে।

আমরা বর্তমানে তিস্তা নদীর পানি থেকে বঞ্চিত, বাংলাদেশের জন্য ন্যায্য সমাধান হওয়ার মতো কোনো পানিবণ্টন চুক্তি এখনো প্রণয়নই হয়নি, স্বাক্ষরের তো প্রশ্নই নেই। পরিস্থিতি এখন যা দাঁড়িয়েছে, তিস্তার উজানে ভারত গজলডোবা ছাড়াও আরও বহুসংখ্যক বাঁধ তৈরি করেছে। উপরন্তু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার নদীর পানি সরাতে খাল খননের পরিকল্পনা করছে। বাংলাদেশের দিকে এমনিতেই শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীতে পানির প্রবাহ কম থাকে। তার ওপর গজলডোবাসহ বিভিন্ন বাঁধ একটা বাধা। এর প্রধান শিকার প্রাণপ্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তার তীরে বসবাসকারী মানুষজন। অন্যদিকে বর্ষাকালে ভারত বাঁধ খুলে দিলে এখানে হঠাৎ করে পানির প্রবাহ বেড়ে যায়। তিস্তায় এই বর্ধিত পানিপ্রবাহের কারণে তীর উপচে পড়ে এবং এই অঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের কোনো কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ে না। আর এ বিষয়ে আলোচনাও স্থবির হয়ে আছে।

সাধারণত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করা হয়। কিন্তু বাস্তবে বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের যথেষ্ট ক্ষমতা আছে বিষয়টি সমাধান করার। পরিস্থিতি এমন নয় যে কেন্দ্রীয় সরকার সব সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অখুশি করে এমন কিছু করে না। বহু কিছুই করছে, যেগুলো মমতাবিরোধী। সে জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কারণে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি এগোচ্ছে না, এ রকম যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের উদ্যোগে আলোচনা করা যেত; দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় বৈঠক হতে পারত, জাতিসংঘে বিষয়টি নেওয়া যেত, কিন্তু সে রকম কিছুই করা হয়নি। এসবের পরিবর্তে, চীনের সম্পৃক্ততায় দেশের তিস্তা অংশে একটি বড় প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর ফলে তিস্তার তীরকে আরও সংকীর্ণ করা হবে। নদীটিতে ড্রেজিং করা হবে এবং দুই পাশ সরু করে রিসোর্ট তৈরি করা হবে। এটাকেই বলা হচ্ছে বিশাল উন্নয়ন প্রকল্প, তার জন্য বাজেটও বিরাট!

মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নিয়েও পরিকল্পনা আছে। তাদের মধ্যে ভারতের সঙ্গে অংশীদারত্বে আছে এবং বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও জড়িত। বাংলাদেশের অনেক পানি বিশেষজ্ঞও এর সঙ্গে কাজ করছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যে সংস্থাটির বাংলাদেশের নদীগুলোতে জলপ্রবাহ নিশ্চিত করা, নদীগুলোর অবস্থা দেখাশোনা করা এবং নদীভাঙনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দায়িত্ব, সেই পানি উন্নয়ন বোর্ডই নদীবিধ্বংসী এসব প্রকল্পের প্রধান বাস্তবায়নকারী।

নদী আমাদের অস্তিত্বের অংশ। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পানিসম্পদ। আমাদের কৃষি, জীবন-জীবিকা, মাটির উর্বরতা, জীববৈচিত্র্য—সবই নদীর ওপর নির্ভরশীল। আর এসব নদী এখন আক্রমণের মুখে। এই আক্রমণ তিন দিক থেকে আসছে। প্রথমত, ভারতের দিকে একের পর এক বাঁধ, সেই সঙ্গে নদীসংযোগ প্রকল্প; দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের নিজস্ব প্রকল্প, যা উন্নয়নের নামে হাতে নেওয়া হচ্ছে। কিছু প্রকল্প নদীর তল ভরাট করছে, কিছু স্লুইসগেট দিয়ে জলপ্রবাহ ব্যাহত করছে এবং কিছু প্রকল্প নদীর তীর বরাবর নির্মাণ করায় নদীর পানির অবাধ প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে কয়লা ও পারমাণবিক প্রকল্প এবং অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগ নদীগুলোর জন্য অভিশাপ তৈরি করছে। তৃতীয়ত, আক্রমণ আসছে বাংলাদেশের ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের কাছ থেকে, যারা সরকারঘনিষ্ঠ। তারা নদী দখল করে, নদী দূষিত করে ড্রেনে পরিণত করছে। এগুলোর সম্মিলিত ফলাফল হলো নদী বিনাশ। চোখের সামনে এসব পথে খুন হয় নদী।

আশির দশকের শেষের দিকে, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যান নিয়ে বিশাল প্রকল্পের চুক্তি করা হয়েছিল। জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র বরাবর ৪ হাজার কিলোমিটার প্রাচীর ও বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা ছিল এই প্রকল্পে। কোন বৈজ্ঞানিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তার ব্যাপার এই পরিকল্পনাগুলো করতে পরিচালিত করেছিল, তা বোঝা কঠিন। এর পেছনে আসলে প্রধান চালিকা শক্তি ছিল কিছু গোষ্ঠীর আর্থিক লাভ, যে পরিকল্পনাগুলো যত বড় হয়, তত বেশি অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি হয়। এসবের সঙ্গে যুক্ত ছিল নির্মাণ সংস্থা, প্রকৌশলী, অর্থনীতিবিদ, পরামর্শদাতা, বিশেষজ্ঞ, ঋণ প্রদানকারী সংস্থা ইত্যাদি। এই প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে পারেনি; কারণ, সে সময় এর বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে প্রতিরোধ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তারা বিভিন্ন নামে একই কাজ করে আসছে। এ মুহূর্তে যে ডেলটা প্ল্যান বাস্তবায়িত হচ্ছে, তা মূলত একই দৃষ্টিভঙ্গির। অতীতের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে শিক্ষা নেওয়ার কোনো চেষ্টা সরকার বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেখা যায় না।

ভারতের সঙ্গে নদীবিরোধ নিষ্পত্তির একটি সহজ উপায় সরকারের কাছে ছিল। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক একটি আন্তর্জাতিক পানি কনভেনশন গৃহীত হয়। সেই কনভেনশনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, উজানের নিচের দিকের দেশগুলোর পানির অধিকার রয়েছে। উজানের দেশ সেই অধিকার হরণ করতে পারবে না। বাংলাদেশ এখনো এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি, ভারতও করেনি। ভারতের পক্ষে এটি অনুসমর্থন না করার কারণ হলো, তারা তো উজানের দেশ, অপরাধ করে যাচ্ছে, তার অসুবিধা নেই। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দ্রুত কনভেনশনটিতে স্বাক্ষর করা দরকার ছিল নিজের অস্তিত্বের জন্য। সেটি করার পর বাংলাদেশ বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরতে পারত। তিস্তা, মেঘনা, যমুনা, পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র এবং অন্য সব নদ-নদীর জলপ্রবাহ নিশ্চিত করার এটি একটি সহজ উপায়; বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে বহু বছর ধরে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে এগুলোর সমাধান হয়নি, জাতিসংঘের কনভেনশন দিয়েই সমাধান হতে পারত।

আজ কেউ যদি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একটু চোখ মেলে তাকান, দেখবেন, অনেক সেতু পার হচ্ছেন, যেগুলোর নিচে কোনো পানি নেই, নদীর ধ্বংসাবশেষ আছে। দেশের অভ্যন্তরে তাকালে বোঝা যায়, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর একটি বিপজ্জনক দিক নদীগুলো ধ্বংসের চরিত্র। নদী ভরাট, রিসোর্ট নির্মাণ এবং পর্যটন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের জিডিপি বাড়াতে পারে। কিন্তু যখন একটি নদীর স্বাভাবিক গতিপথে হস্তক্ষেপ করা হয়, তখন নদীটি মারা যায়। এরই মধ্যে অনেক নদীকে এভাবে হত্যা করা হয়েছে। আর এর ক্ষতি অপূরণীয়।

এর থেকে বাঁচতে হলে আমাদের নদী-প্রশ্ন সব অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক আলোচনার অগ্রভাগে রাখতে হবে। যাঁরা বাংলাদেশের জনগণের অধিকার, বাংলাদেশের অস্তিত্ব এবং দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে সামান্যতম চিন্তা করেন, তাঁদের অবশ্যই নদীর জন্য ক্ষতিকর সব উন্নয়ন প্রকল্প, নদীর প্রতি আগ্রাসন এবং নদী দখলের বিরোধিতা করতে হবে। একদিকে আমরা দেখি, হাইকোর্টের রায়ে বলা হচ্ছে যে নদীগুলো জীবন্ত সত্তা; অন্যদিকে আমরা দেখছি এই জীবের ওপর বারবার আক্রমণ। সুতরাং এসবের বিরুদ্ধে সম্মিলিত জোরালো প্রতিরোধ এখন বড় রাজনৈতিক কর্মসূচি হওয়া দরকার। আর যাঁরা এ ধরনের ধ্বংসাত্মক উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত এবং তাঁদের সমর্থন দিচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও আমাদের আওয়াজ তুলতে হবে।

আনু মুহাম্মদ, অর্থনীতিবিদ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত